হামীম কামরুল হক
সমরেশ বসুকে মনে পড়ল আজ আবার। সঙ্গে স্যামুয়েল বেকেট। দুজন সব দিক থেকে দুপ্রান্তের লোক। বেকেটকে চেনা অনেক পরে বললেও ঠিক হবে না। তখন আমি দশম শ্রেণিতে। ১৯৮৯ সালে ইংরেজি দৈনিকে তাঁর মৃত্যুর সংবাদে বেকেটের একটা ছবি বের হয়। ছবিটা কেটে রেখেছিলাম। সেই প্রথম বেকেটকে জানা। সমরেশ মারা যান ঠিক আগের বছর ১৯৮৮ সালে। 'বিচিত্রা'য় আলী ইমামের একটি লেখা ছিল তাঁকে নিয়ে। লেখাটি পড়ে চমৎকৃত হই। একজন লেখকের জীবন এত বৈচিত্র্যপূর্ণ হতে পারে!-- সেই প্রথম জানি। বোধ করি এর আগে, মানে হয় ১৯৮৭ সালে কিনেছিলাম সমরেশের বই ‘শেকল ছেঁড়া হাতের খোঁজে’--চট্টগ্রামের রেলস্টেশনের বইয়ের দোকান থেকে। তখন পড়ে তেমন কিছু বুঝিনি। হয়ত ওটাই প্রথম কোনো উপন্যাস যা পড়ে কিছুই তেমন বুঝিনি। তারপর বহুদিন পার হয়েছে। মাঝখানে আমাদের কলেজের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম স্যারের ক্লাসে নদী নিয়ে তিনটি প্রধান উপন্যাসের প্রসঙ্গে ‘গঙ্গা’র কথা ওঠে। ‘পদ্মানদীর মাঝি’ তার আগে পড়া হয়েছে ১০ম শ্রেণিতে থাকতে। তারপর থেকে সমরেশ আমাকে আঁকড়ে ধরলেন বা আমি সমরেশ বসুকে। বিশ্বিদ্যালয়ের প্রায় পুরোটা সময় নানান লেখককে পড়েছি, কিন্তু কেন জানি না সমরেশ বসু এমন টানে টানতেন যা অন্য কারোবেলায় পাইনি। সমাজসংসারের অনেক কিছু ভেঙে ছিলেন। জটিল ও দুর্বোধ্য জীবন ছিল তাঁর। লেখা বলতে লড়াই বুঝতেন, বা লড়াই বলতে লেখাকেই বুঝতেন।
অনেক পরে, মিহির সেনগুপ্তের সঙ্গে দেখা হলে, কথা হলে, বলেছিলেন, সমরেশ বসুর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল দারুণ। বহুবার বহু জায়গায় ভ্রমণসঙ্গী হয়েছিলেন তিনি। কালকূটের নানান লেখায় মিহিরদা ভিন্ন নামে আছেন। সমরেশ বসু মিহিরদাকে এমন কিছু কথা বলেছেন যার শর্ত ছিল মৃত্যুর পরেও কি কোনোদিনও এসব কথা মিহিরদা কাউকে বলবেন না। এবং মিহিরদা বলেননি। বলা যায়ই না বলে সেসব কথা। সবার আগে বলেছিলেন, সমরেশ বসু ছিলেন মানুষ হিসেবে দারুণ সজ্জন।
দেবেশ রায়কে সমরেশ বসু সম্পর্কে জিগ্যেস করতেই, "আহা আহা" করে উঠলেন, বললেন,"কী খাঁটি লেখক!" পরে আরেকদিন বলেছিলেন, "যদিও উপন্যাস কী তেমন বুঝতেন না, কিন্তু কী সব ভয়াবহ বই লিখে গেছেন। বিশেষ করে কিছু গল্প! ‘প্রজাপতি’টা কিছু হয়নি কিন্তু ‘বিবর’!" দেবেশদা মুগ্ধতার সঙ্গে বললেন, " আউটস্ট্যান্ডিং! এমন লেখার কথা তখন চিন্তাও করা যেত না।" দেবেশ রায় প্রতিক্ষণে তাঁর মৃত্যুতে লিখেছিলেন, লেখার টেবিল থেকে চিতায় ওঠার সময় হাতের আঙুলে কালি লেগে আছে।---এই তো লেখকের ঈপ্সিত মৃত্যু। আরও লিখেছিলেন, লিখে টাকা করাটা শিল্পের দিক থেকে কি নৈতিকতার দিক থেকে কোনো দিক থেকেই অন্যায় নয়। লিখেছিলেন, একসময়ের কলকাতার একটা অংশকে দেখতেই হতো সমরেশ বসুর চোখ দিয়ে। লিখেছিলেন আরো কিছু কথা, এর ভেতরে একটা কথা ছিল এমন--- আমাদের যাদের এক আনা সাধ্য নেই লেখক হওয়ার, কিন্তু ষোল আনার ওপর আঠারো আনা সাধ আছে লেখক হওয়ার তারা জানি না-- সমরেশ বসু সেখানে যা যা করেছেন, লিখেছেন সেসব কখনোই সহজ ছিল না। মোদ্দা কথা লেখক কী ও কেন---সমরেশ বসু হলেন এর জবাব।
নানানজনের সঙ্গে লেখা ও লেখকের কথা উঠলেই সমরেশ বসু নিয়ে কিছু বলা আমার বাতিকে পরিণত হয়েছিল। আমার সমরেশপ্রীতিতে বন্ধুদের কয়েকজন বিরক্তও হতো। অন্যদিকে প্রশান্তদা, প্রশান্ত মৃধার সঙ্গে কথা বললে এখনও সমরেশ বসুর কথা না উঠে যায় না। যখনই ও যেখানেই কথা বলি বাংলা উপন্যাসের কথা এলে, বা লেখক নিয়ে কোনো কিছু উঠলে, সমরেশ বসুর প্রসঙ্গ উঠবেই।
দেবেশ রায় বলেছিলেন, ‘'এমন বিক্রি হতো তার লেখা, অথচ মৃত্যুর পর ততটাই কমে গেছে! এটা দুঃখজনক!’' আমি তাঁকে বলেছিলাম," তলস্তয় আর সমরেশ বসু---কেন জানি না, এই দুজনের কোনো লেখা পড়লেই লিখতে ইচ্ছা করে।" শুনে দেবেশদার চোখের ভাষায় ছিল "ঠিক তাই" অভিব্যক্তি।
নানান অত্যাধুনিক লেখকের লেখা পড়েছি। দিনে দিনে সমরেশ বসুর লেখার প্রতি টান কমেছে, কিন্তু 'মানুষ সমরেশ বসু' আজও দারুণভাবে টানেন। কী রোমাঞ্চকর জীবন! লেখক জীবন তো এমনই হওয়ার কথা। বিপুল পরিমাণ বাজে লেখাও লিখতে হয়েছে, কিন্তু তার ভেতরেও যে কিছু উপন্যাস ও ছোটগল্প লিখে গেছেন সেগুলো চিরস্মরণীয়। 'বি.টি. রোডের ধারে', 'নয়নপুরের মাটি', 'শ্রীমতি ক্যাফে', 'উত্তরঙ্গ', 'বাঘিনী', 'সওদাগর' থেকে 'বাথান', 'টানাপোড়েন' কি 'দেখি নাই ফিরে' পর্যন্ত কত কত উপন্যাস। কালকূট নামে 'অমৃতকুম্ভের সন্ধানে' থেকে 'শাম্ব'। 'শাম্ব'তো শ্বাসরুদ্ধকর লেখা। যারা পড়েছেন জানেন কী স্বাদ এর। সমরেশের এক একটা গল্প ভাঙনের মাটিতে নিয়ে দাঁড় করায় আমাদের। ‘আদাব’ থেকে ‘খিঁচাকবলা সমাচার’ মাঝে ‘ছেঁড়া তমসুক’, ‘মানুষ রতন’,‘ পেলে লেগে যা’ কত কত গল্প পাঠককে নাড়িয়ে দিয়েছিল।
সেলিম আল দীন তাঁর ‘ক্রীতদাস’(পরে 'নটপুত্ত' নাম হয়েছে) গল্পটিকে বিশ্বসাহিত্যের সেরা গল্পের একটি বলে উল্লেখ করেছিলেন। কেন?কারণ সমরেশ এ লেখাটিতে পুরো বৌদ্ধদর্শনকে উলটো করে দিয়েছেন। কীভাবে? সে কথা অন্য কোনো দিন লেখা যাবে। আগ্রহীরা সত্যজিৎ চৌধুরীর ‘সমরেশ বসু: আমাদের বাস্তব’ বইটি তাঁর জীবনী হিসেবে পড়তে পারেন। আর নবকুমার বসুর ‘চিরসখা’র কথা নাইবা বললাম।নিজের পিতাকে নিয়ে এমন বিশাল উপন্যাস বাংলা সাহিত্যের আর কেউ লিখেছেন কি, বা বিশ্বসাহিত্যে? জানা নেই।
তারাশঙ্কর দারুণ পছন্দ করতেন সমরেশকে। তাঁকে দেখলে বলতেন,‘‘ এই যে আমার নায়ক এসে গেছে।’’ সমরেশ দেখতেও ছিলেন নাকি প্রায় উত্তমকুমারের মতো সুদর্শন। দিব্যেন্দু পালিতের কথাটাকে বলা যায় সমরেশের সারসংক্ষেপ,কথাটা হলো--- বিভূতিভূষণের প্রকৃতিচেতনা, তারাশঙ্করের ইতিহাসচেতনা, মানিকের ‘কেন’ আর সতীনাথ ভাদুড়ীর পটভূমি সচেতনতা যার মধ্যে একসঙ্গে মিলেছিল, তিনি সমরেশ বসু।
অসীম রায় ও সমরেশ বসু বলে দারুণ আলাপে মাততেন, বহুবিকাল তারা এমন পাশপাশি হেঁটে গেছেন কথা কইতে কইতে। (Kushal Ray-দাদা আরো নিশ্চিত করতে পারেন কি?) দুজন কত ভিন্নমাত্রার লেখক।-- কোথায় যেন পড়েছিলাম। অমিয়ভূষণ মজুমদার পছন্দ করেননি সমরেশের লেখা। আবার সব উল্টে দেওয়া সুবিমল মিশ্র আনন্দবাজারের সবাইকে বাতিল করে দিলেও বলেছিলেন, ‘একমাত্র সমরেশ বসু’। তিনি সমরেশের নাম দিয়ে একটা গল্পও লিখেছিলেন মনে পড়ে। সমরেশ মজুমাদরের ‘কইতে কথা বাধে’( লেখক ও লেখালেখি নিয়ে স্মৃতিমূলক গদ্যের বই)-তে পড়ছিলাম, সমরেশ বসু তাঁকে বলেছিলেন,‘‘ কিছুই পারলাম না! তারাশঙ্করের মতো একটা লাইনও লিখতে পারলাম না। কিছুই হল না।’’
আজ মনটা খুব সমরেশ বসু সমরেশ বসু করছে। বলাবাহুল্য, আজ তাঁর জন্ম বা মৃত্যুদিন কোনোটাই নয়। তিনি জন্মেছিলেন ঢাকার মুন্সিগঞ্জে, ১১ ডিসেম্বর ১৯২৪, আর তাঁর মৃত্যু কলকাতায় ১৯৮৮ সালের ১২ মার্চে।... আরেকটা কথা, সেই ‘শেকল ছেঁড়া হাতের খোঁজে’ উপন্যাসের নামটা অজান্তেই জীবনের ধ্রুবপদ হয়ে উঠেছিল। একটা আধা-সামরিক জীবন ছিল আমার; সেখান থেকে বেরিয়ে কোথায় যাবো জানতাম না, কেবল জানতাম শেকলে আর বাঁধা পড়া যাবে না।
২২ মে ২০২০, শুক্রবার
অনেক পরে, মিহির সেনগুপ্তের সঙ্গে দেখা হলে, কথা হলে, বলেছিলেন, সমরেশ বসুর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল দারুণ। বহুবার বহু জায়গায় ভ্রমণসঙ্গী হয়েছিলেন তিনি। কালকূটের নানান লেখায় মিহিরদা ভিন্ন নামে আছেন। সমরেশ বসু মিহিরদাকে এমন কিছু কথা বলেছেন যার শর্ত ছিল মৃত্যুর পরেও কি কোনোদিনও এসব কথা মিহিরদা কাউকে বলবেন না। এবং মিহিরদা বলেননি। বলা যায়ই না বলে সেসব কথা। সবার আগে বলেছিলেন, সমরেশ বসু ছিলেন মানুষ হিসেবে দারুণ সজ্জন।
দেবেশ রায়কে সমরেশ বসু সম্পর্কে জিগ্যেস করতেই, "আহা আহা" করে উঠলেন, বললেন,"কী খাঁটি লেখক!" পরে আরেকদিন বলেছিলেন, "যদিও উপন্যাস কী তেমন বুঝতেন না, কিন্তু কী সব ভয়াবহ বই লিখে গেছেন। বিশেষ করে কিছু গল্প! ‘প্রজাপতি’টা কিছু হয়নি কিন্তু ‘বিবর’!" দেবেশদা মুগ্ধতার সঙ্গে বললেন, " আউটস্ট্যান্ডিং! এমন লেখার কথা তখন চিন্তাও করা যেত না।" দেবেশ রায় প্রতিক্ষণে তাঁর মৃত্যুতে লিখেছিলেন, লেখার টেবিল থেকে চিতায় ওঠার সময় হাতের আঙুলে কালি লেগে আছে।---এই তো লেখকের ঈপ্সিত মৃত্যু। আরও লিখেছিলেন, লিখে টাকা করাটা শিল্পের দিক থেকে কি নৈতিকতার দিক থেকে কোনো দিক থেকেই অন্যায় নয়। লিখেছিলেন, একসময়ের কলকাতার একটা অংশকে দেখতেই হতো সমরেশ বসুর চোখ দিয়ে। লিখেছিলেন আরো কিছু কথা, এর ভেতরে একটা কথা ছিল এমন--- আমাদের যাদের এক আনা সাধ্য নেই লেখক হওয়ার, কিন্তু ষোল আনার ওপর আঠারো আনা সাধ আছে লেখক হওয়ার তারা জানি না-- সমরেশ বসু সেখানে যা যা করেছেন, লিখেছেন সেসব কখনোই সহজ ছিল না। মোদ্দা কথা লেখক কী ও কেন---সমরেশ বসু হলেন এর জবাব।
নানানজনের সঙ্গে লেখা ও লেখকের কথা উঠলেই সমরেশ বসু নিয়ে কিছু বলা আমার বাতিকে পরিণত হয়েছিল। আমার সমরেশপ্রীতিতে বন্ধুদের কয়েকজন বিরক্তও হতো। অন্যদিকে প্রশান্তদা, প্রশান্ত মৃধার সঙ্গে কথা বললে এখনও সমরেশ বসুর কথা না উঠে যায় না। যখনই ও যেখানেই কথা বলি বাংলা উপন্যাসের কথা এলে, বা লেখক নিয়ে কোনো কিছু উঠলে, সমরেশ বসুর প্রসঙ্গ উঠবেই।
দেবেশ রায় বলেছিলেন, ‘'এমন বিক্রি হতো তার লেখা, অথচ মৃত্যুর পর ততটাই কমে গেছে! এটা দুঃখজনক!’' আমি তাঁকে বলেছিলাম," তলস্তয় আর সমরেশ বসু---কেন জানি না, এই দুজনের কোনো লেখা পড়লেই লিখতে ইচ্ছা করে।" শুনে দেবেশদার চোখের ভাষায় ছিল "ঠিক তাই" অভিব্যক্তি।
নানান অত্যাধুনিক লেখকের লেখা পড়েছি। দিনে দিনে সমরেশ বসুর লেখার প্রতি টান কমেছে, কিন্তু 'মানুষ সমরেশ বসু' আজও দারুণভাবে টানেন। কী রোমাঞ্চকর জীবন! লেখক জীবন তো এমনই হওয়ার কথা। বিপুল পরিমাণ বাজে লেখাও লিখতে হয়েছে, কিন্তু তার ভেতরেও যে কিছু উপন্যাস ও ছোটগল্প লিখে গেছেন সেগুলো চিরস্মরণীয়। 'বি.টি. রোডের ধারে', 'নয়নপুরের মাটি', 'শ্রীমতি ক্যাফে', 'উত্তরঙ্গ', 'বাঘিনী', 'সওদাগর' থেকে 'বাথান', 'টানাপোড়েন' কি 'দেখি নাই ফিরে' পর্যন্ত কত কত উপন্যাস। কালকূট নামে 'অমৃতকুম্ভের সন্ধানে' থেকে 'শাম্ব'। 'শাম্ব'তো শ্বাসরুদ্ধকর লেখা। যারা পড়েছেন জানেন কী স্বাদ এর। সমরেশের এক একটা গল্প ভাঙনের মাটিতে নিয়ে দাঁড় করায় আমাদের। ‘আদাব’ থেকে ‘খিঁচাকবলা সমাচার’ মাঝে ‘ছেঁড়া তমসুক’, ‘মানুষ রতন’,‘ পেলে লেগে যা’ কত কত গল্প পাঠককে নাড়িয়ে দিয়েছিল।
সেলিম আল দীন তাঁর ‘ক্রীতদাস’(পরে 'নটপুত্ত' নাম হয়েছে) গল্পটিকে বিশ্বসাহিত্যের সেরা গল্পের একটি বলে উল্লেখ করেছিলেন। কেন?কারণ সমরেশ এ লেখাটিতে পুরো বৌদ্ধদর্শনকে উলটো করে দিয়েছেন। কীভাবে? সে কথা অন্য কোনো দিন লেখা যাবে। আগ্রহীরা সত্যজিৎ চৌধুরীর ‘সমরেশ বসু: আমাদের বাস্তব’ বইটি তাঁর জীবনী হিসেবে পড়তে পারেন। আর নবকুমার বসুর ‘চিরসখা’র কথা নাইবা বললাম।নিজের পিতাকে নিয়ে এমন বিশাল উপন্যাস বাংলা সাহিত্যের আর কেউ লিখেছেন কি, বা বিশ্বসাহিত্যে? জানা নেই।
তারাশঙ্কর দারুণ পছন্দ করতেন সমরেশকে। তাঁকে দেখলে বলতেন,‘‘ এই যে আমার নায়ক এসে গেছে।’’ সমরেশ দেখতেও ছিলেন নাকি প্রায় উত্তমকুমারের মতো সুদর্শন। দিব্যেন্দু পালিতের কথাটাকে বলা যায় সমরেশের সারসংক্ষেপ,কথাটা হলো--- বিভূতিভূষণের প্রকৃতিচেতনা, তারাশঙ্করের ইতিহাসচেতনা, মানিকের ‘কেন’ আর সতীনাথ ভাদুড়ীর পটভূমি সচেতনতা যার মধ্যে একসঙ্গে মিলেছিল, তিনি সমরেশ বসু।
অসীম রায় ও সমরেশ বসু বলে দারুণ আলাপে মাততেন, বহুবিকাল তারা এমন পাশপাশি হেঁটে গেছেন কথা কইতে কইতে। (Kushal Ray-দাদা আরো নিশ্চিত করতে পারেন কি?) দুজন কত ভিন্নমাত্রার লেখক।-- কোথায় যেন পড়েছিলাম। অমিয়ভূষণ মজুমদার পছন্দ করেননি সমরেশের লেখা। আবার সব উল্টে দেওয়া সুবিমল মিশ্র আনন্দবাজারের সবাইকে বাতিল করে দিলেও বলেছিলেন, ‘একমাত্র সমরেশ বসু’। তিনি সমরেশের নাম দিয়ে একটা গল্পও লিখেছিলেন মনে পড়ে। সমরেশ মজুমাদরের ‘কইতে কথা বাধে’( লেখক ও লেখালেখি নিয়ে স্মৃতিমূলক গদ্যের বই)-তে পড়ছিলাম, সমরেশ বসু তাঁকে বলেছিলেন,‘‘ কিছুই পারলাম না! তারাশঙ্করের মতো একটা লাইনও লিখতে পারলাম না। কিছুই হল না।’’
আজ মনটা খুব সমরেশ বসু সমরেশ বসু করছে। বলাবাহুল্য, আজ তাঁর জন্ম বা মৃত্যুদিন কোনোটাই নয়। তিনি জন্মেছিলেন ঢাকার মুন্সিগঞ্জে, ১১ ডিসেম্বর ১৯২৪, আর তাঁর মৃত্যু কলকাতায় ১৯৮৮ সালের ১২ মার্চে।... আরেকটা কথা, সেই ‘শেকল ছেঁড়া হাতের খোঁজে’ উপন্যাসের নামটা অজান্তেই জীবনের ধ্রুবপদ হয়ে উঠেছিল। একটা আধা-সামরিক জীবন ছিল আমার; সেখান থেকে বেরিয়ে কোথায় যাবো জানতাম না, কেবল জানতাম শেকলে আর বাঁধা পড়া যাবে না।
২২ মে ২০২০, শুক্রবার
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন