জাপানি হাইকু কবিতা পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ক্ষুদ্র এবং স্বতন্ত্র কবিতা বিশেষ। তিন ছত্রবিশিষ্ট এবং ৫+৭+৫=১৭ অক্ষর মিলিয়ে সর্বমোট ১৭টি ধ্বনির সমন্বয়ই হচ্ছে হাইকু। এই স্বর বা ধ্বনিকে তাল, ছন্দ এবং মাত্রাও বলা যায়। যেমন:
[ফু-রু (দু মাত্রা) ই-কে (দু মাত্রা) ইয়া(এক মাত্রা)
কা-ওয়া-জু (তিন মাত্রা) তো-বি(দু মাত্রা) কো-মু(দু মাত্রা)
মি-জু (দু মাত্রা) নো(এক মাত্রা) অ-তো(দুমাত্রা)]
(হোক্কু: মাৎসুও বাশোও [১৬৪৪-৯৪]) অর্থ: পুরনো পুকুরে ব্যাঙ লাফ দিয়ে পড়লে জলের শব্দ ওঠে। জাপানি ভাষায় তিন রকমের অক্ষর বিদ্যমান যথাক্রমে হিরাগানা, কাতাকানা ও কানজি। এই তিন রকমের অক্ষর হাইকুতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। হাইকু লিখিয়ে কবিকে ‘হাইজিন’ বলা হয়।
হাইকুর তিনটি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান যেমন,
ক) ৫+৭+৫ ধ্বনি বা ছন্দ, খ) কিগো, সাইজিকি বা ঋতুভিত্তিক শব্দের ব্যবহার, গ) কিরে বা বিরতি এবং
ঘ) য়োইন বা অনুরণন।
এছাড়াও জিউরিৎহাইকু তথা মুক্ত ছন্দে যেমন ৮+৭+৫ মাত্রায় হাইকুও লিখেছেন হাইজিন মাৎসুও বাশোও। হাইকু আবৃত্তি করার সময়ও নানা রকম নিয়মরীতি মেনে চলার বিধানও দিয়েছেন প্রখ্যাত হাইজিন ও চিকিৎসক মিজুহারা শুওশি প্রকৃত নাম মিজুহারা ইউতাকা (১৮৯২-১৯৮১)।
ক) ৫+৭+৫ ধ্বনি বা ছন্দ, খ) কিগো, সাইজিকি বা ঋতুভিত্তিক শব্দের ব্যবহার, গ) কিরে বা বিরতি এবং
ঘ) য়োইন বা অনুরণন।
এছাড়াও জিউরিৎহাইকু তথা মুক্ত ছন্দে যেমন ৮+৭+৫ মাত্রায় হাইকুও লিখেছেন হাইজিন মাৎসুও বাশোও। হাইকু আবৃত্তি করার সময়ও নানা রকম নিয়মরীতি মেনে চলার বিধানও দিয়েছেন প্রখ্যাত হাইজিন ও চিকিৎসক মিজুহারা শুওশি প্রকৃত নাম মিজুহারা ইউতাকা (১৮৯২-১৯৮১)।
হাইকু জাপানে খুবই জনপ্রিয়। প্রত্যেক জাপানিই হাইকু লেখায় সিদ্ধ। শিশুকাল থেকেই জাপানিরা হাইকুচর্চা করে থাকেন ফলে মৃত্যু পর্যন্ত তারা হাইকু লেখা ভুলে যান না। ঋতুভিত্তিক হাইকুভ্রমণ খুবই জনপ্রিয়। বিশেষ করে হেমন্ত ও বসন্তকালে জাপানিরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে বেরিয়ে পড়েন এবং নোটবুকে লিখে রাখেন মনের মাধুরী মিশিয়ে হাইকুসমূহ। এগুলো বার্ধক্য জীবনে অনেকেই জিহি শুপ্পান বা স্বব্যয়ে গ্রন্থভুক্ত করেন। জাপানি ভাষার দৈনিক পত্রিকাগুলোতে যেমন নিয়মিত হাইকু প্রকাশের জন্য পাতা বরাদ্দ রয়েছে তেমনি হাইকু বিষয়ক সাময়িকীও রয়েছে একাধিক। রয়েছে হাইকু কবিদের একাধিক সংঘ, সংস্থা ও গবেষণাকেন্দ্র। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন সময় হাইকুবিষয়ক বহুরঙা বর্ণিল সংকলন প্রকাশিত হয়ে থাকে। জাপানি ভাষায় হাইকু সম্পর্কে প্রচুর গ্রন্থাদি বিদ্যমান। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। হাইকুর প্রদর্শনী একটি নিয়মিত সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এদেশে। সর্বধর্মের অনুসারীরাই হাইকুচর্চা করে থাকেন। বিশেষ করে জেন্ বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মন্দিরে ভিক্ষু-পুরোহিতরা নিয়মিত হাইকুচর্চা করেন। ইন্টারনেটের বদৌলতে এখন হাইকুবিষয়ক অসংখ্য ওয়েবসাইট বিদ্যমান।
বাঙালির সঙ্গে হাইকুর প্রথম পরিচয় সুরেন্দ্রনাথ মৈত্রর মাধ্যমে। তিনি জাপানি ঝিনুক নামে হাইকুর একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এরপর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিছু হাইকু অনুবাদ করেছিলেন। হাইকুর প্রেরণায় কিছু ক্ষুদ্র কবিতাও তিনি লিখেছেন। বাংলাদেশে হাইকুবিষয়ক গ্রন্থগুলো হলো,আসাদ চৌধুরীর হাইকু, হাসনাত আবদুল হাই এর কিয়োতো হাইকু, জগলুল হায়দারের জলটুপ শ্রাবণে ইত্যাদি।
ভারতের গুজরাটে জিনাভাই রতনজি দেশাই ‘হোরশ্মি’ হাইকুকে বেশ জনপ্রিয় করে তুলেছেন। ২০০৮ সালে তাঁর উদ্যোগে বেঙ্গালোরে হাইকু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পাকিস্তানের ইংরেজি ভাষার কবি ওমর তারিন (১৯৬৬-) যিনি একজন নিরস্ত্রীকরণ আন্দোলন কর্মী জাপানে ও পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন শান্তিবাদী সম্মেলনে হাইকু পাঠ করে বহুজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন