আর্নেস্ট হেমিংওয়ের ‘ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি’ : মোস্তফা অভী



"The Old Man and the Sea" আর্নেস্ট হেমিংওয়ের লেখা একটি কালজয়ী উপন্যাস, যা সরল, অথচ গভীর অর্থবোধক গল্পের মাধ্যমে মানব জীবনের সংগ্রাম ও মূল্যবোধকে তুলে ধরে। ১৯৫২ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাসটি সাহিত্যের জগতে চিরস্থায়ী আসন লাভ করেছে। এটি কিউবার এক বৃদ্ধ জেলে সান্তিয়াগোর গল্প, যিনি জীবনের শেষ বয়সেও নিজের ভাগ্য বদলানোর আকাঙ্ক্ষা নিয়ে সমুদ্রের গভীরে গিয়ে লড়াই করেন।

বই পড়ে লাভ কী

 মুরাদুল ইসলাম

বই পড়ার গুরুত্ব বই পড়ে লাভ কী?

প্রারম্ভিক

বই পড়ার গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা নিয়ে স্কুলে দুয়েকটা প্রবন্ধ পড়ানো হয়। সেখানে অনেক নীতিকথা বিদ্যমান এবং যে জাতি যত বেশী বই পড়ে সে জাতি তত বেশী উন্নত এরকম কথা থাকে। কিন্তু এই ধরনের কথায় এখানকার ৯০ ভাগের উপরে মানুষ বিশ্বাসই করেন না বলে মনে হয়, আর নয় ভাগ অবিশ্বাসী ভঙ্গিতে এই ধরনের চিন্তা পাশে সরিয়ে রাখেন। এবং ধরা যেতে পারে মাত্র এক ভাগ এই ধরনের কথায় সত্যি সত্যি বিশ্বাস করেন।

অর্থাৎ, বই পড়ানোর শিক্ষা নীতিশিক্ষামূলক অবস্থানেই রয়ে গেছে। কার্যক্ষেত্রে তার প্রয়োগ হয় নাই। মানুষ এর প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারেন নাই। অতএব, সেই শিক্ষাটি ব্যর্থই হয়েছে।

সিরীয় পুরাণ: বা'আল হাদাদের কাহিনি

image

image

১৯২৮ সালে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে, ভূমধ্যসাগরের উপকূলবর্তী এলাকায় জমিতে  লাঙল টানার সময় একজন কৃষক অদ্ভুত এক আবিষ্কার করে বসেন। তিনি খুঁজে পান অতি  প্রাচীন এক কবর। চাঞ্চল্যকর এই প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারটি পরবর্তীতে দরজা  খুলে দেয় ৬০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের প্রাচীন নগরী ‘উগারিত’-এর। খ্রিস্টপূর্ব  ১৪৫০ থেকে ১২০০ সাল পর্যন্ত এই নগরের সভ্যতা তার উন্নতির শীর্ষে অবস্থান  করছিলো। নগরের ধ্বংসাবশেষ খননের পর সেখান  থেকে প্রচুর কাদামাটির ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ধর্মীয় বর্ণনা  সম্বলিত ট্যাবলেটে ‘বা’ল-হাদাদ’ নামক দেবতার সাথে দেবতা ‘ইয়াম’ এবং ‘মট’-এর  যুদ্ধের উল্লেখ পাওয়া গেছে।

কোরিয়ার সাহিত্য ও সংস্কৃতি

 কোরিয়ান সাহিত্য হল কোরিয়ানদের দ্বারা উত্পাদিত সাহিত্যের অংশ, বেশিরভাগ কোরিয়ান ভাষায় এবং কখনও কখনও ক্লাসিক্যাল চীনা ভাষায় । কোরিয়ার 1,500 বছরের সাহিত্য ইতিহাসের বেশিরভাগের জন্য, এটি হানজা ভাষায় লেখা হয়েছিল । এটি সাধারণত শাস্ত্রীয় এবং আধুনিক যুগে বিভক্ত, যদিও এই পার্থক্য কখনও কখনও অস্পষ্ট হয়। কোরিয়া হল বিশ্বের প্রথম ধাতু এবং তামার প্রকার, বিশ্বের প্রাচীনতম পরিচিত মুদ্রিত নথি এবং বিশ্বের প্রথম বৈশিষ্ট্যযুক্ত লিপি । 

ঋষি ও সংগ্রামী কো উন

অঙ্কুর সাহা

‘ইট ইজ এজইফ ব্রেথস হিজ পোয়েমস বিফোর পুটিং দেইম অন পেপার। আই ফিল দ্যাট হিজ পোয়েমস এমার্জ ফ্রম হিজ লিপস র‌্যাদার দেন হিজ পেন।’- জনৈক সমালোচকের মন্তব্য

 ॥ ১ ॥
তাঁর একটি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের ভূমিকায় অ্যালেন গিনসবার্গ (১৯২৬-১৯৯৭) লিখেছিলেন কো উন ইজ অ্যা ম্যাগনিফিসেন্ট পোয়েট. কম্বিনেশন অব বুদ্ধিস্ট কগনোসেন্টি পলিটিক্যাল লিবারেশন অ্যান্ড ন্যাচারাল হিস্টোরিয়ান।’ তিনি কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, সাহিত্য সমালোচক, রাজনৈতিক কর্মী, মুখর সরকার বিরোধী এবং অবসরপ্রাপ্ত বৌদ্ধ শ্রমণ। কোরিয়ার অন্য কবি লেখকরা তাঁকে ডাকেন “কেওবং” (উতুঙ্গ পর্বশৃঙ্গ) নামে। কিন্তু তিনি পাহাড়চূড়ার নিভৃত প্রাসাদে বসবাস করেন না, তাঁর অবস্থান দেশের সাধারণ মানুষজনের সঙ্গে। তাঁর নাম বিষয়ে একটি জরুরি কথা-“কো” তাঁর পদবি বা অন্তনাম; চিন বা জাপানের প্রথামতন কোরিয়াতেও পদবি দিয়ে নামের শুরু। তাঁর জন্মের সময় প্রদত্ত নাম “উন-তে”। অর্থাৎ পুরো নাম “নে-তে”; কবিতা লেখেন “কো উন” নামে।

খোয়াবনামা: খোয়াবের আড়ালে বাস্তবতার কথা

 আশরাফুল আলম তাসনীম 

খোয়াবনামার প্রচ্ছদ। প্রচ্ছদ শিল্পীঃ ঢালী আল মামুনখোয়াবনামা’র প্রচ্ছদ; প্রচ্ছদ শিল্পী: ঢালী আল মামুননব্বইয়ের দশকের কথা। বাংলাদেশের সাহিত্যের গতিপ্রকৃতি সংক্রান্ত এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় কলকাতাস্থ বাংলাদেশের হাইকমিশনে। সভাপতি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। বাংলাদেশের অনেক লেখকের মতো আখতারুজ্জামান ইলিয়াসও সেই সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন। ‘বাংলাদেশের উপন্যাসে ভাষা কী হবে‘ এই বিষয়ের উপর সেখানে তিনি বক্তব্য রাখেন। অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় সেদিন তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাহিত্যের ভাষা হবে বাংলাদেশের জনগণের মুখের ভাষার কাছাকাছি, তাতে পশ্চিম বাংলার চেয়ে বাংলাদেশের উপন্যাসের ভাষা যদি সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে যায়, তবে তাকে অস্বাভাবিকভাবে নেয়ার অবকাশ নেই।  

খোয়াবনামা : জীবন জিজ্ঞাসা ও সমকাল

চৌধুরী শাহজাহান

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস (জন্ম ১২ ফেব্রম্নয়ারি ১৯৪৩, মৃত্যু ৪ জানুয়ারি ১৯৯৭) সমকালীন কথাসাহিত্যের  একজন ব্যতিক্রমধর্মী কথাকার। তিনি জীবনকালেই বাংলা সাহিত্যে একটি মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। জীবনোপলব্ধির সততা, সমাজ বাস্তবতা ও মৃত্তিকালগ্ন জীবন-চেতনায় সমৃদ্ধ ঔপন্যাসিক ইলিয়াস কথাসাহিত্যেই বিচরণ করেছেন আমৃত্যু। তিনি লিখেছেন কম, কিন্তু ভেবেছেন বেশি। তাঁর কাছ থেকে আমরা পেয়েছি বিখ্যাত ত্রিশটি ছোটগল্প, দুটো উপন্যাস ও একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তাঁর উপন্যাসের পটভূমি বিশাল। দেশ-বিভাগজনিত নানা ঘটনা, উপ-ঘটনা, রাজনীতি, হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা, ইতিহাস ও লোকবিশ্বাস, পুরাণ-মিথ, গণ-আন্দোলন, গ্রামীণ জীবন ও ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা, অজ্ঞতা ও কুসংস্কার, মানবিক বিপর্যয় ইত্যাদি নানাবিধ প্রসঙ্গ-অনুষঙ্গ চিত্রায়িত হয়েছে তাঁর রচনায়। সমকালীন মুসলমান মধ্যবিত্তের জাগতিক ও মানবিক চিন্তা-চেতনার মধ্যে তিনি গ্রামীণ পরিবেশ, লৌকিক জীবনাচার, ধর্মীয় সংস্কার ও বিশ্বাসের চিত্র অংকন করেছেন। ইতিহাস-ঐতিহ্যের অনিবার্য সম্পর্ক, মানব-অস্তিত্বের বিচিত্র সংকট, শ্রেণি-বিভাজন ও শ্রেণি-সংগ্রাম তাঁর উপন্যাসের বিষয়বস্ত্তকে করেছে বিশ্বাসযোগ্য। বাঙালি জাতির আবহমান সংগ্রামের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গ এনে ইলিয়াস নিপুণ দক্ষতার পরিচয়

হাংরি আন্দোলন, অ্যাংরি ইয়াং ম্যান, বিট জেনারেশান: আন্দোলনগুলোর পার্থক্য

 ১৯৬১ সালে হাংরি আন্দোলনের প্রথম ইশতাহারটি প্রকাশিত হওয়ামাত্র দর্পণ, জনতা, জলসা ইত্যাদি হালকামেধা পত্রিকাসহ অমৃত, দৈনিক বসুমতী, দৈনিক যুগান্তর-এর মতন বহুগ্রাহ্য পত্রিকার পাশাপাশি বাংলা ভাষাসাহিত্যের বেশ কয়েকজন অধ্যাপক হাংরি, অ্যাংরি এবং বিট, তিনটি বিভিন্ন দেশের ঘটনাকে এমনভাবে উল্লেখ ও উপস্হাপন করতেন, যেন এই তিনটি একই প্রকার সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তি, এবং তিনটি দেশের আর্থসামাজিক কাঠামো, কৌমসমাজের ক্ষমতানকশা, তথা ব্যক্তিপ্রতিস্ব নির্মিতির উপাদানগুলো অভিন্ন । পত্র পত্রিকার লেখক ও সাংবাদিকরা ক্রেতা সুড়সুড়ির কথা মাথায় রেখে এই ধরণের মন্তব্য করতেন, কেননা অ্যাংরি ইয়াং ম্যান ও বিটদের সম্পর্কে বহুবিধ গুলগল্প ততদিনে পৃথিবীময় চারিয়ে দিতে সফল হয়েছিল ইউরোপ আমেরিকার ক্ষমতার মিডিয়ে, যখন কিনা বঙ্গসংস্কৃতির মাঝে আচমকা এসে-পড়া হাংরি আন্দোলনকে মূর্ততা দেবার জন্য বাঙালির ইতিহাস থেকে কোনো সমান্তরাল ঘটনা তাঁরা দ্রুত খুঁজে পাননি ।

স্যাড জেনারেশন : কবিতার বাঁকবদল

মাহমুদ কামাল

মাত্র ৮টি পৃষ্ঠা। বুলেটিনের সংখ্যা সাকুল্যে এক। সাল ১৯৬৪। মূল্য ১৩ পয়সা। ক্ষীণকায় এই বুলেটিন যার নাম আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ দিয়েছেন প্যাম্পলেটÑ বাংলা সাহিত্যেরÑ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই প্যাম্পলেট ইতিহাস হয়ে আছে। ইতিহাসের নাম দ্য স্যাড জেনারেশন। প্রথম, দ্বিতীয় ও শেষ পৃষ্ঠায় যথাক্রমে ইংরেজিতে রফিক আজাদের ঘোষণাপত্র ও প্রশান্ত ঘোষালের চম্পাবতী বিষয়ক লেখাসহ ৬টি কবিতা ছাপা হয়েছে। কবিক্রম যথাক্রমেÑ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, ইউসুফ পাশা, আসাদ চৌধুরী, শহীদুর রহমান, বুলবুল খান মাহবুব ও ফারুক আলমগীর। সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে স্যাড জেনারেশন এবং রফিক আজাদ ছিল একে অপরের পরিপূরক। উত্তরকালে যদিও রফিক আজাদসহ স্যাড জেনারেশনের সদস্যরা ঘোষণাপত্র অনুযায়ী তাদের কবিতায় সেই ধারাটি আর অব্যাহত রাখেননি। কিন্তু রফিক আজাদের প্রথম দিককার কবিতা পর্যালোচনা করলে তারই লেখা ঘোষণাপত্রের ছায়া স্পষ্ট হয়ে ওঠে সেসব কবিতায়। দশক বিচারে তিনি গেল শতকের ষাট দশকের অন্যতম প্রধান কবি।