শাহীন রহমান
একজন মানুষ হিসেবে নারীর পূর্ণ অধিকারের দাবি হলো নারীবাদ (ঋবসরহরংস)। আধুনিক সংজ্ঞায় নারীবাদ হচ্ছে পরিবার, কর্মক্ষেত্র ও সমাজে নারীর হীন মর্যাদা সম্পর্কে সচেতনতা অর্জন এবং এই অবস্থা পরিবর্তনে নারী ও পুরম্নষের সচেতন সক্রিয় উদ্যোগ। বিশ্বজুড়ে যে বিদ্যমান শ্রম বিভাগ পুরম্নষের ওপর রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি এসব সামাজিক পরিমণ্ডলের দায়িত্ব অর্পণ করে এবং নারীকে গোটা সংসারের বোঝা বহনকারী বিনা মজুরির বাঁদিগিরির দিকে ঠেলে দেয় তাকে চ্যালেঞ্জ করে নারীবাদ। নারীবাদ বিরাজমান ক্ষমতা কাঠামো, আইনকানুন, রীতিনীতি যা নারীকে বশ্য, অধীনস্থ ও হীন করে রাখে; তার বিরম্নদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
নারীবাদ হলো একটি সামাজিক আন্দোলন যা নারীর গৎবাধা ভূমিকা ও ভাবমূর্তির পরিবর্তন, জেন্ডার বৈষম্য বিলোপ এবং পুরম্নষের মতো নারীর সমান অধিকার অর্জনের প্রয়াসী। অনেকে ভ্রান্ত ধারণারবশে নারীবাদকে পশ্চিমা এজেন্ডা বা পুরষের বিরম্নদ্ধে নারীর প্রাধান্য স্থাপন বলে মনে করে। পিতৃতন্ত্রের ঠিক বিপরীত কোনো কিছু বলে বিবেচনা করে নারীবাদকে। কিন্তু নারীবাদ অর্থ কখনই নারীর প্রাধান্য বিসত্মার নয়। নারীবাদ তাই নারীদের আন্দোলন নয়, বরং নারীদের জন্য আন্দোলন, নারী ও পুরম্নষের মধ্যে সাম্য প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। সে জন্য তা নারীদের পরিপূর্ণ মানুষের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা প্রত্যাশী পুরম্নষদেরও আন্দোলন। ফরাসী শব্দ ফেমিনিজম বা বাংলায় নারীবাদ শব্দটি প্রথম প্রচলন ও ব্যবহার করেন কাল্পনিক বা ইউটোপীয় (টঃড়ঢ়রড়) সমাজতন্ত্রী চার্লস ফুয়েরার। ১৮৯৪ সালে ইংরেজী শব্দটি গৃহীত হলেও ১৯৩৩ সালে অঙ্ফোর্ড অভিধানের পরিশিষ্টতে এর প্রথম উলেস্নখ পাওয়া যায়; আভিধানিক অর্থে নারীবাদ হলো একটি আন্দোলন যা, 'পুরম্নষের মতো নারীদের সমান অধিকারের দাবি করে।' সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে তাই নারীবাদ হলো পরিবার, কর্মক্ষেত্র ও সমাজে নারীর ওপর শোষণ-নিপীড়ন সম্বন্ধে সচেতনতা এবং এই অবস্থা বদলের লক্ষ্যে নারীর (সেই সঙ্গে পুরম্নষের) সচেতন প্রয়াস। নারীবাদ তাই কেবল সমতা ও মুক্তির জন্য সংগ্রাম নয়, যা নারীর বিরম্নদ্ধে বিদ্যমান বৈষম্য অবসানের লক্ষ্যে সমান অধিকার ও আইনী সংস্কার সাধনের জন্য তাড়িত করবে। বরং তা পরিবারে নারীর অধসত্মনতার মূল বিষয়গুলো মোকাবেলা করে এবং বিরাজমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানায়।
নারীবাদ : আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট
অতীতের ইতিহাসে এমন অনেক নারীর উদাহরণ পাওয়া যায় যারা ছিলেন প্রচণ্ড ক্ষমতা, সাহস আর প্রতিভার অধিকারী। এসব নারী বিখ্যাত সম্রাজ্ঞী বা রানী, সাহসী নারীযোদ্ধা, সন্ন্যাসিনী, ডাইনী (তথাকথিত), বিজ্ঞানী, কবি, শিল্পী পরিচয়ে আমাদের কাছে পরিচিত। তাঁরা হলেন নারীর ইতিহাসের বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, একক ব্যতিক্রমরূপে যাদের উত্থান ঘটেছে। কিন্তু এঁরা কেউই অধিকাংশ সাধারণ নির্যাতি নারীর স্বাধীনতা বৃদ্ধিতে কোনো অবদান রাখতে সক্ষম হয়নি। এটা তাঁদের ব্যক্তিগত দুর্বলতা নয়, যুগের সীমাবদ্ধতা। তাই নারীর অধসত্মন অবস্থা পরিবর্তনের প্রচেষ্টার প্রক্রিয়ার সঙ্গে নারীবাদ সম্পর্কিত। কখন নারীবাদের উন্মেষ ঘটেছে এ প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় যে, যখনই নারীরা তাদের পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট বৃহৎ পরিসরে এবং যথেষ্ট কার্যকরভাবে নিজেদের সংগঠিত করতে শুরম্নু করেছে, তখন থেকেই নারীবাদের যাত্রা শুরম্নু। ১৬৬২ সালে ওলন্দাজ নারী মার্গারেট লুকাস রচিত নারী ভাষণ (ঋবসধষব ঙৎধঃরড়হং) বিশ্বের জ্ঞাত ইতিহাসে প্রথম নারীবাদী সাহিত্য যেখানে নারীর পরাধীনতা ও অসম অধিকারের বিষয়টি বিধৃত হয়েছে। নারীবাদের ইতিহাসে প্রথম নারীবাদী যার নাম পাওয়া যায় তিনি হলেন সতেরো শতকের ফরাসী নারী পলেইন ডি লা ব্যারে। সেই সময়েই তিনি লিখেন, পুরম্নষ কতর্ৃক নারী সম্পর্কে যা কিছু লেখা হয়েছে তার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করতে হবে। কারণ এক্ষেত্রে পুরম্নষ একই সঙ্গে অভিযুক্ত এবং বিচারকের আসনে আসীন। উলেস্নখ্য যে, ১৭৮৯ সালের মহান ফরাসী বিপস্নবের সাম্য মৈত্রী স্বাধীনতার বাণী সারা বিশ্বের নারীবাদীদের কাছে অভূতপূর্ব অনুপ্রেরণার উৎসরূপে কাজ করে। (চলবে)
নারীবাদ হলো একটি সামাজিক আন্দোলন যা নারীর গৎবাধা ভূমিকা ও ভাবমূর্তির পরিবর্তন, জেন্ডার বৈষম্য বিলোপ এবং পুরম্নষের মতো নারীর সমান অধিকার অর্জনের প্রয়াসী। অনেকে ভ্রান্ত ধারণারবশে নারীবাদকে পশ্চিমা এজেন্ডা বা পুরষের বিরম্নদ্ধে নারীর প্রাধান্য স্থাপন বলে মনে করে। পিতৃতন্ত্রের ঠিক বিপরীত কোনো কিছু বলে বিবেচনা করে নারীবাদকে। কিন্তু নারীবাদ অর্থ কখনই নারীর প্রাধান্য বিসত্মার নয়। নারীবাদ তাই নারীদের আন্দোলন নয়, বরং নারীদের জন্য আন্দোলন, নারী ও পুরম্নষের মধ্যে সাম্য প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। সে জন্য তা নারীদের পরিপূর্ণ মানুষের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা প্রত্যাশী পুরম্নষদেরও আন্দোলন। ফরাসী শব্দ ফেমিনিজম বা বাংলায় নারীবাদ শব্দটি প্রথম প্রচলন ও ব্যবহার করেন কাল্পনিক বা ইউটোপীয় (টঃড়ঢ়রড়) সমাজতন্ত্রী চার্লস ফুয়েরার। ১৮৯৪ সালে ইংরেজী শব্দটি গৃহীত হলেও ১৯৩৩ সালে অঙ্ফোর্ড অভিধানের পরিশিষ্টতে এর প্রথম উলেস্নখ পাওয়া যায়; আভিধানিক অর্থে নারীবাদ হলো একটি আন্দোলন যা, 'পুরম্নষের মতো নারীদের সমান অধিকারের দাবি করে।' সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে তাই নারীবাদ হলো পরিবার, কর্মক্ষেত্র ও সমাজে নারীর ওপর শোষণ-নিপীড়ন সম্বন্ধে সচেতনতা এবং এই অবস্থা বদলের লক্ষ্যে নারীর (সেই সঙ্গে পুরম্নষের) সচেতন প্রয়াস। নারীবাদ তাই কেবল সমতা ও মুক্তির জন্য সংগ্রাম নয়, যা নারীর বিরম্নদ্ধে বিদ্যমান বৈষম্য অবসানের লক্ষ্যে সমান অধিকার ও আইনী সংস্কার সাধনের জন্য তাড়িত করবে। বরং তা পরিবারে নারীর অধসত্মনতার মূল বিষয়গুলো মোকাবেলা করে এবং বিরাজমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানায়।
নারীবাদ : আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট
অতীতের ইতিহাসে এমন অনেক নারীর উদাহরণ পাওয়া যায় যারা ছিলেন প্রচণ্ড ক্ষমতা, সাহস আর প্রতিভার অধিকারী। এসব নারী বিখ্যাত সম্রাজ্ঞী বা রানী, সাহসী নারীযোদ্ধা, সন্ন্যাসিনী, ডাইনী (তথাকথিত), বিজ্ঞানী, কবি, শিল্পী পরিচয়ে আমাদের কাছে পরিচিত। তাঁরা হলেন নারীর ইতিহাসের বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, একক ব্যতিক্রমরূপে যাদের উত্থান ঘটেছে। কিন্তু এঁরা কেউই অধিকাংশ সাধারণ নির্যাতি নারীর স্বাধীনতা বৃদ্ধিতে কোনো অবদান রাখতে সক্ষম হয়নি। এটা তাঁদের ব্যক্তিগত দুর্বলতা নয়, যুগের সীমাবদ্ধতা। তাই নারীর অধসত্মন অবস্থা পরিবর্তনের প্রচেষ্টার প্রক্রিয়ার সঙ্গে নারীবাদ সম্পর্কিত। কখন নারীবাদের উন্মেষ ঘটেছে এ প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় যে, যখনই নারীরা তাদের পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট বৃহৎ পরিসরে এবং যথেষ্ট কার্যকরভাবে নিজেদের সংগঠিত করতে শুরম্নু করেছে, তখন থেকেই নারীবাদের যাত্রা শুরম্নু। ১৬৬২ সালে ওলন্দাজ নারী মার্গারেট লুকাস রচিত নারী ভাষণ (ঋবসধষব ঙৎধঃরড়হং) বিশ্বের জ্ঞাত ইতিহাসে প্রথম নারীবাদী সাহিত্য যেখানে নারীর পরাধীনতা ও অসম অধিকারের বিষয়টি বিধৃত হয়েছে। নারীবাদের ইতিহাসে প্রথম নারীবাদী যার নাম পাওয়া যায় তিনি হলেন সতেরো শতকের ফরাসী নারী পলেইন ডি লা ব্যারে। সেই সময়েই তিনি লিখেন, পুরম্নষ কতর্ৃক নারী সম্পর্কে যা কিছু লেখা হয়েছে তার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করতে হবে। কারণ এক্ষেত্রে পুরম্নষ একই সঙ্গে অভিযুক্ত এবং বিচারকের আসনে আসীন। উলেস্নখ্য যে, ১৭৮৯ সালের মহান ফরাসী বিপস্নবের সাম্য মৈত্রী স্বাধীনতার বাণী সারা বিশ্বের নারীবাদীদের কাছে অভূতপূর্ব অনুপ্রেরণার উৎসরূপে কাজ করে। (চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন