কিউবিজম

 কিউবিজম আন্দোলনে পিকাসো ও অন্য শিল্পীরা

উ ত্ত ম  গু হ

একটা শিল্পধারা হিসেবে কিউবিজমের বিকাশ ঘটে বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে। এর শুরুটা ছিল কিছুটা বিদ্রূপাত্মক এবং সময়কালটাও ছিল সীমাবদ্ধ। তবে ইউরোপ তথা সারা পৃথিবীর ইতিহাসেই ১৯০৭ থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত সময়কালটি ছিল অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য এক সময়। এ সময়ের মতো সম্ভবত এমন স্মরণীয় ও বিস্ময়কর আবিষ্কার শিল্পে আর তেমন ঘটেনি যে আবিষ্কার ‘কিউবিজম’ বা ‘ঘনবাদ’ নামে পরিচিত। জ্যামিতিক আকার-আয়তনের সমাবেশ ঘটিয়ে কোনো বিশেষ বস্ত্তর ঘনত্ব বা তার ভেতর ও বাইরের রূপ এবং প্রতিটি পার্শ্বরূপ, বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে একই সঙ্গে একই চিত্রে সন্নিবেশিত করার মাধ্যমে এ শিল্পধারার সূচনাটা ঘটল। এতে সমতল ক্ষেত্র খন্ড-বিখন্ডিত ও বর্ণিল। কিন্তু তাতে বিভিন্ন মাত্রায় আলোছায়া এবং অঙ্কনরেখার পুনঃপৌনিক ব্যবহারের মধ্য দিয়ে এক নবতর আঙ্গিকের চিত্রের দেখা মিলল। এ ধাঁচের ছবির গায়ে যে আকারসমূহ ফুটে ওঠে তা তাদের একটা একান্ত নিজস্ব চরিত্রের প্রকাশ ঘটাতে শুরু করল।

‘কিউবিজম’ শিল্পান্দোলনটি একটা বিশেষ মতবাদ, যা তার নিজস্ব বিশ্বাস ও যুক্তি দিয়ে ছবি অাঁকার পক্ষপাতী ছিল। এ আন্দোলনকে আমরা একটা ‘ইন্টেলেকচুয়াল মুভমেন্ট’ও বলতে পারি। যার কারণ হচ্ছে এ আন্দোলন নিয়ে প্রচুর লেখা ও প্রকাশনা বের হয়েছে। এত লেখালেখির অবশ্য আরেকটি প্রধান কারণ হচ্ছে, এ ধারায় পিকাসোর মতো একজন মহান শিল্পী কাজ করেছেন। পিকাসো তাঁর জীবদ্দশায় যেসব কাজ করেন তার এক বড় অংশই কিউবিজমরীতিতে করেছিলেন। পিকাসো এ আন্দোলনের সঙ্গে বিশেষভাবে যুক্ত থাকার ফলেই হয়তো এ আন্দোলন নিয়ে প্রচুর আলোচনা হয়েছে।

কিউবিজম শিল্প-আন্দোলন থেকে পরবর্তীকালে অনেক শিল্পীরই স্বাধীন একটা ভিত্তি গড়ে উঠেছে। এই ধারাতে শিল্পীর ব্যক্তিগত আবেগ ও অনুভূতির প্রকাশ কিছুটা কম ঘটেছে। বিষয়বস্ত্তর যথাযথ রূপটা প্রকাশ না করেই ছবি অাঁকা হতো। ওঁরা বিশ্বাস করতেন আদিম ভিত্তির ওপর বিষয়কে দাঁড় করাতে পারলে সেটাতেই ছবির আসল রূপটা ফুটে উঠবে। সেটাই হবে বিষয়ের আসল রূপ। তাই তাঁরা সকল বস্ত্তকে খন্ডিতভাবে দেখেছেন। তাঁরা বলতেন – Everything is ‘still life’.

কিউবিজম শিল্পের একটি প্রধান দিক হলো ছবিতে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণের ব্যবহার। তাঁরা ছবিতে একই সঙ্গে একাধিক দৃষ্টিকোণের ব্যবহার করেছেন। অনেকটা চলচ্চিত্রের সুপারইম্পোজের মতো। চলচ্চিত্রে বা আলোকচিত্রে একটি ছবির ওপর আরেকটি ছবি ফেললে যে ধরনের একটি প্রক্ষেপিত রূপের সৃষ্টি হয় অনেকটা সে-রকম একটি রূপ তাঁদের ছবিতে দেওয়ার চেষ্টা থাকত। তবে তাঁরা ছবিতে দৃষ্টিকোণের প্রয়োগ করতে গিয়ে প্রয়োগের সীমাবদ্ধতাকে ছাড়িয়ে যেতে পারেননি। যেমন একটি বস্ত্তর হাজারো দৃষ্টিকোণ আছে। কিন্তু ছবিতে তো আর হাজারো দৃষ্টিকোণ দেওয়া যায় না। তাই তাঁরা বৈজ্ঞানিক গঠন এবং শিল্পীর স্বাধীন ইচ্ছার ওপর প্রতিষ্ঠিত কতগুলো বিশেষ জ্যামিতিক দৃষ্টিকোণের ব্যবহার করেছেন।

কিউবিজম শিল্পে শিল্পীরা প্রত্যেক বস্ত্তর অন্তর্নিহিত যে কাঠামোগত কাঠিন্য আছে তা আনার চেষ্টা করলেন। এটা কিউবিক শিল্পের একটি প্রধানতম দিক। তাঁরা প্রত্যেক বস্ত্তকে তাঁদের জ্যামিতিক কাঠামোতে ভাঙতে চেষ্টা করেছেন। আর জ্যামিতিক কাঠামো প্রয়োগ করতে গিয়ে তাঁরা তাঁদের ছবিতে সার্থকভাবে বিজ্ঞানের প্রবেশ ঘটিয়েছেন। তাঁরা বিষয়বস্ত্তকে বিশ্লেষণাত্মকভাবে ভেঙে ভেঙে ছবিতে উপস্থাপন করতেন। তাঁদের এই ভাঙচুর বিজ্ঞানসম্মতভাবে গাণিতিক। এভাবে ভাঙতে ভাঙতে দেখা গেছে তাঁদের ছবি থেকে রং প্রায় লুপ্ত হয়ে গেছে। এ শিল্পীদের কাজে দেখা যায়, যেমন পিকাসো বা ব্রাক, এঁরা বিষয়বস্ত্ত এমনভাবে উত্থাপন করতেন যে তাঁদের যুক্তিটাই প্রধান হয়ে দেখা দেওয়া শুরু করল। এঁদের দুজনের প্রথম দিকের কাজগুলোতে দেখা যায় তাঁরা প্রায় একই বিষয়বস্ত্ত নিয়ে একইভাবে ভেঙেছেন এবং রঙের চাকচিক্যকে পুরোপুরিই বর্জন করেছেন।

কিউবিজমের শিল্পীরা ছবিতে কাঠিন্য আনার ক্ষেত্রে হয়তো সেজানের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা লাভ করেছিলেন। সেজানের একটি বড় ধরনের প্রভাব এসব শিল্পীর ওপর ছিল। বিশেষ করে সেজানের শেষের দিকের কিছু কাজ দ্বারা এঁরা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। সেজান যদিও ইম্প্রেশনিজম ধারার শেষ দিককার একজন শিল্পী, তথাপি তাঁর কাজের মধ্যে ইম্প্রেশনিজমের বিপরীত বৈশিষ্ট্যও কিছু দেখা যায়। বিশেষ করে তাঁর ছবির কাঠামোতে তিনি এক ধরনের কাঠিন্য ভাব আনার চেষ্টা করতেন, যা বাস্তবতার পরিপন্থী। তিনি অনেক ছবিতেই বস্ত্তর প্রাথমিক বা মূল আকৃতিটা আনার চেষ্টা করেছিলেন। ছবি অাঁকার সময় সেজান বিষয়বস্ত্তর জ্যামিতিক আকারের ওপর জোর দিতেন। তাঁর যুক্তি ছিল প্রত্যেক বস্ত্তকে তার সঠিক কাঠামোতে অাঁকতে হবে, বাহুল্য বর্জন করতে হবে। তাঁর এ ধরনের একটি প্রধান ছবি হলো The Apples। তিনি প্রত্যেকটি ফলের বাইরের দিকে একটি রেখা অঙ্কন করে ছবিটিতে কাঠিন্য আনার চেষ্টা করেন এবং যথাসম্ভব ছবিটির কাঠিন্য বৃদ্ধি করেন। কিউবিজম শিল্পীরা সেজানের আধুনিকতার এ লক্ষণটি গ্রহণ করেছিলেন। তাই তো কিউবিস্ট শিল্পীরা প্রত্যেক বস্ত্তকে তাঁদের জ্যামিতিক কাঠামোতে ভাঙতে সমর্থ হয়েছিলেন।

কিউবিজম শিল্প আন্দোলনের আরেকটি দিক হলো তাঁরা কেউ কেউ নিগ্রো ভাস্কর্যের প্রতি আকৃষ্ট হন। বিশেষ করে পিকাসো এই ধারার ভাস্কর্যের প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। নিগ্রো ভাস্কর্যের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার একটি প্রধান কারণ হলো নিগ্রো ভাস্কর্য তেমন দৃষ্টিনন্দন নয় এবং এটা বাস্তবসম্মতও নয়। নিগ্রো ভাস্কর্যে শিল্পীরা তাঁদের ইচ্ছামতো আকারের বিকৃতি ঘটিয়েছেন। তাঁদের ভাস্কর্যের আরেকটি দিক হলো তাঁদের স্বাধীন উপাদানের ব্যবহার। নিগ্রো ভাস্কর্যে শিল্পীরা শিল্পের বিভিন্ন উপাদান নিয়ে যেন খেলা করেছেন। তাঁরা মুখোশের আকার নিয়ে বিচিত্রভাবে খেলেছেন। এর আরো একটি প্রধান দিক হলো এর প্রত্যেকটি আকার কৌণিক আকৃতির। কৌণিক আকৃতি প্রকৃতিগতভাবে গোলাকার আকৃতির চেয়ে অধিক শক্তিশালী এবং এতে কাঠিন্য অনেক বেশি থাকে। ভাস্কর্যের এসব বৈশিষ্ট্য গ্রহণ করে তাঁরা চিত্রকলায় কঠিন ভাবটা এনেছেন। পিকাসোর Les Demoiselles d’ Avignon ছবিটিতে এসব বৈশিষ্ট্য বেশ চোখে পড়ে। তাঁর ছবির শারীরিক আকারগুলোতে ওই কৌণিক আকারের প্রভাবটা দেখা যায়। পিকাসো যে নিগ্রো ভাস্কর্যের দ্বারা ভালোই অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন তা এ ছবিটি দেখেই বোঝা যাবে।

কিউবিস্ট শিল্পীরা তাঁদের ছবিতে আবেগকে খুব বেশি আসতে দেননি। তাঁরা ছবির স্পেস, দ্বন্দ্ব, পরিপার্শ্ব, সময় প্রভৃতিকে বর্জন করলেন। ছবিতে তাঁরা শিল্পীর ব্যক্তিত্বকে প্রকাশিত হতে দেননি। এভাবে তাঁরা শিল্পের যে একটি কমনীয়তা আছে এবং তা যে মানুষকে বিব্রত করতে পারে সেটা বাদ দিতে চেয়েছেন। তাই তাঁরা তাঁদের অাঁকা ছবিতে নারীর কমনীয়তাকে প্রায় বিলোপ করে দিয়েছেন। পিকাসোর Les Demoiselles d’ Avignon নামক ছবির ডান পাশের নারীদেহটি থেকে কমনীয়তাকে পিকাসো প্রায় কেড়েই নিয়েছেন।

কিউবিজম শিল্পীরাই প্রথম যাঁরা তাঁদের চোখে দেখার দৃষ্টিটাকে অস্বীকার করলেন। ভাঙা আয়নার প্রতিফলিত বস্ত্তর চেহারা যেমন দেখা যায় ছবিতেও তাঁরা সেরকম একটি রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

কিউবিজম শুধুমাত্র একটা শিল্পান্দোলন নয়, এটি আধুনিক শিল্পের একটা বিরাট সম্ভাবনারও উৎস হিসেবে পরবর্তীকালে প্রমাণিত হয়েছে। তাঁদের কয়েকটি অবদান দ্বারা আধুনিক তথা কিউবিজম-পরবর্তী শিল্প আন্দোলনগুলো অনেকটাই অনুপ্রাণিত হয়েছিল। যেমন কোলাজ চিত্র কিউবিজম ধারার একটা বিরাট অবদান। এর আগে এর প্রচলন তেমন একটা ছিল না। তাঁরা কোলাজ অাঁকতে গিয়ে মাধ্যমের স্বাধীনতাটা নিলেন। আর এর অনুপ্রেরণাটা তাঁরা পেয়েছিলেন নিগ্রো ভাস্কর্য থেকে। আমরা জানি যে নিগ্রো ভাস্কর্য এবং নিগ্রো মুখোশে শিল্পীরা বিভিন্ন ধরনের উপাদান ব্যবহার করতেন। মাধ্যমের এ স্বাধীনতা তাঁরা কোলাজেও ব্যবহার করলেন। এটা আধুনিক শিল্পের একটা বিরাট সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিলো। কিউবিজমে আমরা তৈরি জিনিসের ব্যবহার দেখতে পাই। বিশেষ করে তাঁদের ভাস্কর্যে এ প্রবণতাটি বিশেষভাবে লক্ষ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে পিকাসো বাইসাইকেলের একটা হাতল ও একটা আসন দিয়েই একটা ভাস্কর্য সৃষ্টি করেন। ভাস্কর্যটির নাম দেন তিনি Bull’s Head। শিল্পের এ দিকটি দ্বারা তাঁরা Dada শিল্পীদেরও প্রভাবিত করেছিলেন।

কিউবিজম শিল্পীরা জড়জীবনকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন। এঁদের আগেরকার শিল্পীরা জড়জীবনকে ততটা গুরুত্ব দিতে চাইতেন না। তাঁরা একে একটি অনুশীলন হিসেবেই গুরুত্ব দিতেন মাত্র, কিন্তু কিউবিস্ট শিল্পীরা একে একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্রকলা হিসেবে চর্চা করেছেন।

কিউবিস্ট শিল্পীদের একটি দিক হলো যে এঁরা বিষয়বস্ত্তকে ইচ্ছেমতো অনেক বিকৃত করেছেন, বিষয়বস্ত্তর অসম্ভব ভাঙচুর করেছেন, কিন্তু কোনো সময়েই তাঁরা বিষয়বস্ত্ত থেকে সরে যাননি। তাঁদের ভাঙা আয়নায় প্রতিফলিত প্রতিবিম্বের মতো ছবিগুলোতে বিষয়বস্ত্তকে কিন্তু ঠিকই উপলব্ধি করা যেত।

কিউবিজম শিল্পধারাতে আমরা দুটি প্রবণতা লক্ষ করি। একটি হলো Analytical Cubism আর অন্যটি হলো Synthetic Cubism। Analytical Cubism-এর সময়কাল মূলত ১৮৯০ থেকে ১৯১২ এবং Synthetic Cubism-এর সময়কালটা ১৯১২ থেকে ১৯১৬ সাল পর্যন্ত। Analytical Cubism-এ শিল্পীদের কাঠামোর ওপর জোর দিতে দেখতে পাই। এই মাধ্যমে বস্ত্তকে প্রচন্ড ভাঙচুর করা হতো এবং রঙের প্রাধান্য ক্রমান্বয়ে কমে আসতে থাকল। আরেক ধরনের শিল্পীরা রঙের প্রাধান্যকে পুনরায় ফিরিয়ে আনার জন্যে Synthetic Cubism-এর প্রচলন করলেন। এতে ভাঙচুরের পরিমাণ কমিয়ে আনা হলো। তবে Analytical Cubism এবং Synthetic Cubism কোনো ধারাতেই শিল্পীরা এসব প্রবণতা জোর করে তাঁদের ছবিতে আনতে চেষ্টা করেননি। এটা তাঁদের ছবিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসেছে। পিকাসো ও ব্রাকের কিউবিজমের প্রথম কাজগুলো Analytical (বিশ্লেষণাত্মক)। পরে পিকাসো কিছু Synthetic (সংশ্লেষণাত্মক) কাজও করেন।

কিউবিজমের শিল্পীরা একটি চিত্রতলে গোটা বিষয়বস্ত্তকে উপস্থাপন করতেন। তাঁদের ছবিতে পরিপ্রেক্ষিতের গভীরতাটা তেমন পাওয়া যায় না। সব বস্ত্তকে একই দৃশ্যতলে সমান দূরত্বে অবস্থিত বলে প্রতীয়মান হতো।

কিউবিজম শিল্পরীতিতে আমরা অনেক শিল্পীকেই পাব। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন উল্লেখযোগ্য শিল্পীকে নিয়ে আলোচনা করতে চাই, যাঁরা তাঁদের সৃষ্টকর্মের দ্বারা এ আন্দোলনকে সমৃদ্ধ করেছেন। আমরা প্রধানত চিত্রশিল্পী এবং ভাস্করদের নিয়েই আলোচনা করব। চিত্রশিল্পের উল্লেখযোগ্য কয়েকজন শিল্পী হলেন পাবলো পিকাসো, জর্জ ব্রাক, জ্যাঁ গ্রিস, ফার্নান্দ লেগার, রবার্ট ডিলোনি, এলবার্ট সেলিজেস প্রমুখ। আর যাঁরা ভাস্কর্যের মাধ্যমে কাজ করেছেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন লিপচিজ, আর্কিপেনকো, ডুকাম ভিলন প্রমুখ শিল্পী।

যেহেতু পিকাসো একজন সত্যিকারের বড়মাপের শিল্পী, যাঁর অবদান কিউবিজম শিল্পকে মহিমান্বিত করেছিল, ফলে পিকাসোর কিউবিজম এবং এ আন্দোলনে তাঁর প্রভাব নিয়ে আমরা একটু বিশদ আলোচনা করব।

 

কিউবিজম ও পিকাসো

পিকাসো নিঃসন্দেহে সর্বকালের একজন সেরা সৃজনশীল শিল্পী। কিউবিজম তথা আধুনিক শিল্পকর্মের প্রধান প্রবর্তক ও পথিকৃৎ পিকাসো শিল্পী হিসেবে যেন এ যুগের এক বিস্ময়। যেমন ছিল সৃজনক্ষমতা তেমনই ছিল মাধ্যমের ব্যবহারে তাঁর দক্ষতা। একই সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করার সামর্থ্য তাঁর মতো অন্য কারো তেমন ছিল না।

স্পেনের বার্সেলোনায় জন্মগ্রহণ করলেও পিকাসো নিজ জন্মস্থানে থাকতে পারেননি। দেশ থেকে নির্বাসিত অবস্থায় তিনি ফ্রান্সে অবস্থান করেন। ফ্রান্সে তিনি ফরাসি কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন। তাঁর পিতা জোসে রুইজ ব্লাসকো চারুকলার অধ্যাপক ছিলেন। মায়ের নাম ছিল মারিয়া পিকাসো লোপেজ। তাঁদের ঘরে অসাধারণ প্রতিভা ও সৃজনক্ষমতার অধিকারী ছেলেটির জন্ম হয় ১৮৮১ সালের ২৫ অক্টোবর। পিকাসোকে আমরা পাবলো পিকাসো নামেই জানি। তবে তাঁর আসল এবং পুরো নাম হলো পাবলো দিয়েগো জোসে ফ্রান্সেসকো দ্য পাওলা জুয়ান নিপোমুসেনো মারিয়া দ্য লস রেমেডিওস সিপ্রিয়ানো দে লা সান্তিসিমা ট্রিনিদাদ রুইজ ওয়াই পিকাসো (Pablo Diego Jose Francisco De Paula Juan Nepomuceno Maria De Los Remedios Cipriano De La Santisima Trinidad Ruiz Y Picasso)। স্পেনে অল্প বয়স থেকেই শিল্পীর শিল্পচিন্তার বিকাশ ঘটে। মাত্র চোদ্দ বছর বয়সে তিনি পান্ডিত্যপূর্ণ সব ড্রয়িং অাঁকতে পারতেন। বাবা তাঁর ছেলের ছবি অাঁকার ক্ষমতা দেখে অভিভূত হন। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছিল যে, বড় হয়ে এই শিশু একদিন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী হবে। তখন থেকে মাদ্রিদ ও বার্সেলোনায় শিল্পীর শিক্ষানবিশি চলে একনাগাড়ে ১৯০০ সাল পর্যন্ত। পিকাসোর অল্প বয়সের অাঁকা ড্রয়িংগুলো দেখে সমালোচকরা তাঁকে রাফায়েলের সমকক্ষ বলতেন। পিকাসো বলতেন, ‘আমার ছবি আমার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। আমাকে দিয়ে সে তার চাহিদামাফিক কাজ করিয়ে নেয়।’ ওঁর নবীন বয়সের ‘সেবা ও বিজ্ঞান’ দেখেই ওঁর শিল্পনৈপুণ্য আন্দাজ করে নেওয়া যায়, যেটাতে অসামান্য দক্ষতা ও একাগ্রতার ছাপ ছিল সুস্পষ্ট। এ ছবি দেখে মনে হয় যেন স্পেনের কোনো প্রাচীন শিল্পীর অাঁকা কোনো ছবি। অথচ শিল্পী এটা করেছেন ওঁর মাত্র ষোলো বছর বয়সে। পিকাসো প্রতিটি ধাপে এগিয়ে গেছেন শিল্পেরই প্রয়োজনে, শিল্পেরই আহবানে। আর পিকাসোর বয়স ও পরিপক্বতার তুলনায় তা হয়ে উঠেছে অনেকখানিই অগ্রগামী। নিজের শিল্পপরিবেশ এবং যার ভেতর দিয়ে তিনি বড় হয়েছেন, সেসবই পিকাসোর উপলব্ধি ও পর্যবেক্ষণের বিষয় ছিল, যা তাঁর অন্তরকে করেছিল প্রগাঢ় শিল্পবোধ, শিল্পিত দৃষ্টিভঙ্গি এবং শিল্পমূল্যবোধে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এসবই একজন সৃজনশীল শিল্পী হিসেবে পিকাসোর সৃষ্টি-রহস্যের সারবস্ত্ত ও ভিত্তি।

পিকাসোর শিল্পকর্ম নিয়ে আলোচনা করতে গেলে দেখা যায় বিষয়বস্ত্ত নির্বাচনে শিল্পীর কোনো বাছবিচার ছিল না। অত্যন্ত নগণ্য বিষয়কেও তিনি সার্থক শিল্পে রূপ দিয়েছেন। মনে হয় তিনি যেন খেলাচ্ছলে শিল্পচর্চা করেছেন। এভাবে বিভিন্ন ধরনের জিনিসকে তিনি শিল্পে নিয়ে আসেন। যেমন তাঁর একটি ছবিতে দেখা যায়, একটি মেয়ে একটা মোরগ নিয়ে বসে আছে। তিনি হাতের কাছে যা কিছু পেয়েছেন তাকেই নির্বিচারে শিল্পে রূপ দিয়েছেন।

পিকাসোর একটা বিশেষ দিক হলো তিনি কিউবিজমে শিল্প সৃষ্টি করতে কোনো সময়েই একেবারে বিমূর্ততায় যাননি। যদিও নানারকম ভাঙচুরের মাধ্যমে পিকাসো চিত্র রচনা করতেন তথাপি তার মধ্যে বিষয়বস্ত্তটাকে পরিষ্কারভাবে উপলব্ধি করা যেত। যেমন The Three Musicians ছবিতে তিনি প্রতিমূর্তিগুলোকে ইচ্ছামতো বিকৃত ও ভাঙচুর করেছেন। তথাপি এর মধ্যেও ছবিটার বিষয়বস্ত্তটাকে বুঝতে কোনো কষ্ট হয় না।

পিকাসোর শিল্পচর্চায় দুটি অধ্যায় বিশেষভাবে লক্ষ করা যায়। তার একটি হলো ‘নীল পর্ব’ বা ‘Blue Period’, অন্যটি ‘গোলাপি পর্ব’ বা ‘Pink Period’। নীল পর্বের সময়কাল ছিল ১৯০১ থেকে ১৯০৪ সাল এবং গোলাপি পর্বের সময়কাল ছিল ১৯০৪ থেকে ১৯০৮ সাল পর্যন্ত। নীল পর্বের ছবির প্রতিমূর্তিগুলোতে বার্সেলোনার প্রতিমূর্তির করুণ রস ও দুঃখকে যেন দেখতে পাওয়া যায়। প্রতিমূর্তিগুলোকে দীর্ঘ আকার প্রদান ও কৃশকরণের মাধ্যমে বিকৃত করা হয়েছিল। এতে আমরা তাদের জীবনের দুঃখকষ্টের প্রতি শিল্পীর সহানুভূতির পরিচয়টাও পাই। দুঃখী অসহায় মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল ভাবব্যঞ্জনার গভীর প্রকাশ রয়েছে ওঁর নীল পর্বের ছবিগুলোতে। ছবিগুলোতে মূলত মনোক্রোমোটিক নীল রঙের ব্যবহার করা হয়েছে। প্যারি শহরে পিকাসো এসব অনাহারক্লিষ্ট দেহগুলো প্রত্যক্ষ করেন এবং সে অবস্থার সঙ্গে নিজের দুরবস্থাকে হয়তো অনায়াসে মেলাতে পেরেছিলেন। তাই এগুলো তাঁর এ পর্বের কাজের প্রেরণা ও ভিত্তি। ওঁর নীল পর্বের একটি ছবি হলো La Vie, এখানে তিনি পারস্পরিক একটা দ্বন্দ্বকে দেখিয়েছেন। সমস্ত ছবিটিই নীল রঙে করা। দেহগুলোর অভিব্যক্তির মধ্যে বিষণ্ণতার একটা ছাপ দেখা যায়। এ পর্বের আরেকটি ছবি হলো Woman Ironing. এখানে তিনি নারীর মানসিক বেদনাকে প্রকাশ করেছেন। নারীটির মধ্যে যে একটা বিষণ্ণতা এবং একঘেয়েমি কাজ করছে, তা চরিত্রটির ঝুঁকে পড়ার ভঙ্গিতে বেশ বোঝা যায়।

পিকাসোর আর একটি শিল্পপর্ব হলো ‘গোলাপি পর্ব’ বা ‘Pink Period’। এ পর্বের শুরু থেকেই পিকাসোর ছবিতে ‘সার্কাস ও ভাঁড়’ বিষয়বস্ত্ত হিসেবে দেখা দিতে শুরু করল। আগেকার চিত্রগুলোর নীল রঙের স্থলে গোলাপি রং দেখা দিলো। এখানে দেহগুলোকে কোমল বা মধুর এবং অনেক বেশি আনন্দজনক পরিবেশে স্থাপন করা হলো। সার্কাসের জগৎটা শিল্পীর শৈল্পিক কাজের জগতে প্রবেশ করল। এ সময় তিনি সার্কাসকে বিষয়বস্ত্ত হিসেবে বেছে নিয়ে ধারাবাহিক অনেকগুলো ড্রয়িং ও এনগ্রেভিং করেন। পিকাসোর গোলাপি পর্বের একটা চিত্র হলো At the Lapin Agile। এখানে রঙের উজ্জ্বলতা দেখা যায় কিন্তু এই উজ্জ্বল রঙের আড়ালে একটা বেদনাকেও যেন আমরা দেখতে পাই। এ পর্বের আরেকটি ছবি হলো ‘অ্যাক্রোবেট্ ফ্যামিলি’। এখানে তিনি যাযাবর জীবনের বেদনাকে ফুটিয়ে তুলেছেন। আরেকটি ছবি Gertrude Stein, এটি শিল্পীর একজন বান্ধবীর প্রতিকৃতি। শিল্পীর গোলাপি পর্বের শেষ বলা চলে ‘এভিয়নের   মহিলারা’ শীর্ষক ছবির মাধ্যমে। এরপরে কিউবিজমের আগমন এবং ব্রাকের সঙ্গে সাক্ষাৎ। ১৯০১ থেকে ১৯০৮, এই সাত বছর মোটামুটি পিকাসোর কিউবিস্ট পর্ব এবং ব্রাকের সঙ্গে ওঁর ঘনিষ্ঠ সংযোগ। পিকাসোর এ পর্বের ছবিগুলো বেশ বিমূর্ত।

পিকাসোর কিউবিক শিল্পের পেছনে তাঁর পূর্ববর্তী কিছু শিল্পীর অনুপ্রেরণা আমরা দেখতে পাই। পিকাসোর কিউবিক শিল্পের পেছনে প্রধান অনুপ্রেরণা মূলত জুগিয়েছিলেন সেজান এবং ওঁর শিল্পকর্ম। সেজানের শিল্পের কাঠিন্যভাব পিকাসোকে প্রথম আকৃষ্ট করে। সেজানের শেষ দিককার কিছু কাজ দ্বারাও তিনি অনুপ্রাণিত হন। এখানে উল্লেখ্য যে সেজান যদিও Post-Impressionist শিল্পী, তথাপি তিনি এর বিরুদ্ধেও কাজ করেন। এখানে উদাহরণস্বরূপ তাঁর একটা জড়জীবন The Apples-এর নাম উল্লেখ করা যায়। প্রত্যেক বস্ত্তর বাইরের দিকে একটা দৃঢ় রেখা দ্বারা এর মধ্যেকার কাঠিন্যের ভাবটাকে তিনি প্রকাশ করেছেন। এদিকটা পিকাসোকে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে।

আইভেরীয় ভাস্কর্যের প্রভাবও ছিল পিকাসোর ওপর এক সুদূরপ্রসারী প্রভাব। ওঁর প্রথম কিউবিক শিল্পের সূচনাকারী ছবি Les Demoiselles d’ Avignon ছবিতে এই ভাস্কর্যের প্রভাবটা দেখা যায়। এ ছবিতে Avignon গ্রামের কয়েকজন নগ্ন নারীকে পতিতারূপে দেখানো হয়েছে। রমণীগুলো বিভিন্ন ভঙ্গিতে দাঁড়ানো। শিল্পী এসব রমণীকে পণ্যের মতো উপস্থাপন করেছেন। এদের সামনের অংশে কিছু ফলমূল সাজানো রয়েছে। তিনি হয়তো বোঝাতে চেয়েছেন যে এসব রমণী ঠিক ফলমূলগুলোর মতোই উপভোগ্যা!

নারীদেহগুলো থেকে তিনি সব ধরনের কমনীয়তা সরিয়ে দিয়েছেন। এ ছবিটি আধুনিক শিল্পকলার দিক দিয়ে অত্যন্ত বৈপ্লবিক। এখানে ডান পাশের দুটি ফিগারে আফ্রিকান নিগ্রো ভাস্কর্যের প্রতিফলন ঘটতে দেখি, আর বাম পাশেরগুলোতে পিকাসো ঘটান আইভেরীয় ভাস্কর্যের প্রতিফলন। তিনি প্যারিসের Ethnographical জাদুঘরে নিগ্রো ভাস্কর্য দেখেছিলেন, যার প্রভাবও এ ছবিতে কিছুটা উপস্থাপিত হয়েছে। যার ফলে দেখা যায় ডান পাশের দুটি ফিগার কিছুটা কুৎসিত ও বিকৃত এবং এদের ভঙ্গিমাও অশ্লীল। তাছাড়া ফিগারের আকারগুলো কৌণিক আকৃতির। এর মধ্যে সেজানের প্রভাবটা বেশ পাওয়া যায়। বিশেষ করে কম্পোজিশনের দিক থেকে।

ছবি অাঁকার পিকাসোর প্রচলিত নিয়মের বেশ কিছু ব্যতিক্রম এ ছবিতে দেখা যায়। ছবিটির মধ্যে কৌণিক রেখার সংঘাত ও পরস্পরের ছেদ দেখা যায়। এতে কোনো চিত্রতল নেই এবং দেহগুলো পেছনের ড্রেপারির সঙ্গে লেগে আছে। সবকটি দেহ একই চিত্রতলে অবস্থান করছে। এটা কিউবিজম শিল্পের একটা প্রধান দিক। এখানেও পরিপার্শ্ব বা একটির সঙ্গে আরেকটির, মানে পশ্চাৎপটের সঙ্গে দেহগুলোর দূরত্ব পাওয়া যায় না। এটাও কিউবিজমের আরেকটা দিক।

পিকাসো Analytical এবং Synthetic উভয় পদ্ধতিতেই বহু ছবি এঁকেছেন। প্রাকৃতিক দৃশ্য থেকে শুরু করে জড়জীবন পর্যন্ত অনেক ছবিই। তিনি মনে করতেন এসব পদ্ধতিতে বস্ত্তকে ভালোভাবে চেনা যায়। এদের মৌলিক আকারের ধারণাটা পাওয়া যায়।

এসব পদ্ধতিতে অাঁকা পিকাসোর কয়েকটি ছবি যেমন- Woman with Pears, The Reservoir, Seated Nude প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তিনি আবার প্রতিমূর্তিসম্পন্ন ছবিতে দেহগুলো ইচ্ছামতো বিকৃতও করেছেন। যেমনটি ওঁর The Three Dancers-এ দেখা যায়।

পিকাসো কিউবিজম আঙ্গিকে প্রচুর কোলাজ করেন। ওঁর আগে কোলাজের তেমন একটা প্রচলন ছিল না। তিনি কোলাজের সূচনা করেন বলা যায়। পরবর্তীকালে ব্রাক ও গ্রিস একে পরিপূর্ণতা দান করেন। এসব কোলাজ বেশিরভাগ ছিল জড়জীবন। বিভিন্ন ধরনের ম্যাগাজিন এবং জার্নালকে কেটে এসব কোলাজ করা হয়েছিল। ওঁর দ্বারা কোলাজ আবিষ্কারের ফলে শিল্পের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক উন্মোচিত হয়ে গেল, যা পরবর্তীকালে Dada শিল্পকে ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল। পিকাসোর সব কোলাজই কিউবিক রীতিতে করা।

পিকাসো ওঁর ছবিতে বিষয়বস্ত্তকে ইচ্ছেমতো বিকৃতকরণের মাধ্যমে নকশারেখার একটা সমন্বয় করেন। এ নকশাগুলোতে উজ্জ্বল ও সমতল রং লাগানো হতো। ওঁর The Three Dancers ছবিটিও এ পদ্ধতিতেই অাঁকা।

পিকাসো শুধু চিত্রকলাতেই ওঁর শিল্পচর্চা সীমাবদ্ধ রাখেননি। তিনি কিউবিক পদ্ধতিতে অনেক ভাস্কর্যও করেন। তিনি কিউবিক ধারণা নিয়েই এসব ভাস্কর্য তৈরি করেন। এ সময়কার ওঁর একটি উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য হলো Head of a Woman। এটা উনি ব্রোঞ্জ দিয়ে তৈরি করেন।

পিকাসোর একটি কালজয়ী ছবি হলো ‘গোয়ের্নিকা’। এ ছবিটি যদিও কিউবিজমের পরবর্তী সময়ে অাঁকা হয়েছিল, তথাপি পিকাসো এ ছবির মধ্যে কিউবিজমের চিন্তাধারার কিছু প্রবেশ ঘটান। এ ছবিটি অাঁকা হয়েছিল ১৯৩৭ সালে। নাৎসি বিমান কর্তৃক বিধ্বস্ত গোয়ের্নিকা শহরের করুণ পরিণতির ওপর এ ছবিটি অাঁকার জন্যে পিকাসোকে আহবান জানানো হয়। পিকাসো এ আমন্ত্রণে রাজি হন। পিকাসো গোয়ের্নিকাতে যাননি কিন্তু এর মর্মান্তিক ধ্বংসের খবর তাঁকে রীতিমতো আঘাত করে। এ ছবিটি অাঁকতে পঞ্চাশ বছরের শিল্পী পিকাসো প্রায় পাগলের মতো কাজ করে যান।

ছবিটা অাঁকতে পিকাসো একটার পর একটা প্রাথমিক স্কেচ করেন। স্পেনের গৃহযুদ্ধকে উপজীব্য করে অাঁকা এ ছবিতে যুদ্ধের ভয়াবহতা ও নারকীয় বীভৎস রূপ, মানবসন্তান, বিশেষত মাতা ও নারী জাতির কান্নার হাহাকার, যুদ্ধের ঘোড়া, ষাঁড়, ভূলুণ্ঠিত সৈনিক, কোনোকিছুই বাদ যায়নি। গোটা পিকাসোর অস্তিত্বই যেন এ ছবিতে জড়িয়ে আছে। বিমূর্ত আঙ্গিকের হলেও ড্রয়িং ও প্রয়োগশৈলীর সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মতা ‘গোয়ের্নিকা’ ছবিটিকে এক বিশেষ ক্লাসিক গভীরতা এনে দিয়েছে। এর ধূসর রং অনেকটা দলিলি ফটোর একটা রূপ তুলে ধরেছে। ‘গোয়ের্নিকা’ ছবিটা পিকাসোর সমগ্র শিল্পীজীবনের সাফল্যকে যেন পুঞ্জীভূত করেছে এবং কিউবিজম তথা বিমূর্ত ও আধুনিক শিল্পকলার যাবতীয় মাধুর্য ও শৈল্পিক উৎকর্ষকে একীভূত করে এক প্রগাঢ় ও সুতীব্র জীবনবোধের জাজ্বল্যমান প্রমাণ হিসেবে এ শিল্প মানবসভ্যতাকে মহিমান্বিত করেছে।

পিকাসোর কিউবিক শিল্প তাঁর বিশাল শিল্প-ভান্ডারের একটা অংশ মাত্র। তিনি এর বাইরেও গড়ে তুলেছেন এক বিরাট পিকাসো-জগৎ। চিত্রকলা ছাড়াও পিকাসো করেন প্রচুর ড্রয়িং। ড্রয়িংয়ে তিনি দৃঢ় Contour রেখা ব্যবহার করেন। এছাড়া প্রচুর ছাপচিত্র করেন পিকাসো। বইয়ের চিত্রগত ব্যাখ্যাও অাঁকেন অসংখ্য। মঞ্চসজ্জা ও সিরামিকের কাজও করেন সমানতালে।

শিল্পের এমন কোনো মাধ্যম নেই যাতে পিকাসো মুক্তভাবে বিচরণ করেননি। ওঁর বিপুল শিল্পসম্ভার আমাদের কাছে অবিশ্বাস্য বলে মনে হয়। আর ওঁর করা সব কাজেই আমরা ওঁর অসাধারণ অভিব্যক্তি ও দক্ষতার পরিচয় পাই।

পিকাসোকে ছাড়া কিউবিজমের আলোচনা অর্থহীন। পিকাসো আজ আর নেই, কিন্তু ওঁর সৃজনকর্মগুলো হাজার পিকাসো হয়ে ওঁর অস্তিত্ব প্রমাণ করে চলেছে। ওঁর বিপুল ঐশ্বর্যমন্ডিত কর্মের ফসলগুলোই যেন আজ ‘পিকাসো’ নাম ধারণ করে আছে।

পরবর্তীকালে  যাঁরা  কিউবিজমে চিত্রাঙ্কন করেন তাঁদের মধ্যে সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছেন জর্জ ব্রাক (Georges Braque)।

 

জর্জ ব্রাক

ব্রাক প্রথমে Fauve-দের মতো কাজ করতেন। পরবর্তী সময়ে পিকাসোর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর কিউবিজমের উন্নতি সাধনে ব্রতী হন। কিউবিজমে ব্রাকের অবদান কোনো অংশেই কম নয়।

ব্রাক ছিলেন কিউবিজম তত্ত্বের উদ্ভাবক। পিকাসো তাঁর জীবনের কেবল একটা সময় কিউবিক রীতিতে কাজ করেন কিন্তু ব্রাক জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত একই রীতিতে কাজ করে গেছেন।

ব্রাকের অন্যতম অবদান হলো পেপার নিয়ে চিত্র, যাকে ফরাসি ভাষায় বলা হতো ‘পেপার কোলাজ’। তিনি একে শিল্পের অন্যতম একটা মাধ্যম হিসেবে প্রকাশ করলেন। ওঁর কোলাজের পরিচয় পাই ওঁর জড়জীবনগুলোতে। তবে শুধু কোলাজ নয়, তেল মাধ্যমেও তিনি জড়জীবন অাঁকেন। এগুলো সবই কিউবিস্ট রীতিতে অাঁকা।  কিউবিস্ট রীতিতেই ব্রাক জড়জীবন এবং নিসর্গদৃশ্যকে গুরুত্বসহকারে এঁকেছেন।

ব্রাকের জড়জীবনের কোলাজগুলোর মধ্যে হলো Bottle Glass and Pipe, The Clarinet প্রভৃতি। ব্রাকের কাজে তেলরঙে জড়জীবন ও মিউজিক্যাল ফর্মসের নাম উল্লেখ করা যায়। The Port এবং Houses at L’ Estaque নামক ছবিগুলো ওঁর কিউবিক রীতিতে অাঁকা নিসর্গদৃশ্যের পরিচয় বহন করছে।

ব্রাক Synthetic কিউবিস্ট ধরনের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। বিষয়বস্ত্তকে অনেকটাই সরলীকরণ করেন ব্রাক। ওঁর শেষ দিককার ছবিতে এক ধরনের স্বতঃস্ফূর্ততার পরিচয় পাওয়া যায়। ব্রাকের Analytical ধরনের কাজ পিকাসোর কাজের অনেকটা কাছাকাছি। ওঁদের জড়জীবন, প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং প্রতিকৃতিগুলোতে তার পরিচয় আমরা দেখতে পাই। উদাহরণস্বরূপ ব্রাকের Houses at L’ Estaque এবং পিকাসোর করা Factory at Horta ছবি দুটিতে এঁদের দুজনকে আলাদা করাই খুব কষ্টকর।

ব্রাকের কাজের বিষয়বস্ত্ত হিসেবে ঘরের অভ্যন্তরীণ দৃশ্য অনেক দেখা যায়। এগুলোর মধ্যে তিনি একটি আলংকারিক বৈশিষ্ট্য দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। অনেক ধরনের নকশা, যেমন বাঁকানো নকশাটি ওঁর চিত্রকর্মে বেশ প্রাধান্য পায়। ছবিতে রঙের ব্যবহার অত্যন্ত কমিয়ে এঁকেছেন তিনি। The Musicians নামের ছবিটিতে এ ধরনের বৈশিষ্ট্যগুলো দেখা যায়। The Musicians তখনকার সময়ে একটা জনপ্রিয় ছবি ছিল, কারণ ছবিটা অনেকটাই সরল প্রকৃতির। এ ছবির মধ্যে শিল্পী অনেক ধরনের বুননের ব্যবহার করেছেন। ছবিতে রংকে বেশ পরিণত হতে দেখা যায়। এটা সম্ভব হয়েছিল কিউবিজমের প্রতি ওঁর অনুরক্ত থাকার কারণে। ব্রাক কিউবিজমের একটা পরিশীলিত রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেন। জটিলতা অতিক্রম করে ছবিতে তিনি এক ধরনের সরলতা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।

 

জুয়ান গ্রিস

গ্রিস পিকাসো এবং ব্রাকের সঙ্গে কিউবিস্ট রীতিতে কাজ করেছেন। ওঁর বাস ছিল স্পেনে এবং ওঁর জীবনকাল ছিল স্বল্প। এ অল্প সময়ের মধ্যেই কিউবিজমকে একটা নিজস্ব রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেন গ্রিস। ওঁর কাজ পিকাসো এবং ব্রাকের চাইতে একটু কাব্যিক ও লালিত্যময়। তিনি কিউবিজমের ভাঙচুরকে নিজের মতো করে ব্যবহার করেছেন।

গ্রিসের কাজে কাঠিন্য তেমন একটা নেই, কিন্তু এক ধরনের স্বতঃস্ফূর্ততা আছে। জুয়ান গ্রিস পিকাসোর একটি প্রতিকৃতি অঙ্কন করেন। এ একরঙা ছবিটি থেকে গ্রিস যেন একটি বর্ণিল ক্ষেত্রে প্রবেশ করলেন।

অনেক সময় দেখা যায় গ্রিস বস্ত্ত থেকে সরে গিয়ে বস্ত্তর আলাদা একটা সত্তা নির্মাণ করেছেন। তিনি বলতেনও যে তিনি নতুন বাস্তবতা নির্মাণ করবেন, যার মাঝে বিমূর্ততার চিহ্ন থাকবে।

গ্রিস কিউবিজমের মধ্যে আলো এবং রংকে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উদ্যোগী ছিলেন। তিনি কিছুটা খেয়ালি মেজাজের অধিকারী ছিলেন। এটা তাঁকে এবং কিউবিজমের আঙ্গিকে ওঁর নিজস্ব বুদ্ধিবৃত্তিকে পরিচালিত করত। ওঁর জীবনের শেষের দিকে চরম কঠোরতার একটা ধরনকে তিনি প্রকাশ করতে আরম্ভ করলেন। এসব ছবিতে বিষয়বস্ত্তগুলো ছিল, যেমন – Mandolin, Table, Guitar with Sheet Music। বাইরের ক্ষেত্রগুলোকে Elemental রঙে সংক্ষিপ্ত করা হয়েছিল। রঙের উজ্জ্বল বর্ণবিকাশকে তিনি ত্যাগ করেন এবং তা মসৃণ করে ছবিতে ব্যবহার করেন। এতে গাঠনিক একটা কাঠামো প্রকাশ পায়। রংগুলো ছিল প্রাথমিক কিন্তু উজ্জ্বল, যেমন আকাশের নীল রং, ম্যান্ডেলিনের হলুদ রং এবং কাপড়ের লাল রং। এগুলোকে নিরপেক্ষ টোনে ব্যবহার করা হলো।

টেবিল এবং জানালার গঠন হালকা ধরনের Ochre দ্বারা বিন্যস্ত হয়েছিল। কোনাকুনি হলুদ রঙের রেখা, যা বামপাশের নীল রঙের কাপড়টিকে ধরে রাখে, সেটা নিখুঁতভাবে সোজা করে অাঁকা হয়েছে। আচ্ছাদনের মাঝখানের Ochre রঙের গভীর গাঢ়ত্ব একইভাবে ডানদিকে বাঁকা হয়ে গিয়েছিল। খোলা আচ্ছাদনের সাদা V-টি Constructivist ভাস্কর্যের একটা অংশ হিসেবে প্রকাশ করতে ডানপাশের টেবিলের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল। গ্রিস এখানে সত্যিকারভাবে স্থাপত্যগত পশ্চাদপসরণ প্রক্রিয়ায় সমতল রঙিন পৃষ্ঠদেশকে একটা কঠিন কাঠামোর ঐক্যে একত্রিত করলেন।

গ্রিস করোটের করা একটি ছবিকে পুনরায় অাঁকলেন। তিনি আগেকার বিষয়বস্ত্তকে কিউবিক ছকের মধ্যে ফেলার চেষ্টা করেন। ওঁর এ ধরনের ছবিটা হলো Woman with a Mandolin।

গ্রিস তাঁর চিত্ররচনায় জড়জীবনকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেন এবং বেশ কিছু জড়জীবন অঙ্কন করেন। আবার অনেক কোলাজও করেন। এ ধরনের ছবির মধ্যে তিনি নতুন ধরনের এক পরিপ্রেক্ষিতকে উদ্ভাবন করেছেন। রঙের ব্যবহারও ছিল উজ্জ্বল। এসব ছবির মধ্যে The Bottle of Bordeaux Wine, The Bottle of Rose Wine, The Chess Board প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। ওঁর সংক্ষিপ্ত জীবনে গভীর শিল্পিত এসব কাজের বেশ কিছু দৃষ্টান্ত দেখা যায়।

ফার্নান্ড লেগার

Fernand Leger একজন ভিন্ন ধরনের শিল্পী। তিনি Cubic শিল্পী হলেও কিছুটা অন্য ধরনের কাজ করতেন। এ শিল্পী Orphism নামে কিউবিজমের একটা ক্ষুদ্র শাখায় মূলত কাজ করেন। তবে এসব শাখা তেমন একটা দাগ কাটতে সমর্থ হয়নি।

Leger-এর কাজের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা লক্ষ করা যায়। তিনি ছবির মাঝে তখনকার মানুষের সামাজিক অবস্থাকে দেখান। তখনকার আধুনিক যন্ত্রসভ্যতার একটা প্রতিক্রিয়া ওঁর কাজের মধ্যে দেখা যায়। যান্ত্রিকতা যে মানুষকে আচ্ছন্ন করছে, বিশেষ করে, শ্রমিক শ্রেণীর সঙ্গে যন্ত্রের যে প্রতিযোগিতা, তার একটা রূপ দেওয়ার চেষ্টা Leger করেন। ওঁর ছবির বিষয়বস্ত্ত ছিল কর্মরত মানুষ, শ্রমিক, যন্ত্রচালনায় শ্রমিক প্রভৃতি। ছবিতে তিনি মানুষকে যন্ত্রের একটা অংশের মতো দেখান। বিষয়বস্ত্তর উপস্থাপনে ওঁর নিজস্ব একটা ঢং ছিল। চিত্রকলা ছাড়াও তিনি কিউবিজম নিয়ে অনেক বক্তব্যও রাখেন। কিউবিজম নিয়ে ওঁর বেশ কিছু লেখা রয়েছে।

Leger-এর চিত্রকলাকে অনুধাবন করলে আমরা দেখব ওঁর চিত্রকলা Cezanne-এর অনুপ্রেরণা থেকে বিকশিত হয়েছিল। পিকাসোর আদি কিউবিজম দ্বারাও তিনি অনুপ্রাণিত হন। ওঁর একটা ছবি Nudes in the Forest দ্বারা অনুপ্রাণিত। কিন্তু Leger-এর হাতে এটি রোবট এবং যন্ত্রের আকারে পরিণত হলো। এখানে Leger বস্ত্তগুলোকে সিলিন্ডারের মতো করে শিল্পে রূপ দিয়েছেন। রঙের গাম্ভীর্য robot-এর অত্যন্ত উদ্দীপ্ত কর্মশীলতার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল। এখানে জান্তব কর্মকান্ডের একটা পরিবেশকে সৃষ্টি করা হলো, যা একটি অমানবিক নতুন পৃথিবীর প্রতীককে যেন তুলে ধরল।

যদিও Leger-এর ভাবাবেগ জ্যামিতিক আকৃতিতে উজ্জ্বল রঙে প্রকাশিত তথাপি তাকে তা একটা প্রান্ত পর্যন্ত চালিত করল। Leger-এর The City নামক ছবিটি চিত্রের রঙিন এলাকা এবং বাস্তবতার শৈল্পিক পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধানের দিকে একটা প্রধান পদক্ষেপ ছিল। ওঁর আগেকার বেশিরভাগ ছবিই তিনি ভাস্কর্যসুলভ রীতিতে অাঁকতেন। ক্যানভাসের পৃষ্ঠদেশ থেকে বের করে এনে আকারগুলো অাঁকতেন অনেকটা রিলিফ ফর্মের মতো। এ ছবিতে তিনি ভাস্কর্যসুলভ উচ্ছ্বাসকে শক্ত স্থাপত্যের মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে নিয়ন্ত্রণ করলেন। এ ছবিটি সিনথেটিক কিউবিজমের অন্তর্ভুক্ত। সামনের অংশের কলামটিকে তিনি Base relief-এর মতো ব্যবহার করেন। কাত করা সমতলটি থাকে পরিপ্রেক্ষিত ও গভীরতার ইঙ্গিতবহ।

ফিগার কম্পোজিশনে Leger সাহসী এক নতুন পৃথিবীর সুনিয়ন্ত্রিত ও কিছুটা স্বতন্ত্র এক প্রতীককে সৃষ্টি করলেন। এর রীতিটা Poussion এবং David-এর ফরাসি ধ্রুপদী গতানুগতিকতা থেকে উঠে এসেছিল। তিনটি মহিলা Figure-এর যান্ত্রিক আকারগুলোকে দৃঢ় আয়তাকার পশ্চাৎপট থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন করে ফিগারগুলোর তিনি Depersonalization করেছেন। Leger খুব কমসংখ্যক চিত্রকলাই অাঁকেন, যেগুলো সম্পূর্ণরূপে বিমূর্ত হিসেবে পরিচিত ছিল। কেবলমাত্র কদাচিৎ দু-একটা করেছিলেন।

তার ‘দ্য গ্রেস প্যারেড’ ছবিটি পরবর্তী চিন্তাগুলোর শুধু একটা চূড়ান্ত রূপ নয়, সার্কাস বিষয়টার মাঝে একটা সারাজীবনের বদ্ধ সংস্কারের রূপটাও যেন তিনি তুলে ধরলেন। এ ধরনের অনেক ক্যানভাসের মধ্যে The Constructor-এ Leger একটা গাঠনিক পথে পরিবর্তিত হলেন। এবং Homage to Louis David ছবিতে পরিবর্তিত হলেন ধ্রুপদী Frontality-র দিকে।

Leger সে রকমই কয়েকজন শিল্পীর একজন, যিনি কখনো কিউবিজমকে ত্যাগ করেননি। তাঁর প্রত্যেক ফলপ্রসূ কাজের মধ্যে তিনি তা সুস্পষ্টভাবে প্রদর্শন করতে সমর্থ হয়েছিলেন এবং এর সম্ভাবনাময়তাকে অবিরত বিশুদ্ধ এবং পরিবর্তিত অভিব্যক্তিতে বর্ণনা করতে সমর্থ ছিলেন।

 

রবার্ট ডিলোনে

কিউবিজমের Coloristic আকৃতিটা দিলেন Robert Delaunay। তিনি শাস্ত্রানুগত কিউবিজম থেকে ভিন্ন পথের বিকাশের প্রবর্তক। Delaunay জন্মের দিক দিয়ে একজন Parisian শিল্পী। প্রথমে তিনি Bateau Lavoir নামে একটা দলের সঙ্গে যোগ দেন, যারা প্রচলিত Fauve এবং Cezanne-এর মাঝে একটা সেতুবন্ধ রচনার চেষ্টা করেছিল। Apollainaire বলেছিলেন যে কিউবিজমের ধারণাকে স্বতঃপ্রবৃত্তভাবে Delaunay-ই প্রকাশ করলেন এবং নিশ্চিতভাবে এটা অনেকটাই ভাবাবেগের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। তিনি বললেন, আকার এবং বিষয়ের মধ্যে রংই প্রধান এবং Impressionist-দের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ওপরই মূলত তা প্রতিষ্ঠিত ছিল। তিনি এক্ষেত্রে Seurat-এর নিরীক্ষাকে আরো উন্নত করতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু তিনিও পিকাসো এবং ব্রাকের মতো আঙ্গিক বিষয়ক সমস্যাবলি নিয়ে কিছুটা অন্যমনস্ক ছিলেন। তবে একই ছবির ভেতর ফিগার এবং বিভিন্ন আকৃতিসমূহকে সংযোজন করার জন্যে উনি কঠোর চেষ্টা করেন। তিনি নিজেই এ ধরনের ছবিকে Simultaneism নাম দিলেন এবং পরবর্তীকালে এসব ছবির মাধ্যমে এর একটা সুনির্দিষ্ট চরিত্রও নির্ধারণ করলেন। তিনি বলতেন, Horizontal বা Vertical বলতে কিছু নেই। আলো সবকিছুকে বিকৃত করে এবং সবকিছুকে ভাঙে। এদিক দিয়ে তিনি Futurist-দের খুব কাছাকাছি আসেন। Delaunay-র মৌলিকত্ব এবং তাঁর গুরুত্ব আধুনিক শিল্পের ইতিহাসে এটাই যে তিনি শিল্পের Motif-এর সঙ্গে ক্রমান্বয়ে এক হতে চেয়েছিলেন। Delaunay-র ছবিকে ‘খন্ডবিখন্ড রংধনু’ বলা হতো এবং একসময় তিনি সম্পূর্ণ বস্ত্তনিরপেক্ষ করে কম্পোজিশন এঁকেছেন। ওঁর ছবির কম্পোজিশন প্রকৃতির মোটিফ থেকে জন্মলাভ করেছিল। কিন্তু রং সাজানো হয়েছিল জ্যামিতিক রীতিতে। Kandinsky মিউনিখে এ সময় যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন তাও ছিল সম্পূর্ণরূপে বস্ত্তবিবর্জিত শিল্প এবং প্রতিমূর্তিহীন। মিউনিখের একটা প্রদর্শনীতে Delaunay-র কাজ অন্তর্ভুক্ত করা হলো। এ সময় Kandinsky ও Delaunay ভাব বিনিময়ের মাধ্যমে একে অন্যের খুব কাছে আসেন এবং তাঁরা একসঙ্গে কিছুটা অগ্রসর হলেন। Delaunay-র প্রভাব জার্মানিতে ফ্রান্সের চাইতে অনেক বেশি ছিল। ওঁর ছবি ছিল অনেকটাই কাব্যিক।

কিউবিজমের আরো দুজন শিল্পী আছেন। এঁরা হলেন চিত্রশিল্পী Albert Glizes ও Jean Metzinger। এঁরা তাঁদের তাত্ত্বিক লেখাতে কিউবিজমের চর্চা করেন। তাঁদের দুজনেরই কিউবিজমের চিত্রবিষয়ক অনেক লেখা রয়েছে। বিশেষত Gleizes নতুন শিল্পের দ্যুতিকে প্রসারণে ছিলেন বিশেষ উদ্যোগী। তিনি কিউবিজমের বিকাশের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত হয়ে পড়েন। ওঁর একটা গুরুত্বপূর্ণ ছবি হলো Harvest Thrashing। এ ছবিতে লাল ও হলুদের ব্যাপক প্রকাশের মাঝে বশীভূত ধূসর সবুজ ও বাদামি রঙের মধ্যেই সমস্ত প্যালেট অবস্থান করল। এটা ওঁর কাজকে একটা রোমান্টিক ওভারটোন (Romantic overtone) এনে দিলো। ওঁর Brooklyn Bridges-এর মধ্যে বিষয়গত যে সৌন্দর্য তা ওঁকে শক্তিশালী কিছু কাজ করার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। এর ফলে তিনি বিমূর্ত কাজ করতেও অনুপ্রাণিত হন। ওঁর পরবর্তী কাজগুলো তিনি ক্রমশ গীতিধর্মী বিমূর্ত আকারে অাঁকলেন, যা বক্ররৈখিক আকারের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল।

Jean Metzinger-এর আদি কিউবিস্ট চিত্রকলাসমূহে সেজানের প্রভাব দূর্নিরীক্ষ্য নয়। ওঁর Bathers নামক ছবিটি যত্নসহকারে সম্পাদিত চতুষ্কোণ নকশার প্রতি ওঁর আগ্রহকে প্রকাশ করল। এখানে রঙের রোমান্টিক উজ্জ্বলতা রৈখিক গঠনের ধ্রুপদী জ্যামিতির বিপরীতে কাজ করেছিল। Jean Metzinger কিউবিস্ট ধারার সঙ্গে ভালোভাবেই যুক্ত হয়েছিলেন। তিনি অপেক্ষাকৃত বড় রঙিন Synthetic Cubist ক্ষেত্রের দিকেই বেশি চালিত হয়েছিলেন। তিনি স্থাপত্যদৃশ্যের আলোকচিত্রসংক্রান্ত ধারণাটিকে আলংকারিক পশ্চাৎপদ হিসেবে ব্যবহার করেন। খুব কম কিউবিস্ট শিল্পীদের দ্বারাই অবশ্য এ তত্ত্ব পরবর্তীকালে গৃহীত হলো।

 

কিউবিক ভাস্কর্য

ভাস্কর্যেও কিউবিজমের যথেষ্ট বিকাশ ঘটে। কিউবিস্ট রীতিতে অনেক ভাস্কর কাজ করেছেন এবং তাঁরা তাঁদের শৈল্পিক কাজের অনেক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। উল্লেখযোগ্য ভাস্করদের মধ্যে ছিলেন Duchamp Villon, Alexander Archipenko, Lipchitz প্রমুখ। অনেক শিল্পী আবার ভাস্কর্য নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করেন, যেমন আমরা Juan Chris-কে দেখতে পাই। তিনি রঙিন প্লাস্টারে Harlequin করেন। এর চক্ষু ছিল বাইরের দিকে বের করা, নাক ছিল কদাকৃতি, ভ্রু, মুখ এবং থুতনি গভীর করে কাটা। সম্পূর্ণরূপে মনুষ্যত্বহীনকে কিছুটা আমেরিকান এবং মহাসাগরীয় উপজাতির বর্বর মুখোশে পরিণত করা হলো। দ্য সিটেড ওম্যান (The Seated Woman) ওঁর আরেকটি উল্লেখযোগ্য শিল্পকর্ম। এখানে শিল্পী ত্রিমাত্রিক একটা বিশেষ ভাবকে পেতে অখন্ডিত বক্র আকার এবং সমতলগুলোর সঙ্গে একটা গতানুগতিক রেনেসাঁর বাঁকানো ভঙ্গিটিকে একত্রিত করলেন। এখানে যদিও শিল্পী গতানুগতিক ভাস্কর্যসুলভ ক্ষেত্রকে ইঙ্গিত করেছেন তথাপি প্রকৃতপক্ষে তিনি বিমূর্তের দিকেই চালিত হয়েছেন। ওঁর সর্বশেষ কাজগুলো Horse এবং Head of The Horse প্রায় কিউবিক ভাস্কর্য হয়ে উঠল।

 

ডুকাম্প ভিলোঁ

বলা চলে এই শিল্পী হলেন প্রথম কিউবিস্ট ভাস্কর্যশিল্পী। তিনি কিউবিক নীতিমালা নিয়ে কাজ করেন। ভিলোঁ একজন সম্ভাবনাময় শিল্পী ছিলেন। অকালমৃত্যু ওঁর সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে দিলো। এঁদের পরিবারটিই ছিল একটি শিল্পী পরিবার। ভিলোঁরা ছিলেন ছয় ভাইবোন। ছয়জনের মধ্যে চারজনই ছিলেন শিল্পী। Villon প্রথম মেডিসিন নিয়ে লেখাপড়া করেন। পরে ভাস্কর্যের প্রতি প্রবল আকর্ষণবশত তা ত্যাগ করেন। তিনি Salon de la National-এ প্রদর্শনী করেন। তিনি প্রথম Rodin কর্তৃক অনুপ্রাণিত হন। ওঁর বংশধরদের মতো একমাত্র তিনিই কিউবিস্টদের কক্ষপথে পরিভ্রমণ করেন। শিল্পী প্রগতিশীল পথে ওঁর একান্ত নিজস্ব বস্ত্তনিরপেক্ষতার দৃষ্টি নিয়ে অগ্রসর হয়েছিলেন। তাঁর এ পরিচয় আমরা ওঁরই সৃষ্টি দুটি প্রতিকৃতিতে দেখতে পাই। এগুলো হলো Maggy এবং Professor Gosset। Maggy-তে মুখের আদল পরিণত হয়েছিল আসলে একটি মুখোশে।

জাক্স লিপশিট্জ

Lipchitz-এর মতো আর কেউই কিউবিক ভাস্কর্যের সম্ভাবনাসমূহকে এত যত্নসহকারে অনুসন্ধান করেননি। অবশ্য কিউবিজম ছিল তাঁর বৃহৎ কর্মক্ষেত্রের কেবল একটা অধ্যায় মাত্র। ওঁর জন্ম প্যারিসে এবং সেখানকার Ecole des Beaux Arts-Academic Lulion-এ তিনি শিক্ষালাভ করেন। পিকাসোর সঙ্গে দেখা করার পর তিনি কিউবিস্ট দলের সঙ্গে সংঘবদ্ধ হন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে Juan Gris এবং Matrix-এর সঙ্গে পরিচিত ছিলেন। Lipchitz ফিগার ভাস্কর্যের একটা ধারাক্রমের মধ্যে থেকে জ্যামিতিক ধরনে ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। পাথর ছাড়াও তিনি এ সময় ব্রোঞ্জ এবং কাঠের কাঠামোতেও ভাস্কর্য নির্মাণ করেন।

ওঁর একটা ভাস্কর্য দ্য লার্জ হেডে (The Large Head) মুখের আকৃতি বিমূর্তের ধারার অধীনস্থ হলো। একটা আয়তাকার আকারকে একটা কৌণিক পৃষ্ঠ দ্বারা ছেদ করা হয়েছিল। এটা দুটি বক্ররেখাকে সৃষ্টি করল। আনুভূমিক Shelves-কে এটা প্রতিরোধ করল এবং চোখ, চোখের ভ্রু এবং কানের ইঙ্গিত প্রদান করল। যদিও এ সবকিছুই ছিল প্রয়োজনীয় তথাপি অভ্যন্তরীণ তীক্ষ্ণরেখা এবং আকারের একটা কাঠামো এই প্রথম একটা পূর্ণাঙ্গ কিউবিস্ট ভাস্কর্যকে রূপ দান করল।

Lipchitz ওঁর পাথর খোদাই এবং কাঠের কাঠামোতে ওঁর বিমূর্ত সরলীকরণের সর্বোচ্চ ধাপকে অনেকটা কষ্ট করেই অর্জন করেন। একটা অন্তর্নিহিত Figure সর্বদাই ওঁর কাজে উপস্থিত ছিল। কিন্তু এগুলো Vertical এবং Horizontal ক্ষেত্রের ধারাক্রমে একে অপরের ভেতর প্রবেশিত অবস্থায় উন্নত করা হয়েছিল। এগুলো করা হয়েছিল কিছু বক্ররেখার দ্বারা বেষ্টিত সীমারেখার মিলিত সংযোজনের দ্বারা।

Lipchitz-এর কাছে কিউবিজম ছিল একটা মুক্তির বিষয়। তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। তিনি বুঝতে পারলেন যে কিউবিজমের ভাস্কর্য এবং চিত্রকলার মধ্যে একটা তাৎপর্যপূর্ণ আন্তঃসম্পর্ক রয়েছে। ভাস্কর্যের আকারের মধ্যে কিউবিস্ট ধারণাটা Lipchitz-এর মধ্যে সারাজীবন পর্যন্ত ছিল, যদিও তাঁর ধারণাটা জ্যামিতিক কিউবিজম থেকে ক্রমে মৌলিকভাবেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।

একসময়ে Lipchitz-এর মধ্যে নতুন কিছু একটা করার ইচ্ছা জাগল। একটা সময় ছিল যখন তিনি তাঁর নির্মেদ কাজগুলো সৃষ্টি করতে আরম্ভ করেন, যাতে তিনি পুরু এবং খালি স্থানকে একটা নিরীক্ষার ধারায় বিপরীত দিকে চালালেন। পরবর্তী আধুনিক ভাস্কর্যের ওপর এই ধারার একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়েছিল। Recling Nude with the Guitar-এ এই ধারায় বেশ কতগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়েছিল। Lipchitz তাঁর অন্য উত্তরসূরিদের মতোই অতিরিক্ত ক্ষমতাশালী একটি প্রভাব হিসেবে রদ্যাঁর বিরোধী হয়েছিলেন। তবে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে রদ্যাঁ হচ্ছেন আধুনিক ভাস্কর্যের প্রভুর প্রভু। আদিম শিল্পের প্রতি Lipchitz-এর ব্যক্তিগত একটা ঝোঁক ছিল, তথাপি ওঁর নিজস্ব অনুপ্রেরণা প্রাথমিকভাবে ধ্রুপদী উৎস থেকেই এসেছিল।

একটি চিন্তা ওঁকে অবিরত আবিষ্ট করত। সেটা হলো আলিঙ্গন, যা অনেক ক্ষেত্রে যৌন ভালোবাসার আবেগকে প্রকাশ করে। অন্যদিকে মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধকেও প্রকাশ করে। Jacob Wrestling with the Angel-এ প্রতিমূর্তিগুলো সেভাবেই প্রকাশ পেয়েছে।

ওঁর সৃষ্ট ষাঁড় এবং শকুনের লড়াই জগতের নির্দয়তার একটা প্রতীকে পরিণত হলো। প্যারিসের বিশ্বমেলার জন্যে তিনি প্লাস্টারের বিশাল শকুনকে প্রমিথিউস দমন করছে এরূপ একটা ভাস্কর্য তৈরি করেন। এ কাজটিকে তিনি অন্ধকারের ওপর আলোর জয়ের একটা প্রতীকে পরিণত করেন। এছাড়া আরো অনেক ভাস্কর্যেই তিনি তাঁর সুদক্ষতার পরিচয় রাখেন।

 

আলেকজান্ডার আর্কিপেনকো

কিউবিস্ট ভাস্করদের অগ্রদূত হিসেবে Alexander Archipenko-র দাবি অবশ্যই প্রবল। Archipenko রাশিয়ার কিয়েভে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি জার্মানির বিভিন্ন স্থানে প্রদর্শনী করেন এবং প্যারিসে ওঁর নিজস্ব School of Sculpture চালু করেন। ওঁর প্রথম দিকের কাজগুলোতেও কিউবিজমের প্রভাব দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে ওঁর The Black Seated Toro ভাস্কর্যটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তাঁর এ কাজটিতে ব্যবহৃত জ্যামিতিক কাঠামোটি সুচারুভাবে সম্পন্ন প্রতিমূর্তিটিকে একটা কাঠিন্য এনে দিলো। তিনি কিউবিজমের ভাবার্থকে যথার্থভাবেই অনুধাবণ করেছিলেন এবং প্রতিমূর্তিগুলোর মধ্যে সূক্ষ্মভাবে শূন্যস্থানকে প্রকাশ করলেন। ওঁর Walking Woman-এর মধ্যে ভাস্কর্যসুলভ প্রতিমূর্তিটি খালি জায়গাসমূহের একটা ধারাক্রমে পরিণত হলো। এগুলো বহিঃরেখা দ্বারা সীমাবদ্ধ ছিল। Archipenko ভাস্কর্যে কোলাজের নতুন নতুন কৌশলের মাধ্যমে বিভিন্ন জিনিস থেকে কাঠামো তৈরি করার একটা কৌশল নির্মাণ করলেন। এ বিভিন্ন জিনিসের মধ্যে কাঠ, কাচ ও নানা রকম ধাতু ছিল। যে কৌশলটাকে তিনি আবিষ্কার করলেন পরবর্তীকালের ভাস্কর্যের বিকাশমান ধারায়, তা ছিল সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কাঠামোর দিক দিয়ে ভাস্কর্যগুলো Space-কে শেষ হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করল। Archipenko পরে যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং ওখানে ওঁর ভাস্কর্য সফলতার একটা অবস্থায় গিয়ে পৌঁছায়।

ভাস্কর্যের জন্যে কিউবিজম ছিল অবরোধ থেকে মুক্ত হওয়ার একটা প্রধান শক্তি। এটা প্রতিমূর্তির চাইতে বিষয়ের দিকের পথটাকে মেলে ধরল। এটা বিমূর্তের দিকে একটা নতুন ধারাকেও পরিচালিত করল। একটা পুরু আকারের Space, শিল্প হিসেবে, ভাস্কর্যকে নতুনভাবে প্রকাশ করল। চিত্রকলার মতো ভাস্কর্যেও কিউবিজম এখনো শেষ হয়ে যায়নি। এটা পৃথিবীর সকল তরুণ শিল্পীর ধারণাকে এবং তাঁদের তৈরি শিল্পকর্মকে আজো প্রভাবিত করে চলেছে।

এ আন্দোলনে পরবর্তী সময়ে আরো অনেক শিল্পীই কাজ করেন। কিউবিজম আন্দোলনকে পুনরায় কখনো ঘনীভূত করার প্রয়োজন আর পড়েনি। এর সংক্ষিপ্ত সময়কালে এটি সৃষ্টিশীল একটি শক্তিকে বন্ধনমুক্ত করেছিল। এ আন্দোলনে যে শক্তি    শিল্পীরা লাভ করেছিলেন তা দু-দুটো বিশ্বযুদ্ধের মাঝে থেকেও সমস্ত পৃথিবীর শিল্পকেই কিছুটা পাল্টিয়ে দিয়েছিল। পরবর্তীকালের শিল্পান্দোলনের উৎকর্ষে কিউবিজমের গুরুত্বটা তাই রয়ে যায় অপরিসীম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন