আমরা ইতিহাসবিদ্যার একটা সংকটের মধ্যে আছি। আমার নিজের পড়াশুনার মূল বিষয় ইংরেজ আমলের ভারতবর্ষ। তাই ইতিহাসবিদ্যা বলতে আমি বোঝাব সেই স্মৃতি বা প্রতীতির কথা যার বিশদ প্রকাশ ওই যুগ প্রসঙ্গে আমাদের মৌখিক বা লিখিত বক্তব্যে। এই ইতিহাসবিদ্যার যে কর্তা তার চৈতন্যের বিশিষ্ট রূপটির নাম হিসেবে ইতিহাসচেতনা শব্দটাও কখনও কখনও ব্যবহার করব। আর সংকট বলতে বোঝাতে চাই সেই বিশেষ অবস্থা যখন যে-কোনও জ্ঞানমার্গে অগ্রগতির তাগিদ—যার উৎস সমাজের প্রয়োজনে বা ব্যক্তির প্রতিভায় বা উভয়ের সমন্বয়ে—যখন সেই তাগিদ ওই জ্ঞানমার্গের তত্ত্ব বা অভ্যাসের পুঁজি দিয়ে আর মেটানো যাচ্ছে না। এই অর্থেই ইতিহাসবিদ্যার একটা সংকটের মধ্যে আমরা আছি।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। রাজধানী হিসেবে এই শহরের রয়েছে ৪০০ বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস। শত ঝড়-ঝঞ্ঝা সহ্য করেও, মহীরুহের মতো টিকে আছে এ শহর। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এ শহরের জনসংখ্যা ১ কোটি ৭০ লক্ষ।
দেশের মফস্বল শহর কিংবা প্রত্যন্ত অঞ্চল, সব জায়গার মানুষেরই লক্ষ্য থাকে সুন্দর জীবন গড়তে ঢাকায় এসে পাড়ি জমানোর। এবং ঢাকাও কাউকে ফিরিয়ে দেয় না। ঢাকার বাতাসে টাকা ওড়ার খবর গুজব হলে কী হয়েছে, জীবিকা গড়ার তাগিদে শত কষ্ট সহ্য করে, কিংবা খড়কুটো আঁকড়ে ধরে হলেও, মানুষ আপ্রাণ চেষ্টা করে এ শহরেই ঘাঁটি গাড়ার।
বলাই বাহুল্য, এই লেখা যারা পড়ছেন, তাদের মধ্যে একটা বড় অংশই স্থায়ী কিংবা অস্থায়ীভাবে বাস করেন ঢাকায়। এবং বাকিরাও বিভিন্ন সময়ে, প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে পা রেখেছেন ঢাকায়। এবং ঢাকায় পা রাখার পর একটি অভিজ্ঞতা চেতনে বা অবচেতনে নিশ্চিতভাবেই হয়েছে আপনার। তা হলো: ঢাকার বিভিন্ন স্থানের আজব আজব সব নাম শুনে অবাক হয়েছেন আপনি।
কোটি মানুষের বাস এই ঢাকা শহরে; Image Source; The Daily Star
কত বাহারি নামই না রয়েছে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার। বাগই তো আছে কত। শাহবাগ, পরীবাগ, গোপিবাগ, স্বামীবাগ, মালিবাগ ইত্যাদি। আবার নামের সাথে হাতি আছে এলিফ্যান্ট রোড, হাতিরঝিল কিংবা হাতিরপুলের। পুল আছে ফকিরাপুল, পাগলারপুলের নামেও। এছাড়া ধানমন্ডি, ফার্মগেট, পিলখানা, তোপখানার মতো বিচিত্র সব নামধারী এলাকারও দেখা মেলে এ শহরে।
কখনো কি জানতে ইচ্ছা হয়েছে, কীভাবে এসেছে এসব এলাকার নাম? হয়তো হয়েছে, কিংবা হয়তো হয়নি। তবে আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরব নামকরণের মজাদার সেই ইতিহাসই। তাহলে আর দেরি নয়, চলুন শুরু করে দেয়া যাক।
‘চারশো বছরে ঢাকা’ এরকম একটি চটকদার শিরোনামে ঢাকাকে গৌরবান্বিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে গতকয়েক বছর ধরে। অথচ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার বিশ্লেষণ করলে ঢাকার বয়স হাজার বছর ছাড়িয়ে যাওয়ার রোমাঞ্চকর তথ্যও সামনে আসবে। সে বিতর্কে আমরা যেতে চাইনা। ট্রাফিক সিগন্যালের অনন্ত অপেক্ষা, লোকাল বাসের নরকযন্ত্রণা, যানজট আর উন্নয়নের খোঁড়াখুঁড়ির যাদুর শহর, বংগজননীর জৈষ্ঠ্যপুত্র ঢাকার নামের নেপথ্যসূত্রের ব্যবচ্ছেদ করতেই আমাদের আজকের আয়োজন।
দিল্লীর মসনদে মুঘলরা যখন ভারতের অধিপতি স্বীকৃত ঠিক তখন বিশেষ করে সম্রাট হুমায়ূনের শাসনামলে মুঘল রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বাংলায় চলছিল হোসেন শাহী আমলের গর্বিত স্বাধীন সুলতানি যুগ। নিজেকে স্বাধীন সুলতান হিসেবে ঘোষণা করে ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ তখন সোনারগাঁ’য় রাজধানী স্থাপন করেন।