আলী আফজাল খান
শব্দের বিন্যাস এবং শব্দচয়ন পোস্টমডার্ন কবিতায় জটিল বা বুঝতে অসুবিধা হয়। কবিতায়
অ্যাখানটি চেতনার প্রবাহ হিসাবে এমন স্টাইলে লেখা হয় যেন তা চিন্তার অনুগামী কিংবা
বক্তার এমন শব্দমালা যা পাঠকের বিবেচনায় নির্মিত হয় না। কাজটি ইচ্ছাকৃত যা পাঠককে
মনে করিয়ে দেয় সে কবিতার বাইরে এবং তাই দেখছো যা কবি তাকে দেখাতে চেয়েছেন। এই
ধরনের কবিতা পাঠে অর্থ উদ্ধার করতে গেলে পাঠক বোকা বনে যেতে পারেন, যা আসলে কবি
এবং দর্শকের পার্থক্যকেই প্রকাশ করে।
- অস্থির
বিষয়কে কবিতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় (themes of restlessness) এবং মুক্ত ফর্মে লেখা
হয়। লাইন ভাঙ্গা এবং গঠন হতে পারে বিশৃংখল এবং আপাতদৃষ্টিতে অর্থহীন, যদিও এই
অস্বাভাবিক লাইন ভাঙ্গা হয় নির্দিষ্ট কারণেই, কবিতার ভাব প্রকাশ আগে যেখানে লাইন
ভাঙ্গা এবং যতিচিহ্ন দিয়ে করা হতো, সেখানে পোস্টমডার্ন কবিতায় অনিশ্চিত লাইন
ভাঙ্গা হয় পৃথিবীর সামঞ্জস্যহীন বিশৃংখলতা তুলে ধরতে। এই ধরনের ফর্ম তাই আসলে
ব্যবহৃত হয় এটা প্রকাশ করতে যে ফর্ম ব্যবহার অর্থহীন এবং কোনো উদ্দেশ্যকে কাজের
উপর আরোপ করা যায় না।
-
অস্তিত্ববাদী বা শূন্যবাদী বিষয় থাকে কবিতায়। যদিও পোস্টমডার্নিজম ও অস্তিত্ববাদ
সমার্থক নয়, তবু তাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক আছে। এই ধরনের কবিতা ধারণা দেয় যে, জগৎ
ও জীবন অর্থহীন অথবা মানুষ যে উদ্দেশ্য বা অর্থ আরোপ করে জগৎ জীবনের প্রতি তা
বর্জন করে। মূলত: এটা করা হয় পাঠককে বিষন্ন করতে নয়, বরং তার স্বস্তির কেন্দ্রকে
নড়িয়ে দিতে এবং জগৎকে নতুনভাবে বিবেচনা করতে।
- প্রথা
ও প্রতিষ্ঠান বিরোধীতা (Iconoclasm): কৃষ্টি ও সংস্কৃতির আদর্শ, পূর্বতন শিল্পকর্ম
এবং কর্তৃপক্ষকে মহাত্ম দান রহিত করে (decolonizes), রচয়িতার কর্তৃত্বকে অস্বীকার
করে এবং কোন সময়ের বক্তা/বাচক হিসাবে তার দাবীকে খারিজ করে (মর্ডানিজমের সৃষ্টি
এখন একাডেমিক অধ্যায়নের বিষয়: post-impressionist painting appeared on Christmas
cards, and contemporary music featured in popular concert; Pound espoused
right-wing views, Eliot wrote in tight forms, became an established figure and
received the noble prize )। পোস্টমডার্ন কবিতা পাঠকের প্রত্যাশার সাথে দ্বন্দ্ব
তৈরী করে। প্রায়ই পাঠককে ব্যাঙ্গাত্মক (parody), বিদ্রুপ (irony) এবং পাঁচমিশালী
(pastiche) দিয়ে মূলকে ধ্বংস করে পাঠককে বিচ্ছিন্ন করে দেয় (alienating)।
পোস্টমডার্ন কবিতা জাতিগত, লিঙ্গ এবং সাংস্কৃতিক বৈষম্যের সমালোচনা করে।
এখন সময়
গণসাহিত্য এবং গণযোগাযোগের। কাজেই পুরানো বিষয় এবং তাদের চাকর-মনিব আচরণ আর
প্রযোজ্য নয়, পুরানে দক্ষতা কেবল দাসসূলভ নকল, বাকপটুতাপূর্ণ ও জাল, যার অনুসরণ
সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদীতা। কাজেই একাডেমিসিয়ান ও তার ছাত্ররা এবং মিডিয়ার
বিক্রয়কমীরাই এখন মর্ডানিজমের প্রচারক। এজন্য তত্ত্ব ও বাস্তবতার পার্থক্য
পোস্টমর্ডানিজমের আর একটা দিক যেখানে, ‘anything goes’.
- পাটাতন
বা ভিত্তিহীন (Groundless): শিল্প, রাজনীতি, জনসেবা- জীবনের সকল দানবীয়
প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো সুদৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড়ানো নেই। বিঞ্জান, গণিত, ভাষাতত্ত্ব,
সমাজবিঞ্জান, দর্শন – যেই সত্যঞ্জানের কথা বলুক না
কেনো, সকলেরই সীমাবদ্ধতা আছে। সবগুলোতেই অনুমান, সাংস্কৃতিক সমঝোতা, চুক্তি যে
কোনগুলো গুরুত্বপূর্ণ আর তাদের গুরত্ব কিভাবে পরিমাপ বা পরীক্ষা করা হবে। এমনকি
আমাদের ভাষাও সীমাবদ্ধ, সাম্প্রদায়িক এবং মাধ্যমিক। বাস্তবতা কোথায় শেষ হয় এবং
কোথায় ইন্টারপ্রিটেশন শুরু হয়। জীবন ও শিল্পসাহিত্যকে কি আলাদা করা যায়? –
দু’টোইতো কাল্পনিক। সবগুলো ঞ্জানকান্ডই –
আমরা দেখেছি যেমন সিস্টেম যারা পরস্পর পরিবহনযোগ্য নয়
পোস্টমডার্নটি
তাই কোনো চূড়ান্ত বা শ্রেয় ইন্টারপ্রিটিশনকে প্রত্যাখান করে, কোনো কিছুর মানে
নির্ণয় করা যায় না। উপরিতলের, media-like image ব্যবহার করে যাদের নিজেরা ছাড়া
কোনো রেফারেন্স নাই (স্বয়ংম্ভু)। জীবন ও শিল্প সাহিত্য উভয়ই যেহেতু ফিকশন কাজেই কবিতায়
বা উভয়ের মিশ্রণ, কাজেই পোস্টমডার্ন কবিতায় এদের ভেদ থাকে না যা যাদুবাস্তবতা
(Magic realism) বা বহুসীমায় শেষ হয়। বাস্তবতা, ভাষা ও শিল্পের সীমাবদ্ধতাকে
এড়িয়েই (overlooks) পোস্টমর্ডানিজমের যাত্রা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন