মেহেদী উল্লাহ
আমাদের এক বন্ধু পরীক্ষার খাতায় 'ঙ' দিয়েই 'বাংলা' লিখবে, কিন্তু আমাদের এক শ্রদ্ধেয় শিক্ষক তাকে 'ং' দিয়েই বানানটা লিখিয়ে ছাড়বেন। এই নিয়ে দুজনার যুক্তিও ছিল। কিন্তু আমরা অনেকেই ব্যাপারটা নিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতাম এই ভেবে, 'দুই উচ্চারণই নাকে বাজে। একটা হলেই হয়, হা হা।'
বাংলা একাডেমির 'ঈদ' কে 'ইদ' লেখার রীতি প্রসঙ্গে কথা হচ্ছে দেখে ঘটনাটা মনে পড়ল। নিয়মানুযায়ী 'ইদ' বানান ঠিক আছে। তাহলে মানতে বাধা কোথায়?
এক্ষেত্রে বড় বাধা অভ্যাস ও চর্চা। বাংলা একাডেমি 'একাডেমি' বানানে ই-কার দিলেও বহু মানুষ এখনো ঈ-কার দেন। ফটোকপির দোকানে গেলে দেখা যায়,'ফটোস্ট্যাট' কেউ 'ষ' ছাড়া লিখতে নারাজ। অথচ এই শব্দটি দিনের পর দিন বইয়ে বা পত্রিকায় ছাপা হচ্ছে 'স' দিয়েই। তবুও লোকচক্ষু বলে কথা! অভ্যাস!
মানুষ অভ্যাস পরিবর্তন করে নতুন বানানে সাড়া দিতে সাধারণত তিনটি জেনারেশনের গত হওয়া লাগে।
কিন্তু 'ঈ' নিয়ে নতুন একটা সমস্যা দেখতে পাচ্ছি আমি। বাংলাভাষায় হাতে গোনা যে কটি শব্দে সরাসরি ঈ-এর ব্যবহার আছে (ঈ কার নয় কিন্তু) তার মধ্যে ঈদ একটি। আরেকটি শব্দ আছে ঈগল। ঈ দিয়ে গঠিত অন্য শব্দগুলো দিন দিন অপ্রচলিত হয়ে পড়ছে। যেমন, ঈষৎ, ঈর্ষা। এখন ঈ- তে ঈদ না হয়ে যদি ই-তে হয় তবে ঈ-এর ব্যবহার একটা শব্দে কমে গেল। ভাবা যায়! শুধু 'কার' রেখে দিয়ে একটা বর্ণ-কে বর্ণমালা থেকে মুছে ফেলার আগে ভাবা উচিত ভাষাবিশেষজ্ঞ ও ব্যাকরণবিদদের।
এমন অনেক শব্দ আছে ব্যাকরণ মেনে হয়নি, অথচ প্রচলিত। এমন অনেক সমাসঘটিত শব্দ আছে ব্যাকরণ সম্মত নয় অথচ প্রচলিত। ইত্যাদি।
আশা করি 'ঈ' সরাসরি বর্ণ হিশেবেই থাকবে। অতীতের 'লি' কে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।
সব মন্তব্য
দিদার মুহাম্মদ
চমৎকার বিষয় তুলে ধরেছেন মেহেদী ভাই। কেবল একটি বর্ণকে বাঁচিয়ে রাখাকেই যুক্তি হিসাবে দেখালে বর্ণকে অবমাননা করা হয়। আমি যা যোগ করতে চাই, তা শব্দের ব্যুৎপত্তিগত যুক্তি। ধরি, 'ঈদ' বা 'ইদ' যা-ই বলি তা আসলে আরবি থেকে আগত। আরবিতে 'আঈন' বর্ণটির উপযুক্ত উচ্চারণ বাংলায় নেই। আমাদের আছে 'ঈ' বা 'ই'। যার আরবি ভাষার মাখরাজের জ্ঞান আছে সে সহজেই ধরতে পারবেন বিষয়টি। এখানে 'ঈদ' বা 'ইদ' শব্দদ্বয়ের মধ্যে 'ঈ' যুক্ত শব্দটিই মূল উচ্চারণের অধিক কাছাকাছি। ফলে ব্যুৎপত্তিগত দিক বিবেচনায় রেখে অধিক কাছাকাছি উচ্চারণ করাই বাঞ্ছনীয়। একটি নিয়ম রয়েছে বিদেশি ভাষার বানানে ই-কার ব্যবহারের। আমি এই ঢালাও ও মনগড়া এবং যুক্তিহীন নিয়মের (অনিয়মের) বিপক্ষে। বাংলাভাষায় এমন কোন উদাহরণ আছে যেখানে দীর্ঘস্বরের ব্যবহার আছে। নেই। দীর্ঘস্বরের ব্যাপারটি মূলত সংস্কৃত এবং বিদেশি ভাষার জন্যই। তাহল উক্ত নিয়মটি কী সরকারি নিয়মে অবতীর্ণ হলো? একাডেমী> একাডেমি হওয়া উচিত 'বিদেশি ভাষা' এজন্য নয় বরং ইংলিশে ঈ-কারটি নেই (দীর্ঘস্বরের ব্যবহারই নেই) এই কারণে। তাই 'একাডেমি' শব্দটি যদিও পিওর ইংলিশ নয়, ফ্রেঞ্চ 'আকাদেমি' থেকে আগত -এ হিসাব ভিন্ন। তাই এখানে একাডেমী>একাডেমি হলেও 'আরাবিয়া' বানানে আমি হ্রস্ব ই-কার মানতে চাই না, উচিতও নয়, এটা হওয়া উচিত 'আরাবীয্যা' (আবার 'য়' নয় কিন্তু, 'য্যা')। বিশেষত, আরবি বানানে বাঙালিপনা আমার পছন্দ নয়, আমাদের বর্ণ বা স্বরের কমতি আছে সেটা স্বীকার করে নিতে হবে। দিনে দিনে যদি বর্ণ বা স্বর কমতে থাকে, প্রয়োজনে তা আবার ফিরে আসা উচিত এবং একই সাথে নতুন বর্ণও তৈরি করা যেতে পারে।
মেহেদী উল্লাহ
ধন্যবাদ দিদার সুন্দর ভাবে ব্যাখ্যা করার জন্যে। একটি বিষয়ে শুধু বলব, সেটি হচ্ছে শব্দ যে ভাষা থেকেই আসুক না কেন যখন অন্য ভাষায় ব্যবহৃত হয় তখন সেই ভাষার উচ্চারণ অনুযায়ী বানান লেখা হয়, তাও সেটা মানুষ যেভাবে উচ্চারণ করবে, যেমন, বোটল থেকে বোতল, এমন হাজার শব্দ আছে। রবীন্দ্রনাথ অবশ্য, যে ভাষা থেকে এসেছে শব্দটি সে অনুযায়ী উচ্চারণের বানানের পক্ষেও মত দিয়েছেন। তবে ঈদ উচ্চারণের বেলায় এখানকার মানুষ দীর্ঘস্বর-এর ব্যবহার করে না। সে হিসেবে ঠিক আছে ইদ। কিন্তু তুমি যা বললে তাও খুব যুক্তিযুক্ত।
হোসাইন শহীদ
আমি ভাই এসব বিষয়ে বেশি বুঝি না। যদি ই দিয়ে লিখতে হয় তাহলে কি এখন থেকে কবি নজরুলের লেখায় ঈদ বানান বাদ দিয়ে ইদ লিখে ছাপা হবে? ??? যেমন রমজানের এই রোজার শেষে এলো খুশির ইদ !!!!
রাজেশ মজুমদার
ঈদ শব্দের সাথে আবেগ, অনুভূতি ও স্মৃতি জড়িত তবুও আমার মনে হয় কাছাকাছি উচ্চারণে শব্দগুলোর ব্যপারে একটা সিদ্ধান্ত নেয়া সময়ের দাবী।
সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সবাই মানবে তো?
রাজেশ মজুমদার
আমি কোন শব্দ নয় বলতে চেয়েছি 'গ,ঘ' 'চ,ছ', 'জ,ঝ,' 'প,ফ' 'ব,ভ 'শ,ষ,স' এমন বর্ণ গুলোর ব্যাপরে সিদ্ধান্ত।
মেহেদী উল্লাহ
হুম তা ঠিক। কবি রুদ্র এমনটি করে গেছেন কিছু কিছু ক্ষেত্রে।
বানান বিতর্ক নিয়ে আরো পড়ুন :
‘ঈদ’ না ‘ইদ’ : বানান বিতর্ক
https://shilpo-shahitto.blogspot.com/2020/05/blog-post_62.html
বানান বিতর্ক নিয়ে আরো পড়ুন :
‘ঈদ’ না ‘ইদ’ : বানান বিতর্ক
https://shilpo-shahitto.blogspot.com/2020/05/blog-post_62.html
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন