কবি পি বি শেলী : জগলুল আসাদ



৪ আগস্ট ১৭৯২ সালে জন্মগ্রহণ করেন পি বি শেলী। সে হিসাবে আজ তাঁর জন্মদিন। তিনি মারা যান ৮ জুলাই, ১৮২২ সালে।
কবি পি.বি শেলীকে অনেক সময় বিপ্লবী আশাবাদের কবি বলা হয়। অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে তাঁর আছে এক শৈল্পিক কণ্ঠস্বর । শোষণমুক্ত সমাজ ও জীবনের প্রতি টান তাঁর। Ozymandias নামে শেলীর একটি বিখ্যাত কবিতায় কালের গহবরে হারিয়ে যাওয়া এক উন্মত্ত-অহংকারী সম্রাটের ক্রুর ভগ্ন মূর্তির মরুভুমির ধু ধু বালুকাবেলায় ক্ষমতার সসীমতার প্রতিমুর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার চিত্র আছে । এই প্রবল ক্ষমতাবান মিশরীও ফারাওয়ের ভগ্ন-ভাস্কর্যের খবর কবিতার কথক শুনেছেন এক পরিব্রাজকের কাছ থেকে।
কবি শেলী তাঁর অনবদ্য ন্যারেটিভ টেকনিকের মাধ্যমে একদার এক প্রবল স্বৈরাচারী শাসককে বানিয়ে ফেলেছেন এক সুদূর (বি)স্মৃতিমাত্র।ইতিহাসের ওজিম্যান্ডিয়াস পরিণত হয় ভাস্কর্যে, সেই ভাস্কর্য রূপান্তরিত হয় ভগ্ন-মুর্তিতে, আর এই ভগ্ন মুর্তিটিরই সাক্ষাত পায় পরিব্রাজক এবং এই পরিব্রাজক খবর সরবরাহ করে কবিতার কথককে। আবার,আমরা পাঠকেরা কবিতার কথকের কাছ থেকে শুনি ওজিম্যান্ডিয়াস এর কথা।

এইভাবে কয়েক স্তরের 'অস্তিত্ব' পার হয়ে ওজিম্যান্ডিয়াস ধরা পড়ে পাঠকের কাছে এক সুদূর শ্রুতির বিষয় হিশেবে, প্রায়-বিলীন এক স্মৃতি-খন্ড হিশেবে,এক গল্প-কথা হিশেবে। এইভাবে বয়ান-রীতির অনন্যতায় শেলী এক স্বৈরাচারী-দাম্ভিক সম্রাটকে ক'রে তোলেন শক্তিহীন,করুণার পাত্র, নিঃস্ব। আবার,যে ভাস্কর নির্মাণ করেছিলেন এই মূর্তি, তিনিও এই স্বৈর অবয়বে প্রোথিত করে দিয়েছিলেন কুঞ্চিত ওষ্ঠ,নিরাবেগ-কঠোর আদেশের ভংগি। এভাবে এই নির্বিরোধ ভাস্কর্য-শিল্পীও এই অত্যাচারীকে কটাক্ষ করবার সুযোগ ছাড়েনি। তাছাড়াও, ওজিম্যান্ডিয়াসকে আর যে ভ্রুকুটি করে, সে হলো খোদ 'কাল'।তার পড়ে থাকা বিশাল দুটি ছিন্ন পা,বালিতে উবুর হয়ে থাকা ভগ্ন মুখ আর মূর্তির বেদি সাক্ষ্য দেয় স্বৈরশাসকের অনিবার্য পরিণতির। বেদীতে উৎকীর্ণ হয়েছিলো :
'My name is Ozymandias, king of kings;
Look on my works, ye Mighty, and despair!'

"আমার নাম ওজিম্যান্ডিয়াস, রাজাধিরাজ ;তাকাও আমার কীর্তির দিকে,হে ক্ষমতাবানেরা,আর হও হতাশ-নিরাশা।"।জগতের সমস্ত রাজাদের ওজিম্যান্ডিয়াস চ্যালেঞ্জ জানায় যে তারা দেখুক তারঁ কীর্তি,আর ব্যর্থতার অনুভবে হতাশ হোক । ওজিম্যান্ডিয়াসের অর্জন অনতিক্রম্য।মুরুভুমির বুকে শূণ্য বেদিতে উৎকীর্ণ এই মূক শব্দরাশি অনুসরণ ক'রে চারদিকে যখন তাকানো যায় ওজিম্যান্ডিয়াসের অমর কীর্তি অবলোকনে,তখন আমরা চতুর্দিকে দেখি শুধুই ধু ধু মরুবালুরাশি, আর প্রতিধ্বনিময় শূণ্যতা । সম্রাট দেখতে বললো দু'নয়ন মেলে তাঁর উন্নয়ন-কীর্তি,'অমর' অর্জন, আর আমরা দেখলাম:
Nothing beside remains. Round the decay
Of that colossal wreck, boundless and bare
The lone and level sands stretch far.

আমরা দেখলাম, বিশাল মূর্তির ধ্বংসস্তুপের চারপাশে ঠায় দাঁড়ানো অসীম শুণ্যতা,উড়ন্ত বালুকারাশি, উদ্ধারহীন নিস্তব্ধতা । এভাবে শেলী এক আইরনির মধ্য দিয়ে কালের থাবায় পর্যুদস্ত এক স্বৈরাচারীর কীর্তিগাথা ক'রে রাখলেন খা খা জনবিরল ধুলিবালিরাশিকে।

[9 August, 2018]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন