ফুকোরে ভুলে যান (পার্ট ১)


ফুকোরে ভুলে যান।। জ্যাঁ বদ্রিয়াঁ।।
ভূমিকা এবং ইন্টারভিউ: সিলভেরি লটরিঙ্গার।
বাংলা অনুবাদের নোট:
২০০৮ সালে এই বইয়ের একটা ইন্টারভিউ অনুবাদ করছিলাম। সেই ইন্টারভিউটা এডিট করতে বইসা মনে হইলো, পুরা বইটাই অনুবাদ করা যাক! টেক্সটটা ত খুব একটা বড় না!
তখন প্ল্যান ছিল ফুকো এবং দেল্যুজরে নিয়া একটা অনুবাদের বই করার। তো, উনাদের সবচে কঠিন সমালোচনা হইতেছে বদ্রিয়াঁ’র এই লেখা। যেইখানে ফুকো এবং দেল্যুজ জোর দিছেন একটা তত্ত্ব-ব্যবস্থার ওপর, সেইখানে বদ্রিয়াঁ কইলেন যে, তত্ত্ব ব্যাপারটারেই ধ্বংস কইরা দিতে হবে। শুধুমাত্র ফুকো এবং দেল্যুজের সমালোচনা না; তাদের সমালোচনার ভিতর দিয়া এই ছোট বইটা আসলে বদ্রিয়াঁ’র চিন্তার গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলারেই ব্যাখ্যা করে।
বাংলাভাষায় পোস্ট-মডার্ন দার্শনিকদের সমালোচনা নিয়া তেমন কোন লেখা বা অনুবাদ দেখি নাই অথবা হয়তো আমরা যেহেতু মডার্ন হইতেই রাজি না (যদিও রাজনৈতিক ইসলাম আসলে মডার্নিজমেরই একটা প্রজেক্ট), পোস্ট-মডার্ন আবার আয়ে কোত্থিকা; তার ওপরে আবার তার সমালোচনা! যা-ই হোক, রেখো মা দাসেরে মনে টাইপের আলাপ বাদ দিয়া এই কথাও বলা যায়, কোন এক সন্ধ্যায় হইলো মনে, করি না এই অনুবাদ আমি, বা এমনিএমনি; মানে কতকিছুই তো… অবশেষে, শুরু করি।
_____________________________________________________
বই এবং লেখক সম্পর্কে
মূল টেক্সটটা ১৯৭৭ সালে ফরাসী ভাষায় লেখা হইছিল এবং এর ইন্টারভিউগুলা নেয়া হইছিল ১৯৮৪-৮৫ সালে। প্রথমবার ইংরেজীতে ছাপা হয় ১৯৮৭ সালে। ২০০৭ সালে ছাপা হওয়া একটা এডিশন থিকা টেক্সটটা নেয়া হইছে।
জ্যাঁ বদ্রিয়াঁ (১৯২৯ – ২০০৭): অফ-ট্রাক দার্শনিক। নানান রকমের ভুল কারণে বেশ কয়েকবার বিখ্যাত হইছেন – ফুকোর সমালোচনা, ম্যাট্রিক্স সিনেমা’র দার্শনিক ভিত্তি তৈরি করা এবং তত্ত্ব-প্রণেতা এর মধ্যে কয়েকটা।
সিলভেরি লটরিঙ্গার
সিলভেরি লটরিঙ্গার
সিলভেরি লটরিঙ্গার (১৯৩৮ -) : সাহিত্য সমালোচক এবং সমাজ তাত্ত্বিক। ফুকো, দেল্যুজ, বদ্রিয়াঁ, গুট্ট্রেরী’র বেশকিছু বই ফরাসী থিকা ইংরেজীতে অনুবাদ করছেন। বর্তমানে তিনি সুইজারল্যান্ডে বিদেশী দর্শন পড়াইতেছেন।
______________________________________________________
সূচী
ভূমিকা: ফেরেশতাকে শেষ করা
ফুকোরে ভুলে যান
পরের-কথা: বদ্রিয়াঁরে ভুলে যান (সিলভেরি লটরিঙ্গারের সাথে একটা ইন্টারভিউ)
________________________________________________________
সিলভেরি লটরিঙ্গার
ফেরেশতাকে শেষ করা
ফরগেট ফুকো’র ভূমিকা
(ইংরেজীতে অনুবাদ করছেন নিকোল ডুফ্রেসন।)

১৯৭৬ এর ডিসেম্বরে জ্যাঁ বদ্রিয়াঁ জর্জ বাতালিi
জর্জ বাতালি
জর্জ বাতালি
প্রতিষ্ঠা করা বিখ্যাত ক্রিটিক পত্রিকায় একটা দীর্ঘ রিভিউ-প্রবন্ধ পাঠান মিশেল ফুকো’র জানার ইচ্ছা’র উপর ii, যেইটা সাম্প্রতিক সময়ে প্যারিসে প্রকাশিত হইছিল।(ফুকো এর সম্পাদকমন্ডলীতে আছিলেন)। এইটার শিরোনাম, “ফুকোরে ভুলে যান” iii লেখকের উদ্দেশ্য সম্পর্কে অল্প সন্দেহই রাখে। এইটা খালি বইটার একটা সমালোচনা না, বরং একটা পুস্তিকা যা তার পুরা কাজরে চ্যালেঞ্জ করে। এই রচনা ক্রিটিকে কখনোই ছাপা হয় নাই। এর বদলে, আলাদাভাবে, একটা বই হিসাবে কয়েকমাস পরে বাইর হয়।
ফরগেট ফুকো আমার মনে হয়, এই পর্যন্ত বদ্রিয়াঁর কাজের সবচে ভালো ভূমিকা। ১৯৮৩ তে শুরু হওয়া “ফরেন এজেন্টস” সিরিজের প্রথম তিনটা বইয়ের মধ্যে আমি এইটা ছাপাইতে চাইছিলাম, কিন্তু ফুকোর ওপর আক্রমণ এইটারে কিছুটা সমস্যাজনক কইরা ফেলছিল। খালি ফ্রান্সেই না এবং ফুকোর মাপের একজন দার্শনিকের ক্ষেত্রেই না, পাবলিকলি একজন দার্শনিকরে একহাত নেয়াটা খুব কমই দেখা যায়। এর বদলে আমি বদ্রিয়াঁ’র ছদ্মবেশগুলি (সিমুলেশনস) ছাপাইলাম, যা একরকমের বেস্ট-সেলার হইছিল, বিশেষ কইরা শিল্প-দুনিয়ায়। এক বছর পরে ফুকোর মৃত্যুতে পুস্তিকার প্রকাশনা আরো দেরি হয়। শেষ পর্যন্ত ১৯৮৭ তে ইংরেজীতে এইটা ছাড়া হয় ডাবল শিরোনামে: ফুকোরে ভুলে যান /বদ্রিয়াঁরে ভুলে যান, পাল্টাপাল্টি কাভারে, যেন একটা কাভার আরেকটারে বাতিল করতে পারে, এইভাবে কম ধর্মদ্রোহী কইরা। লস এঞ্জেলেসে আমাদের প্রথম দেখা হওয়ার এবং প্রজেক্টটা নিয়া কথা বলার চার বছর পরে ১৯৮৪ তে বদ্রিয়াঁর সাথে একটা দীর্ঘ আলাপই হইলো: “বদ্রিয়াঁরে ভুলে যান”। ফ্রান্সে এবং যুক্তরাষ্ট্রে দুই জায়গাতেই লাগাতার আপদ এবং মুলতবিকরণের পিছনে বদ্রিয়াঁর এই পুস্তিকার উদ্বোধনের অদ্ভূত স্ট্রাটেজীর ভালো ভূমিকা আছে।
জঁ বদ্রিয়াঁ
জ্যাঁ বদ্রিয়াঁ


প্রতীকী বিনিময় এবং মৃত্যু (সিম্বলিক এক্সচেইঞ্জ অ্যান্ড ডেথ) iv ছিল তখন পর্যন্ত তাঁর থিসিসের সবচে ব্যাপক প্রদর্শন, যা প্রকাশিত হওয়ার কিছু পরে বদ্রিয়াঁ  এইটা লেখেন। এই বই দুইটা কতোটা জোরালোভাবে সর্ম্পকিত সেইটা অল্প লোকই বুঝতে পারছিল। মজারভাবে, প্রতীকী বিনিময় বাইর করছিল এডিশনস গেলিমার্ড, লাইব্রেরী অফ হিউম্যান সায়েন্স’র একই বিখ্যাত সিরিজে, যারা ফুকোর অর্ডার অফ থিংকস করছিল।v যদিও এই বই দুইটা একটা তুলনা করার মতো প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে নাই, অথবা একইরকমের তীব্র বির্তকের আগুন জ্বালাইতে পারে নাই। আসলে প্রতীকী বিনিময় এবং মৃত্যু  ফ্রান্সে খুব অল্প মনোযোগ আনতে পারছিল এবং ২০ বছরের আগে পর্যন্ত ইংরেজীতে ছাপা হয় নাই। এর মধ্যে বদ্রিয়াঁ আম্রিকাতে বিখ্যাত হয়া ওঠেন তার কুমড়া-মুখ (deadpan), ভোক্তা সমাজ সর্ম্পকে একটানা নিহিলিস্ট দৃষ্টিভঙ্গির জন্য। প্রত্যেকেই তারে একজন শক্তিশালী এবং স্বাভাবিক চিন্তক হিসাবে চিনে নাই। আর যেইখানে এখনো তিনি তাঁর স্ববিরোধী অবস্থানগুলা, অথবা অসংযত ফর্মুলেশনগুলির জন্য পরিচিত, প্রত্যেকেই উপলদ্ধি করতে পারে না যে এই ফর্মুলেশনগুলা আসছে একটা নিখুঁত অবিচ্ছেদ্য দার্শনিকতার মর্ম থিকা, আর তাদের দ্যুতিময় পরিণতিগুলা দৃঢ় পান্ডিত্যের ভিত্তির ওপর দাঁড়ানো।


প্রতীকী বিনিময় এবং মৃত্যু’রে ফুকো’র যে কোন বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের সাথে “স্থাপন করাটা” সহজ আছিলো না। যদিও এইটা ঐ সময়ের অনেকগুলা বর্তমান ইস্যুরে চিহ্নিত করছিল, ফ্রান্সে ওই সময়টাতে যা ছাপা হইতেছিল তার চাইতে আলাদা কিছু মনে হইতো না। এইটা ওই বিষয়ের জন্য ওইখানে অথবা অন্য কোন জায়গার অংশ হিসাবে থাকে নাই। এইটা এমন আছিলো যেন বাইরের কোন জায়গা থিকা আইসা পড়ছে। এমনকি বদ্রিয়াঁর “প্রতীকী” শব্দটার ব্যবহার ছিলো কনফিউজিং। ওই সময়ে ক্লদ লেভি ত্রস্ত বা জাঁক লাঁকাঁ যেইভাবে ব্যবহার করতেন তার সাথে ঠিকমতো মিলতো না। সংস্কৃতির প্রতি তাঁর দ্বৈততাবাদী (পরস্পরবিরোধী) প্রস্তাবটাও খুব একটা কাজে দেয় নাই, মনে হইতো যে এক ধরণের যুগলবাদীতারে (binarism) পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতেছে, পোস্ট-স্ট্রাকচারালিস্টরা যেইটা বাদ দিতে চাইতেছিলেন। 

তখন পর্যন্ত বদ্রিয়াঁ মোটামুটি পরিচিত আছিলেন একজন স্ব-শিক্ষিত সমাজবিজ্ঞানী হিসাবে যিনি পরিস্থিতিবাদীvi ধারণার প্রতি আকর্ষিত, অনেকগুলা রচনার লেখক যিনি ভোক্তা সমাজের যুক্তি (এইটা চিহ্নগুলা বিনিময় করে, পণ্য না) এবং মার্ক্সিস্ট বিশ্লেষণে যা এইটার জন্য দায়ী (এইটা মূল্যরে ব্যবহার করে বিনিময় মূল্যের শুধুমাত্র একটা ফিকশন হিসাবে) – এই দুইটা জিনিসরে উন্মোচন করেন। ভোক্তা সমাজেvii, তিনি দেখাইলেনও যে আদর্শিক সমালোচনায়, যে কোন কাউন্টার-ডিসকোর্সে সত্যিকারভাবেই, সে কি বিরোধিতা করতেছে তা অর্ন্তনিহিতভাবেই থাকে। শেষ চেষ্টা হিসাবে পরিস্থিতিবাদীরা এমনকি জোর কইরা জাঁকজমকপূর্ণ হইতে চায়। (তাদের সুনির্দিষ্ট চেষ্টাগুলি হইলো পরীক্ষামূলক তাড়না এবং পুর্নপাঠগুলির viii মাধ্যমে “বিচ্ছিন্নতার প্রভাব”রে কমানো যা অবশ্যই অনেকবেশি কল্পনাপ্রবণ, কিন্তু খুব কমই সিদ্ধান্তমূলক)। বদ্রিয়াঁ আরো মৌলিক কিছু অর্জন করতে চাইতেছিলেন, আরো বড় প্রেক্ষিতে: ক্ষণস্থায়ী সেমিওটিক ixকোডগুলিকে স্থগিত করতে চান নাই-যার সমানতার মূলসূত্র পুঁজির প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে-বরং চাইছিলেন ধ্বংস।ধ্বংস, তিনি বলছিলেন। “একমাত্র সম্পূর্ণ বিপ্লব, তাত্ত্বিক এবং প্রায়োগিক, চিহ্ন এবং মূল্যের মৃত্যুর ভিতর দিয়া প্রতীকরে পুনঃস্থাপন করতে পারে। এমনকি চিহ্নগুলিরে পুড়াইয়া দেয়া দরকার।” চিহ্নের রাজনৈতিক অর্থনীতি’র সমলোচনা করতে গিয়া তিনি ঘোষণা করলেন। x এইটা করার চাইতে বলাটা সহজ ছিল। একটা সময়ে এইটা সন্দেহজনক ছিল যে কোন শ্রেণী (বিখ্যাত শ্রমিক শ্রেণীর কথা বাদই দেন) এই বীরত্বপূর্ণ কাজটা করতে পারবো কিনা। বিপ্লব এবং “কড়া সমালোচনা”রে ভুইলা গিয়া বদ্রিয়াঁ কাজটা নিজের হাতে নিলেন, পুঁজিবাদরে চ্যালেঞ্জ করলেন তার নিজের মৃত্যুরে উদ্দীপ্ত করার জন্য। এইটা এখনো এর ওপর কাজ করতেছে।
শক্রুর সাথে ঘুমানো
দেল্যুজ এবং গুট্টেরী
দেল্যুজ এবং গুট্টেরী
রাজনৈতিক তত্ত্বের ক্ষেত্রে এইটা ছিল একটা বড় বদল। সত্যিকারভাবে, এবং সমস্ত উপস্থিতির বিপরীতে, এইটা কি তা-ই না যার জন্য জিল দেল্যুজxi এবং ফেলিক্স গুট্টেরী xiiঅ্যান্টি-অডিপাসেxiii ওকালতি করছিলেন? অথবা মিশেল ফুকো তাঁর ডিসিপ্লিন এবং পানিশ এ xivমে’৬৮ xv এর জাগরণে।
এইটা কাকতালীয় না যে গুট্টেরী আর বদ্রিয়াঁ একটা সময়ে একই মাওবাদী গ্রুপে ছিলেন; অথবা ১৯৬৮ তে, বদ্রিয়াঁ অঁরি লেভরেঁ’র xvi সাথে ইউনির্ভিাসিটি অফ ন্যানটেরে’তে পড়াইতেছিলেন, জাগরণের মূল আবর্তটা ছিল যেইখানে। উনারা প্রতেকে একই রাজনৈতিক জায়গা থিকা আসছিলেন: অতি-বাম। ওই সময়ে বেশিরভাগে ফরাসী বুদ্ধিজীবীরা ওই জায়গাটাতে ছিলেন। তখন খুব বেশি অপশনস সামনে ছিল না।
ওই সময়ের ফুটেজ দিয়া বানানো ডকু
রাজনীতিতে মার্ক্সিস্ট রেটরিক বাতিলের খাতায় চইলা গেছিল। ছাত্র বিদ্রোহ অন্তঃত একটা জিনিস প্রমাণ করতে পারছিল: ফ্রান্সের কমিউনিস্ট পার্টি, ট্রেড-ইউনিয়ন এবং শ্রমিক শ্রেণী – পুরা প্রাতিষ্ঠানিক বামপন্থীরা বিপ্লবী হওয়া বন্ধ কইরা দিছিলো। কমিউনিস্ট আমলাতন্ত্র ছাত্রদের বিদ্রোহের পক্ষে তাদের শক্তিরে কাজে লাগায় নাই। এর বদলে এইটা অবরুদ্ধ সরকাররে চাপ দিতেছিলো বেতন বাড়ানোর জন্য। যখন ইতালিয়ান কমিউনিস্টরা পরে অটোনোমিয়া আন্দোলনরেxviiক্রুশবিদ্ধ করলো রেড বিগ্রেডেxviii সাথে জড়িত থাকার মিথ্যা অভিযোগে, ওইটাই ছিলো ইউরোপে সৃষ্টিশীল বামপন্থার শেষ।
এইটা আশ্চর্যের না যে ফ্রান্সে বদ্রিয়াঁসহ, ’৬৮-এর পরের চিন্তাবিদরা, অন্যকোথাও বিপ্লবী বিকল্পের খোঁজ করছিলেন। মিত্রপক্ষ ঠিক করতে ব্যর্থ হইয়া, তারা শত্রুর সাথে ঘুমানোটারেই স্থির করলেন। এইটা ছিল একটা সাহসী তাত্ত্বিক পরিবর্তন, পুঁজির বিশ্লেষণে মার্ক্সের চাইতে বেশি করা। “মে’র বাচ্চারা” সবাই, একটা বিপ্লবের বিচ্ছিন্ন বিপ্লবীরা, পুঁজিবাদের দিকে ঝুঁকছিলো, তার নাশকতামূলক শক্তিরে টাইনা বাইর কইরা আনার জন্য উতলা ছিলা, যেইটা সনাতন শ্রেণী সংগ্রামের ভিতর নাই। সেমিওটিক কোডের অনিশ্চিত বদলগুলির ভিতরে ক্ষমতার তত্ত্বকে নবায়ন  এবং সাবজেক্টিভিটির ওঠানামার মাধ্যমে তারা ধইরা নিছিলেন যে এর গতিরে তারা বদলাইতে এবং “অ-আঞ্চলিকীকরনxix করতে পারবেন, নতুন চেহারাগুলার জেগে ওঠারে মুক্তি দিতে পারবেন- মনোবৈকল্যিক সৃষ্টিশীলতায়, বাসনায়, যাযাবরপনায়, বিপ্লবী হয়া ওঠায়- আচমকা “পুন-আঞ্চলিকীকরনxx
সত্বেও, যেইটা ব্যবস্থাটা আরোপ করতে বাধ্য তার নিজের টিকে থাকার জন্য। (অ-অঞ্চলীকরনগুলি আসবে পুঁজির পরিপূর্ণ ডিকোডিফিকেশন থিকা।)
অ্যান্টি-অডিপাস
অ্যান্টি-অডিপাস
জন্তুর প্রকৃতি বিষয়ে বদ্রিয়াঁ তাদের সাথে অমত করেন নাই, করছেন শুধুমাত্র ক্ষতির মাত্রার বিষয়ে। তাদের বিপরীতে, তিনি বিভিন্ন “পাগলামির শাসনব্যবস্থা”র ভিতরে অথবা সীমাগুলির এবং তীব্রতার ঢালের মাত্রার মধ্যে ইচ্ছাকৃত পার্থক্য বজায় রাখতেন (যা প্রবাহমানতাগুলার গতিপথ এবং সঙ্গতিকে চিহ্নিত করার জন্য দরকারি) যা এরচে বেশি ধরে রাখতে পারে না। লিবিডিনাল পাথর্ক্যগুলা এই গতিটাকে থামানোর ক্ষেত্রে অক্ষম প্রমাণিত হইলো। তিনি তাদরকে দেখলেন একটা প্রক্রিয়ার ভিতর একটা পরিমিত মানবিক এজেন্সীরে পুনঃপরিচয়ের ব্যর্থ চেষ্টাগুলি হিসাবে যার দুইটাই অপরিবর্তনীয় (একমাত্রিক, ক্রমাবর্ধমান) এবং অমানবিক। উদ্যমী এবং তীব্র, পুঁজি ক্রমাগত ক্ষয় করতে থাকলো প্রতিটা বিশিষ্টতাকে।
অস্থিরতারে উদ্দীপ্ত করতে গিয়া, এইটা দিয়াই তারা শেষ হয়া গেছে। বিপ্লব আসছে আর গেছে; তারা অনেক দেরি কইরা আসছে, কাফকার যিশুখ্রীষ্টের মতো,xxi লাগামহীন উৎসবের একদিন পরে। শক্তভাবে মার্ক্সরে অতিক্রম করতে গিয়া, তারা খুব সহজেই তাদের নোঙরগুলি হারাইয়া ফেলছে। “তাত্ত্বিক উৎপাদন হইলো বস্তুগত উৎপাদনের মতোই,” বদ্রিয়াঁ লিখছিলেন, “তার নির্ধারিত অবস্থা হারাচ্ছে এবং নিজেরে উল্টাইতে শুরু করছে, একটা বাস্তবতার স্বীকারোক্তির দিকে পিছলাইতেছে যা কখনোই পাওয়া যাবে না। আমরা আজকে এইখানেই আছি: অনিশ্চিতি, ভাসমান তত্ত্বগুলির সময়ে, যেমনটা আছি ভাসমান টাকার সময়ে…” (এসই, পৃ. ৪৪)। পুঁজিবাদরে নিজেদের পক্ষে নিবার সব চেষ্টাই ব্যর্থ হওয়ার কথা। এই সঙ্কুলতা পার হওয়ার একটাই পথ, তা হইলো বিশ্বাসের ক্ষেত্রে একটা মৌলিক লাফ দেয়া, অজানার দিকে যাত্রা করা। শুধুমাত্র তত্ত্বের নিজের একটা পরিপূর্ণ অ-অঞ্চলীকরনই পুঁজির পরিপূর্ণ চ্যালেঞ্জটারে নিতে পারে।
বদ্রিয়াঁ একটা সম্পূর্ণ বিপ্লবের মাধ্যমে এইটাই বুঝাইছিলেন: একটা স্ট্রাডেজী যা ব্যবস্থাটারে চাপ দিয়া বাড়াবে এবং তার ভেঙে যাওয়ার জায়গাটাতে নিয়া যাবে। তারপর, যুক্তিপূর্নতার প্রতিটা ভন্ডামিরে বাদ দিবে, নিজেরে পরিক্রমণ করতে শুরু করবে এবং এই প্রক্রিয়ায় নিজের মতো কইরা একটা ঘূর্ণায়মানতা অর্জন করবে: “অর্থহীন কথাগুলির সুপ্তশক্তি সর্ম্পকে আমরা জানি যখন এইটা সিস্টেমরে বাধ্য করে তার নিখুঁত গোলকত্ব দাবি করার জন্য।” (ওবি রঁ’রxxii পেট) (এসই, পৃ.৪)। তার প্রথমদিককার পরাবিদ্যারxxiii শেকড়ে পুরাবৃত্তে ফিরার সময়, বদ্রিয়াঁ পুঁজিরে বিদ্রুপ করতে থাকেন জেরি’রxxiv অ্যাবসার্ডিসমের সমকক্ষ হওয়ার জন্য – ওবো’র কিম্ভুতকিমাকার ভাগ্যের ভাগ নেয়ার জন্য। সবকিছুর শেষে, পুঁজির নিজেই কি একটা পরাবাস্তবিক প্রস্তাব না? এইটা বিরতীহীনভাবে ডালগুলা কাটতেছিল যেইটার ওপর সে বসে আছে, গ্রহটারে ধ্বংস করতেছে এবং মানবপ্রজাতিরে বিপন্ন করতেছে যখন সে বলতেছে যে এর ব্যাপক উন্নতি করতেছে। মানবতার ভাগ্য বিষয়ে পুঁজি মোটেই গ্রাহ্য করে নাই। তার ব্যবসাটা তার আসল ছিল না। এইটা বাস্তবতার মূলসূত্ররে বাতিল করে এবং একটা উচ্চ অবস্থার কোডিফিকেশন দিয়া বিকল্প তৈরি করে, একটা হাইপার-রিয়ালিটি যা রিয়ালিটিরে অদরকারি কইরা ফেলে। এর শোকসঙ্গীত প্রবাহিত হয় নিজ-উল্লেখে, আর সবকিছুরে ফেলে রাখে একটা নিজ-সম্মত ভানের অবস্থায়। পুঁজির প্রবাহ ছিল মরণোত্তর, মানব-পরবর্তী। তাদের নিহিলিস্ট শক্তিতে, তারা নিজেরাই বহন করে তাদের নিজেদের ধ্বংসের বীজ। শুধুমাত্র ওবো, জেরি’র যুদ্ধাভিলাষী নায়ক, ভীত রাজা তার নিজের সহচরদেরকে খাইতে থাকে, আর এই প্রক্রিয়ায় সে নিজেরে, দায়ী করতে পারে একটা তেজি হতাশাবাদের জন্য। জাঁকজমকপূর্ণ সমাজটা পরিণত হইতেছিল থিয়েটারের নিষ্ঠুরতার একটা কোমল ভার্সনে, মৃত্যুর একটা কৌতুককর অনুকরণে যেখানে দুনিয়াটা হইলো একটা মঞ্চ। জীবন বিলাইয়া দেয়া হইলো কিছু-না’র জন্য, কিছু চকমকি খেলনার জন্য, কাজ সময়রে স্পঞ্জের মতো শুইষা নিলো আর কোন চিহ্নই থাকলো না। বদ্রিয়াঁ পরীক্ষক আছিলেন না, বরং তিনি নিজেই ছিলেন স্টিটেম। যদিও কেউই মনোযোগ দিতেছিল না।
বাস্তিলের দিনগুলাতে, ডি স্যাড ফরাসী রাজহন্তাদের চ্যালেঞ্জ করছিলেন বিপ্লব করতে তাদের চূড়ান্ত নৈতিক উপসংহারগুলি থিকা: “হে দেশবাসী যদি সত্যিকারের রিপাবলিকানের তকমা চান আপনাদেরকে একটা শেষ-চেষ্টা করা লাগবে!” সিস্টেমের সাথে বোকামির সাথে নিজেরে ঘুরাইতে ঘুরাইতে একজন অটিস্টিক বাচ্চার মতো, বদ্রিয়াঁ বাড়তি পথ যাওয়ার জন্য তৈরি ছিলেন। উনি পুঁজির বেকুব হইতেন এবং লণ্ঠনের মতো তার সুসংবাদটা ছড়াইতে চাইতেন: “প্রতিটা ব্যবস্থা যা খুঁতহীনভাবে চলতে থাকে একইসাথে এইটা তার পতনের দিকেও যাইতে থাকে… এইটা চূড়ান্ত ক্ষমতা এবং সর্ম্পূণ উদ্ভটত্বের দিকে যাইতে থাকে; যার মানে তাৎক্ষণিক এবং সম্ভাব্য উৎখাত। ঠিক জায়গাটাতে একটা হাল্কা ধাক্কাই যথেষ্ট এইটারে গুড়াইয়া দেয়ার জন্য” (এসই, পৃষ্টা ৪)। একটা বড় হাতুড়িসহ নিরীহ পরাবিদ্যকদের কাছ থিকা সাবধান।

মৃত্যু বাদ দিয়া
যেই সময়ে বদ্রিয়াঁ এই ভেঙে-পড়াটাকে ধারণা করলেন সেই সময়ে সমাজের সাধারণ চেহারা ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়া গেছিলো । ৬০’র শুরুতে শ্রমিকরা ততদিনে আকুল ভোক্তাতে পরিণত হইছে। কঠিন শ্রম থিকা আর উদ্বৃত্ত-মূল্য বাইর হইতেছিল না; এইটা তৈরি হইতেছিল পণ্য থিকা। বাস্তবতার চাইতে বড় বাস্তব হয়া ওঠছিলো সেমিওটিক সমানতা। যখন “যোগাযোগ” প্রতিস্থাপন করলো উৎপাদনরে, শ্রমিকরা “বিচ্ছিন্ন” হয়া গেলো কাজের জায়গাতে না, বরং তাদের ঘরে তাদের প্রতিদিনকার জীবনে। শ্রেণী সংগ্রাম আর কার্যকর নাই। এইটা ছিল সমাবেশ–জীবন এর শুরু, সামাজিক জীবন উপনিবেশিত হইতেছিল পণ্য দিয়া।
ফরাসী তত্ত্বের মধ্যে বদ্রিয়াঁ’র চিন্তা একটা বিশেষ অবস্থা উপভোগ করে, ত্রিশের এবং চল্লিশের কড়া মর্ডানিস্ট চিন্তাবিদ এবং পোস্ট-স্ট্রাকচালারিস্টের মধ্যে একটা ব্রীজ তৈরি মাধ্যমে, যা মার্কিস্ট বিশ্লেষণকে পুঁজিবাদের ক্রমবর্ধমান বিমূতায়নের সাপেক্ষে সংশোধন করতে চায়।
যেইখানে পরিস্থিতাবাদীরা তাদের পুনর্পাঠগুলির মাধ্যমে জীবনরে পুনরুদ্ধার করতে চায়, বদ্রিয়াঁ সেইখানে মৃত্যুরে তার মিত্র কইরা নিলেন। নিটশের মাধ্যশে হেগেলরে পুর্নপাঠ কইরা তিনি বুঝতে পারলেন যে ঋণ সবসময় বিনিময়ের পূর্ববর্তী। একজন অবসরপ্রাপ্ত দাস তার নিজের জীবনে কখনোই মালিকের উপহার থিকা মুক্ত হইতে পারে না। ফুকো তারজানার ইচ্ছা বইয়ের উপসংহারে একই কথা বলছিলেন, যে বইটারে বদ্রিয়াঁ লোকদেখানোভাবে চ্যালেঞ্জ করলেন। ফুকো তার পাঠকদেরকে মনে কইরা দিলেন যে, প্রাচীন সংস্কৃতিতে, খুন করার অধিকার ছিল একটা অসম্মতব্যাপার। বাস্তবে, এইটা ছিল “জীবন নেয়ার অথবা বাঁচতে দেয়ার অধিকার”। আর বদ্রিয়াঁ বলেন, “আমরা যা কল্পনা করতে পারি এইটা তার বিপরীত, ক্ষমতা কখনোই একজনরে মৃত্যু দেয়ার ক্ষমতা না, বরং পুরাপুরি তার উল্টাটা।” ক্ষমতা সংরক্ষণ করে “একতরফাভাবে (বিশেষ কইরা জীবন) দেয়াটা।” (ভোক্তা সমাজ, পৃষ্টা ৪০ -৪২)। ফুকো বলতেছিলেন মৃত্যুর সর্বোচ্চ রূপের কথা যেই সময়টাতে সার্বভৌমত্ব নিজের বেঁচে থাকার জন্য অন্যরে হত্যা করাটা ব্যবহার করতে পারে। আধুনিক সময়ে, এই প্রতীকী অধিকার টিকে আছে, কিন্তু ফুকো ধরে নিছিলেন, শুধুমাত্র একটা “আপেক্ষিক এবং সীমিত” রূপে। ক্ষমতার মেকানিজম নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হইছে। জীবনরে ধ্বংস করার চাইতে ক্ষমতার মেকানিজম তারে সবগুলি পথ দিয়াই ম্যানেজ করে। যার ফলে “বাঁচতে দাও” বদলে গেছে “জীবন লালন” করাতে এবং এইভাবে মৃত্যু ও এর সাথে জড়িত আচার-অনুষ্ঠানগুলিরে বাতিল করে।
মিশেল ফুকো
মিশেল ফুকো
“এখন এইটা জীবনের ওপর, যার ভিতর দিয়া সে উন্মোচিত হইতেছে,” ফুকো লিখছিলেন, “যেইখানে ক্ষমতা তার নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে; মৃত্যু হইলো ক্ষমতার সীমানা, যখন এইটা ফস্কাইয়া যায়; মৃত্যু হইলো অস্তিত্বের সবচে গোপন চেহারা, সবচে ‘ব্যক্তিগত’”। xxvযখন ফুকো অনুসন্ধান করতে গেলেন “জীবনরে জব্দ করা” সত্যিকারভাবে কি অর্থ করে শরীর এবং জীবনের ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে, এই জায়গাটা বদ্রিয়াঁর চিন্তায় একটা কেন্দ্রীয় জায়গা হইয়া ওঠে। কিন্তু এইসব নিয়ন্ত্রিত শরীর, সৃষ্টিশীল বায়ো-পাওয়ারের মাধ্যমে তৈরি করা নতুনভাবে উপযোজিত জীবনগুলারে কি আমরা জীবন্ত বলবো? ফুকো সংক্ষিপ্তভাবে একটা “প্রতিরোধের” সম্ভাবনার কথা ভাবছিলেন, কিন্তু তারে কখনোই এর প্রকৃতি অথবা শর্তগুলারে বিস্তারিত করেন  নাই যার মাধ্যমে এইটা দেখা যাইতে পারে। কেউ যুক্তি দেখাইতে পারে যে ফুকো বাই ডিফল্ট  বদ্রিয়াঁর থিসিসরে প্রমাণ করেন। জীবনরে সীমার দিকে ধাক্কা দেয়া যায় তখনই যেই মুহূর্তে এইটা সমানতার ব্যবস্থা থিকা বাইর হইতে পারে, ক্ষমতারে ক্ষমতাহীন করতে পারে। একজনের জীবনরে বিলাইয়া দেয়া – একটা উল্টা দান – একমাত্র উপহার, যার প্রতিদান সম্ভব না।

সূত্র ও ব্যাখ্যা:
(আন্ডারলাইকৃত শব্দ/শব্দগুলি বাংলা অনুবাদে যোগ করা, বাকিগুলা ইংরেজী অনুবাদের অংশ)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন