খোরশেদ আলম
শাহযাদ ফিরদাউস শাইলকের বাণিজ্য বিস্তার উপন্যাসে এক বিশেষ চিন্তাকে ব্যবহার করেছেন। আধুনিক বিশ্বে গ্লোবালাইজেশন কীভাবে সর্বব্যাপী প্রভাব ফেলেছে তা-ই তিনি উপজীব্য করে তুলেছেন এ-উপন্যাসে। বিশ্বায়নের ফল মুক্তবাণিজ্যের সর্বগ্রাসী অর্থনৈতিক ক্রিয়াকাণ্ড এবং এর নগ্নতা ও কুশ্রীতা এতে স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এ-উপন্যাসের কাহিনি কাঠামো সরল হলেও চিন্তা কাঠামো মোটেও তা নয়। বরং আমাদের এই পৃথিবীর গন্তব্য তথা ভবিষ্যতকেন্দ্রিক চিন্তা এক সৃজনশীল প্রক্রিয়ার অধীনে প্রকাশিত হয়েছে। সভ্যতা-বিবর্তনের ধারায় যে জটিল ও জটিলতর পৃথিবী হাজির তাকেই লেখক বিশেষ প্রক্রিয়া বা কৌশলে তুলে ধরেন। এখানে বাস্তবতাকে আধিভৌতিক করে তোলা হয়েছে। তাই লেখকের কল্পনাশক্তি এ-উপন্যাসের অন্যতম অন্তর্শক্তি। বস্তুত শাইলকের বাণিজ্য বিস্তার উপন্যাসটি দ্রুত বিবর্তনশীল দুনিয়ার সভ্যতা-সঙ্কটের চিত্র তুলে ধরে যা, গ্লোবালাইজেশন নামক এক গোলক ধাঁধায় অন্তরীণ।
শাহযাদ ফিরদাউস শাইলকের বাণিজ্য বিস্তার উপন্যাসে এক বিশেষ চিন্তাকে ব্যবহার করেছেন। আধুনিক বিশ্বে গ্লোবালাইজেশন কীভাবে সর্বব্যাপী প্রভাব ফেলেছে তা-ই তিনি উপজীব্য করে তুলেছেন এ-উপন্যাসে। বিশ্বায়নের ফল মুক্তবাণিজ্যের সর্বগ্রাসী অর্থনৈতিক ক্রিয়াকাণ্ড এবং এর নগ্নতা ও কুশ্রীতা এতে স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এ-উপন্যাসের কাহিনি কাঠামো সরল হলেও চিন্তা কাঠামো মোটেও তা নয়। বরং আমাদের এই পৃথিবীর গন্তব্য তথা ভবিষ্যতকেন্দ্রিক চিন্তা এক সৃজনশীল প্রক্রিয়ার অধীনে প্রকাশিত হয়েছে। সভ্যতা-বিবর্তনের ধারায় যে জটিল ও জটিলতর পৃথিবী হাজির তাকেই লেখক বিশেষ প্রক্রিয়া বা কৌশলে তুলে ধরেন। এখানে বাস্তবতাকে আধিভৌতিক করে তোলা হয়েছে। তাই লেখকের কল্পনাশক্তি এ-উপন্যাসের অন্যতম অন্তর্শক্তি। বস্তুত শাইলকের বাণিজ্য বিস্তার উপন্যাসটি দ্রুত বিবর্তনশীল দুনিয়ার সভ্যতা-সঙ্কটের চিত্র তুলে ধরে যা, গ্লোবালাইজেশন নামক এক গোলক ধাঁধায় অন্তরীণ।
এটা সত্য যে, কোনো না কোনোভাবে আমরা এক জটিল পৃথিবীর মুখোমুখি। গত কয়েক দশকের চিন্তা জগতের পরিবর্তন সেই ইঙ্গিতই বহন করে। আর উপন্যাসও এই চিন্তা-কাঠামো সঙ্গে নিয়ে বিবর্তিত হচ্ছে। কেবল কাহিনি-চরিত্র নয়, উপন্যাসের সঙ্গী হয়ে উঠছে চিন্তা বা দর্শন। বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানের আবিষ্কার গত চার-পাঁচশো বছরে পৃথিবীকে বদলে দিয়েছে আমূল। বিজ্ঞানের আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের অর্থনৈতিক জগতের পরিবর্তনও সাধিত হয়েছে ব্যাপক হারে। পুরনো ধারার অর্থনৈতিক কাঠামো আর বাজার ব্যবস্থা ছেড়ে বিশ্ব এখন আধুনিক নানা সিস্টেমের প্রতিনিধিত্ব করছে। ক্রমশই প্রতিযোগিতাময় এক বিশ্ব বাজারের মুখোমুখি হয়েছি আমরা সবাই। এই বদলে যাওয়া বাজার অর্থনীতির অপর নাম মুক্তবাজার অর্থনীতি। অন্য অর্থে এটাই বিশ্বায়ন বা গ্লোবালাইজেনের ফল। থমাস ফ্রিডম্যান নামক একজন তাত্ত্বিক বলেন, “ঞড়ফধু মষড়নধষরুধঃরড়হ রং ‘ভধৎঃযবৎ, ভধংঃবৎ, পযবধঢ়বৎ, ধহফ ফববঢ়বৎ.”
বলাবাহুল্য, এই গ্লোবালাইজেশনের ফল সুদূরপ্রসারী। শুদ্ধ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে তা আর নিবদ্ধ নেই। এখন বিশ্বপ্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মানুষের অন্তর্জগত বা আত্মাকেও অন্তর্ভূক্ত করা জরুরি। সংস্কৃতি কারখানার ব্যাপক উৎপাদন বিশ্বের প্রতিটি মানুষকে এক নতুন পরিচয়ে পরিচিত করে তুলছে। বিশ্বায়নের অন্তর্ভূক্ত তাই এখন আমাদের ঘর ও বাইরের সবকিছু। বিজ্ঞানের চরম সুবিধাপ্রাপ্ত মানুষ আজ আধুনিক। কিন্তু এই আধুনিক মানুষ সর্বান্তকরণে এক ট্রাজিক পরিণতির শিকার। আর সেই ট্রাজেডি হচ্ছে টাকা। ‘ডলার’-এর খোপে বন্দি আজ সে বহুজাতিক সংস্কৃতির বিশ্ব নাগরিক। আত্মমর্যাদা আর আত্মক্ষয়ের মাধ্যমে সে জানান দিচ্ছে তার বন্দি চেতনালোকের সাতকাহন। শাহযাদ ফিরদাউস মানব জগতের সেই গভীর ট্রাজেডিকেই ধরতে চান। যার আত্মকুহরে বন্দি হয়ে আজ সে আত্মপরিচয়হীন, আত্মবিক্রীত মানুষ।… চলবে…
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন