খো র শে দ আ ল ম
[ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একেকটি
হত্যাকা-ের পর তাদের অতৃপ্ত আত্মা প্রেতাত্মা হয়ে ঘুরে বেড়ায়। তারা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন
জায়গায় বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলে। কখনো অন্যরা ভয় পায়। কখনো তাদের সঙ্গে কথা চালিয়ে
যায়। তারা একেকটা বিবেক হয়ে প্রশ্ন করে। ছাত্র, শিক্ষক, নেতা, পাতি নেতা, নিরাপত্তাকর্মী,
গার্ডসহ নানা জনের সঙ্গে তারা কথা বলে। তাদের অতৃপ্ত আত্মারা নানা ধরনের দাবী রাখে,
কখনো হত্যার বিচার চায়। তারা অভিযুক্ত করে জাতির বিবেক শিক্ষকদেরকে পর্যন্ত। কিন্তু
দিনের আলোয় পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকে। শুধু টিকে থাকে তাদের রক্তাক্ত ইতিহাস। ]
চরিত্রসমূহ :
১. প্রেতাত্মা (প্রধান)
২. প্রেতাত্মা (অন্যান্য)
৩. জনৈক শিক্ষক-১
৪. জনৈক শিক্ষক-২
৫. জনৈক শিক্ষক-৩
৬. নিরাপত্তা কর্মী
৭. ছাত্রবৃন্দ (রাজনৈতিক দলের)
৮. ছাত্রবৃন্দ (কতিপয় সাধারণ)
৯. ছাত্রবৃন্দ (সাংস্কৃতিক কর্মী)
দৃশ্যপট যেভাবে তৈরি হবে :
[জনৈক শিক্ষক হেঁটে যাচ্ছে রাতের আবছা
অন্ধকারে। তাকে প্রেতাত্মারা থামায়। তার সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করে। প্রেতাত্মার পরনে
কাফনের সাদা কাপড়, তার সঙ্গে আস্তে আস্তে পেছনে এসে এসে দাঁড়াবে আরো কিছু সংখ্যক শুভ্রবেশধারী
মানুষ। রাতের আকাশে তারার মৃদু আলোয় তারা এসে দাঁড়াবে। ঘুটঘুটে অন্ধকার কাটিয়ে ক্ষীণ
আলোতে মঞ্চে উঠবে তারা। ]
প্রেতাত্মা : স্লামালেকুম স্যার।
শিক্ষক : তুমি কে বাবা?
প্রেতাত্মা : আমাকে চিনতে পারছ না?
আমাকে তোমরা বাঁচতে দাওনি। আমার স্মৃতিকেও ম্লান করেছ। আমি তোমাদেরকে কাউকেই ক্ষমা
করব না।
শিক্ষক : তুমি ক্ষমা না করলেও আমরা
অনেক কিছু করতে পারি। আর আমাকেই বা এসব জিজ্ঞাসা করা কেন?
প্রেতাত্মা : তোমরা যখন কিছুই করতে
পার না তখন আমার মত সীমাহীন মৃত্যুর দেশে চলে আসো। অনেক কিছু বুঝতে পারবে।
শিক্ষক : আমাদের মৃত্যু দরকার নেই।
তাছাড়া আমরা অনন্তকাল ধরে বাঁচব। আমরা সবকিছু নির্ধারণ করবো।
প্রেতাত্মা : কি নির্ধারণ করবে তোমরা?
মৃত্যু?
শিক্ষক : না না না পৃথিবীতে করিৎকর্মা
মানুষের অস্তিত্ব আবিষ্কার করব আমরা। আমাদের মহান ব্রত তাই বলে।
প্রেতাত্মা : তোমরা মহান একথা তোমাদেরকে
কে শিখিয়েছে?
শিক্ষক : আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য আমাদের
সুদীর্ঘকালের প্রাতিষ্ঠানিক চিন্তা আমাদেরকে সভ্য করেছে। আমরা সেখান থেকেই নির্ধারণ
করেছি আমরা মহান।
প্রেতাত্মা : তাহলে আমার প্রতি তোমাদের
অবিচার কেন?
শিক্ষক : তুমি তো নিজের দোষেই নিজের
কাঁধে মৃত্যুকে বরণ করেছ।
প্রেতাত্মা : মানে?
শিক্ষক : মানে খুবই পরিষ্কার। তুমি
দুষ্কৃতিকারীদের দলে ঠাঁই নিয়েছিলে। তারই পরিণাম আজকের পরিণতি।
প্রেতাত্মা : আর তোমরা দুষ্কৃতিকারীদের
চেয়ে আলাদা?
শিক্ষক : তুমি কী বলতে চাইছ?
প্রেতাত্মা : আমি যা বলতে চাচ্ছি তা
পরিষ্কার। কেবল তোমরাই জল ঘোলা করছ।
শিক্ষক : এত বড় সাহস! দাঁড়াও তোমাকে
আজকেই বহিষ্কার করব এই এক্ষণ এই পবিত্র ভূমি থেকে।
প্রেতাত্মা : মৃতকে বহিষ্কার করার
কিছু নেই। ভুলে যাবেন না আমি মরে গেছি।
শিক্ষক : তুমি, তুমিই কিন্তু আমাদের
পিছু ছাড়ছ না। তুমি ষড়যন্ত্র করে সবাইকে লেলিয়ে দিচ্ছ আমাদের বিরুদ্ধে।
প্রেতাত্মা : আমার ক্ষমতাকে তাহলে
অস্বীকার করছ না।
শিক্ষক : তুমি তুমি আবার কি ক্ষমতাবান?
তুমি তো বেঁচে নেই।
প্রেতাত্মা : হ্যাঁ আমি সকল কলকাঠি
নাড়ছি গোপনে। রাত্রে ওদের আত্মারা আসে। চুপি চুপি দেখা করে কথা বলে। আগে যারা মরে গেছে
তাদের সঙ্গে একসাথে বসে হাওয়া খাই। রাতে যখন সুনসান নিরবতা তখন লেকের পাশে ব্রিজের
তলায় বসে থাকি। বটতলায় দোকানগুলোর পরিত্যক্ত খাবার শুকে দেখি। হাড্ডিগুলো চিবিয়ে খাই।
আমরা দলবেধে বিল্ডিংগুলোর ওপর গিয়ে বসি। প্রথমে হলগুলোর ছাদে ঘুরে বেড়াই। গেস্টরুমের
সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বসি। তারপর অন্য জায়গায়।
শিক্ষক : গেস্টরুমের সোফায় কেন?
প্রেতাত্মা : কারণ ওখান থেকেই আমাদের
তালিম শুরু। আমাদের শরীরে এই যে ক্ষতস্থান দেখতে পাচ্ছ, বড়গুলো নয়, এই যে ছোট ছোট লম্বা
লম্বা কালশিটে পড়া দাগ, এগুলোতো ওখান থেকেই পাওয়া।
শিক্ষক : আর কোথায় যাও তোমরা?
প্রেতাত্মা : তারপর যাই টিএসসি, অডিটোরিয়াম,
মুক্তমঞ্চ, চৌরঙ্গীর মোড়, ক্লাব সব জায়গা ঘুরে বেড়াই আমরা। শুধু যাই না তোমাদের আবাসিক
বাড়িগুলোর ছাদে। আমরা কাউকেই বিরক্ত করি না। তাছাড়া একাডেমিক ভবনগুলোও একেএকে চষে বেড়াই।
শিক্ষক : তোমাদের ভয় করে না?
প্রেতাত্মা : আমরা তো ভয়ের রাজ্য পেরিয়ে
এসেছি। এখন নিরবচ্ছিন্ন অন্ধকারের রাজ্য। এখানে মারামারি হানাহানি নেই। কেবল শরীরের
ক্ষতস্থানগুলো কামড়াকামড়ি করে এখনো। তোমাদের মেডিকেল সেন্টারে যাই। মেডিকেল বর্জ্যরে
নর্দমার পচা পলিথিনগুলো ঘাটি। নানাধরনের পরিত্যক্ত ওষুধ সামগ্রীগুলো গায়ে মাখি। কিন্তু
ব্যথা দূর হয় না। আরো বাড়ে। ডাক্তারের কাছে যেতে পারি না। আমরা ঘুমন্ত মানুষকে বিরক্ত
করি না। আর ঐ যে বললাম তোমাদের আবাসিক বাড়িগুলো থেকে দূরে থাকি।
শিক্ষক : রাতের বেলা নিরাপত্তা রক্ষী
থাকে। তারা তো তোমাদেরকে দেখলে হুশিয়ার করার কথা।
প্রেতাত্মা : ছাই আমাদের তো শরীরই
নেই দেখবে কেমন করে। আর আমরা ওদেরকে ভয় পাইনা। কারণ তারা রাতের বেলা ডিউটি করে কিন্তু
দিনের বেলা ভয় করে। দিনের বেলা আমরাও লুকিয়ে থাকি ক্যাম্পাসের জঙ্গলের ভেতরে। যেখানে
তোমাদের সূর্যালোক গিয়ে পৌঁছায় না। দিনের বেলা নিরাপত্তা গাড়িগুলো আমরা চোখে দেখতে
পাই। দেখতে পাই সারি সারি করে দাঁড়িয়ে থাকা তোমাদের গাড়িগুলো। ওগুলোর কোনো ক্ষমতা নেই
দুর্বৃত্ত তাড়ানোর। কারণ ওগুলোর নিজেদের নিরাপত্তা নেই। ধর আমরাই যদি ধাক্কা মারি রাতের
বেলা তাহলেও লেকের পানিতে গড়িয়ে পড়বে। আমরা অবশ্য তা করি না। আমাদের বিবেক আছে।
শিক্ষক : তোমাদের বিবেক আছে? তাহলে
কেন আমার পথরোধ করে আমাকে বিরক্ত করছ।
প্রেতাত্মা : বিরক্ত তো করছি না। তোমাদের
কা-জ্ঞান বাড়ানোর চেষ্টা করছি।
শিক্ষক : খবরদার। আমাদের কা-জ্ঞান
নিয়ে প্রশ্ন তুলবে না। আমরা জাতির বিবেক।
প্রেতাত্মা : হা হা হা হা হা
শিক্ষক : হাসছ কেন?
প্রেতাত্মা : এটা ত হাসির কথাই।
শিক্ষক : কেন হাসির কথা?
প্রেতাত্মা : ও বুঝতে পারনি।
শিক্ষক : আমরা নিজেরাও বিবেকবান তাছাড়া
বিবেক সৃষ্টি করার যন্ত্রও বটে। আমরা প্রতি বছর এই এত এত বিবেক উৎপাদন করি। এই বিবেকরাই
তো বাংলাদেশেকে টিকিয়ে রাখছে বছরের পর বছর।
প্রেতাত্মা : মিথ্যে কথা। তোমরা বিবেক
তৈরি কর না বিবেকহীন তৈরি কর। নইলে আমাকে আমার আত্মার মধ্যে তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে
থাকতে হত না। আমার হাতে পায়ে নখে মাথায় উরুতে শরীরের প্রত্যেকটি জায়গায় আঘাতের চিহ্ন।
তোমরা নিজেদের স্বার্থে বিবেককে জলাঞ্জলি দিয়ে রাজনৈতিক ঝা-া উচিয়ে বেড়াও। আর এর জন্যই
বলি হই আমরা।
শিক্ষক : তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।
আমরা দেশের স্বার্থে রাজনীতি করি। রাজনীতিতে ছোটখাট দুর্ঘটনা স্বাভাবিক।
প্রেতাত্মা : কোনটা স্বাভাবিক আর কোনটা
অস্বাভাবিক সে বোধটাও তোমরা হারিয়েছ। আর বলছ যে তোমরা বিবেক উৎপাদন কর। তোমরা আসলে
মিথ্যুক।
শিক্ষক : তুমি কিন্তু খুব বাড়াবাড়ি
করছ। লজিক্যাল সিকোয়েন্স হারিয়ে ফেলেছ। তুমি প্রেতাত্মা। তুমি ইলজিক্যাল কথাবার্তা
বলছ।
প্রেতাত্মা : তোমাদের ভূয়া লজিক আত্মারা
স্বীকার করে না।
শিক্ষক : এ্যাই এ্যাই কী বললে তুমি?
আমাদের লজিক ভূয়া!
প্রেতাত্মা : হ্যাঁ ভূয়া, ভূয়া এবং
ভূয়া।
শিক্ষক : দূর হও আমার সামনে থেকে।
নইলে পুলিশ ডাকতে বাধ্য হব।
প্রেতাত্মা : পুলিশ ডেকে কী হবে। তাদের
সব শক্তি এখন নিঃশেষিত। তারা কলের পুতুলের মত নিরবে দাঁড়িয়ে থাকে। আর না হয় নিরপরাধের
পিঠে লাঠির আঘাত করে।
শিক্ষক : তুমি সবার বিরুদ্ধে প্রশ্ন
তুলছ। তুমি একাই ঠিক তোমার এই যুক্তি মানতে পারছি না।
প্রেতাত্মা : তা মানবে কি করে? তোমরা
তো সবাই অযৌক্তিক হয়ে গেছ ইতোমধ্যে।
শিক্ষক : তুমি, তুমি কিন্তু মাত্রা
ছাড়িয়ে যাচ্ছ।
প্রেতাত্মা : ঝগড়া করে বৃথা সময় নষ্ট
করতে চাই না। ঠিক আছে আজ তাহলে আসি। আবার দেখা হবে।
[কয়েকজন নেতা ও পাতি নেতা পার্টির
মিটিং শেষে ক্যাম্পাসের রাস্তা ধরে যার যার গন্তব্যে ফিরছে। তাদের কথাবর্তায় উগ্রভাব
প্রকাশ পাবে। ব্যস্ত-সমস্ত হওয়ায় কীসের যেন একটা অস্থিরতা তাদের ভেতরে কাজ করে। চাপাগুঞ্জনও
শোনা যাবে তাদের ভেতর থেকে। ]
প্রথম : তোরা কি বুঝবার পারতাছস পরিস্থিতি
কুনদিকে মোড় নিবারলাগচে?
দ্বিতীয় : না ইঙ্গিতটা ধরবার পারতাছিনা।
আসলে মূল কমিটিতে কোনগ্রুপ থাকবার পারে কেন্দ্রের থেইক্যা হেই ডিসিশনডা অহনো আহে নাই।
তৃতীয় : এমুন কইরা আমাগো আর পিছপা
অইলে চলতাছে না। রাজনীতি কইর্যা অহনো কিছু নগদ পাইলাম না। অথচ রাতদিন কাম করতে আছি।
প্রথম : হেইডাই তো রাজনীতির খেলা।
কুন গাঠের জল কুন গাটে গিয়া গড়ায় বোজাই মুশকিল।
দ্বিতীয় : আসলে গোড়াতেই গলদ হয়াছে।
ক এর সাতে না গিয়া যদি খ এর সাতে যাইতাম তাইলেও কিছু ফায়দা পাওন যাইত।
প্রথম : তোরে তো আগেই কইছিলাম। যা
করবি ভাইবা চিন্তা করিস।
তৃতীয় : আসলে মাঝখানে হইত্যাডাই তো
সব গ-োগোলের মূল। এখন কুনদিক যাই ভাইব্যা পাইতাছিনা।
দ্বিতীয় : ওরে তুইল্যা নিয়া গিয়া পুইতা
ফ্যালাইতি। তাইলে আজ খুঁইজ্যাও পাইত না। হালারা মদন। আর দিতি কয়ডা চিপা মার। সাপও মরত
লাডিও ভাঙত না।
তৃতীয় : তখন বুঝতে পারি নাই বস্। হালায়
অহন জেলের ভাত খাইতাছে। আর সবুর করেন কয়দিন হেইদিকে লাইন গাঠ অইতাছে। দেখি কী করন যায়।
হেরে বার কইরা আনমুই। দেখছেন না এর আগের কেসে কয়ডার হাড্ডিগুড্ডি ভাইঙ্গা ফেলনের পর
আমাগো জেলে নিয়া গেল। আর পুলিশরা হাজতের বিতরে আমাগো কি জামাই আদরডাই না কল্ল।
চতুর্থ : হ সবই তো মনে আছে। থানার
ওসি সাব বাইরে হম্বিতম্বি করলে কি হইব। আসলে তো হ্যা খুব খাতির কল্ল আমাগো।
প্রথম : ঐ চুপ কর। খাতির করছে কিএর
লাইগা বোঝস নাই। আমার লগে কতা অইসে হ্যার লগে অর্তাৎ ন্যাতার লগে। হ্যায় সব ঠিত কইরা
দিছিল। আর ওপর থেইক্যা অর্ডার আছে। আমাগো গায়ে ফুলের টোকাও পড়বো না। যাই হোক অহন বর্তমানে
কোনদিকে পাল খাটাইতে হইবো হেই চিন্তা কর।
প্রেতাত্মা : এই তোমরা কোথায় যাও?
দ্বিতীয় : সে কতা তোমারে কইতে যাব
কোন হালায়? ওই তুমি ক্যাডা?
প্রেতাত্মা : আমি আমি তো তোমাদেরই
একজন ছিলাম।
চতুর্থ : হালায় কয় কি? কি কইবি পষ্ট
কইরা বইল্যা ফ্যালা। আর কেডায় তুই কৈফিয়ত চাস? দিমু একটা বন্দুকের গুলি ফুডাইয়া।
প্রেতাত্মা : মরা মানষেরে ক্যামনে
গুলি করবা? আমাকে তো পিটিয়েই মেরেছ। বন্দুকের দরকার কি?
প্রথম : হালায় কয় কি? মরবার পরেও দেহি
ত্যাজ কমে নাই ! আর একবার কতা কইবি তো হলে উডবার দিমু না।
প্রেতাত্মা : ভুলে যাচ্ছ কেন আমি বেঁচে
নেই।
তৃতীয় : কোন হালারেই ডরাই না। ঐ তুই
মইরা গ্যাসছ না বাইচ্যা আচস তা জাইন্যা আমাগোর কাম কি হা। যা সইরা যা এইখান থেইক্যা।
কুনু দরনের রাজনীতি কইর্যা এইহানে আইস্যা পাত্তা পাইবি না। আমরাই সবকিছু দখল কইর্যা
ফালামু।
প্রেতাত্মা : তোমরা আবার ভুলে যাচ্ছ
আমি মৃত।
চতুর্থ : তুই বেটা মরছস তোর নিজের
লাইগ্যা। রাজনীতিডারে আরেকটু চাঙ্গা করনেরর লাইগ্যা। আমরা হগ্গলেই বুঝতা পারি।
প্রেতাত্মা : তোমরা পুরোপুরি বিবেকহীন
হয়ে গেছ?
দ্বিতীয় : দে তো হালারে একখান গুলি
কইরা। হালায় বিবেক শিখানের লাইগ্যা আইছে। চুপ হারামজাদা। আরেকটা কতা কইবি তো তোর জিবটা
ছুইল্যা দিমু। ঐ তোরা চাইয়া চাইয়া দেখছস ক্যান। মার হালাওে কয়ডা গুতা, গুতা মাইরা ফালাইয়্যা
দে।
প্রেতাত্মা : তোমরা আমাকে আঘাত করার
সমস্ত শক্তি হারিয়েছ। এখন নিজেরা মরার জন্য প্রস্তুত থাকো। তোমাদের মধ্যে কেউ একজন
আবার প্রাণ হারাবে।
প্রথম : হালায় কয় কি? এত্তগুলান পোলাপানরে
এমনি পালতাছি নাকি। হ্যারা তো আমার লগেই আছে। আমার গায়ে টোকাটি মারতে পারব না।
প্রেতাত্মা : বন্ধ কর তোমাদের এইসব
রাজনীতি। তোমরা দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠকে কলঙ্কিত করছ।
দ্বিতীয় : হালায় দেখি লেকচার দিবাললাগচে।
মরতে আইচিলি ক্যান। একখান কুনোরকম ফাস্টোক্লাস পাইলে তো ভার্ষিটির চাকরি লইবার পারতি।
না থুককু তাও লাগবোনা। আমগো বড় ন্যাতায় কইছে আমার কোটায় একজনরে ঢুকামুই।
প্রেতাত্মা : হাবিজাবি কথা বলো না।
সব শিক্ষক একরকম নয়। আদর্শবান মানুষ এখনও টিকে আছে।
তৃতীয় : আদর্শ-ফাদর্শ অহন অত কপচাইতাছ।
কুনু বাপের পুত মাস্টারও তো আইসা তোরে ঠ্যাকাবার পারে নাই। মাস্টাররা তো দেহি অহন আমগো
রাজনীতিতে পা চুবাইয়া ধুমাইয়া পানি খায়।
প্রেতাত্মা : তোমরা আমাকে নির্জনে
পিটিয়ে পিটিয়ে মেরেছ। এখানকার জঙ্গল ও গাছপালাই কেবল সাক্ষী। আমার শরীর দুমড়ে মুচড়ে
দিয়েছ। আহ্ কী যন্ত্রণা। আমার সমস্ত হাড়গোড় ভেঙে গেছে। রক্ত পড়ছে সারা শরীর ফেটে। জীবিত
মানুষকে পিটিয়ে মারার যন্ত্রণা কত ভয়ানক তোমরা জান না। এখন ঝগড়া করছ শিক্ষকদের দায়িত্ব
নিয়ে।
প্রথম : ঐ চল হ্যার লগে কতা কইলে চলব
না। কাইলকার কর্মসূচি ঠিক করন লাগবো।
[ আবার কোন এক শিক্ষকের সঙ্গে প্রেতাত্মার
দেখা। ঐ শিক্ষক নৈশভ্রমণে বের হয়েছেন। প্রেতাত্মারা একে একে তার পিছনে এসে দাঁড়াবে।
]
প্রেতাত্মা : সালামু আলাইকুম। কোথায়
যাচ্ছেন?
শিক্ষক : নৈশ ভ্রমণে যাচ্ছি। কিন্তু
তুমি কে? চিনতে পারলাম না ত? আমার বিভাগের ছাত্র নাকি তুমি?
প্রেতাত্মা : আপনার বিভাগের না হলেও
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আমি।
শিক্ষক : তা বাবা এত রাতে কি মনে করে?
প্রেতাত্মা : আমার ব্যাপারে আপনারা
কি করছেন?
শিক্ষক : তুমি কে বলত?
প্রেতাত্মা : আমাকে চিনতে পারলেন না?
আমাকে হত্যা করা হয়েছে। এই দ্যাখেনÑ আমার মুখটা রক্তাক্ত, সাদা কাপড়েও চুয়ে পড়ছে রক্ত।
আমি যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছি না।
শিক্ষক : আমরা তো তোমার জন্যই মিটিং-সিটিং
করছি। আর প্রশাসনের কাছে জোর দাবী তুলছি তোমার বিচারের জন্য।
প্রেতাত্মা : স্যার আপনাকে অনুরোধ
এর সঙ্গে অন্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্য যেন না থাকে। প্লিজ স্যার আমার কথাটা ভেবে দেখবেন।
না হলে আমি শান্তি পাচ্ছি না।
শিক্ষক : অন্য উদ্দেশ্য থাকবে কেন
বাবা? আমরা তো বিচার প্রক্রিয়াটা ত্বরান্বিত করার জন্যই রাজনৈতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করার
চেষ্টা চালাচ্ছি।
প্রেতাত্মা : আমি তো মরেই গেছি। দেখবেন
আমার মত আর কোন ছাত্র যেন এমন নির্মমভাবে হত্যাকা-ের শিকার না হয়।
শিক্ষক : আমাদের এ দাবীটিই থাকবে সর্বাগ্রে
তারপর অন্য কথা।
প্রেতাত্মা : ধন্যবাদ স্যার আপনার
এই আশ্বাস বাণীর জন্য। আপনার মত শিক্ষক যুগে যুগে জন্মাক।
[ প্রেতাত্মারা একজন নৈশপ্রহরীকে সামনে
পায়। নৈশপ্রহরী হুশিয়ার শব্দ করবে। হুইসেলের শব্দ বাজবে। প্রেতাত্মা দেখে সে চমকে ওঠার
মত ভাব করবে। প্রেতাত্মারা তাকে ঘিরে দাঁড়াবে। ]
প্রহরী : হুশিয়া...র, হুই হুই, হুশিয়া...র।
প্রেতাত্মা : কোথায় যাচ্ছেন?
প্রহরী : ক্যাডা, ক্যাডায় আপনে? কাফনের
কাপড় পইর্যা আছেন ক্যান?
প্রেতাত্মা : আমি তো জীবিত নই। সাদা
কাপড়ই আমার ভরসা।
প্রহরী : আপনি সইরা যান আমার সামনে
থেইক্যা, সইরা যান কইছি। আমার ডর করতাছে। উহু।
প্রেতাত্মা : ভয় পাবার কিছু নেই। কদিন
আগেও আমি এ পথ দিয়ে হেঁটে গিয়েছি। আপনার সঙ্গেও কথা হয়েছে।
প্রহরী : কিন্তু আমি মরা মানসের লগে
কথা কই না। আমার কেমুন ডর করতাছে।
প্রেতাত্মা : আপনি ডর পেলে পাহাড়া
দেবে কে? জীবিত ছাত্রদেরকে তো আপনারা ভয় পান না।
প্রহরী : জীবিত মানসের আবার ভয় কি?
প্রেতাত্মা : ভেবে বলেন কথাটা।
প্রহরী : ভাবতাছি। হ হেইদিন দিনের
বেলায় ছাত্রগো পিডাইয়া হাত-পা ভাইঙ্গা দিল হ্যারা।
প্রেতাত্মা : তাদেরকে ভয় পান, না আমাকে?
প্রহরী : সন্ত্রাসী হইলেও জীবিত মানুষ
ভালা। এই যে আমার পা ঠকঠক কইর্যা কাঁপতাছে। আপনে যান এইহান থেইক্যা। নইলে আমি চিক্কুর
পারুম।
প্রেতাত্মা : আপনি ক্যাম্পাসে কতদিন
চাকরি করেন?
প্রহরী : হেই শুরুর থেইক্যা চাকরি
করি। কত্তগুলা খুন অইল আমার সামনে। তবে কেউ আমার লগে এমুন কইরা সামনে দাঁড়ায় নাই।
প্রেতাত্মা : ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি।
[ সংস্কৃতিকর্মীদের সঙ্গে প্রেতাত্মাদের
দেখা হবে। সংস্কৃতিকর্মীদের তাদের হাত ও পা বাঁধা থাকবে। কারো কারো মুখে রক্তের দাগ।
কাফনের সাদা কাপড় পরিহিত তাদের পোষাকেও লাল লাল ছোপ ছোপ দাগ থাকবে। মৃদু সঙ্গীতের সুরে
বেদনাঘন পরিবেশ তৈরি করা হবে। ]
প্রেতাত্মা : আমি দু:খিত। তোমরা আমার
জন্য আহত হয়েছ।
সংস্কৃতিকর্মী : শুধু তোমার জন্য নয়।
আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক পরিবিশ ফিরিয়ে দিতে চাই।
প্রেতাত্মা : একি তোমাদের হাত নেই
ক্যানো? পাগুলোই বা বাঁধা কেন? তোমরা লড়াই করবে কীভাবে?
সংস্কৃতিকর্মী : আমাদের হাতগুলো খসে
পড়ে গেছে ঠিকই আমাদের অন্তর খোলা আছে। আমাদের প্রাণের শক্তি দিয়ে আমরা প্রমাণ করবো
আমরা এখনো যথেষ্ট সাহসী।
প্রেতাত্মা : আমার খুব খারাপ লাগছে।
তোমরা আমার জন্যই...
সংস্কৃতিকর্মী : এভাবে ভাবছ কেন? তোমার
মত আর কারো পরিণতি এমন না হোক তার জন্যই তো আমরা পথে নেমেছি।
প্রেতাত্মা : কিন্তু ওরা তোমাদেরকে
বাঁচতে দেবে না।
সংস্কৃতিকর্মী : আমাদের প্রাণ থাকতে
পিছুপা হব না।
প্রেতাত্মা : ওরা তোমাদেরকে হল থেকে
তাড়িয়ে দেবে। তোমরা পথে পথে ঘুরবে। রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে তোমাদেরকে আটকানো
হবে। নির্বিচারে অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হবে। আমি সহ্য করতে পারছি না।
সংস্কৃতিকর্মী : আমরা যেকোন কিছুর
বিনিময়ে শান্তি ফিরিয়ে আনতে চাই। আমরা সন্ত্রাসকে নির্মূল করতে চাই।
প্রেতাত্মা : কিন্তু তোমরা তো একা।
তোমাদের সঙ্গে আর কেউ সামিল হবে না জেনে রেখ। তোমাদেরকে একে একে ওরা পঙ্গু করে দেবে।
ওদের মায়া-দয়া নেই। ওরা নিজেদের স্বার্থে যা তা করতে পারে।
সংস্কৃতিকর্মী : তবু আমরা পিছুপা হব
না। পিছুপা হব না। হব না। না না না না।
[আবার এক শিক্ষকের সঙ্গে পরদিন দেখা
হবে প্রেতাত্মাদের। রাতের বেলা মৃদু আলোতে কথোপকথন চলবে। শিক্ষকের মুখে হালকা মুখোশও
থাকতে পারে। ]
প্রেতাত্মা : সালাম স্যার।
শিক্ষক : তুমি কে? তোমার পেছনে ওরা
কারা?
প্রেতাত্মা : আমাদেরকে চিনতে এত দেরি
হচ্ছে স্যার। ভাল করে চেয়ে দেখুন চিনতে পারেন কীনা।
শিক্ষক : হ্যাঁ, হ্যাঁ, তুমিই তো যত
নষ্টের গোড়া।
প্রেতাত্মা : আমি মরে গিয়েও নষ্টের
গোড়া হলাম। আর আপনারা ধোয়া তুলসী পাতা?
শিক্ষক : আমরা তো বিশ্ববিদ্যালয়কে
স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করছি।
প্রেতাত্মা : সন্ত্রাসকে পরিপূর্ণরূপে
নির্মূল না করেই বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থিতিশীল রাখাটা একটা স্বপ্ন।
শিক্ষক : ছাত্র-শিক্ষকদের একটা গ্রুপ
খুব বাড়াবাড়ি করছে তাদেরকে শাস্তি দেয়া দরকার।
প্রেতাত্মা : এসব রাজনীতি কবে বন্ধ
হবে?
শিক্ষক : কীসব রাজনীতির কথা বলছ? মাথামু-ু
কিছুই বুঝতে পারছি না। আর তুমিই বা পরামর্শ দেবার কে? আমাদের তদন্ত কমিটি আছে না? আমাদের
বুদ্ধিদাতা লোকজনের কি অভাব? যাও তো সরে যাও আমার সামনে থেকে।
প্রেতাত্মা : আমি সরে দাঁড়ালেই কি
আপনার বিবেক সরবে?
শিক্ষক : ওসব বিবেক দিয়ে দেশ-জাতি
চলে না। আবেগের কোন জায়গা নেই আমাদের কাছে। আমাদের যা ঠিক মনে হয় তাই করবো।
প্রেতাত্মা : আপনাদের গুটিকয়েক মানুষের
ক্ষমতালোলুপ মানসিকতা পুরো বিষয়গুলোর জন্য দায়ী।
শিক্ষক : আমাদেরকেই নেতৃত্ব দিতে হবে।
আর নেতৃত্বের যোগ্যতাই বা ক জনের আছে। আজ তারা না হলে তো তোমরাই বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে।
প্রেতাত্মা : শাক দিয়ে মাছ ঢাকবেন
না। আপনাদের সীমাহীন লোভ নামক রিপুর বলী হচ্ছে বেশিরভাগ ছাত্র।
শিক্ষক : তোমার এত বড় সাহস! কার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছ জান?
আমি তোমাকে এখনি কঠোর শাস্তি দিতে পারি।
প্রেতাত্মা : ভুলে যাবেন না আমি বেঁচে
নেই। আপনারাই আজ বাংলাদেশের নষ্ট রাজনীতির অংশ। শুধু ক্ষমতা দখলের ইতিহাস আপনাদের।
নিজেদের স্বার্থের বাইরে এক ইঞ্চিও নড়াচড়া করেন না আপনারা। আপনাদের ব্যাপারে সবাই সবকিছু
জেনে বসে আছে। শুধু ভয়ে মুখ খুলছে না।
শিক্ষক : তোমার মুখে লাগাম দরকার।
তুমি যা খুশি বলছ।
প্রেতাত্মা : আর আপনারা যা খুশি করছেন।
এই পার্থক্য।
শিক্ষক : আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য
অনেক কিছু করেছি।
প্রেতাত্মা : আপনারা চুনের ওপর রং
দিয়েছেন। তাকেই ভেবেছেন পুত-পবিত্র, সফেদ-সাদা। ভেতরের আবর্জনা পরিষ্কার করেননি।
শিক্ষক : মানে?
প্রেতাত্মা : মানে খুব সোজা। আপনাদের
ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্যই আপনারা কি তা করেননি?
শিক্ষক : কেন্দ্রীয় রাজনীতির সঙ্গে
আমাদের যোগাযোগ রাখতে হয়।
প্রেতাত্মা : পৃথিবীতে উন্নত দেশের
শিক্ষকরাও কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে।
শিক্ষক : হা হা হা, তুমি কিন্তু এবার
ভাল কথা বলেছ।
প্রেতাত্মা : কিন্তু তারা হয় রাষ্ট্রের
সহযোগী কিন্তু সেটা নিজেদেরকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার মাধ্যমে। অন্যদিকে তারা রাষ্ট্রেরও
কঠোর সমালোচক যখন প্রয়োজন হয়। তারা রাজনীতিবিদদের তোষামোদ করে চলে না।
শিক্ষক : আমাদের ভাল সম্পর্ককে তুমি
তোষামোদ বলছ। আসলে তোমার মাথা ঠিক নেই। ও তুমি তো আবার মাথায় আঘাত পেয়েছিলে।
প্রেতাত্মা : আমি মাথায় আঘাত পেয়েছি
সত্য। আমার শরীর নেই এখন। আমি দেহাতীতÑ আছে শুধু আত্মা। আর আপনারা রক্ত-মাংশের সজীব
মানুষদেরকে করছেন নষ্ট। মদদ দিচ্ছেন গোপনে-প্রকাশ্যে। এর ফল আপনারা শীঘ্রই পাবেন পাবেন।
আপনাদের দেশপ্রেম বলে কিছু নেই। আপনাদের সবই লোক দ্যাখানো। আপনারা ফ্রড, সীমাহীন প্রতারক-প্রবঞ্চক।
আপনারা কখনোই স্বস্তি পাবেন না। দেখবেন ক্ষমতা আপনাদেরকে পঁচা নর্দমায় ঠেলে নামাবে।
তবু আপনারা ক্ষমতারই পূজা করতে থাকবেন। আপনারা টিকতে পারবেন না জানেন। তবু পরিবর্তন
প্রত্যাশা করতে আপনারা বড়ই কৃপণ।
শিক্ষক : তোমার মত কুলাঙ্গারকে আমরাও
দেখে নেব।
[কয়েকজন সাধারণ ছাত্র হেঁটে আসছে রাস্তা
দিয়ে। তাদের আলাপ হাসাহাসি, গল্প খুনসুটি। এরধ্যেই প্রেতাত্মারা এসে দাঁড়াবে তাদের
মুখোমুখি। প্রথমে দূরে থেকে কথা বলবে। কথা বলতে বলতেই ঘনিষ্ঠ হয়ে সামনে আসবে। ]
প্রেতাত্মা : এই, এই, কোথায় যাচ্ছ
তোমরা?
ছাত্র : কে কে কে?
প্রেতাত্মা : আমরা তোমাদের বন্ধু,
সহপাঠী, সতীর্থ, বড়ভাই যা বলো।
ছাত্র : তোমরা এত দূরে কেন? আসো কাছে
আসো। আমরা ক্যাম্পাসবাসীরা তো একে অপরের পরম-আত্মীয়। আমরা পাশ করে চলে গেলেও একে অপরের
জন্য প্রচ- ফিল করি। আসো আরো কাছে আসো। এই যে সিগারেট খাবে? [সিগারেট এগিয়ে দেয়]
প্রেতাত্মা : উহু। আমরা সিগারেট খাই
না। সিগেরেট ধরালে আগুন হয়ে পুড়ে যাবে সমস্ত শরীর।
ছাত্র : তাহলে কী খাবে তোমরা?
প্রেতাত্মা : কিছু খাব না। তোমরা কোথায়
যাচ্ছ?
ছাত্র : আমরা নিশাচর। রাতের বেলা আড্ডা
দেই। গান গাই, গান শোনাই। মোবাইল ফোনে আলাপ করি।
প্রেতাত্মা : তোমাদের মোবাইলটা আমাকে
একটু দাও। আমি কথা বলি।
ছাত্র : কার সাথে কথা বলবে তুমি? নম্বর
আছে। বল।
প্রেতাত্মা : আমার তো নম্বর মনে নেই।
তোমাদের মন্ত্রীকে একটা ফোন দাও।
ছাত্র : মন্ত্রী? মন্ত্রীর নাম্বার
আমরা রাখি নাকি। আর তারা আমাদের সঙ্গে কথাই বা বলতে যাবেন কেন?
প্রেতাত্মা : তোমরাও তো একদিন অনেক
বড় হবে। তখন মন্ত্রীদের কাছাকাছি থাকবে।
ছাত্র : দূর ছাই! তোমরা কী শুরু করেছ
বল তো? আমাদের হাতে একদম সময় নেই। এখন হলে ফিরতে হবে। পথ ছাড়ো আমরা চলে যাই।
প্রেতাত্মা : তোমাদের পথ আমি ছাড়ব
না। তোমরা দেশের নেতার সঙ্গে কথা বল। আমার ব্যাপারে তাদের ডিসিশনটা জানতে চাই।
ছাত্র : কীসের ডিসিশন? আমরা ভাই নিরীহ
ছাত্র। আমরা খাই-দাই, ঘুমাই, পড়ি কখনও খেলাধূলা করি। কোন ব্যাপারে আমরা নাক গলাই না।
তোমরা আসলে কারা?
প্রেতাত্মা : দেখতে পাচ্ছ না আমাদের হাতে বুকে সর্বশরীরে বড় বড়
ক্ষত চিহ্ন। আমাদেরকে হত্যা করা হয়েছে। তোমরা তো আমাদের জন্য কিছুই করছ না।
ছাত্র : আমাদের কিছু করার ক্ষমতা নেই।
ক্ষমতাবানরা সবকিছু দখল করে বসে আছে। তারাই সবকিছু করে। আমরা কেবল চেয়ে চেয়ে দেখি।
প্রেতাত্মা : তোমরাই তো সংখ্যায় বেশি।
তারাই সংখ্যায় কম। তবু তোমরাই কেন তাদের কথামত চলবে?
ছাত্র : কারণ তাদের হাতে অস্ত্র আছে,
গলায় জোর আছে। আমরা ভয়ে গর্তে লুকিয়ে থাকি।
প্রেতাত্মা : তোমাদের শিক্ষকদের সাহায্য
নাও।
ছাত্র : ওরে বাবা তাদের থেকে আমরা
কমপক্ষে একশ হাত দূরে থাকি। হাজারো হলেও শিক্ষক কীনা। আমরা তাদেরকে ভীষণ ভয়ও পাই।
প্রেতাত্মা : শিক্ষককে ভয় পাওয়ার তো
কথা নয়। তারা হবে তোমাদের উত্তম বন্ধু এমনকি তোমাদের পিতামাতার চেয়েও বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ।
শিক্ষক মানে তো তাদের কাছে তোমরা জীবন সম্পর্কে সবকিছু শিখবে। অনেক কিছুর মোকাবেলা
করা শিখবে।
ছাত্র : শিক্ষকদের কাজ তো লেখাপড়া
করান। তারা জীবন সম্পর্কে কি জানবে? জীবন তো আমাদের নিজেদেরকে গড়তে হবে।
প্রেতাত্মা : তোমরা কিছুই জান না।
দেশ সম্পর্কে তোমরা যেমন অনভিজ্ঞ। তেমনি অনভিজ্ঞ তোমাদের শিক্ষার বিষয়েও।
জনৈক ছাত্র : কে বলেছে আমরা তো বিসিএসের
প্রস্তুতি নিচ্ছি এখন থেকেই। আমরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অনেক কিছুই এখন জানি।
আমরা এটাও জানি সরকারী চাকুরীতে কে কোন পদমর্যাদার। কাদের বেতন স্কেল কত। কি কি সুযোগ-সুবিধা।
এসব কি এমনি এমনি।
অন্য একজন : হ্যাঁ হ্যাঁ আমিও জানি
দেশে কয়টা ই-াস্ট্রি আছে। কোথায় কোথায় আমাদের চাকরি আছে। কোথায় কি সুযোগ-সুবিধা। বিদেশ-ভ্রমণ
আছে কীনা তা-ও।
প্রেতাত্মা : তাহলে তোমাদেরকে কিছু
প্রশ্ন করি দেখি তোমরা উত্তর দিতে পার কী না।
ছাত্র : তোমার প্রশ্নের উত্তর দিলে
আমরা কি চাকরির পরীক্ষায় পাস করতে পারব?
প্রেতাত্মা : সেটা আমি বলতে পারি না।
তবে তোমরা জীবন সম্পর্কে জানতে পারবে।
[ছাত্রদের পারস্পরিক মুখ-চাওয়া-চাওয়ি
করা। প্রেতাত্মার দিকে তাকিয়ে প্রশ্নের জন্য অপেক্ষা।]
ছাত্র : আচ্ছা ঠিক আছে। প্রশ্ন কর।
আমরাও কি তোমাকে প্রশ্ন করতে পারব?
প্রেতাত্মা : হ্যা পারবে। এটা ভাইভা
বোর্ড নয়। তোমরাও প্রশ্ন করতে পারবে। তুমি কিসে পড়?
ছাত্র : আমি স্ট্যাটিসটিকসে পড়ি।
প্রেতাত্মা : আচ্ছা বল আগামী এক দশকে
কতটা হত্যাকা- অনুষ্ঠিত হবে?
ছাত্র : এটা আবার একটা প্রশ্ন হল নাকি?
কতজন হয়েছে তা জানি। কিন্তু কতজন হবে তা কি করে বলবো। কোনো প্রব্যাবিলিটি সূত্র তো
এখানে খাটবে না।
প্রেতাত্মা : তুমি কি পড়?
ছাত্র : আমি রসায়নে পড়ি।
প্রেতাত্মা : আচ্ছা তুমি বল দেখি আমার
শরীরের আঘাতের চিহ্নগুলো আবিষ্কারের পদ্ধতির নাম কি?
ছাত্র : কেন পোস্টমর্টেম।
প্রেতাত্মা : কোথায় করা হয়েছিল?
ছাত্র : ফরেনসিক বিভাগে।
প্রেতাত্মা : ফরেনসিক বিভাগে আমাকে
যখন পোস্টমর্টেম করা হল তখন শরীরে কয়টি আঘাতের চিহ্ন খুঁজে পাওয়া গেছে?
ছাত্র : সর্বমোট পঁয়ত্রিশটি।
প্রেতাত্মা : সব ঠিক। তাহলে বল অস্ত্রগুলো
পরীক্ষার পর কাদের নাম পাওয়া গিয়েছিল?
ছাত্র : আমি জানি কিন্তু বলতে মানা।
প্রেতাত্মা : কে নিষেধ করেছে?
ছাত্র : সেটাও বলতে মানা।
প্রেতাত্মা : তাহলে এটা বল তাদের বিচার
হচ্ছে না কেন?
ছাত্র : এগুলোর উত্তর জেনে আমাদের
লাভ কি? আর তাছাড়া তুমি আমাকে এ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছ কে? এটা তো তোমারই ভাল জানার কথা।
প্রেতাত্মা : তুমি কোন বিভাগে পড়?
ছাত্র : আমি ভূগোলে পড়ি। আমি জানি
পৃথিবীর কোন সমুদ্র ¯্রােত কোনদিকে যায়। আর কোন বাণিজ্যতরী কোন বন্দরে ভেড়ে সেটাও আমার
জানতে বাকী নেই। আমরা পৃথিবীর ট্রপিক্যাল অঞ্চলে বাস করি। কর্কটক্রান্তি রেখা ঠিক আমাদের
প্রায় মাথার ওপর।
প্রেতাত্মা : বাহ্ প্রশ্নের আগেই উত্তর!
ছাত্র : আমি তো জানি তুমি কি প্রশ্ন
করতে পারো। আমাদের ভাইভা বোর্ডগুলো থেকে শিখেছি। আমার আগে অন্যরা যখন বের হয় তখনই প্রশ্নগুলোর
উত্তর আমরা রপ্ত করে ফেলি। আর জিজ্ঞেস করলেই গড়গড় করে বলে দেই।
প্রেতাত্মা : তাহলে বল আমাকে যখন জঙ্গলের
ভেতরে ঢোকানো হল তখন সূর্য কোথায় ছিল?
ছাত্র : তখন সূর্য উত্তর-পূর্ব কোণে,
দক্ষিণ দিকে সামান্য হেলে। তখনকার তাপমাত্রা ছিল... হুম... ২২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড।
আরেক ছাত্র : আমি ম্যাথমেটিক্সে পড়ি।
একটা গবেষণায় দেখেছি তোমার মাথায় ওরা ৪৫ ডিগ্রী কোণে আঘাত করেছিল। আর বড় আঘাতগুলো কয়েকটি
নব্বই ডিগ্রী কোণে করা হয়েছিল।
অন্য ছাত্র : আমি বলতে পারি রডগুলো
ভেঙ্গে যাবার কারণ ওগুলো তৈরি করার সময় ঢালাই লোহার সঙ্গে ভেজাল আর আকরিক মেশানো হয়েছিল।
একজন পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে বলতে পারি আমাদের কঙ্ক্রিটগুলোও মানুষের হাড়ের
চেয়ে ভঙ্গুর। আমার চোখে দেখা।
প্রেতাত্মা : এর মধ্যে নাক গলাচ্ছ
কেন আমি তোমাকে প্রশ্ন করিনি। আচ্ছা এই যে তুমি কোন বিভাগের?
ছাত্র : ইতিহাস বিভাগের। আমার ইন্টারেস্টের
বিষয় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক।
প্রেতাত্মা : জুলিয়াস সিজারের হত্যাকারী
কে?
ছাত্র : কেন ব্রুটাস। তারই ঘনিষ্ঠ
বন্ধু ছিল।
প্রেতাত্মা : বন্ধু হয়ে বন্ধু হত্যাকে
তুমি কীভাবে দেখ? এই যেমন ধর আমার হত্যাকা-।
ছাত্র : এটা তো খুবই সহজ কথা। একজন
ইতিহাসবিদ বলেছিলেন : ‘ইতিহাস আমাদেরকে এই শেখায় যে ইতিহাস থেকে আমরা কিছুই
শিক্ষা গ্রহণ করি না।’ তোমার ব্যাপারটাও তাই। আর ক্যাম্পাসের কোন ঘটনা
থেকে আমরা শিখি না। এ কথাটা বলা আমার ঠিক হচ্ছে না কারণ আমার এটা ইন্টারেস্টেড ফিল্ড
না।
প্রেতাত্মা : এই যে এদিকে তোমার বিভাগ?
ছাত্র : লিটারেচার।
প্রেতাত্মা : জীবন সম্পর্কে তোমার
ধারণা কি?
ছাত্র : ‘লাইফ ইজ নাথিং বাট ফিউরি এন্ড সাউন্ড সিগনিফায়িং নাথিং।’
প্রেতাত্মা : একেবারে হুবহু শেক্সপীয়ার
থেকে মেরে দিলে ! জীবনের কোন অর্থ নেই আর তা ঝামেলায় পূর্ণ। বাহ্ আমাকে শান্ত করার
মতলব।
ছাত্র : সরি-সরি, আসলে বুঝে বলিনি।
প্রেতাত্মা : তুমি কি পড়?
ছাত্র : আািম কম্পিউটার বিজ্ঞানী।
সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করি।
প্রেতাত্মা : তোমাদের নিজস্ব উদ্ভাবনা
কি?
ছাত্র : এই তো আমরা সেদিন একটা সফটওয়্যার
ডেভেলপ করেছি ইউনিভার্সিটি হলের ওপর। কে, কোন ছাত্র কোন ফ্লোরে, কোন রুমে থাকে। তা
একটি মাত্র ক্লিকে অনায়াসে বের করতে পারি।
প্রেতাত্মা : আর যারা ছাত্র নয় তাদেরটা
কীভাবে বের করবে?
ছাত্র : সব আবিষ্কারের অসম্পূর্ণ দিক
আছে। আর তাছাড়া সফটওয়্যারের কাজ নয় এন্ট্রি ছাড়াই কোন তথ্য খুঁজে দেবে।
প্রেতাত্মা : কার কাজে লাগছে এই সফটওয়্যার?
ছাত্র : কর্তৃপক্ষকে দিয়েছি। তাদের
কাজের সুবিধা হচ্ছে। আর ছাত্র নেতাদেরকেও.. তাহলে হল চালাতে সুবিধা হয়।
প্রেতাত্মা : শিক্ষকরা থাকতে ছাত্ররা
কেন?
ছাত্র : ছাত্ররাই দেশের ভবিষ্যৎ। দেশ
চালাতে হলে তাদের ট্রেনিং-এর দরকার আছে না?
প্রেতাত্মা : তোমাকে মনে হচ্ছে এদের
সবার চেয়ে এডভান্সড্।
ছাত্র : আজো পৃথিবীতে আমাদের আবিষ্কারগুলোই
অধিক ও দ্রুত পর্যায়ের। আর সাইবার সন্ত্রাসী ধরবার কাজেও আইন আদালতে আজকাল বিদেশে সফটওয়্যার
ব্যবহার করা হচ্ছে। তাতে আশা করি আগামী শতাব্দীর মধ্যেই পৃথিবীতে ছিচ্কে সন্ত্রাসীরা
সন্ত্রাস করে পার পাবে না। আমরা স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে ইতোমধ্যে আমাদের সফটওয়্যার
আর ডাটাগুলো সরবরাহ করেছি। তাতে ১০০ ভাগ নিশ্চিত কাজের প্রমাণ পাওয়া যাবে।
ছাত্র : আর আমরা একেবারে নতুন খোলা
আইন বিভাগের ছাত্র। এখনো বিশ্ববিদ্যালয় তথা দেশের হাল-হকিকত বুঝে উঠতে পারি নাই। আশাকরি
আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আইন সম্পর্কে বিস্তৃত ধারণা পেয়ে যাবো। দ্রুত বিচার আইন নিশ্চিত
করাই হবে আমাদের কাজ।
প্রেতাত্মা : তোমরা খুবই নবীন। আইন
কি তোমরা তৈরি কর? নাকি আইনের বাস্তবায়ন কর।
ছাত্র : আইন তৈরির চেয়েও বাস্তবায়ন
জরুরি এটাই স্বীকার করি।
প্রেতাত্মা : তোমরা চলে গেলেও আমি
এখানে থাকবো। আর দেখবো তোমরা আমার জন্য কে কী করো। আর তোমরা কারা?
ছাত্র : আমরা চারুকলা বিভাগে ভর্তি
হতে চাই। তোমার সব কথা আমরা মনোযোগ দিয়ে শুনলাম। ভর্তি হয়েই আমাদের প্রথম কাজ হবে তোমার
নামে বানানো ডিজিটাল ব্যানারগুলো খুলে তেল ও জল রঙের ছবি আঁকা। তাতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের
মান আরো অক্ষুন্ন হবে। দেশে-বিদেশে এমনকি আন্তর্জাতিক পুরষ্কার প্রাপ্তিতে অংশগ্রহণ
করতে পারব। বিদ্যালয়ের হত্যাকা-গুলো খুবই সাম্প্রতিক বিধায় এগুলো নিয়ে আমাদের শিল্পচর্চার
ব্যাপক ও অভিনব ক্ষেত্র তৈরি হবে। একবিংশ শতাব্দীর পিকাসো আমাদের মধ্য থেকেই...
প্রেতাত্মা : আমার গলাটা শুকিয়ে আসছে।
আমাকে একটু পানি খাওয়াতে পার।
[আবার আগের একজন শিক্ষকের সঙ্গে দেখা।
শিক্ষকের চলাফেরায় ব্যস্ত ভাব নেই। উদাসীন একটি মনোভঙ্গিতে হেঁটে আসতে থাকবে মঞ্চের
একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। এরমধ্যেই প্রেতাত্মারা তার পথ আগলে ধরবে। ]
প্রেতাত্মা : সøামালেকুম স্যার। চিনতে
পারছেন?
শিক্ষক : ও তুমি তো সেদিন আমার সঙ্গে
কথা বলেছিলে।
প্রেতাত্মা : হ্যাঁ স্যার বলেছিলাম।
আমার আত্মা দারুণ অতৃপ্ত।
শিক্ষক : আমরা তো স্বৈরশাসককে সরিয়ে
দিয়েছি। বিজয়ের আনন্দে এখন উদ্বেলিত। তোমার আত্মা তো শান্তি পাবার কথা।
প্রেতাত্মা : আমার বিষয়ে আপনারা কী
করলেন?
শিক্ষক : বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত
করার ব্যাপারে আরো অধিক চাপ সৃষ্টি করা হবে।
প্রেতাত্মা : শুধু কি এই? আমি তো মরেই
গেছি।
শিক্ষক : তোমার আত্মার শান্তির যাবতীয়
ব্যবস্থা করা হবে। আমরা মসজিদে মসজিদে দোয়া করার ব্যবস্থা করেছি আরো করব।
প্রেতাত্মা : কিন্তু আমি তো শহীদ স্যার।
আমার এখন পাপ নেই। আমার আত্মার মাগফেরাতে কীবা আসে যায়?
শিক্ষক : মৃত্যুর পরই মানুষের সত্যিকার
জগৎ শুরু হয়।
প্রেতাত্মা : কিন্তু যারা বেঁচে আছে
তারাই তো অন্ধকারে গড়াগড়ি খাচ্ছি স্যার। আসলে ক্যাম্পাসে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রক্রিয়ার
জন্য আপনাদের ভূমিকা কি?
শিক্ষক : আমরা তো তার জন্য নিরলস রিহার্সেল
আর পরিশ্রম করেই যাচ্ছি।
প্রেতাত্মা : ক্ষমা করবেন স্যার। আমি
তো কোনো গুণগত পরিবর্তন লক্ষ্য করছি না। আমি তো বলীর পাঠা। এই দেখুন আমার গলায় বসে
যাওয়া গভীর লাল দাগ। আমার গলায় রশি বেঁধে দুদিক থেকে টানাটানি করে আমাকে তীব্র যন্ত্রণা
দেয়া হয়েছে। আমি নিহত হয়েছিলাম। সেটা মাত্র একবার। আবার আমাকে কুকুরের মত টানাহেঁচড়া
করে তিলে তিলে মারা হল। আহ্ কী যন্ত্রণা আমার গলার চারিদিকে। আহ্। আপনারা সবাই একরকম।
আমার কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসছে। আমি আর কথা বলতে পারছি না।
শিক্ষক : দেখ তুমি বৃথাই আমাদেরকে
ভুল বুঝতেছ। আসলেই আমাদের চেষ্টার বিরাম নেই।
প্রেতাত্মা : আমার সমস্ত বিশ্বাস আর
ভালবাসা উবে গেছে। আমার আত্মা আজ অশান্ত। আমি অসহায়ের মত ঘুরে বেড়াচ্ছি ক্যাম্পাসের
বিশমাইল থেকে এমএইচ গেট। কিন্তু কোথাও একটু বসবার জায়গা পেলাম না। হা আফসোস। আমি বেঁচে
থেকেও শান্তি পাইনি। দুর্বৃত্তরা আমাকে পিটিয়ে মেরেছে। শুধু এটুকু জানি, যার যায় তারই
যায়। আমার পিতামাতার কোল পূর্ণ হবে না কোনদিন। আজীবন চোখের জল ফেলবে আমার মা। আমার
জন্মদাত্রী মায়ের কষ্ট আমাকে কুড়ে কুড়ে খায়। মরণের আগেই আমার মায়ের নরক বাস হয়েছে।
অথচ আপনারা আমার বুকের জগদ্দল পাথর সরাতে পারেননি এখনো। কখনো পারবেন বলেও আশা নেই।
প্লিজ আমাকে দূরে সরিয়ে দেবেন না। আমার কথা একবার ভাবুন। আপনারা ভালবাসুন, সত্যিকরে
ভালবাসুন আপনাদের ছাত্রদের। তারা আপনাদের প্রাণপ্রিয় সন্তান। পিতা হয়ে সন্তান হত্যা
করবেন না। হত্যা করবেন না। আহা হা হা...
[প্রেতাত্মার উচ্চস্বরে কান্না
... সেই সঙ্গে আরো অনেকের কণ্ঠধ্বনি মিলবে। মঞ্চের আলো নিভে যাবে]
গল্পকার, প্রাবন্ধিক
ও
ও
শিক্ষক
বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন