মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

ভক্তকবি গোবিন্দদাস কবিরাজ

ব্রজের মধুর লীলা, যা শুনি দরিবে শিলা, রচিলেন কবি বিদ্যাপতি।
তাহা হৈতে নহে ন্যূন, গোবিন্দের কবিত্বগুণ, গোবিন্দ দ্বিতীয় বিদ্যাপতি।।

01জানু
(কবি বল্লভদাস)
"আধক আধ-আধ দিঠি অঞ্চলে যব ধরি পেঁখলু কান। কত শত কোটি কুসুমশরে জরজর রহত কি জাত পরান।।" (গোবিন্দদাস কবিরাজ)
চৈতন্য-উত্তর বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবি গোবিন্দদাস কবিরাজ। ষোড়শ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিভা বলা চলে একাধারে সাধক, ভক্ত ও রূপদক্ষ এই কবিকেই। যৌবনের প্রান্তসীমায় উপনীত হয়ে বৈষ্ণবধর্মে দীক্ষিত হন গোবিন্দদাস। অতঃপর রূপ গোস্বামীর উজ্জ্বলনীলমণি আয়ত্ত্ব করে বৈষ্ণব রসশাস্ত্র অনুসারে রচনা করতে থাকেন রাধাকৃষ্ণ-লীলা ও চৈতন্য-লীলার পদাবলি। তাঁকে বলা হয় বিদ্যাপতির ভাবশিষ্য। যদিও বিদ্যাপতির রচনার সঙ্গে তাঁর রচনার সাদৃশ্য ও বৈপরীত্য দুইই চোখে পড়ে। তাঁর একটি পদ ‘সুন্দরী রাধে আওয়ে বনি’ পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক সুরারোপিত হয়ে আধুনিক অ-বৈষ্ণব সমাজেও সমান জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

চৈতন্যভাগবত ও চৈতন্যচরিতামৃত

রাধাকৃষ্ণ ঐছে সদা একই স্বরূপ।
লীলারস আস্বাদিতে ধরে দুই রূপ।।

একটি জীবন জীবনী হয়ে ওঠে জীবনের পরিপূর্ণতায়, অসাধারণ জীবনমাহাত্ম্যে। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু প্রথম জীবিত বাঙালি যাঁর জীবৎকালেই বৈষ্ণব ভক্তেরা তাঁর অলৌকিক ও দেবোপম জীবন অবলম্বন করে সংস্কৃত ও বাংলা ভাষায় জীবনচরিত রচনায় প্রয়াসী হন। দাক্ষিণাত্য ভ্রমণ শেষে পুরীতে প্রত্যাগত শ্রীচৈতন্যকে পণ্ডিত বাসুদেব সার্বভৌম ঈশ্বরভাবে বন্দনা করেন, রায় রামানন্দ তাঁকে দেবতাজ্ঞানে পূজা করেন। জগন্নাথ মন্দির প্রাঙ্গনে প্রবীণ অদ্বৈতাচার্য বৈষ্ণব ভক্তবৃন্দসহ হরিনামের পরিবর্তে চৈতন্যনাম সংকীর্তন করেন। স্বরূপ দামোদর তাঁকে বৃন্দাবনের রাধাকৃষ্ণের দ্বৈতভাবের একাত্মরূপ বলে প্রতিপন্ন করেন। চরিতলেখকগণ চৈতন্যের চারিত্রিক মাহাত্ম্যে বিমুগ্ধ হয়ে তাঁকে দেবতা জ্ঞান করে ভক্তিপ্লুত চিত্তে তাঁর জীবনী লিখতে প্রবৃত্ত হন। তাই এই গ্রন্থনিচয়কে জীবনচরিত না বলে চরিতকাব্য বলাই সঙ্গত।

চৈতন্যদেব ও মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্য

বাংলা সাহিত্যে চৈতন্য মহাপ্রভুর অবদান কী? সহজ উত্তর – কিছুই না। চৈতন্য মহাপ্রভু বাংলা ভাষায় এক পংক্তিও রচনা করেননি। কেবল সংস্কৃতে দু-একটি স্তব-স্তোত্র রচনা করেছিলেন। কিন্তু তবুও মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান সোনার মূল্যে তুলিত হওয়ার যোগ্য। তাঁর যুগান্তকারী আবির্ভাবের ফলে বাংলার সমাজ ও সংস্কৃতিতে যে নবজাগরণ দেখা দিয়েছিল, তা সুনিশ্চিতভাবেই বাংলা সাহিত্যের গতিপথকেও প্রভাবিত করে।