আজফার হোসেন
জীবনানন্দ দাশ তাঁর ‘অবসরের গান’ নামের কবিতায় একটি পঙক্তি ব্যবহার করেন এভাবে—‘মদের ফোঁটার শেষ হয়ে গেছে এ-মাঠের মাটির ভেতর’। আপাতদৃষ্টিতে এখানে মদের হাফিজীয় চিত্রকল্পে বিন্দুর অন্তিমতা নির্দেশিত হলেও বিন্দুর অন্তহীনতার অনুষঙ্গও জাগ্রত হয়, যখন ‘মাঠের মাটির’ চিত্রকল্পটা হাজির হয়। বিন্দু নিজেই একইসঙ্গে কবিতায় ও গণিতে অন্তহীনতার সঙ্গে অন্তিমতার টেনশান তৈরি করতে পারে।
আবার তাঁর ‘পিপাসার গান’ কবিতায় জীবনানন্দ দাশ এও বলেন, ‘...পেতে থাকে কান,-/ শোনে ঝরা-শিশিরের গান/ অঘ্রানের মাঝরাতে’। ঝরা-শিশির এখানে ঝরে-পড়া বিন্দুই বটে। অর্থাৎ শিশির ঝরে বিন্দুতে বিন্দুতে। ফরাসি কবি পল ভ্যালেরি এমন একটা কথা বলেছিলেন যে, কবিদের কান কথা বলে আর মুখ শোনে। এভাবেও বলা যায়ঃ কবিদের কান দেখে আর তাদের চোখ শোনে। জীবনানন্দ দাশের ‘পিপাসার গান’ কবিতায় ওই ধরণের কান আর চোখ সক্রিয় থাকে, যে কানে আর চোখে শিশিরের গান একইসঙ্গে দেখা ও শোনা যায়, যেমন ওই শিশিরকে দেখা ও শোনার সঙ্গেসঙ্গেই দেখা ও শোনা যায় বিন্দুকেও।
আবার তাঁর ‘পিপাসার গান’ কবিতায় জীবনানন্দ দাশ এও বলেন, ‘...পেতে থাকে কান,-/ শোনে ঝরা-শিশিরের গান/ অঘ্রানের মাঝরাতে’। ঝরা-শিশির এখানে ঝরে-পড়া বিন্দুই বটে। অর্থাৎ শিশির ঝরে বিন্দুতে বিন্দুতে। ফরাসি কবি পল ভ্যালেরি এমন একটা কথা বলেছিলেন যে, কবিদের কান কথা বলে আর মুখ শোনে। এভাবেও বলা যায়ঃ কবিদের কান দেখে আর তাদের চোখ শোনে। জীবনানন্দ দাশের ‘পিপাসার গান’ কবিতায় ওই ধরণের কান আর চোখ সক্রিয় থাকে, যে কানে আর চোখে শিশিরের গান একইসঙ্গে দেখা ও শোনা যায়, যেমন ওই শিশিরকে দেখা ও শোনার সঙ্গেসঙ্গেই দেখা ও শোনা যায় বিন্দুকেও।
ক্যাবালিস্ট পাঠতত্ত্ব—বা ইংরেজিতে যাকে ‘হারমেনিউটিকস্’ বলে—শব্দার্থের ও চিহ্নার্থের ঊনপঞ্চাশটি স্তরের কথা বলে। এখানে আবারো জীবনানন্দ দাশের কবিতায় বিন্দুর ব্যবহারের কথা বিশেষভাবে বলতে হয়, যদিও জীবনানন্দ দাশকে কেতাবি অর্থে বিন্দুবাদী বলা যাবে না, যেভাবে পশ্চিমের কিছু আঁকিয়ে বিন্দুবাদী হিসাবেই বিবেচিত হন। পশ্চিমা বিন্দুবাদ প্রসঙ্গে পরে ফেরা যাবে। তো, নিদেন পক্ষে রূপকার্থে বলা যায়, জীবনানন্দ দাশের কবিতায় বিন্দু যেন অর্থের ঊনপঞ্চাশটি গলি ধরে ঘোরাফেরা করে। জীবনানন্দে বিন্দু মানে খোঁচা, বিন্দু মানে বুদবুদ, বিন্দু মানে ফোঁটা, বিন্দু মানে দণ্ড ইত্যাদি। তবে এটা শুধু অভিধানের ফর্দ নয়। তাই বিন্দু হয়ে ওঠে যন্ত্রণার খোঁচা, মদের গেলাসে ওঠা মিহিন বুদবুদ, ঘাসের ডগায় শিশিরের ফোঁটা, জোছনায় চিকচিক-করা বালি, এমনকি বিন্দু হয়ে ওঠে অনন্তের ‘দুদণ্ড’ও! অর্থাৎ সন্ত কবীরের ‘বিন্দুর-মধ্যে-সিন্ধু’র ধারণাটা ফিরে আসে, যদিও জীবনানন্দের মেজাজ মোটেই কবীরীয় নয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন