নারীবাদী সাহিত্যতত্ত্ব : লুপ্ত অতলান্তিক ও ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ - ০১
অদিতি ফাল্গুনী
“Alas! A woman that attempts the Pen,
Such an intruder on the rights of men,
Such a presumptuous creature is esteemed
The fault can by no virtue be redeemed
-Anne Finch, Countess of Winchelsea.
“তাহার পর বৎসরে বালিকার বয়স নয় বৎসর, তখন একদিন সকালবেলা হইতে তাহাদের বাড়ীতে সানাই বাজিতে লাগিল। উমার বিবাহ। বরটির নাম প্যারীমোহন, গোবিন্দলালের সহযোগী লেখক। বয়স যদিও অধিক নয় এবং লেখাপড়া কিঞ্চিৎ শেখা আছে, তথাপি নব্যভাব তার মনে কিছুমাত্র প্রবেশ করিতে পারে নাই।
উমা বেনারশি শাড়ি পরিয়া ঘোমটায় মুখখানি আবৃত করিয়া, কাঁদিতে শ্বশুরবাড়ি গেলো। মা বলিয়া দিলেন, ‘বাছা, শ্বশুড়ির কথা মানিয়া চলিস। ঘরকন্নার কাজ করিস, লেখাপড়া লইয়া থাকিস নে!।... বহুদিন আর সে লেখে নাই, কিন্তু, একদিন শরৎকালের প্রভাতে একটি গায়িকা ভিখারিনী আগমনীর গান গাইতেছিলো। উমা জানালার গরাদের উপর মুখ রাখিয়া চুপ করিয়া শুনিতেছিলো। একে শরৎকালের রৌদ্রে ছেলেবেলাকার সকল কথা মনে পড়ে, তাহার উপরে আগমনীর গান শুনিয়া সে আর থাকিতে পারিলো না। .. গোপনে গায়িকাকে ডাকিয়া গৃহদ্ধার রুদ্ধ করিয়া বিচিত্র বানানে এই গানটা খাতায় লিখিতে আরম্ভ করলো।
তিলকমঞ্জরী, কনকমঞ্জরী এবং অনঙ্গমঞ্জরী সেই ছিদ্রযোগে সমস্ত দেখিলো এবং সহসা করতালি দিয়া বলিয়া উঠিলো, “বউদিদি, কী করছো আমরা সমস্ত দেখেছি।”
তখন উমা তাড়াতাড়ি দ্বার খুলিয়া বাহির হইয়া কাতরস্বরে বলিতে লাগিলো, “লক্ষ্মী ভাই, কাউকে বলিস নে ভাই তোদের দুটি পায়ে পড়ি ভাই, আমি আর করবো না, আমি আর লিখবো না।”অবশেষে উমা দেখিলো, তিলকমঞ্জরী তাহার খাতাটার প্রতি লক্ষ করিতেছে। তখন সে ছুটিয়া গিয়া খাতাটি বক্ষে চাপিয়া ধরিলো। ননদীরা অনেক বলপ্রয়োগ করিয়া সেটি কাড়িয়া লইবার চেষ্টা করিলো; কৃতকার্য না হইয়া, অনঙ্গ দাদাকে ডাকিয়া আনিলো।... প্যারী মোহন আসিয়া গম্ভীরভাবে খাটে বসিলো, মেঘমন্দ্রস্বরে বলিলো, “খাতা দাও।”
... প্যারীমোহন খাতাটি লইয়া বালিকার লেখাগুলি উচ্চেঃস্বরে পড়িতে লাগিলো; শুনিয়া উমা পৃথিবীকে উত্তরোত্তর গাঢ়তর আলিঙ্গনে বদ্ধ করিতে লাগিলো; এবং অপর তিনটি বালিকা-শ্রোতা খিল্ খিল্ করিয়া হাসিয়া অস্থির হইলো। সেই হইতে উমা আর সে খাতা পায় নাই।
প্যারীমোহনেরও সূক্ষ্মতত্ত্বকন্টকিত বিবিধ প্রবন্ধপূর্ণ একখানি খাতা ছিলো, কিন্তু সেটি কাড়িয়া লইয়া ধ্বংস করে এমন মানবহিতৈষী কেহ ছিলো না।”
(খাতা, গল্পগুচ্ছ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।)
“নারীবাদ’ আমাদের খুব চেনা একটি শব্দ-বন্ধ। ‘নারীবাদী সাহিত্য তত্ব’ ততোটা নয়। কিছু যেনো ছায়া-মেদুরতা। যদিও নারীবাদী সাহিত্য তত্ব হলো বৃহত্তরভাবে নারীবাদের অগ্রাভিযানের গুরুত্বপূর্ণ সেনানী। ঠিক যেভাবে পুরুষতন্ত্রের ‘লৈঙ্গিক রননীতি (Sexual Politics)’- র এক গুরুত্বপূর্ণ রণফ্রন্ট হলো, ‘সাহিত্যিক রাজনীতি’ (Textual Politics)| সত্যি বলতে পুরুষতন্ত্রের এই `সাহিত্যিক রাজনীতি” নামক দানোটি মাঝে মাঝে ছড়িয়ে যায় এর উৎসমুখ `লৈঙ্গিক রাজনীতি’কেও। গত ছয়/ সাড়ে ছয় হাজার বৎসরের পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতার আচ্ছাদনে দানোটি গায়ে-গতরে পুরুষ্টু হয়েছে খুব। কাজেই ছায়ার লড়াই হিসেবে হলেও লড়াই তো শুরু করতেই হয় এই অতিকায় দানোটির বিরুদ্ধে। পশ্চিমা নারীবাদীরা এই লড়াইকে আখ্যা দিয়েছেন "Feminist Literary Theory Movement" বা ‘নারীবাদী সাহিত্যতত্ত্ব আন্দোলন।’
প্রথম ঢিলটি ছুঁড়েছিলেন ভার্জিনিয়া উল্ফ। সেই কোন ১৯২৯ সালে, তাঁর "A Room of One’s Own” গ্রন্থটি প্রকাশের মাধ্যমে। তখনো ব্রিটেনে মেয়েরা ভোটাধিকার পায়নি, পৃথিবী দেখেনি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ। ভার্জিনিয়ার ঐ বইটিই ছিলো বিশ্বে প্রথম নারীবাদী সাহিত্য তাত্বিকতার সূত্রপাত। ‘মেয়েদের লেখা’ বলতে বস্তুটা আসলে কী? কবে থেকে লেখা শুরু করেছে তারা? লেখার জগতে তাদের সংখ্যা কেনো এতো কম, কী তাদের পথে প্রতিবন্ধকতা? ইত্যকার নানা প্রশ্ন আলোচনা করেছিলেন তিনি তাঁর ঐ গ্রন্থে। অতঃপর দীর্ঘ চার দশকের নীরবতা। ষাটের শেষে ও সাহিত্যে মেয়েদের ‘প্রান্তিক (Peripheral)’ ও ‘যৌনবস্ত (Sex Object)’ অবস্থান সম্পর্কে। ভার্জিনিয়ার প্রশ্নগুলোকে আরো ব্যাপক, বিশিদ ও গভীর করে ছড়িয়ে দিলেন তাঁরা।
নারীবাদী সাহিত্যতত্ব: লুপ্ত অতলান্তিক ও ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ - ০২
ভার্জিনিয়ার প্রশ্নগুলোকে আরো ব্যাপক, বিশিদ ও গভীর করে ছড়িয়ে দিলেন তাঁরা। মেরী এলম্যানের Thinking About Women (1903), টিল্লি ওলসেনের `Breaking the Silence (1972),’ প্যাট্রিসিয়া মেয়ার স্প্যাকসের `The Female Imagination (1977),’ এলেন মোয়ের্সের `Literary Women (1946),’ এলেন শোওয়াল্টারের
`A Literature of Their Own: British Women Novelists From Bronte to Lessing (1977),’ জাতীয় গ্রন্থসমূহে উদ্বেগ প্রকাশ করা হলো নারীলেখকদের লেখা সম্পর্কে সমালোচকদের ঔদাসীন্য ও বিরূপতা প্রসঙ্গে। নারীলেখকদের প্রতি সমাজের সার্বিক “ট্যাবুগ্রন্থ” প্রত্যাশা সম্পর্কে। উপরোক্ত লেখকরা অবশ্য কমবেশি সবাই অ্যাংলো মার্কিনী (ব্রিটিশ ও মার্কিনী) স্কুলের অনুসারী। সত্তরের দশকের শেষ ও আশির শুরু হতে এঁদের সাথে “বিরোধাত্মকভাবে” যোগ দিলেন ‘নিউ ফ্রেঞ্চ ফেমিনিজম’ বা ফরাসী নারীবাদী স্কুলটির অনুসারী ও অনুরাগীগণ। ‘বিরোধাত্মক’ শব্দটি এক্ষেত্রে ব্যবহৃত হল একারণে যে লক্ষ্য এক হলেও গবেষণাকৌশল ও প্রয়োগ পদ্ধতিতে এ দুই স্কুলের ফারাক বিস্তর। সরাক্ষণই ঝগড়া লেগে আছে। অ্যালিস জর্ডাইন এ দু’স্কুলের মতবিরোধ নিম্নলিখিত উপায়ে সংক্ষিপ্তসার করেন:
অ্যাংলো-মার্কিনী
|
নিউ ফ্রেঞ্চ ফেমিনিজম
|
১। মানবতাবাদ ও গবেষণামূলক পদ্ধতি, নৃতত্ব, সমাজতত্ব ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান তাত্বিক ভিত্তি হিসাবে কাজ করে।
|
১। ল্যাকোনীয় মনো-বিশ্লেষণাত্মক প্রক্রিয়া (Psycho Analytic Process), রঁলা বার্থ ঘোষিত টেক্সট কেন্দ্রিকতা, ভাষাতত্ব (Linguistic) ও প্রতীকবাদ এই স্কুলের তাত্বিকভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
|
২। এ্যাংলো-মার্কিনী স্কুল দ্ব্যর্থহীনভাবে বিশ্বাস করে কালের গহ্বরে হারিয়ে যাওয়া সাহিত্যিক নারী-ঐতিহ্যের গুপ্তসম্পদে। শোওয়াল্টারের ভাষায় যা সমুদ্রোত্থিত আটলান্টিসের লুপ্ত মহাদেশ।
|
২। ফ্রেঞ্চ নারীবাদীরা সাহিত্যের ইতিহাস খোঁড়াখুঁড়ির বদলে নারীর অবচেতন সত্ত্বাকে সাহসিকতার সাথে আলোয় নিয়ে আসতে চেয়েছেন।
|
৩। নারীর প্রতি সামাজিক শোষণ এর প্রধান আলোচ্য এবং নারীর সামাজিক রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জন এ স্কুলের অভিষ্ট লক্ষ্য।
|
৩। নারীর যৌন অবদমন এ স্কুলের প্রধান আলোচ্য এবং নারীর যৌনপুলক (Jouissance) অর্জন এ স্কুলের অভিষ্ট লক্ষ্য। ভিভিয়ান ফরেষ্টার ও এলেইন মার্কসের ভাষ্যে পুরুষশাসিত সমাজে নারীর অপর নাম যেনো অবদমন। নারীর নিজস্ব ভাষা কোনটি? সোশানা ফেলম্যান প্রশ্ন করেন। প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থেচারের ভাষা কাঠিন্য কি পুরুষ-প্রভাবের লক্ষণ নয়? স্পিভাক এ সূত্রে তৃতীয় বিশ্বের নারীদের প্রশ্নটিও তুলেছেন। ফ্রেঞ্চ স্কুল তাই বারম আর নারীর যৌনতৃপ্তি ও সে সংশ্লিষ্ট পুরুষবাদী রাজনীতির উপর আলো ফেলে। সিনেমায় এই Jouissance অর্জনের প্রশ্নটি তুলেছেন অপর্না সেন। ‘পরমা’ ছবির এই ভয়াবহ মন্তাজটির কথা কেনো যে বাঘা বাঘা চিত্র-সমালোচকরা উল্লেখ করেন না, বোঝা দায়। ঐ যেখানে পরামা মাঝে মাঝেই স্বপ্নে দেখে তার সাদা থান পরা ও কদম ছাঁট চুল বিধবা কিন্তু যুবতী পিসীকে। যুবতী পিসীর অস্ফুট আর্তনাদের সাথে ক্যামেরায় ভেসে উঠছে বিস্তীর্ণ গাঁদা ফুলের প্রান্তর...! এ স্বপ্ন দু’বার দেখছে পরমা। রাহুলের সাথে প্রণয় সম্পর্ক স্থাপনের পূর্বে। গাঁদা ফুলের স্বপ্ন দৃশ্যের কয়েকটি শট পরেই রাহুল ও পরমা এক অবরুদ্ধ, অন্ধকার ঘরে। অন্ধকার ঘরের জানালা খুলছে রাহুল। আসলে সে খুলছে পরমার দীর্ঘদিনের অবদমনের পৃথিবী। ডানা ঝাপটে উড়ে গেল কয়েকটি পায়রা। এক টুকরো আলো। এই শটটিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিধবা পিসীর আর্তমুখ ও গাঁদা ফুলের প্রান্তর পরমা আবার স্বপ্নে দ্যাখে রাহুলের সাথে তার সম্পর্ক সমাজে জানাজানি হয়ে যাওয়ার পর। এখানে বিধবা পিসীর আর্তি প্রাচ্য নারীর অকল্পনীয় যৌন অবদমনের ঈঙ্গিত- এই যৌন অবদমন উত্তরাধিকার সূত্রে বর্তেছে পরমার কাঁধেও। স্পিভাকের তত্ব এভাবেই মূর্ত হয়ে উঠল সেলুলয়েডে। গাঁদা ফুলের প্রান্তর এখানে অভিষ্ট “Jouissance.”
|
৪। এ্যাংলো-মার্কিনী স্কুলের প্রধান স্থপতিদের মাঝে রয়েছেন: মেরী এলম্যান, টিল্লি ওলসেন, প্যাট্রিসিয়া মেয়ার স্প্যাকস, এলেন মোয়ের্স, এলেন শোওয়াল্টার প্রমুখ।
|
৪. জুলিয়া ক্রিস্তেভাঁ, জুলিয়েট মিশেল, হেলেন সিস্কু প্রমুখ ফরাসী স্কুলের স্থপতি।
|
অবশ্য এ দুই স্কুলের মাঝেও রয়েছে আরো হাজারটি স্কুল যেমন, কৃষ্ণাঙ্গঁ নারীদের ÒWomen Talk Collectively” (অ্যাংলো মার্কিনী স্কুলের অন্তর্গত), সমকামী সাহিত্যতত্ব (উভয় স্কুলেই এ শাখাটি অন্তর্ভূক্ত), আন্তর্জাতিকতাবাদ (ফ্রেঞ্চ স্কুলের অন্তর্গত ও গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাকের নির্দেশনায় পরিচালিত) মার্ক্সিষ্ট-ফেমিনিষ্ট স্কুল (আলথুসার, লুকাচ, টরিলয়ম প্রবর্তিত), বক্তব্যে ফ্রেঞ্চ স্কুলের সাথে দারুণ মিল রয়েছে), যারা মাঝে মাঝেই পরস্পরের সীমারেখা উল্লম্ফন করে যায় এবং এ ওর বক্তব্যকে প্রভাবিত করে। যা হোক, নারীবাদীদের এ হাজার মত ও পথের চর্চার মধ্যে থেকে যে কতিপয় জায়মান প্রশ্ন ও প্রসঙ্গ বারম্বার ঘুরে ফিরে আসে সংক্ষেপে তাদের আমরা ৪টি প্রধান শিরোনামায় বিন্যস্ত করতে পারি:
প্রথমত, সাহিত্যে নারী ঐতিহ্যের সন্ধান (Finding a Female Tradition) বা আদি মাতা (Foremothers) অন্বেষণ।
দ্বিতীয়ত, নারীরচিত সাহিত্যের আঙ্গিঁক-আলোচনা ও কালপর্বায়ন।
তৃতীয়ত, সাহিত্যে “নারীসত্বা” বা মেয়েদের “আমিত্বের” সংজ্ঞায়ন (Defining Feminist Writing or Feminine) ও
চতুর্থত, সমকামী, কৃষ্ণাঙ্গঁ ও তৃতীয় বিশ্বের নারী সাহিত্যের বিশাল জগৎ উন্মোচন।
সাহিত্যে নারী ঐতিহ্যের সন্ধান ও আদিমাতা অন্বেষণ
মিশেল ব্যারেট তাঁর ÒIndroduction to Virginia Woolf: Women and Writing” গ্রন্থে বলেছেন যে, নারী লেখকদের প্রধান কর্তব্য হলো সাহিত্যে ‘আমরা (we)’-কে সংজ্ঞাযিত করা এবং নারীর নিজস্ব নন্দন প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু, এই নারী ঐতিহ্যের সন্ধান বা আদিমাতাদের সনাক্ত করার জন্য মেয়েরা যেন গায়ের জোর না খাটায়। অনেক নারীবাদীই যেমন ড্রাইডেনের পরিবর্তে আফ্রা বেন, হেনরি জেমসের স্থলে এডিথ হোয়ার্টন এমনকি উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়র্থের স্থানে ডরোথি ওয়র্ডসওয়র্থ কে পাঠের প্রস্তাব করেছেন। একটি “ওয়্যার এ্যান্ড পীসের” প্রতিতুলনা খোঁজার চেষ্টায় তাঁরা বহু মাঝারি গোছের রচনাকর্মকেও ‘অসাধারণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। অন্যদিকে বনি জিমারম্যান, অড্রেন রিচ ও এলিস ওয়ার্কার নারী সাহিত্যিকদের নিজস্ব ঐতিহ্য, স্বকীয় নাম ও নামিক ইতিহাস এবং পূর্বমাতাদের সন্ধানে ব্রতী হয়েছেন। আর এ দায়িত্ব পালনে তাঁরা প্রশ্ন করেছেন প্রচলিত যাবতীয সাহিত্যিক মূল্যবোধ এবং নারীবাদী আন্দোলনের ভিতর ও বাহির, উভয়দিক হতেই বর্ণবাদী ও বিপরীতকামী মূল্যবোধগুলোকে সনাক্ত করেছেন। বস্তুতঃ শ্বেতাঙ্গ, মধ্যবিত্ত মহিলারা নারীবাদের চর্চা ও মেয়েদের কথা লিখতে যেয়েও ছদ্মবেশী পুরুষতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলোর বিভ্রান্ত চর্চা করেছেন। যেমন, তাদের লেখায় নারীর যে ইমেজটি সবচেয়ে বেশি প্রভাস হয়েছে তা’ ANGEL IN THE HOUSE (গৃহলক্ষী) বা বিশ্বস্ত স্ত্রী, শৌর্যবান নাইটের জন্য প্রতীক্ষারত ও কাব্য-পিপাসু, ভঙ্গুর ও সুন্দরী কুমারীর চিত্র। বলা বাহুল্য, এর প্রতিটি ইমেজই পুরুষতন্ত্রের চাপিয়ে দেয়া ইমেজ। পাশাপাশি কৃষ্ণাঙ্গ অথবা সমকামী লেখিকারা তাদের বর্ণবাদবিরোধী বা সমকামী আন্দোলনের মাধ্যমে বস্তুত: সমাজের প্রচলিত মূল্যবোধের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। সমকামী লেখকারা (লেখক শব্দটি ব্যবহার করা হলো) ‘সমকামিতা’-কে নিছক শারীরিক তৃপ্তির মাধ্যম, ‘বিকল্প জীবন ব্যবস্থা’ কিম্বা সংখ্যালঘু কোনো গোষ্ঠীর চাহিদা হিসেবে দেখেন না বরং প্রচলিত পিতৃতান্ত্রিক সুক্ত, যা নারীর জন্য পুরুষকেই একমাত্র কাম্য ও আরাধ্য বলে মনে করে, সেই সুক্তকেই প্রত্যাখান করে নিঃসীম অবহেলায়। সমকামী নারীরা মহান সাফোর উত্তরসুরী, যে সাফো ‘প্লাটোনিক লাভে’-র দাম্ভিক পুরুষালি অহম ও ‘মননশীলতা’-কে যোগ্য জবাব দিয়েছিলেন।
যা হোক, মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসা যাক। সাহিত্যে নারী ঐতিহ্যের সন্ধান কিভাবে সম্ভব? কারা আমাদের আদিমাতা? কিভাবে খুঁজে পাব তাদের? (চলমান)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন