সৈয়দ মুজতবা আলী : জীবনী ও সাহিত্যকর্ম

 সৈয়দ মুজতবা আলী

সৈয়দ মুজতবা আলী আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম রম্যরচয়িতা ও জীবনবোধের নানামুখি অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ একজন সাহিত্যিক ছিলেন সৈয়দ মুজতবা আলী । পিতা তৎকালীন শ্রীহট্ট জেলার করিমগঞ্জের বিশিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রার সৈয়দ সিকান্দার আলী ও মাতা সৈয়দ আয়তুল মান্নান খাতুনের চার সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয় । বহুভাষাবিদ এই পন্ডিত বাংলা সাহিত্যে বিবিধ ভাষার শ্লোক ও রূপক ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যকে এক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য দান করেছেন ।

  • সৈয়দ মুজতবা আলী জন্মগ্রহণ করেন – সিলেটের করিমগঞ্জে, ১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯০৪ সালে (পৈত্রিক নিবাস হবিগঞ্জের উত্তরসুর গ্রাম) ।
  • বিশিষ্ট এই সাহিত্যিক শিক্ষাজীবন – ১৯২৬ সালে শান্তিনিকেতন হতে বিএ ডিগ্রি অর্জনের পর জার্মানির বর্ন বিশ্ববিদ্যালয় হতে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বে ১৯৩২ সালে পিএইচডি ডিগ্রি এবং মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় হতে মুসলিম ধর্মশাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন ।
  • সৈয়দ মুজতবা আলী কর্মজীবন শুরু করেন কাবুলের কৃষিবিজ্ঞান কলেজের ফরাসি ও ইংরাজি ভাষার প্রভাষক হিসেবে (১৯২৭-২৯ সাল পর্যন্ত) ।
  • সৈয়দ মুজতবা আলী যে সব ছদ্মনামে লিখতেন – সত্যপীর, ওমর খৈয়ম, টেকচাঁদ, প্রিয়দর্শী প্রভৃতি ।
  • তিনি যে শ্রেণির সৃষ্টিকর্মের জন্য বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন – ভ্রমণ কাহিনী রচনার জন্য ।
  • কাজী নজরুল ইসলামের পর বাংলা সাহিত্যে সবচেয়ে বেশি আরবি-ফারসি শব্দ ব্যবহার করেন – সৈয়দ মুজতবা আলী ।
  • বাংলা সাহিত্যে বিশিষ্ট ‘রম্য’ লেখক হিসেবে সুপরিচিত – সৈয়দ মুজতবা আলী ।

সৈয়দ মুজতবা আলীর জীবনী

  • সৈয়দ মুজতবা আলী বাংলা ছাড়াও অন্য যে সব ভাষাতে বিশেষ পারদর্শী ছিলেন – সংস্কৃতি, ইংরেজি, ফার্সি, হিন্দি, গুজরাটি, ফরাসি, জার্মান, উর্দু, ইতালিয়ান প্রভৃতি ।
  • তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বিভাগের প্রভষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন – ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ।
  • সৈয়দ মুজতবা আলী বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের যে দায়িত্বে নিযুক্ত ছিলেন – ইসলামের ইতিহাস বিভাগের রিডার হিসেবে কর্মরত ছিলেন ।
  • যেসব পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লেখালেখি করতেন – মোহাম্মদী, চতুরঙ্গ, মাতৃভূমি, কালান্তর, আল-ইসলাম, আনন্দবাহার, দেশ, শনিবারের চিঠি, বসুমতী প্রভৃতি ।
  • সৈয়দ মুজতবা আলীর যে গ্রন্থটি রচনার মধ্যদিয়ে বাংলা সাহিত্যে তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটে – দেশে বিদেশে (১৯৪৯) গ্রন্থটির মধ্যদিয়ে ।
  • ‘দেশে বিদেশে’ তাঁর যে শ্রেণির রচনা – ভ্রমণ কাহিনী (যা বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ভ্রমণ কাহিনী হিসেবে গণ্য) ।
  • সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর ‘দেশে বিদেশে’ ভ্রমণ কাহিনীতে তুলে ধরেছেন – আফগানিস্তানের কাবুল শহরের বর্ণনা ।
  • আব্দুর রহমান, অধ্যাপক বেনওয়া, আহমদ আলী, খুদাবখশ, বগদানফ, মুইন-উস-সুলতান প্রভৃতি – দেশে বিদেশে গ্রন্থের চরিত্র ।
  • ”বহুদিন ধরে সাবান ছিল না বলে আবদুর রহমানের পাগড়ি ময়লা । কিন্তু আমার মনে হয় চর্তুদিকের বরফের চেয়ে শুভ্রতর আবদুর রহমানের পাগড়ি আর শুভ্রতর আবদুর রহমানের হৃদয়” উক্তিটি – সৈয়দ মুজতবা আলীর দেশে বিদেশে ভ্রমণ কাহিনীর ।
  • ‘একজন তুর্কি বংশোদ্ভূত আফগান বড়লোকের একমাত্র সুন্দরী মেয়ে শবনম বিপরীতে এক বাঙালি যুবকের অসম প্রেমের কাহিনী’ সৈয়দ মুজতবা আলীর যে উপন্যাসের বিষয়বস্তু – শবনম উপন্যাসের ।

সৈয়দ মুজতবা আলীর জীবনী

  • তাঁর ‘শবনম’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় – ১৯৬০ সালে (আনন্দ বাজার প্রত্রিকায়) ।
  • সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত প্রথম উপন্যাস – অবিশ্বাস্য (১৯৫৪ সালে প্রকাশিত হয়) ।
  • তাঁর রচিত ছোট গল্পের মধ্যে রয়েছে – রসগোল্লা, তীর্থহীন, পাদটীকা প্রভৃতি ।
  • তাঁর অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে – শহর ইয়ার (১৯৫৯) ও তুলনাহীনা ।
  • কাবুল শহরের কাহিনী নিয়ে রচিত ‘দেশে বিদেশে’ ভ্রমণ কাহিনীটি প্রকাশিত হয় – ১৯৪৮ সালে দেশ প্রত্রিকায় ।
  • সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত অন্যান্য রম্য রচনা গুলোর মধ্যে রয়েছে – পঞ্চতন্ত্র (১৯৫২), ময়ূরকন্ঠী (১৯৫২), ভবঘুরে ও অন্যান্য, হিটলার প্রভৃতি ।
  • য়ৈয়দ মুজতবা আলী রচিত অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে – বেঁচে থাক সার্দি কাশি, পুনশ্চ, কর্নেল, বিধবা বিবাহ, মা-জননী, স্বয়ংবরা, রাক্ষসী, ক্যাফে-দে- জেনি, জলে-ডাঙায়, বড়বাবু, কত না অশ্রুজল প্রভৃতি ।
  • ”রসের গোলক, এত রস তুমি কেন ধরেছিলে হায়! ইতিালির দেশ র্ধম ভুলিয়া লুটাইল তব পায়! উক্তিটি কোন গল্পের – সৈয়দ মুজতবা আলীর রসগোল্লা নামক গল্পের ।
  • সৈয়দ মুজতবা আলীর বিশেষ উক্তি – “জ্ঞানার্জন ধনার্জনের চেয়ে মহত্তর” “রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে প্রিয়ার কালোচোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে, কিন্তু বই খানা অনন্ত যৌবনা..”   “বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না “ প্রভৃতি ।
  • তাঁর গল্পগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে – চাচা কাহিনী (শ্রেষ্ঠ গল্পগ্রন্থ), টুনি মেম, ধূপছায়া প্রভৃতি ।
  • সৈয়দ মুজতবা আলী, কাজী নজরুল ইসলামের যে গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছিলেন – রুবাইয়াৎ-ই-ওমর খৈয়াম ।
  • ’রসগোল্লা’ নামক গল্পের ঝাণ্ডুদা রসগোল্লা নিয়ে কোথায় ঝামেলায় পড়েছিলেন – ইতালির ভেনিস বন্দরে ।
  • সৈয়দ মুজতবা আলী যে সব পুরস্কার লাভ করেন – ১৯৬২ সালে আনন্দ সাহিস্য পুরস্কর, মরণোত্তর একুশে পদক ২০০৫ প্রভৃতি ।
  • সরস, মার্জিত ও বুদ্ধিদীপ্ত সাহিত্য ধারার প্রবর্তক সৈয়দ মুজতবা আলী পরলোকগমন করেন – ১১ ফেব্রুয়ারী, ১৯৭৪ সালে ।

ড. আব্দুর রহিম
১৯০৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সিলেট জেলার অন্তর্গত (বর্তমানে ভারতের আসামে) করিমগঞ্জ শহরে সৈয়দ মুজতবা আলী জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন মেধাবী, চঞ্চল ও পড়ুয়া। ১৯১৯ সালে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সিলেট সফরে এলে সৈয়দ মুজতবা আলী কবির বিশেষ অনুগ্রহ লাভ করেন এবং তার ভক্ত হয়ে যান। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়ালেখার আগ্রহী ছিলেন এবং এ জন্য তিনি ১৯২১ সালে বিশ্বভারতীতে ভর্তি হন। শান্তিনিকেতনে পাঁচ বছর অধ্যয়নের পর ১৯২৬ সালে তিনি স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ওই বছরই তিনি বাংলায় লেটারসহ প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। আলীগড়ে আইএ অধ্যয়নকালে তিনি আফগানিস্তানের শিক্ষা বিভাগে চাকরি নিয়ে কাবুল গমন করেন। অত:পর ১৯২৯ সালে তিনি উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য জার্মানিতে গমন করেন। ১৯৪৯ সালে তিনি বগুড়ার আজিজুল হক কলেজের প্রিন্সিপাল হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৪৪-৪৫ সালে সৈয়দ মুজতবা আলী আনন্দবাজার পত্রিকায় কিছু দিন সাংবাদিকতা করেছেন এবং দেশ পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখতেন। ১৯৪৮ সালে সিলেটের কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের আলোচনা সভায় পূর্ববঙ্গের রাষ্ট্রভাষা প্রসঙ্গে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি উর্দু ভাষার সপক্ষ শক্তির হাতে নাজেহাল হয়েছিলেন। সৈয়দ মুজতবা আলী বগুড়া আজিজুল হক কলেজের প্রিন্সিপালের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে ভারতে চলে যান এবং কিছু দিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। পরে উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ মালানা আবুল কালাম আজাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইন্ডিয়ান ‘কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশন্স’-এর সচিব পদে নিযুক্ত হন। অত:পর তিনি ‘অল ইন্ডিয়া রেডিও’-এর স্টেশন ডাইরেক্টর পদে কিছু দিন চাকরি করেন এবং সেই চাকরিতেও ইস্তফা দেন ১৯৫৬ সালে। অত:পর তিনি বিশ্বভারতীতে কয়েক বছর অধ্যাপনা করেন। ১৯৭৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারিতে তিনি ঢাকার পিজি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। (ড. মাহফুজুর রহমান নানা প্রসঙ্গ নানা ভাবনা, পৃ. ১৮-২৯)।
সৈয়দ মুজতবা আলীর জীবন বিচিত্র অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ। জীবন নামক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলেন, সেগুলোকেই তিনি সাহিত্যে রূপদান করেন। একাধারে তিনি ভ্রমণ-সাহিত্য রচয়িতা, ঔপন্যাসিক, গল্পকার ও প্রবìধকার। তার ভ্রমণ-সাহিত্য হিসেবে ‘দেশে বিদেশে’, ‘জলে-ডাঙায়’, ‘ভবঘুরে’, ‘মুসাফির’, ‘বিদেশ’ ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তার রচিত উপন্যাসগুলো হচ্ছে ‘অবিশ্বাস্য’, ‘শবনম’, ‘শহর-ইয়ার’ ও ‘তুলনাহীনা’। বিচিত্র রসের নানান গল্প তিনি লিখেছেন। কখনো হাস্যরসের গল্প, কখনো করুণ রসের গল্প, কখনো মধুর রসের মিষ্টি প্রেমের গল্প, আবার কখনো বা ভয়ঙ্কর রসের গল্প তিনি লিখেছেন। সৈয়দ মুজতবা আলী ছিলেন লঘু নিবìধকার তথা রম্যপ্রবìধ রচনায় ছিলেন বিশেষভাবে পারদর্শী। তিনি ভ্রমণ-সাহিত্য রচয়িতা এবং রম্যরসিক হিসেবে সবচেয়ে বেশি পারিচিত।
সৈয়দ মুজতবা আলী প্রসঙ্গে বিশিষ্ট গবেষক নূরুর রহমান খান তার ‘মুজতবা-সাহিত্যের রূপবৈচিত্র্য ও রচনাশৈলী’ গ্রন্থে বলেছেন ‘হালকা মেজাজে আড্ডার ঢঙে বলে গেলেও মুজতবা-বচন জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, শাস্ত্র চর্চা ও সার্থক বিচার-সমালোচনায় পরিপূর্ণ। তিনি বহু দেশ ভ্রমণ করেছেন, বারংবার কর্মক্ষেত্রের পরিবর্তন হয়েছে, বহুজনের সান্নিধ্য লাভ করেছেন পণ্ডিত, গুণী, রাজনীতিক থেকে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত এবং এই সাধারণের প্রতি তার সহানুভূতি সমধিক। এর প্রতিফলন ঘটেছে মুজতবা আলীর প্রতিটি রচনায়। যে অসংখ্য ছোট ছোট রচনা তার খ্যাতির উৎস, সেগুলো ‘রম্যরচনা’ অভিধায় চিহ্নিত। কারণ, এগুলো পাঠকদের চিত্ত-বিনোদন ও অনাবিল আনন্দদানে সমর্থ সফল সৃষ্টি। বর্ণনভঙ্গির গুণে পাঠক অনেক সময় হাসির আবেগ সংবরণ করতে পারেন না বটে, কিন্তু আলী সাহেব জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে বিবিধ ভাষা ও শাস্ত্র থেকে আহৃত মনীষার ফসল এই শ্রেণীর রচনার মাধ্যমে পাঠকদের উপহার দিয়েছেন। তাই এগুলো নিছক রম্যরচনা নয়, সাবলীল ভাষায় প্রকাশিত মনোহর প্রবìধও বটে।’ (পূর্বকথা)।
বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক রম্যরচয়িতা কিংবা লঘু নিবìধকার হিসেবে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের (১৮৩৮-১৮৯৪) নাম উল্লেখ করা যায়। বঙ্কিমচন্দ্রের ‘লোকরহস্য’, ‘কমলাকান্তের দপ্তর’, ‘মুচিরাম গুড়ের জীবনচরিত’ ইত্যাদিতে রম্যরসের পরিচয় পাওয়া যায়। প্রমথ চৌধুরীর (১৮৬৮-১৯৪৬) প্রবìেধও বুদ্ধিদীপ্ত হাস্যরসের পরিচয় পাওয়া যায়। সৈয়দ মুজতবা আলী তার নানা লঘু নিবìেধ রম্যরস ফুটিয়ে তুলেছেন। যেমন, তার রচিত ‘হিডজিভাই পি মরিস’ লেখাটির কথাই বলা যাক। ‘সেন্টিমেন্টাল এবং আদর্শবাদী’ অধ্যাপক মরিস ফরাসি পড়াতেন। তার ক্লাসে প্রবীণ অধ্যাপকগণও উপস্খিত থাকতেন। একদিন “ফরাসি ব্যাকরণের কী একটা কঠিন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ফেলেছেন অধ্যক্ষ বিধুশেখর। মরিস সাহেব বললেন, ‘চমৎকার। শাসট্টি মশায়। সট্যি, আপনি একটা অস্টো ঘুঘু।’
শাস্ত্রী মশাইয়ের তো চক্ষুস্খির। …শুধালেন, ‘মরিস, এটা তোমাকে শেখালে কে?’
নিরীহ মরিস… বললেন, ডিনডা (দিনদা, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর)। উনি বলেছেন ওটার অর্ট ‘অসাডারণ বুডডিমান’। টবে কি ওটা ভুল।” অধ্যাপক মরিসের বাংলা ভাষা জ্ঞান এবং অভিনব বাংলা উচ্চারণ সত্যি হাসির খোরাক জোগায়।
সৈয়দ মুজতবা আলীর এমন আরেকটি লেখা ‘অনুকরণ না হনুকরণ?’ ‘অক্ষম অনুকারী ও পেশাদার সমালোচকদের’ প্রসঙ্গে তিনি এ প্রবìেধ ব্যঙ্গ করেছেন। বিষয়বস্তু ও ভাষা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা না থাকলে অন্যকে যে যথাযথভাবে অনুকরণও করা যায় না তা তিনি এ প্রবìেধ তুলে ধরেছেন। সাংস্কৃতিক অঙ্গনের তথাকথিত সমালোচকদের ব্যঙ্গ করেই প্রবìধটি রচিত। তথাকথিত সমালোচকরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে সাহিত্যের সমালোচনা করেন। ফলে কমজোর লেখকও বড় লেখক হয়ে যান। এ শ্রেণীর সমালোচকরা সাধারণত ‘সর্বকর্মে নামঞ্জুর হয়ে’ অর্থ উপার্জনের প্রয়োজনে সমালোচকের ভূমিকা পালন করেন। একটি প্রচলিত চুটকির মাধ্যমে সৈয়দ মুজতবা আলী এ জাতীয় সমালোচকদের ব্যঙ্গ করেছেন। চুটকিটি হচ্ছে এক পাগল নিজেকে মহারানী ভিক্টোরিয়ার স্বামী ভাবতেন। “পাগলা সেরে গেছে এই রিপোর্ট পাওয়ার পর পাগলা-গারদের বড় ডাক্তার তাকে ডেকে পাঠিয়ে পরীক্ষা করতে গিয়ে শুধালেন, ‘তা তুমি খালাস হওয়ার পর করবে কী?’ সুস্খ লোকের মতো বললেন, ‘মামার বড় ব্যবসা আছে, সেখানে ঢুকে যাব।’ ‘সেটা যদি না হয়?’ চিন্তা করে বললেন, ‘তা হলে আমার বিএ ডিগ্রি তো রয়েছেই টিউশনি নেব।’ তারপর এক গাল হেসে বললেন, ‘এত ভাবছেন কেন, ডাক্তার? কিছু না হলে যেকোনো সময়ই তো আবার মহারানীর স্বামী হয়ে যেতে পারব।” এই চুটকির মাধ্যমে সৈয়দ মুজতবা আলী বুঝিয়েছেন, পাগল হওয়ায় মতো তথাকথিত সমালোচকও সব সময় হওয়া যায়।
‘ইঙ্গ-ভারতীয় কথোপকথন’ প্রবìেধ সৈয়দ মুজতবা আলীর ব্রিটিশ-বৈরিতা প্রকাশিত হয়েছে। ইংরেজদের যাবতীয় আচার-আচরণ অনুকরণ করা যে ভারতীয়দের জন্য স্বাস্খ্যপ্রদ নয় তা তিনি ব্যক্ত করেছেন। তৎকালীন ভারতে পর্দা প্রথা সম্পর্কে ইংরেজ সাহেবের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন লেখক চমৎকার রসিকতার মাধ্যমে। লেখকের ভাষায় “১৭৫৭ সালে তোমাদের সাথে পিরিতি সায়রে সিনান করিতে গিয়া শুধু যে আমাদের সকলি গরল ভেল তাহা নয় স্বরাজ গামচাখানা হারাইয়া ফেলিয়া দুইশত শীত বৎসর ধরিয়া আকণ্ঠ দৈন্যদুর্দশা পঙ্কে নিমগ্ন ডাঙ্গায় উঠিবার উপায় নাই। পুরুষদের তো এই অবস্খা, তাই মেয়েরা অন্দরমহলে তোমাদের ক্ষৎময় করিয়া বসিয়া আছেন।” সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখায় এভাবেই দেশপ্রেম ফুটে উঠেছে। দেশ-বিদেশের নানান গল্পকথা ব্যবহার করে লেখক তার বক্তব্যকে শাণিত করেছেন। তিনি একটি ইরানি উপকথা নিয়ে লিখেছিলেন ‘বিষের বিষ’ গল্পটি। গল্পটির সারাংশ হচ্ছে এক দজ্জাল স্ত্রীকে শাস্তি দেয়ার জন্য একটি গর্তে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। কিন্তু সেই গর্তের কাল-নাগিনী পর্যন্ত সেই দজ্জাল মহিলাকে দংশন করেনি নিজের প্রাণের মায়ার কারণে। গল্পের এই সারাংশটি লেখক ব্যবহার করেছেন ভিন্ন প্রেক্ষিতে সংবাদপত্রের নিবìেধ। সৈয়দ মুজতবা আলী লিখেছেন
“কাগজে পড়লুম কোন এক প্রদেশে মন্ত্রীদের জ্যান্ত সাপের মালা পরিয়ে অভ্যর্থনা করা হয়েছিল। সাপগুলো যে কেন ওদের ছোবল মারেনি, আজ ইরানি গল্পের স্মরণে কথাটা ফর্সা হয়ে গেল।
এবং বুঝতে পারলুম, ইরানি গল্পটা গল্প নয়, সত্য ঘটনা।”
মূলত সৈয়দ মুজতবা আলীর অসংখ্য লেখায় রম্যরস ছড়িয়ে আছে। রম্যরচনার পোশাকে তিনি স্বদেশ, সমাজ, মাতৃভাষা, শিক্ষা, রাজনীতি ইত্যাদি নানা বিষয়ে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তার মতো প্রতিভাবান লেখক বাংলা সাহিত্যে বিরল। তার সৃষ্টি বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে।

বাংলা সাহিত্যে সৈয়দ মুজতবা আলীর অবদান ও স্থান

বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবন ও কর্মের অধিকরী সৈয়দ মুজতবা আলী। শিক্ষাসূত্রে বিশ্বের নানা স্থানে গমনের মধ্যেই সূচিত হয়েছিল তাঁর সাহিত্য রেখা। গুরুগম্ভীর ও তাত্ত্বিক বিষয়কে পরিহার করে সহজ সরল ভঙ্গিতে বৈঠকী মেজাজে তিনি যে ভাবে সাহিত্যের আঙিনার অবতরণ করেন তাতেই সাহিত্যিক রূপে তিনি প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছেন। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সংস্পর্শে এসে তাদের জীবন দর্শনকে যে ভাবে তিনি তাঁর সাহিত্যে এঁকেছেন তা পাঠ করতে গিয়ে যেন মুখোমুখি আলাপের স্বাদ পাওয়া যায়। এ হেন ব্যক্তিত্বের সম্পর্ক পরিচয় লোভে যে কোনও সুহৃদ পাঠকের মন আগ্রহের আতিশয্যে আপ্লুত হয়ে ওঠে।


মুজতবার রচনাশৈলী একান্ত ভাবে তার নিজস্ব। বৈঠকি ঢংয়ে তিনি যে কোনো বিষয়কে সাবলীল, স্বচ্ছ ও সহজবোধের প্রকাশ করতে পারেন। শব্দপ্রয়োগে তিনি বক্তব্যকে রসালো করে তুলবার জন্য ‘যাবনী মশাল’ রীতির পক্ষপাতী। ফলে দেশি-বিদেশি, গুরু-চন্ডালী শব্দ ব্যবহারে তাঁর বিন্দুমাত্র দ্বিধা ছিল না। তাঁর ব্যক্তিত্ববোধের মধ্যে বিরাজ করত এক সদা কৌতুকী মন। ফলে অনেক গুরুগম্ভীর বিষয়কে তিনি সরস করে প্রকাশ করতে পারতেন আর তাতে বিষয়ের গুরুত্ব এতটুকু ক্ষুণ্ণ হতো না। প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর বার্লিনের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের চিত্র আঁকতে গিয়ে তাঁর উক্তি— “পয়লা বিশ্বযুদ্ধের পর হেথায় অবস্থা হয়েছিল 'জর্মনির সর্বনাশ' বিদেশির পৌষমাস। ইনফ্লেশনের গ্যাসে ভর্তি জর্মন কারেন্সির বেলুন তখন বেহেশতে গিয়ে পৌঁচেছে– বেহেশ্তাটা অবশ্যি বিদেশিদের জন্য, জর্মনরা কেউ পাঁচহাজার, কেউ দশহাজার বেলুন থেকে পড়ে গিয়ে প্রাণ দিচ্ছে। আত্মহত্যার খবর তখন আর কোনো কাগজে ছাপাত না, নারী-হৃদয় ইকনমিক্সের কমডিটি, এক 'বার' চকলেট দিয়ে এক সার ব্লন্ড কেনা যেত, পাঁচ টাকায় ‘ফার’ কোট, পাঁচশ টাকায় কুরফুস্টেন-ডামে বাড়ি এক টাকায় গ্যোটের কমপ্লীট ওয়ার্কস।”


আবার বিষয়বস্তুর অনুসারে তার প্রকাশভঙ্গিও কেমন পালটে যায়, তার উদাহরণও তাঁর রচনায় দুর্লক্ষ্য নয়। আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থার, বিশেষ করে সংস্কৃত শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষেত্রে যে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে, লেখক অতি অল্পকথায়, অতি নিরাভরণ ভাষায় তার ছবি এঁকেছেন। সেখানে বাক-বৈদদ্ধের ছটা, তীব্র ব্যঙ্গের ফলা আদৌ নেই।


“গত শতকের শেষ আর এই শতকের গোড়ার দিকে আমাদের দেশের টোলগুলো মড়ক লেগে প্রায় সম্পূর্ণ উজাড় হয়ে যায়। মোগল-পাঠান আমলে যে দুর্দেব ঘটেনি ইংরাজ রাজত্বে সেটা প্রায় আমাদের চোখের সামনেই ঘটল। অর্থনৈতিক চাপে পড়ে দেশের কর্তাব্যক্তিরা ছেলেভাইপোকে টোলে না পাঠিয়ে ইংরেজি স্কুলে পাঠাতে আরম্ভ করলেন। চতুর্দিকে ইংরেজি শিক্ষার জয়-জয়কার পড়ে গেল—সেই ডামাডোলে বিস্তর টোল মরল আর বিস্তর কাব্যতীর্থ বেদান্তবাগীশ না খেয়ে মারা গেলেন এবং তার চেয়েও হৃদয়বিদারক হল তাঁদের অবস্থা যাঁরা কোনো গতিকে সংস্কৃত বা বাংলার শিক্ষক হয়ে হাই স্কুলগুলোতে স্থান পেলেন। এঁদের আপন আপন বিষয়ে অর্থাৎ কাব্য, অলঙ্কার, দর্শন ইত্যাদিতে এঁদের পান্ডিত্য ছিল অন্যান্য শিক্ষকদের তুলনায় অনেক বেশি কিন্তু সম্মান এবং পারিশ্রমিক এঁরা পেতেন সবচেয়ে কম। শুনেছি কোনো কোনো ইস্কুলে পণ্ডিতের মাইনে চাপরাশীর চেয়েও কম ছিল।”


হের ওবের্স্ট সম্পর্কে বর্ণনা দিতে গিয়ে লেখকের উক্তি শাণিত, বুদ্ধিদীপ্ত, উপমা সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে— “দেখাই যাক্ না প্রাশন রাজপুত কি রকম কালিদাস পড়ায়। হের ওবের্স্টের চেহারাটি যদিও ভাবুকের মতো, তবু কুলোপনা চক্কর হলেই তো আর দাঁতে কালবিষ থাকে না।”

আবার কখনো মিশেল-ভাষার অব্যর্থ লক্ষ্যভেদী সন্ধান— “সমস্ত কাহিনি শুনে ফন্ ব্রাখেল পাঁচটি মিনিট ধরে ঠা-ঠা করে হাসলেন। হাসির ফাঁকে ফাঁকে কখনো বলেন, ‘ডু লীবার হের গট্’ (হে মা কালী), কখনো বলেন, ‘বী কোলিস্ (কি মজার ব্যাপার), কখনো বলেন ‘লাখেন ডি গ্যোটার’ (দেবতারা শুনলে হাসবেন)।


আমি বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালুম। ফন্‌ ব্রাখেল আমার কাঁধে দিলেন এক গুঁতা। ঝপ্ করে ফের বসে পড়লুম। বললেন, ‘ডু ক্লাইনের ইডিয়ট' (হারাগঙ্গারাম), এখুনি, তোমার ফোন করে বলে দেওয়া উচিত, তোমার দ্বারা ওসব হবে-টবে না।”


শব্দ দিয়ে ছবি আঁকার দুর্লভ সৃজনশক্তি মুজতবার আয়ত্তে ছিল। রাইন নদীর বর্ণনায় লেখকের একদিকে ছবি আঁকার ক্ষমতা, অন্যদিকে অনুভববেদ্য কবিত্বশক্তির পরিচয় মেলে— “রাইন নদী কিছু ফেলনা নয়। দুদিকে পাহাড়, তার মাঝখানে দিয়ে রাইন সুন্দরী নেচে নেচে চলে যাবার সময় দু'পারে যেন দুখানা সবুজ শাড়ি শুকবার জন্য বিছিয়ে দিয়ে গিয়েছেন। সে শাড়ি দুখানা আবার খাঁটি বেনারসী। হেথায় লাল ফুলের কেয়ারী, হোথায় নীল সরোবরের ঝলমলানি, যেন পাকা হাতের জরির কাজ। আর সেই শাড়ির ওপর দিয়ে আমাদের ট্রাম যেন দুষ্টু ছেলেটার মতো কারো মানা না শুনে ছুটে চলেছে। মেঘলা দিনের আলোছায়া সবুজ শাড়িতে সাদাকালোর আল্পনা এঁকে দিচ্ছে আর তার ভিতর চাঁপা রঙের ট্রামের আসা-যাওয়া—সমস্ত ব্যাপারটা যেন বাস্তব মনে হয় না ; মনে হয় হঠাৎ কখন রাইন সুন্দরীর ধমকে দুষ্টু ছেলেগুলো লীলাখেলা ঘুচিয়ে দেবেন।"


ধর্মের গোড়ামি সম্পর্কে লেখকের অকপট উক্তি— “উইলি ঠিকই বলেছে, ধর্মমাত্রই মোমবাতির আধা-আলোর কুসংস্কারে গা-ঢাকা দিয়ে থাকতে পছন্দ করে, বিজলির কড়া আলোতে আত্মপ্রকাশ করতে চায় না।”


নির্বিচার শব্দব্যবহারে বাক্যবন্ধ ব্যঞ্জনাগর্ভ হয়ে ওঠে, সাবলীল স্বচ্ছন্দপ্রবাহ অব্যাহত থাকে, অথচ বক্তব্য বিষয় আদৌ জটিলতায় ঢাকা পড়ে না। মুজতবার রচনায় এমন দৃষ্টান্ত অজস্র মিলে। যেমন— “আরাম-আয়েশ ফূর্তি-ফার্তির বলতে গেলেই ইংরেজকে ফরাসি শব্দে ফরাসি ব্যঞ্জনা ব্যবহার করতে হয়। ‘জোয়া দ্য ভিভ্র’ (শুদ্ধমাত্র বেঁচে থাকার আনন্দ), ‘বঁ ভিভ’ (আরামে আয়েশে জীবন কাটানো), ‘গুরমে’ (পোষাকি খুশখানেওলা), 'কন্যেস্যর’ (সমঝদার রসিকজন) এসব কথার ইংরেজি নেই। ভারতবর্ষে হয়ত এককালে ছিল হয়ত কেন, নিশ্চয়ই ছিল, মৃচ্ছকটিক, মালতীমাধব নাট্যে আরাম আয়েশের যে চৌকশ বর্ণনা পাওয়া যায় তার কুল্লে মাল তো আর গুল-মারা বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না—আজ নেই এবং তার কারণ বের করার জন্যও ঘেরন্ড-সংহিতা ঘাঁটতে হয় না। রোগশোক অভাব অনটনের মধ্যিখানে ‘গুরমে' হওয়ার সুযোগ শতেকে গোটেক পায় কিনা সন্দেহ—তাই খুশ-খানা, খুশ-পিনা বাবুদের কথাগুলো বেবাক ভারতীয় ভাষা থেকে লোপ পেয়ে গিয়েছে, নতুন বোল-তালের প্রশ্নই ওঠে না।” (রাক্ষসী)


সাহিত্যপঞ্জী : সৈয়দ মুজতবা আলীর রচিতা গ্রন্থ তথা সাহিত্য পঞ্জীকে ক্রমিক পরম্পরায় সাজিয়ে নিম্নরূপ একটা খসড়া নির্মাণ করে যেতে পারে— ১। দেশে বিদেশে (১৩৫৬), ২। পঞ্চতন্ত্র (১ম পর্ব–১৩৫৯, ২য় পর্ব—১৩৭৩), ৩। চাচা কাহিনি (১৩৫৯), ৪। ময়ূরকণ্ঠী (১৩৫৯), ৫। অবিশ্বাস্য (১৩৬১), ৬। পূর্বপাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা (১৩৬৩), ৭। জলে ডাঙ্গায় (১৩৬৩), ৮। ধূপছায়া (১৩৬৪) ৯। দ্বন্দ্ব-মধুর (১৩৬৫), ১০। বড়োবাবু (১৩৭২), ১১। কত না অশ্রুজল (১৩৭২), ১২ হিটলার (১৩৭৭), ১৩ চতুরঙ্গ (১৩৬৭), ১৪। শবনম (১৩৬৭), ১৫। টুসিমেম (১৩৭০), ১৬। রাজা-উজির (১৩৭৬), ১৭। প্রেম (অনুবাদ) (১৩৭২), ১৮ দু-হাবা (১৩৭২), ১৯। হাস্য-মধুর (১৩৭৩), ২০। পছন্দসই (১৩৭৪), ২১। তুলনাহীন (১৩৮১), ২২ শহর ইয়ার (১৩৭৬), ২৩। মুসাফির (১৩৭৮), ২৪। শ্রেষ্ঠ গল্প (১৩৬৮), ২৫। ভবঘুরে ও অন্যান্য (১৩৬৯), ২৬। বহু বিচিত্রা (১৩৬৯), ২৭। শ্রেষ্ঠ রম্যরচনা (১৩৬৯), ২৮। পরিবর্তনে অপরিবর্তনীয় (১৩৮২)।

জীবন দর্শনের অপর নাম সৈয়দ মুজতবা আলী—-রানা চক্রবর্তী

সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার। সম্পর্কে তিনি সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাতিজা। মোয়াজ্জেম আলী তাঁর নিজস্ব চাচাকাহিনিতে শ্রদ্ধেয় কাকাকে নিয়ে অনেক কথা বলেছিলেন। সেই সব ঘটনা একই সঙ্গে সরস এবং পাণ্ডিত্যপূর্ণ। একবার একজন আড্ডায় তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এলেন। দর্শনপ্রার্থীর বাহন ছিল মার্সিডিজ়। তা দেখে আলী সাহেবের প্রশ্ন, গাড়ির নাম মার্সিডিজ় হল কেন, তা কি আরোহী জানেন? গাড়ির মালিক নিরুত্তর। আলী সাহেব জানান, যিনি প্রথম গাড়ি বানিয়েছিলেন তাঁর মেয়ের নাম মার্সিডিজ়।

বাংলা সাহিত্যে মুজতবা আলীর পাকাপোক্ত স্থান রম্যলেখক হিসেবে। অবশ্য এটাই তার একমাত্র পরিচয় নয়। রম্যর বাইরেও আছে তার সাহিত্য সম্ভার।

মুজতবা-গবেষক নূরুর রহমান খান (মুজতবা-সাহিত্যের রূপবৈচিত্র্য ও রচনাশৈলী, ঢাকা থেকে ২০১০ সালে প্রকাশিত) সেগুলোকে শ্রেণিবদ্ধ করেছেন এভাবে-

ক) হাস্যরস-প্রধান গল্প,
খ) করুণ রসাত্মক গল্প,
গ) বিশেষ উদ্দেশ্যমূলক গল্প,
ঘ) প্রণয়মুখ্য গল্প,
ঙ) অম্লমধুর গল্প,
চ) ভয়ংকর রসের গল্প।

ভয়ংকর রসের গল্প অবশ্য মাত্র একটি, ‘রাক্ষসী’, যেখানে এক বৃদ্ধার মৃতদেহের বর্ণনা সত্যিই ভয়ংকর।

সৈয়দ মুজতবা আলী গল্প-উপন্যাস লিখতেন, কিন্তু বলতেনই আসলে। যে চারটি উপন্যাস তিনি লিখেছেন, তার তিনটিই পাঠকদৃষ্টিতে অসাধারণ সৃষ্টি। কেবল শেষ উপন্যাস ‘তুলনাহীনা’ প্রথম তিনটির তুলনায় কিছুটা বিক্ষিপ্ত। এর ঘটনাপ্রবাহ ১৯৭১-এর পটভূমির। কিন্তু প্রথম তিনটি উপন্যাস ঠাসবুনটে লেখা।

সম্পূর্ণ লেখাটি পাঠ করতে এই লিঙ্ক ব্যবহার করুন

https://ekhonkhobor.com/2020/02/11/jibon-dorshoner-opor-naam-syed-mujtaba-ali-rana-chakraborty/


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন