লুনা রুশদী
প্রায় সারারাত জাগলাম লেনর্ড উলফের কাছে লেখা ভার্জিনিয়া উলফের সুইসাইড নোটের কথা ভাবতে ভাবতে। ইউটিউবে দেখলাম ‘দ্যা আওয়ারস’ মুভির দৃশ্য। দেখলাম চিঠি লেখার সময় কলম ধরা হাত ইতস্তত করতেছে, একই সাথে গাছগাছালি, পাখির ডাকের মধ্যে ভার্জিনিয়া (নিকোল কিডম্যান) অস্থির হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছালেন উস নদীর কিনারে। নদীর ঘোলা পানি নির্বিকার বইতেছে। দরজা খুইলা ঘরে ঢুকতেছেন লেনর্ড উলফ। নিকোল কিডম্যানের কণ্ঠে চিঠির কথাগুলা শুনতে শুনতেই দর্শক দেখতেছে একটা ভারি পাথর কোটের পকেটে ঢুকাইয়া আস্তে আস্তে ভার্জিনিয়া নাইমা যাইতেছেন নদীর একদম মধ্যে…
প্রায় সারারাত জাগলাম লেনর্ড উলফের কাছে লেখা ভার্জিনিয়া উলফের সুইসাইড নোটের কথা ভাবতে ভাবতে। ইউটিউবে দেখলাম ‘দ্যা আওয়ারস’ মুভির দৃশ্য। দেখলাম চিঠি লেখার সময় কলম ধরা হাত ইতস্তত করতেছে, একই সাথে গাছগাছালি, পাখির ডাকের মধ্যে ভার্জিনিয়া (নিকোল কিডম্যান) অস্থির হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছালেন উস নদীর কিনারে। নদীর ঘোলা পানি নির্বিকার বইতেছে। দরজা খুইলা ঘরে ঢুকতেছেন লেনর্ড উলফ। নিকোল কিডম্যানের কণ্ঠে চিঠির কথাগুলা শুনতে শুনতেই দর্শক দেখতেছে একটা ভারি পাথর কোটের পকেটে ঢুকাইয়া আস্তে আস্তে ভার্জিনিয়া নাইমা যাইতেছেন নদীর একদম মধ্যে…
সেদিন অফিসে রওনা দিলাম যখন, তখনও অন্ধকার। আগের রাতে গাড়ি রাস্তায় পার্ক করার কারণে কাচে হিম জমতে জমতে প্রায় বরফ। সেই জমাট কুয়াশা তরল করতেছিলাম ওয়াইপার চালাইয়া। প্রিন্সেস হাইওয়েতে ওঠার মুখে দেখি কুয়াশায় দুনিয়া চেনা যাইতেছে না। রাস্তার আলোগুলা তখনও জ্বলতেছে। মনে হইতেছিল কুয়াশার ওইপাশে কয়েক শতাব্দী ভেদ কইরা আলোগুলা পৌঁছাইতেছে আমার কাছে। গাড়িগুলার জ্বলন্ত হেডলাইট ছাড়া কিছুই দেখা যায় না, আর হুশ-হাশ শব্দ। পায়ে হাঁটা যে ওভারব্রীজটা আছে রাস্তার উপরে তার অর্ধেক উধাও, এই ব্রীজ পার হইয়া ছোটবেলায় আমরা স্কুলে যাইতাম। ব্রীজের ঠিক মাঝ বরাবরে মাঝেমাঝেই দাঁড়াইয়া দেখতাম নিচের রাস্তা। অবিরাম চলতেছে সবাই, কোনদিকে দেখে না কেউ। এক একটা গাড়ির মধ্যে আলাদা আলাদা জগৎ, সার বাইন্ধা একই রাস্তায়, একই দিকে যাইতেছে কিন্তু কেউ কারো সাথে নাই। তখন হঠাৎ ব্রীজ থিকা ঝাঁপ দিতে ইচ্ছা হইতো, দুঃখ টুঃখ ছাড়াই। ভাবতাম এই যে আমি এখন ব্রীজের উপরে দাঁড়ানো, না থাকলে কী হবে? আমি নিচে পড়লে চলতে থাকা গাড়িগুলার রুটিন কী ভাবে বদলাবে? সেই দিনটা আমার কারণে কতজন মানুষের জন্য অন্যরকম হবে? এইগুলা কী সুইসাইডাল চিন্তা? মনে হয় না।
আমি সাধারণভাবে মনে করি আত্মহত্যা এক ধরনের পরাজয়। একটা রাস্তা চলতে চলতে আর চলতে না পারা। সাহিত্যে বা প্রচার মাধ্যমগুলায় প্রায়ই খুব কাব্যিক ভঙ্গিতে উপস্থাপিত হয় বিষয়টা। এতে কবি কবি ভাবের লোকেরা আগ্রহী হয়। মৃত্যু তো আছেই, সেইটারে আগাইয়া আনার মধ্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মানসিক অপরিপক্কতা, সহনশীলতার অভাব আর স্বার্থপরতাও থাকে।
তারপরেও কারও কারও আত্মহত্যা আলাদা। মনের মধ্যে গভীর ছায়া ফেলে। এদেরকে সাধারণের সাথে ফেলা যায় না। ভার্জিনিয়া উলফের আত্মহত্যা যেমন, আমি তাঁর নিদারূণ যন্ত্রণা টের পাই। তাঁর সুইসাইড নোটে নিজের কোন অতৃপ্তি, না পাওয়ার কথা নাই। যেন কয়েদখানা থিকা মুক্ত হইতেছেন তিনি এবং সাথে মুক্ত করতেছেন লেনর্ডরেও। অসহ্য সময়গুলাতে আমারো যেমন পানির তলায় গিয়া শুইয়া থাকতে ইচ্ছা হয়…
মেলবোর্ন, ২৭ জুলাই ২০১৪
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন