খোরশেদ আলম
‘ঈদ
মোবারক’,
‘ঈদ
মুবারক’,
‘ইদ
মুবারক’,
‘ইদ
মোবারক’—এই
হরেক রকম বানানের সম্মুখিন হওয়া গেল ফেসবুকে। আবার সেটা নিয়ে বিতর্কও করছেন কেউ
কেউ। সমাধান কী?
এর আসলে কোনো সমাধান নেই। আপনি অভিবাদন
জানিয়েছেন এটাই বড় কথা। ভাষা তো আপনার আমার মনের ‘রঙ’টাই প্রকাশ করে। এই রঙটা নষ্ট করলে ভাষা তার
যোগাযোগ হারায়।
১. বাংলা একাডেমি বিদেশি শব্দের বানানে
হ্রস্বধ্বনি যুক্ত করতে বলে। ‘ঈদ’কে তাই ‘ইদ’ লিখতে বলে। কিন্তু জেনেও ‘ঈদ’
বানানই লিখেছি। মূল আরবি ভাষার এই ধ্বনি (আইন) বাংলায় লেখা/বলা সম্ভব নয়। কিন্তু
দীর্ঘস্বর লেখা সম্ভব। তবে ভাল কথা হল-- বাংলা অভিধানে ‘ইদ’,
ঈদ’
দুটো বানানই রয়েছে।
২. অন্যদিকে-- মোবারক, মুবারাক, মুবারক,
মোবারাক-এর বেলাতেও তাই। আমি জেনেও ‘মোবারক’ লিখেছি। কিন্তু আরবি ভাষায় ‘ও’
ধ্বনি নেই। তাই ‘মুবারক’ বলা হয়। আবার ‘র’-ধ্বনিতে ‘আ’-কার (যবর) দিলে ‘অ’ উচ্চারণ হয়।
‘সেমেটিক’
লিপির উত্তরাধিকারী হলেও ফারসি, উর্দু ভাষাতে বাংলার মতো ‘ও’
ধ্বনি আছে; যা আরবিতে অনুপস্থিত। কিন্তু বাংলা, হিন্দি দুই ভাষাতেই ‘ও’,
এবং ‘উ’
দুটো স্বরই রয়েছে।
কাজী নজরুল ইসলাম অনেকের চাইতে ভালো আরবি,
ফার্সি, হিন্দি, উর্দু ভাষা জানতেন। তিনি তো ‘ঈদ মোবারক’ই লিখেছেন। ‘ঈদ মোবারক’ কবিতাটা গুগল সার্চে দেখতে পারেন।
মূলত একটা ভাষা আরেকটা ভাষায় হুবহু ‘প্রতিবর্ণিত’
করা কোনোকালেই সম্ভব নয়। বর্ণ/ধ্বনি অনুসারে উচ্চারণ/বানান লেখাও সম্ভব নয়।
বাংলা ভাষার লিপি বৈচিত্র্যময়। এটা তার অনন্য
শক্তি ও অনন্ত সম্ভাবনাও। বাচ্চাদের শেখার ক্ষেত্রে আমরা প্রায়ই সমস্যার সম্মুখিন
হই। কিন্তু এরচেয়েও কঠিন চিন, জাপানের ভাষার লিপি।
অবশ্য বাচ্চাদেরকে বোঝালে বোঝে। একসময় তারা ঠিকই
ধরতে পারে। এটা আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পেরেছি। ভাষা শেখার ব্যাপারে
শিশুরা আপনার আমার চেয়ে ভাল গ্রহীতা। সে একসঙ্গে ৪/৫টা ভাষাও অনায়াসে শিখতে পারে।
ভাষার স্থানীয়করন আসলে একটা বড় বিষয়। সেটা
উচ্চারণের কিংবা লেখার ভাষা উভয়ক্ষেত্রেই সত্য। পৃথিবীর বহু ভাষা ও জাতি আছে।
অনেকেই তাদের ভাষায় ঐতিহ্যিক পুরাতন বানান রক্ষা করে এসেছে। কিন্তু আমরা সোজা করতে
গিয়ে বরং ভেঙেই ফেলেছি।
কাজেই বাংলা ভাষার লেখা, বলা, উচ্চারণ আর বানান
বিতর্কও খুব সহজে মিটবার নয়...
মন্তব্য
সুমন সাজ্জাদ
ভাষার ওপর জোয়াল চাপাতে
পারে না কোনো ব্যাটাই। তার আগেই ব্যাটারি ফুরায় যায়। বুঝছস? বাংলা একাডেমি নিজের
নামের সাথে হ্রস্ব-ই কার নিছে ২০+/- বছর পর। ঈদ/ইদ --- এটা ঠিক করে নেবে বাংলা
ভাষা ব্যবহারকারীরাই। সময় নেবে কিছু দিন। আর কিছু না।
উন্মেষ ধর
স্যার, 'ঈদ' বানানে
ই-কারের পক্ষপাতী হবো না, কেননা বানান তো নিছক ব্যাকরণের কায়দা-কানুনের বিষয়
নয়, সেই সঙ্গে আমাদের কালাচারাল প্র্যাকটিস/সাংস্কৃতিক চর্চা/অভ্যাস সমভাবে
গুরুত্ব পাবার কথা, অথচ আমাদের ব্যাকরণগুলো বেশিরভাগই আনুশাসনিক, বর্ণনামূলক
নয় । তাই বানান নির্ধারণে গণের চিরকালীন অভ্যাস/চর্চাকে হ্রস্ব করে দেখা যেন
'ব্যাকরণ'এর প্রবণতা হয়ে উঠেছে ।
সুব্রত দত্ত
ঠিক এই বিষয়টা নিয়েই ভাবছিলাম স্যার। আপনি পরিশ্রম লাঘব করে দিলেন। ধন্যবাদ। আর সমস্যা মিটবে বলে মনে হয় না কারণ এই বানান প্রসঙ্গেও আমাদের রাজনীতি মিশে গেছে
ঠিক এই বিষয়টা নিয়েই ভাবছিলাম স্যার। আপনি পরিশ্রম লাঘব করে দিলেন। ধন্যবাদ। আর সমস্যা মিটবে বলে মনে হয় না কারণ এই বানান প্রসঙ্গেও আমাদের রাজনীতি মিশে গেছে
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন