মুহম্মদ সালাহউদ্দীন
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে ফ্রান্সের চিত্র আন্দোলন, রাশিয়া ও বেলজিয়ামের কবিতা ও অন্যান্য শিল্প_সংস্কৃতির উৎস ছিল প্রতীকবাদ। ১৮৫৭ সালে শার্ল বোদলেয়ার তাঁর প্রথম প্রকাশনা 'লেচ ফ্লিয়ার্স ডু মাল' (দি ফ্লাওয়ার্স অব ইভিল) গ্রন্থের মাধ্যমে ফ্রান্স সাহিত্যে এ ধারার রচনাশৈলী সৃজন করেন। ওই গ্রন্থের কবিতাগুলি ছিল অবক্ষয় ও নান্দনিক কামজভাব সম্পর্কিত। বোদলেয়ার এডগার এলেন পোর রচনাগুলোর ব্যাপক প্রশংসা করেছিলেন। তিনি তাঁর অনেক রচনা ফ্রান্স ভাষায় অনুবাদ করেন। সেগুলি ব্যতিক্রমধর্মী আবেগ ও চিত্রের উপর ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলেছিল। ১৮৬০ থেকে ১৮৭০ সালের মধ্যে প্রতীকবাদের নান্দনিকতাকে স্টেপেন মালার্মে ও পল ভারলেইন উচ্চমাত্রায় নিয়ে যান। ১৮৮০ সালের পর থেকে তাদের ধারাক্রম অনুসারে ওই প্রজন্মের অনেক লেখক এ তত্ত্বের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন। প্রখ্যাত সমালোচক জিন মরিস শিল্প ও সাহিত্যে অবক্ষীয়মানের সাথে প্রার্থক্য নির্দেশ করার জন্যে 'প্রতীকবাদ' শব্দটি আবিষ্কার করেন।
ল্যাটিন শব্দ 'সিমবুলুম' থেকে 'সিমবল'এবং 'সিমবল' শব্দ থেকে 'সিমবলিজম'বা প্রতীকবাদ শব্দটি এসেছে। সিবলিজম শব্দের অর্থ বিশ্বাস ও স্বীকৃতির নিদর্শন। গ্রীক দেশে কোন দ্বি-খ-িত বস্তুকে করে কেউ যদি সেটা বহন করে নিয়ে যেতে সক্ষম হতো তখন তাকে স্বীকৃতি দান হিসেবে 'সিমবুলুন' শব্দটি ব্যবহার করা হতো। প্রাচীন গ্রীক দেশে মাটির পাত্রের মধ্যে নিজের নাম লিখে ওটাকে দ্বি-খ-িত করে জোটের নিদর্শণ স্বরূপ প্রতিবেশী নগর রাষ্টের প্রতিনিধিকে দেয়া হতো।
বিশেষ করে প্রকৃতিবাদ, প্রকৃতবাদ ও ভাববাদ তাদের নিজস্ব কণ্টকতা, দীনতা এবং সাধারণ আদর্শভাবকে উপস্থাপন করার ফলে তাদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের একটা প্রতিক্রিয়া হিসেবে প্রতীকবাদ আবির্ভূত হয়েছিল। এটা ছিল আধ্যাত্মিকতা, উদ্ভাবন ও কল্পনাশক্তির পক্ষে বড় ধরনের একটা প্রতিক্রিয়া। জুরিস কার্ল হোয়াইসম্যানের মতো কিছু কবি প্রতীকবাদী লেখক হওয়ার পূর্বে প্রকৃতিবাদী কবি ছিলেন। তাঁদের এই পরিবর্তন ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতার বিষয়ে আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছিল। নিশ্চিত অবক্ষীয়মান প্রকৃতিবাদী আদর্শ যৌন আবেদন এবং নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের বিষয়কে উপস্থাপন করে। কিন্তু ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে তাদের ক্ষেত্রে এটা ছিল বায়রনিক রোমান্টিসিজম এবং বিশ্ব-শ্রান্তির মিশ্রণ বৈশিষ্ট্যের। রোমান্টিসিজমের পরে এবং প্রতীকবাদের অব্যবহিত পূর্বে ফ্রান্স সাহিত্যে পারনাসিয়ানিজম ধারার অগ্রবর্তী সাহিত্যিকদের সাথে প্রতীকবাদের সম্পর্ক ছিল অনেক জটিল। তখন রহস্যময় ধর্মীয় ও দর্শনের ঐতিহ্যের কারণে এবং রুদ্ধভাবের প্রভাবের ফলে মুক্তভাবে পদ্য লেখাকে অনুমোদন দেয়া হয়। পারনাসিয়ানের স্পষ্টতা ও নৈব্যক্তিকতাকে প্রত্যাখান করে হারমিটিসিজম (রহস্যমূলক ধর্মীয় দর্শন) বুদ্ধিদীপ্ত এবং সুরেলা গুণসম্পন্ন কবিতাকে ধরে রেখেছিল। প্রতীকবাদীরা তখন থিওপিল গুইটারের 'শিল্পের জন্য শিল্পকে নাড়া দেয়ার আদর্শবাণীর প্রশংসা করতে লাগলেন। কিন্তু তারা পারনাসিজমের বিদ্রূপাত্মক বিচ্ছিন্নভাবের রূপ পরিবর্তন করে তা ধরে রেখেছিলেন। আলপেনস্ লিমেরির সম্পাদিত কবিতা সংকলন 'লি পারনেচ কনটেমপোরেইন'-এ স্টেপেন মালার্মে এবং পল ভারলেইন তাদের প্রথম দিকের লেখা প্রকাশ করেছিলেন। পারনাসিয়াজমের নাম এসেছে ওই কবিতা সংকলন থেকে। কিন্তু আর্থার রিমবাউড পারনাসিয়ানদের প্রধান লেখক ফ্রান্স কুইস কোপিসহ ওই মতবাদের আরও কিছু বিশিষ্ট লেখকদের লেখা নিয়ে প্রকাশ্যে বিদ্রূপ করেছেন। শুধু তাই নয় তিনি তাদেরকে নিয়ে অশ্লীল অনুরক্তিমূলক রম্যরচনা প্রকাশ করেছিলেন। জোসেপিন পিলডেন নামে প্যারিসের একজন চিত্র ও সাহিত্য সমালোচক প্রতীকবাদের অতি স্পষ্ট প্রচারক ছিলেন। তিনি রহস্যময় ধর্ম দর্শনের ধারাবাহিক আলোচনাকে উপজীব্য করে ' 'সেলন ডি লা রোজ + ক্রোইঙ্' প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮০ সালের দিকে ছয় ধরনের শিল্প এবং চার ধরনের গানের ধারাবাহিকতা উপস্থাপন করে শিল্পীদের জন্য আধ্যাত্মিকতা, রহস্যময়তা এবং আদর্শবাদিতার কাজকে অাঁকড়ে ধরে রাখার জন্য 'দি সেলোন' ফাঁক সৃষ্টি করেছিল। বেশ কিছু সংখ্যক লেখক 'দি সেলোন'-এর সাথে যুক্ত হয়েছিলেন।
প্রতীকবাদীরা বিশ্বাস করে চিত্রশিল্পই পরোক্ষভাবে নিপট সত্যকে উপস্থাপন করতে পারে। তাঁরা প্রতীক শব্দের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যকে বুঝাতে গিয়ে রূপকশোভিত এবং ইঙ্গিতপূর্ণ আবহ সৃষ্টি করেছেন। ১৮৮৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জিন মোরিস 'সিম্বলিস্ট মেনিফেস্টো প্রকাশ করেন। তিনি সেখানে প্রথম সারিতে শার্ল বোদিলেয়ার, স্টেপেন মালার্মে এবং পল ভারলেইন_এই তিনজন কবির নাম প্রতীকবাদী আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মোরিস ঘোষণা করেছিলেন, 'সাধারণ অর্থ, আলঙ্ককারিক ভাষণ, কৃত্রিম ভাবালুতা এবং বিষয়ের প্রকৃত বর্ণনা_এ সবই প্রতীকবাদের পরিপন্থী। একমাত্র আদর্শকে প্রকাশ করা ছাড়া যার নিজস্ব কোনো উদ্দেশ্য নেই,তাকে আবৃত করে রাখে বোধগম্য কাঠামোর মধ্যে'। প্রকৃতি থেকে জ্ঞান অর্জন, মানুষের কার্যকলাপ এবং বিশ্বের অন্যান্য ঘটমান প্রকৃত বিষয় তাদের বিশ্বাস থেকে বর্ণনা করা যাবে না। এখানে তারা আদিম আদর্শের সাথে গুঢ় সম্বন্ধের প্রত্যক্ষ ক্ষেত্র উপস্থাপন করার চেষ্টা করছেন। স্টেপেন মালার্মে তাঁর বন্ধু কাজালিসকে এক পত্রে লিখেছেন, 'কোন বিষয়কে ছবির মত করে তুলে না ধরে বাদামের মতো তার মধ্যে সৃষ্ট বস্তুকে তুলে ধরতে হবে'। চাপল্যের বড় স্থানকে গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে প্রতীকবাদী কবিদের ইচ্ছা ছিল গুস্তাব কান এবং এজরা পাউন্ডের মতো কবিদের সুস্পষ্ট ও মুক্ত প্রবণতার কবিতা লেখার পদ্ধতিকে সহজীকরণ করা। প্রতীকবাদী কবিতায় বর্ণনার চেয়ে বরং প্রচেষ্টার আহ্বান এবং কবির আত্মার অবস্থা বুঝাতে সাংকেতিক চিত্রাবলি ব্যবহৃত হয়েছিল। জুলেস লাফোর্জ, পল ভেলিরি, আর্থার রিমবাউট প্রমুখ লেখকরা প্রতীকবাদী স্কুলের পদ্ধতি অনুসরণ করেছিলেন। টিএস ইলিয়ট তাঁদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। যদিও বলা হয়ে থাকে যে, এজরা পাউন্ড এবং ইলিয়ট উভয়ই চিত্রকল্পবাদ ধারাকে সম্মতি দান করেছিলেন।
বোদলেয়ারের 'করেসপনডেনস' এবং রিমবাউটের 'ডোভিলেচ' কবিতায় উভয় লেখক একই দর্শন ধারণার অনুসন্ধান করেছিলেন। রোমান্টিক কবিতায় প্রথমদিকে প্রতীক শব্দ ব্যবহার করা হতো। কিন্তু ওইগুলির বিষয় ছিল অনুপম এবং ইন্দ্রিয়গ্রস্ত ধারার কার্যকর সাংকেতিক মূল্য। এমনকি স্বরধ্বনি ও পরিমল সব কিছুকে বিভূষিত করার জন্য প্রতীকবাদীরা ছিল অধিকতর প্রাণবন্ত। যদিও এটার মধ্যে একক বার্তার উৎপন্ন বিষয়ের চেয়ে অধিক কিছু ছিল না। কিন্তু জালের ন্যায় গঠিত উচ্চতর সংযুক্তির ভাবানুষঙ্গ ছিল। প্রতীকবাদীদের 'প্রতীক' রূপক বর্ণনার পরিবর্তে মনের নির্দিষ্ট অবস্থার অভীষ্টতা উপস্থাপন করতে বেশি আহ্বান করে।
প্রতীকবাদের সারাংশ ব্যাখ্যা করার জন্য অনেক প্রচেষ্টা করা হয়েছিল। খুব সম্ভবত পল ভারলেইনের মত এত প্রভাবশালী আর কেউ ছিলো না। ১৮৮৪ সালে তিনি 'পয়েটিস মাউডিস' পত্রিকায় ট্রিসটন করবির, আর্থার রিমবাউট, স্টেপেন মালার্মে, মারসিলিন ডেসবোডেস ও ভালমোর ইত্যাদি প্রখ্যাত প্রতিকবাদী ঘরানার কবিদের উপর ধারাবাহিকভাবে অনেক প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন। তিনি যুক্তি দিয়ে বলেছেন, এসব লেখকদের প্রত্যেকে তাদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট এবং পথের ভিন্নতার কারণে এ যাবৎকালে উপেক্ষিত ও প্রতিভার অভিশাপ পেয়েছেন। ফলশ্রুতিতে এসব লেখকরা হারমিসিজমের স্বকীয় ধারার লেখাকে মোটেই অগ্রাহ্য করতে পারেন নাই। যার ফলে তারা সমকালিনতা থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। তারা সমাজের অসঙ্গতির সাথে জড়িত থেকে দুঃখজনক জীবন যাপন করেছেন এবং তাদের মধ্যে আত্মঘাতি প্রবণতাও দেখা দিয়েছিল। ভারলেইনের তত্ত্ব বোদলেয়ারের সাহিত্যকর্ম দ্বারা প্রভাবিত ছিল। কবিদের ভূমিকা সম্পর্কে ভারলেইন পরোক্ষভাবে দুঃখবাদের নন্দন তাত্তি্বক দার্শনিক আর্থার সোপেন হাওয়ারের লালিত আদর্শের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, 'চিত্রের উদ্দেশ্য হলো পৃথিবী থেকে ইচ্ছা শক্তির দ্বন্দ্ব ক্ষণস্থায়ীভাবে প্রত্যাখ্যান করা'। প্রতীকবাদী ঘরানার কবিদের অনুক্রম সোপেন হাওয়ারের নান্দনিক ভাবনার অনুষঙ্গের সাথে উপস্থাপিত হয়েছিল। তারা উভয়ই পৃথিবীর দ্বন্দ্ব এবং ইচ্ছা শক্তির চিন্তাশীল প্রবণতাকে অস্বীকার করে চিত্রকে বিবেচনায় এনেছেন। শিল্পসুলভতাকে প্রত্যাখান করার কারণে প্রতীকবাদীরা ক্ষতিকর যৌন আবেদন শক্তির কল্পিত বিষয়, নশ্বরতার তীক্ষ্ন ধারণা ও অন্য পৃথিবীর রহস্যময় আখ্যান বিষয় ব্যবহার করেছিল। আলবার্ট সামেইন এটাকে বলেছেন, 'জীবন্ত গাছের মধ্যে ফলের মৃত্যু'। স্টেপেন মালার্মে তাঁর 'লেচ ফেনেট্রিস' কবিতায় এসব বিষয়বস্তু পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। একজন মৃত্যুপথযাত্রী হাসপাতালের শয্যায় তার শরীরের ব্যথা এবং বিষণ্নতা থেকে মুক্তি পাওয়ার আকুলতায় তার নিজের জানালা খুলে যায় ও এটা আবার নিদারুনভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
১৮৮০ সালে ফ্রান্স সাহিত্য সমালোচনায় অন্ধকারচ্ছন্ন নিষিদ্ধ বিষয়ের উপর স্বত-অসংযত লেখকদেরকে বুঝাতে সৃজনচূ্যতি (ডিকেডেনস) শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। এ সৃজনচূ্যত লেখকদের সাথে প্রতীকবাদী ধারার লেখকদের বারবার বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছিল। কিছু সংখ্যক লেখক ওই বিষয়ের সাথে জড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু বেশিরভাগ লেখক এ তত্ত্ব পরিহার করেছিলেন। জিন মরিস তাঁর ইস্তিহারে ওই বিতর্কিত বিষয়ের সমর্থনে সাড়া দিয়েছিলেন। ১৮৮০ সালের শেষের দিকে 'সিমবলিজম' এবং 'ডিকেডেন্স' শব্দ দুটি প্রায় সমার্থক শব্দ হিসাবে ব্যবহার করা হতো। যদিও কোনো কোনো ক্ষেত্রে নান্দনিকতার ধারাকে এক হিসেবে বিচেনা করা হয়। কিন্তু তারা স্বতন্ত্র্য বৈশিষ্টপূর্ণ। ওইসব শিল্পীরাই প্রতীকবাদী যারা চিন্তা এবং আদর্শ ভাবধারাকে গুরুত্ব আরোপ করে। অন্যদিকে সৃজনচূ্যতি রুদ্ধধারা এবং বিষাদগ্রস্ত বিষয়বস্তুর অনুশীলন করে থাকে।
প্রতীকবাদীরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য সাময়িকী প্রকাশ করেছিলেন ও ওসব ধারার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৮৮৬ সালে 'লা ভোগ' নামে প্রথম প্রতীকবাদী সাময়িকী আত্মপ্রকাশ করেছিল। ওই বছরের অক্টোবর মাসে জিন মরিস, গুস্তাব কান ও পল এডাম 'লা সিমবলিস্ট' নামে প্রতীকবাদী সাময়িকী প্রকাশ শুরু করেন। ১৮৯০ সালে আলফেড ভেলেটি 'মারকিউরি ডি ফ্রেন্স' নামে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রতীকবাদী সাময়িকী সম্পাদনা শুরু করেন। ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত ওই সাময়িকীটি প্রকাশিত হয়েছিল। এ ছাড়াও 'লা রিভিও বস্নাঞ্চ' 'লা প্লাম' এবং 'লা ওয়ালেন' নামের আরও কিছু প্রতীকবাদী সাহিত্য পত্রিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
যদিও সাহিত্যে প্রতীকবাদ ও চিত্রে প্রতীকবাদ স্বতন্ত্র্য বৈশিষ্টের। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে মিল রয়েছে। চিত্রের ক্ষেত্রে কখনোও কখনোও প্রতীকবাদকে রহস্যময় প্রবণতার নবোন্মেষ হিসেবে রোমান্টিক ধারার মধ্যে দেখতে পাওয়া যায় এবং আত্ম-সচেতনভাবে বিষাদগ্রস্ত ও নিজস্ব ডিকেডেন্ট আন্দোলনের কাছাকাছি মনে হয়। প্রতীকবাদী শিল্প ও দৃশ্যমান শিল্পের মধ্যে অনেক বিসদৃশ শিল্পী গোষ্ঠী ছিল। তাদের মধ্যে ফ্রান্সের গুস্তাব মারিও, অডিলন রেডন, অস্ট্রিয়ার গুস্তাব ক্লিমট পোলান্ডের ঝাচেক মেকজুয়ুস্কি, নরওয়ের এডবাড মান্স এবং ডাচ-ইন্দোনেশিয়ান জেন টুরুপ উল্লেখযোগ্য। রাশিয়ার মিখাইল ব্রুবেল, নিকোলাস বরিস, ভিক্টর বরিসব মুসাটব, মিখাইল নেসটিরব, এলেনা গেরোখোবা, আমেরিকার মারটিয়াস সারবান, ইলিহু বিডার, মরিচ গ্রেইবস, মেঙ্েিকার ফ্রিদা কাহলো এবং স্পেনের চিত্রশিল্পী রেমেডিওস ভারো প্রভৃতি প্রতীকবাদী চিত্র শিল্পী এবং ভাস্কররা সাহিত্যের প্রতীকবাদের চেয়ে চিত্রের প্রতীকবাদকে সারা বিশ্বে অনেক গুণ বেশি ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন। মূল ধারার মূর্তিশিল্পে প্রতীকবাদীদের প্রতীক চিহ্ন স্পষ্টভাবে উপস্থাপিত হয় নাই। এটি বরং ছিল অস্পষ্ট ও তীব্রভাবে ব্যক্তিগত দ্ব্যর্থবোধক প্রসঙ্গের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। সমসাময়িক শিল্পের কিছু বিনির্মাণ ধারাকে প্রতীকবাদী চিত্র প্রভাবিত করেছিল।
গানের মধ্যেও প্রতীকবাদের প্রভাব রয়েছে। সোপেন হাওয়ারের আগ্রহী পাঠক, অনেক প্রতীকবাদী লেখক ও সমালোচক প্রথমদিকে রিচার্ড ওয়াগনারের গানের প্রতি কৌতূহলী ছিল। প্রতীকবাদের নান্দনিকতা প্রখ্যাত সুরকার ও গীতিকার ক্লাউড ডিবুচিকে প্রভাবিত করেছিল। তাঁর পছন্দের থিয়েটারের গান, রচনার বিষয়বস্তু এবং গানের রাগ প্রভৃতি একচেটিয়াভাবে প্রতীকবাদী আদর্শ দ্বারা প্রভাবিত ছিল। শার্ল বোদলেয়ারের অনেক কবিতা তিনি গান, স্বর ও পিয়ানোর সুর চক্রের সাথে বিন্যাস করেছেন। পল ভারলেইনের অনেক কবিতা ও ১৯১১ সালে বেলজিয়ামের নোবেল বিজয়ী কবি, প্রাবন্ধিক এবং গান লেখক মরিচ মিটার লিংকের অনেক গীতিনাট্য তিনি থিয়েটারে শিল্প গানে রূপ দিয়েছেন। ওই সবই নির্দেশ করে ক্লাউডি ডিবুচি প্রতীকবাদী গানের রাগ ও সৌন্দর্যবোধের দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। মালার্মের 'লাপ্রেস মিডি অন ফন' কবিতার প্রতি অনুপ্রাণিত হয়ে ক্লাউডি ডিবুচি অক্রেস্টার জন্য 'প্রিলুডি এলপ্রেস মিডি অন ফন' নামে ঐক্যতান বিশিষ্ট পূর্ণ একটি গান লিখেন। এটাকে তাঁর শ্রেষ্ঠ কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আলেকজান্ডার স্কিক্রিয়াবিনের সুরও প্রতীকবাদী নান্দনিকতার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। আলবার্ট জিরার্ড জার্মান ভাষায় প্রতীকবাদী কবিতা অনুবাদ করে জার্মান আভিব্যক্তিবাদ ও প্রতীকবাদের মধ্যে সংযুক্তি দেখিয়েছেন।
প্রতীকবাদের স্থিতিশীলতা ও পৌরহিত্য উপন্যাসের চেয়ে কবিতার মাধ্যমে বেশি প্রকাশ পেয়েছে। ১৮৮৪ সালে জোরিস কার্ল হেইন্সম্যানের 'এ বিবোরস' (নেচার অর এগেইন্সস্ট দি গ্রেইন) উপন্যাসটি প্রতীকবাদের নান্দনিকতার অনেক বিষয়ের সাথে সংযুক্ত হয়েছিল। এ উপন্যাসে প্রধান চরিত্রের অদ্ভুত ও ক্ষতিকর মনস্তাত্তি্বক ধারাবাহিকতাকে খুব কমভাবে দেখানো হয়েছে। আইরিশ লেখক অস্কার ওয়াইন্ড ওই উপন্যাস দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। তাঁর বিখ্যাত গান 'সেলম' ও 'দি পিকচার অব ডরিয়ন গ্রে' (পূর্ব জার্মানির অন্ধকার যুগ এবং দর্শন সম্বন্ধীয় উপন্যাস) হাইন্সম্যানের উপন্যাসকে উপজীব্য করে লেখা হয়েছিল।
পল এডামস ছিলেন প্রতীকবাদ উপন্যাসের সবচেয়ে কার্যকর প্রতিনিধি। ১৮৮৬ সালে তিনি জিন মরিসের সাথে যৌথভাবে 'লেস ডিমোসেলস গোবার্ট' উপন্যাসের মাধ্যমে প্রকৃতিবাদ ও প্রতীকবাদের মধ্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ পরিবৃত্তিমূলক রচনা করেছেন। খুব কম সংখ্যক প্রতীকবাদীরা এ ধরনের বিন্যাস সাধন করেছেন। এর মধ্যে ব্যতিক্রম ছিলেন গুস্তাব কান। ১৮৯৬ সালে তিনি 'রি রুই পো' নামে একটি উপন্যাস প্রকাশ করেন। ফ্রান্সের ঔপন্যাসিক ও গল্পকার জুলস বার্বির রূঢ়ভাবে নারী_পুরুষ বিদ্বেষী উপন্যাস 'ডি ওয়ারিভিলি'কে মাঝে মাঝে প্রতীকবাদ উপন্যাস হিসেবেও বিবেচনা করা হয়।
অতি সম্প্রতি ধারার নাটক স্বপ্নের আন্তজগৎ ও দিবা স্বপ্ন বিশিষ্ট নাটকের সাথে সঙ্গতি বজায় রাখতে প্রতীকবাদী থিয়েটারে জটিলতা সৃষ্টি করেছে। অগাস্টি ভিলিয়ার্রস ডি ইসল_এডামের 'এঙ্' নাটকটি যথাযথ প্রতীকবাদী নাটক। ওই নাটকে দেখানো হয়েছে, সপ্তদশ শতাব্দীর শুরুতে ইউরোপের আধ্যাত্মিকতা এবং সংস্কৃতি (রুচিক্রুসিয়ান) সম্পন্ন দুজন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি একে অপরকে হত্যা প্রচেষ্টার সময় তারা উভয়ই আত্মহত্যা করবে এই এক শর্তে একে অপরের প্রেমে পড়ে যায়। কারণ তাদের জীবনে কোনো কিছুুই সমভাবে চরিতার্থ করা সম্ভব নয়। এডমন্ড উইলসন প্রতীকবাদী সাহিত্যের পরিণাম সম্পর্কে ব্যাপক পড়াশোনা করে এ নাটকের নাম রেখেছিলেন 'এঙ্লে ক্যাসল'।
মোরিস মেটারলিংক ছিলেন একজন প্রতীকবাদী নাট্যকার। তিনি ১৮৯০ সালে 'দি বস্নাইন্ড' এবং 'দি ইনট্রুডার', ১৮৯১ সালে 'ইনটিরিয়র', ১৮৯২ সালে 'পিলিয়াস এন্ড মিলাসেন্ড' নাটক লিখেন। পর্তুগীজ লেখক ইজিনিও ডি কাস্ট্রেকে দক্ষিণ পূর্ব ইউরোপের একজন প্রতীকবাদী উপস্থাপক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তিনি 'বিলকিস', 'কিংগেলোর' 'পলিক্রেটস' নাটক লিখে প্রতীকবাদের ফলপ্রসূ তাত্তি্বক হিসাবে বিবেচিত হয়েছিলেন।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে নাট্যকার, অভিনেতা এবং নাটক প্রযোজক লুয়িনপো স্বতন্ত্র্য শৈলীর উপস্থাপনের মাধ্যমে কবিতা ও আবেগের সমন্বিত অবাস্তব থিয়েটার সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন। তিনি প্রতীকবাদী থিয়েটারের উপর গবেষণা করার পর অন্য কোন ধারা চর্চা করেন নাই। প্রতীকবাদী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ার পর তিনি ফ্রান্সে 'ডি এল ইউভ্রি' নামে একটি থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠিত প্রতীকবাদ থিয়েটারে সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে আলফ্রেড জেরীর 'ইবু রুই' নাটক প্রযোজনা করেছেন। ফ্রান্সের নিয়মিত দর্শক শ্রোতাদের সামনে তিনিই প্রথমবারের মত ইবসেন এবং স্টিট্রিনবার্গের মতো নাট্যকারদের নাটক মঞ্চস্থ করেছেন। রাশিয়ান নাট্যকার আন্তন চেখভের শেষদিকের নাটকগুলি প্রতীকবাদী হতাশা দ্বারা দারুণভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। 'থিয়েটার ডি এল ইউব্রি' এবং 'থিয়েটার ডি আর্ট' মঞ্চে ব্যতিক্রমধর্মী নাটক মঞ্চস্থ্য করে প্রতীকবাদী নাট্যকাররা একটা গুরুত্বপূর্ণ ধারা সৃষ্টি করেছিলেন।
ইংরেজি ভাষাভাষী একদল শিল্পীদের সৌন্দর্যানুরাগ ছিল প্রতীকবাদের প্রতিরূপ। প্রতীকবাদের শুরুর দিকে ওই ঘরানার কবিতা, চিত্র ও চিত্র সমালোচকদের সাথে প্রতীকবাদের যথেষ্ট সামঞ্জস্য ছিল। আধুনিকতাবাদের উপর সিম্বলিজমের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। আধুনিক অনেক কবিদের কবিতার মধ্যে এটার প্রভাব স্পষ্ট। টি এস ইলিয়ট, ওয়ালস স্টেভেনস, কনরাড আইকেন, হার্ট ক্রেন, ডবিস্নও বি ইয়েটস প্রমুখ ইংরেজি ও স্পেন ভাষীয় ল্যাটিন আমেরিকার কবি রুভেন ডেরিওর কবিতার মধ্যে প্রতীকবাদ স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। পর্তুগাল সাহিত্যে আধুনিকতাবাদের শুরুতে কেমিলো পিছানহা, ফান্দান্দর্ো ফিয়োসা প্রভৃতি লেখকদের লেখা প্রতীকবাদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, রহস্যবাদ গীতধর্মী কবিতা, আধ্যাত্মবাদ ও ট্রানসসেনডালিজম (যুক্তরাজ্যের পূর্বাঞ্চলের বুদ্ধিবৃত্তিক আধ্যাত্ম দর্শন)। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে এডমন্ড উইলসনের 'এঙ্লে ক্যাসল' ইলিয়ট, পল ভেলরি, মার্সল ফ্রস্ট, জেমস জয়েস, জারটুড স্টিন প্রভৃতি বরেণ্য লেখকদের লেখায় গুরুত্বপূর্ণ ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছিল প্রতীকবাদ। উইলসর জোর দিয়ে বলেছেন, প্রতীকবাদীরা নিবন্ত বিষয়ের মধ্যে স্বপ্নের পশ্চাৎপসরণকে উপস্থাপন করেছেন। সম্ভবত রেনেসাঁ সংস্কৃতিসম্পন্ন সৌন্দর্য যেমনিভাবে অধিক থেকে অধিকতর দক্ষ হতে বাধ্য হয়েছে, এটি নিজেই নিজের উপর অধিকভাবে চালিত হয়েছে_ তেমনিভাবে শিল্পায়ন ও গণতান্ত্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা অতি নিকটে আসার জন্য ছাপ রেখেছে।
বিংশ শতাব্দীর শুরুর পরপরই ফ্রান্স সাহিত্যে প্রতীকবাদের জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার পরও রুশ কবিতায় প্রতীকবাদের ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল। রাশিয়ার প্রতীকবাদ ইস্টার্ন অর্থডঙ্ িও ভস্নাদিমির সলোলভ-এর ধর্মীয় তত্ত্ব দ্বারা প্রভাবিত ছিল। নাম এক হলেও ফ্রান্সের প্রতীকবাদের সাথে এর সামঞ্চস্য ছিল খুব কম। আলেকজান্ডার বস্নক, এন্ড্রুবেলি ও মারিয়ানা তাবেতায়িভাদের মত বিশিষ্ট সাহিত্যিকরা নির্দিষ্ট নির্দেশনা হিসেবে প্রতীকবাদকে গ্রহণ করে সাহিত্য সাধনা করে গেছেন। ১৯১২ সালে প্রকাশিত বেলীর উপন্যাস 'পিটার্রবার্গ'কে রাশিয়ায় প্রতীকবাদের সবচেয়ে বড় উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রাশিয়ার প্রতীকবাদ প্রাথমিকভাবে প্রভাবিত হয়েছিল ফ্রায়োডর তাইউসেভ এবং সলোইয়োভের অযৌক্তিক রহস্যময় কবিতা, দস্তোভস্কির উপন্যাস, রিচার্ড ওয়াগনারের অপেরা, আর্থার সোপেন হাওয়ারের দর্শন, হেনরিক ইবসেনের নাটক, ফ্রান্সের প্রতীকবাদী কবি শার্ল বোদলেয়ার, স্টেপেন মালার্মে, পল ভারলেইন প্রমুখ লেখক দ্বারা। নিকোলাই মিনস্কির 'দি এনসিয়েন্ট ডিবেট', মেরিজকোভস্কির 'অন দি কজ অব ডিকলাইন' ও তৎকালিন রুশ সাহিত্যধারার বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি কারণে রাশিয়ায় প্রতীকবাদ ব্যাপকভাবে উপস্থাপিত হয়েছিল। উভয় লেখকই চরম ব্যক্তিত্ববাদ ও সৃষ্টির কার্যকলাপকে উচ্চ মাত্রায় উন্নীত করেছেন। রাশিয়ায় প্রথমদিকে প্রতীকবাদের বড় মাপের কবি ছিলেন জিনেইডা জিপিয়াস। তিনি সেন্ট পির্টাসবার্গে একটি সেলুন খোলেন। যা পরবর্তিতে 'রাশিয়ার ডিকেডেন্ট' এর প্রধান কার্যালয়' হিসেেব পরিচিতি লাভ করেছিল। বিংশ শতাব্দীতেও প্রতীকবাদের পুরানো ইতিহাস হিসেবে এনড্রি বেলীর 'পিটার্সবাগ'কে রাশিয়ার রাজধানীর সামাজিক প্রতিকৃতি হিসেবে বারংবার উদাহরণ হিসেবে উদ্ধৃত করা হতো।
রাশিয়ার পিটার্সবার্গে জন্মগ্রহণকারী প্রখ্যাত প্রতীকবাদী কবি আলেকজান্ডার বস্নক তাঁর বর্ণনায় বিদ্রোহকে অতীন্দ্রিয় প্রতীকরূপে প্রকাশ করেছেন এভাবে : 'কালো রাত, শুভ্র বরফ/সারাবিশ্বে হচ্ছে স্রষ্টার আবর্ত/ তোমায় আমি দেব না যেতে/হে বাতাস, হে বাতাস / শুভ্র বরফে বাতাস করছে কারুকাজ / নিচ থেকে দিচ্ছে উঁকি প্রিয় বরফ/ আছড়ে পড়েছে লোকজন/সবাইকে কর করুণা, হে ঈশ্বর। (এখানে যীশু খ্রীস্টকে বুঝানো হয়েছে)।
১৮৮০ সালে রোমানিয়ায় আলেঙ্জেনডু মাসিডোনস্কি তাঁর প্রকাশিত ম্যাগাজিন 'লিটারেটোরাল' এর মাধ্যমে যখন একদল যুবক কবিকে পুনর্মিলিত করেন, তখন থেকেই রোমানিয়ার প্রতীকবাদী কবিরা ফ্রান্সের কবিতা দ্বারা সরাসরিভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। টুডুর আরথিজি, আয়ন মিনিলেস্কু, জর্জ বেকুবিয়া, টিস্ট্র্রান জারা, টুডোর ভিনো, টুডোর ভায়ানো প্রমুখ লেখক ও আধুনিকতাবাদী ম্যাগাজিন 'সুরাটুরোল' দ্বারা প্রসংশিত ও উদাহরণ হিসেবে গ্রহণ করার পর ১৯৬৩ সালে বিতর্কিত সাহিত্য সংগঠন জুনিমিয়া ও মিহাল ইমিনেস্কোর ঔজ্জ্বল্যের প্রভাবে রোমানিয়ান প্রতীকবাদ ১৯১০ সাল ও তারপরে অনুপ্রেরণা হিসেবে উদ্ধৃত হয়েছিল।
অভিব্যক্তিবাদ ও পরাবাস্তববাদী চিত্রে প্রতীকবাদ চিত্রশিল্পীদের অনেক প্রভাব ছিল। দুটি আন্দোলনই সরাসরিভাবে প্রতীকবাদ থেকে যথাযথভাবে অবতরণ করেছিল। পাবলো পিকাসোর 'বস্নু পিরিয়ড'-এর সময় তাঁর চিত্রকর্ম 'হারলিকুইন্স'(ষোড়ষ শতাব্দীর ইটালির কৌতুক অভিনেতা), 'নিঃস্ব ব্যক্তি' ও 'ভাঁড়'-এর মধ্যে প্রতীকবাদ এবং বিশেষভাবে পিয়েরে পুসিব ডি চেভানেসের প্রভাব প্রদর্শিত হয়েছিল।
ভূ-দৃশ্য চিত্রের জন্য বেলজিয়ামের প্রতীকবাদ এত বেশি জনপ্রিয় হয়েছিল যে, তখন এটিকে জাতীয় ধারা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। রেনে ম্যাকগ্রিটিকে স্থিতির সৌন্দর্যময় শিল্পী হিসেবে সরাসরি প্রতীকবাদের ধারাবাহিক চিত্রশিল্পী হিসেবে বিবিচনা করা যেতে পারে। জেন ট্রপ এর মত কিছু কিছু প্রতীকবাদী শিল্পীদের মূর্তমান চিত্রশিল্প বক্ররেখা বিশিষ্ট ধরনের 'আর্ট নোভিও'র (আন্তর্জাতিক চিত্র শিল্প এবং বিনির্মান ধারা) দ্বারা সরাসরিভাবে প্রভাবিত ছিল। অনেক আগে গতির ছবি তাদের অবস্থান থেকে প্রতীকবাদী মূর্তমান চিত্রবলি এবং ধারণার সাথে ব্যাপৃত ছিল। জার্মানির অভিব্যক্তিবাদী ছবিগুলি বহুলাংশে প্রতীকবাদী চিত্রাবলির কাছে ঋণী। ডি, ডবিস্নও, গ্রিফথের সতিত্ব রক্ষাকারী 'গুড গার্ল ও মূক ছবি 'বেড গার্লস' থিয়েডা বারা কর্তৃক অভিনীত হয়েছিল। উভয় ছবিতেই গ্রিফথের ব্যাবিলনীয় ধারণার 'ইনটলারেন্স' ছবির মতই প্রতীকবাদের প্রভাবের ধারাবাহিকতা ছিল। ভীতিকর ও ঘৃণাপূর্ণ ছবিতে প্রতীকবাদের চিত্রাবলি অনেকদিন ধরে অটুট রয়েছে। ১৯৩২ সালে ডেনিস পরিচালক কার্ল থিয়েডর ড্রিয়ার্স 'ভামপায়ার' ছবিতে সুস্পষ্টভাবে প্রতীক চিত্রাবলির প্রভাব ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রথমদিকের চিত্র শিল্পী এডওয়ার্ড মাঞ্চ এই ছবির কিছু অংশ তাঁর চিত্রের মধ্যে পুনঃস্থাপন করেছেন।
প্রতীকবাদের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশের ধারা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, শুরু থেকেই এ মতবাদটি লেখক, পাঠক ও শিল্পাঙ্গনে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। দেশ হতে দেশান্তরে ওহার বিস্তৃতি অতি দ্রুততার সাথে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রায় সবদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতিতে প্রতীকবাদ অতি আগ্রহের সাথে সমাদৃত হয়েছে। সিম্বলিজম শিল্প-সাহিত্যে অতি প্রভাবশালী ধারা হিসেবে বিশেষ স্থান অধিকার করে রয়েছে। বিশেষ করে চিত্রকলায় প্রতীকবাদ এত বেশি প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে যে প্রতীক ছাড়া চিত্রকলা চিন্তাই করা যায় না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন