[কবির হাতে গল্প। তা তো কবিতার মতোই প্রহেলিকা কিংবা রহস্য। শামীম রেজার গল্পে জীবনের এই অনির্দেশ সম্ভাবনার প্রতি একটা গভীর আস্থা আছে। তিনি শুধু কাহিনি বুনন করেন না, গল্পের বাস্তবতার মধ্যে প্রবেশ করে দেন ইতিহাস আর সমকালকে। কখনো লৌকিক পুরাণ, পরনকথার বেলোয়ারি, আবার সাধারণ-অসাধারণ মানুষের অবাধ চলাচল একই যাত্রায় ঘটে। সবচে বড় কথা, কেবল জীবনকে খুঁড়ে দেখা নয়, শিল্পকে খনন করতে করতে তিনি পৌঁছে যান এক অসীম নিরালোকে। শিল্পের স্ফুটনে সেখানে জন্ম নেয় এক অনাদায়ী বিশ্ব। সেই বিশ্ব পরিভ্রমণ করতে করতেই আবার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। আর প্রতিটি কাহিনি এক নতুন মোড়কে নতুন আবেশে আচ্ছাদিত হয়। ঠিক যেমন মেঘের বুকে কোনো চিহ্ন রাখা সম্ভব হয় না, তেমন। কেবল ঘুরপাক খেয়ে খেয়ে নতুন আকার নিতেই থাকে। যাই হোক, ‘ঋতুসংহারে জীবনানন্দ’ পাঠ এক বিস্ময়ের বেলাভূমিতে দাঁড় করায়। সেখান থেকেই প্রশ্নের জন্ম। আর সেসব প্রশ্ন থেকেই স্বয়ং লেখকের কাছেই অন্বেষণ-প্রত্যাশা। অন্যদিকে রয়েছে শীঘ্র সম্পন্ন হওয়ার প্রত্যাশিত অসমাপ্ত পাণ্ডুলিপি ‘ভারতবর্ষ’। যেন আরো এক ভিন্ন আবিষ্কার। এ-আখ্যানে কথাসাহিত্যিক হিসেবে শামীম রেজা অভিনবত্বের সঙ্গে বাংলার ইতিহাস তথা উপমহাদেশীয় ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ কালপর্ব উপস্থাপন করেছেন। মনে হয়, অনেক তথ্য নথি ঘেঁটে সত্য ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। এখানে কল্পনার চেয়ে বাস্তব অধিকতর জ্বলজ্বলে। আর এসব জানতে ও বুঝতে আজকের এই আলাপের প্রস্তাবনা।]
ক. ‘ঋতুসংহারে জীবনানন্দ’
খোরশেদ আলম : নামকরনটা বেশ অভিনব ‘ঋতুসংহারে জীবনানন্দ’; মনে হচ্ছে কবিতার মতো, আসলে গল্প।
শামীম রেজা : দেবেশদার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এই রকমটা হলো। বরিশালে ঘুরতে গেছি ওনার যোগেন মণ্ডল লেখার সময়ে। ওনাকে বললাম কী নাম দেয়া যেতে পারে? আমার আপত্তি ছিল, তিনি বললেন, কালিদাসের বইয়ের নাম। আমার খুব একটা পছন্দ হলো না, আমি ‘জীবনানন্দ নামটা যোগ করে দিলাম ব্যাস। কিন্তু পরে অন্যরকম ঘটেছে।
খোরশেদ : আপনার এই গল্পগ্রন্থটিতে ৬টি গল্প সন্নিবেশিত। আমি যা দেখলাম, বেশ একটা বৈচিত্র্য। এখানে ছয়টা গল্প ছয় রকমের।
শামীম : আমার আসলে কী, যেটা ঘটেছে, যেমন কথাসাহিত্যিকদের চর্চা, তারা ধারাবাহিকভাবে লেখেন; আমার লেখাগুলো মধ্য ‘৯০ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত। বলা চলে, এ-সময়ের গল্প লেখা…, অনেক গল্প লিখেছিলাম, সেই লেখাগুলো কোথায় আছে আমি এখন বলত পারবো না। অনেক লেখা হারিয়েও গেছে। এখানে যে ছয়টা গল্প তা নিয়ে বই করার জন্য আমি তখন প্রস্তুত, ততদিনে গল্পগুলো পড়া হয়ে গেছে প্রয়াত দেবেশ রায়ের। দেবেশ রায় বা দেবেশদা আমাকে নিয়ে দীর্ঘ একটা লেখাও লিখেছিলেন। তিনি তো দীর্ঘদিনের সম্পাদক। তার ওপর আমার একটা আস্থাও আছে। সঙ্গে সঙ্গে গল্পগুলোর তিনি একটা নামও দিয়ে দিলেন। আমার পছন্দের নাম ছিল—একটা গল্পের নাম যেটা ‘জীবনানন্দ ও মায়াকোভস্কি জোছনা দেখতে চেয়েছিলেন’—তো এই নাম নিয়েই একটা যুদ্ধংদেহি অবস্থার মধ্যে আমরা পড়ে গেলাম। তিনি প্রথমেই যে সিদ্ধান্তটি চাপিয়ে দেওয়া বলবো না, আড্ডাচ্ছলে পুরো যুক্তি দিয়ে বললেন, এই নাম হচ্ছে, অনেকটা ‘কর্নেলকে কেউ চিঠি লেখে না’, ‘ঠাকুরমা ও অন্যান্য’, একদম সরাসরি কিংবা ‘অফ লাভ এন্ড দ্য আদার ডেমন’, উনি এই রকম আরো অনেক গল্পের নাম যেমন, ‘এই শহরে কোনো চোর নেই’—এরকম বেশকিছু গল্পের নাম বললেন মার্কেস, ফুয়েন্তেস, ইয়োসাদের ওই সময়কার। বললেন, এইসবই ষাটের দশকীয় ব্যাপার। আপনি কেন? তিনি আমাকে আপনি আপনিই বলতেন, “আপনি কেন ওই নাম নেবেন?”
উনি অনেকক্ষণ ভাবলেন। তারপর বললেন, “শুধু ‘ঋতুসংহার’ এই একটা নাম দেন। এটা তো কালিদাসের আপনি জানেন”, বললাম, “হ্যাঁ।” “সংহার মানে ধ্বংস। এই যে ছয়ঋতু। আপনার ছয় ধরনের যে গল্প, এখানে বৈচিত্র্য আছে।” তিনি আমাকে যে চিঠি লিখেছিলেন, সেখানে গল্প নিয়ে উপন্যাস নিয়ে কথা বলেছেন। সেখানে খুব করে তিনি দুইটা বিষয় বুঝাবার চেষ্টা করেছেন।
“পৃথিবীতে দুই ধরনের লেখক থাকে। একধরনের লেখক বলেন যে, আমি যে গল্পটা জানি, পৃথিবীর আর কেউ সেটা জানে না।”
এই ধরনের চিঠি লেখার একটা কারণ ছিল। আমি যখন উপন্যাসের দিকে যাই গল্প থেকে, যখন আমি ‘ভারতবর্ষ’টা লিখি, ৮০ পৃষ্ঠার মতো লেখা হওয়ার পর ওনার কাছে সেটা দেওয়া হয়। এবং আমি ‘ভারতবর্ষ’ লেখার আগে প্রায় ২০০১/২ সালের দিকে ক্রীতদাস ব্যবসা জানার জন্য আগ্রহী হলাম। আরেকটা জিনিস—আমাদের যে দাস-ব্যবসাটা, সেটা ইংরেজ আমলেও কিন্তু বন্ধ হয়নি। নাগরি লিপিতেও তুমি দেখবে, দাস কেনাবেচার দলিল আছে। আমার এক বন্ধুকে একবার বলেছিলাম—আমি একটা রাইটার্স মিউজিয়াম করার স্বপ্ন দেখি।
যেটা বললাম, তাহলে দেখবে যে, ইংরেজ আমলে দাস বিক্রি হচ্ছে। বিক্রি হয়ে একদেশের মানুষ অন্যদেশে চলে যাচ্ছে কিংবা এই দেশেই থেকে যাচ্ছে। তো এই নিয়ে একটা পরিকল্পনার জায়গায় আমি অভিজিৎ সেনের কাছে যাই। জহরদা (জহর সেন মজুমদার) বিশেষ করে দেবেশদা, তাদের কাছে অনেক বইয়ের লিস্ট পাই। কিন্তু অভিজিৎদা নিজেই একটা উপন্যাস ‘মৌসুমী সমুদ্রের উপকূলে’ লিখে আমার ‘সুবর্ণরেখা’য় ছাপানোর জন্য পাঠিয়ে দেন। আমার শোনা গল্প থেকে তাঁরও ইন্টারেস্ট বেড়ে যায়। তখন আমি নালিশ দেই দেবেশদাকে যে, আমি এইরকম একটা বই খুঁজতে গেলাম, উনি (অভিজিৎ সেন) তো আমার বিষয়টা, পাইওনিয়ার হওয়ার জন্যই লিখলেন।
তো যাই হোক, দেবেশদা একটা মন্তব্য করেছেন, সেটা এই যে, অভিজিৎ লিখলো তাতে আপনার কী আসে যায়? আপনার লেখাটি আপনি লিখলেন, এবং চিঠিটা দিলেন, এবং বললেন, “পৃথিবীতে দুই ধরনের লেখক”, যেটা আগেও বলেছি। “একধরনের লেখক বলেন যে, আমি যে গল্পটা আমি লিখেছি সেটা আর কেউ লেখেনি।” সেই ধারনাটা হচ্ছে দান্তের ‘ডিভাইন কমেডি’ দস্তয়েভস্কি কিংবা ফকনার কিংবা মার্কেজ পর্যন্ত। তাঁরা লেখেনও কম।
তো এঁদের আরেকটা ঘরানা—যে-ঘরানাটা হচ্ছে, “আমি কোনো গল্পই জানি না, যা প্রতিদিন লিখি সেটাই গল্প হয়ে যায়। আখ্যান জানি না কিংবা গল্প জানি না।” এই ঘরানাটা সহজ, যেমন তলস্তয়, তারপর রবীন্দ্রনাথ কিংবা দেবেশ রায় নিজেও, কিংবা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
তারপর উনি আমাকে প্রশ্নটা করছেন, “আপনি আসলে কোন ঘরানার?—এটা বুঝে নেন।” আমি আসলে প্রথম ঘরানার লেখক—এবার আমি বুঝে যাই। তো পাঠক হিসেবে উনি আমাকে খুবই উচ্চ মর্যাদা দিয়েছিলেন। আর ওনাকেও আমি, না জানতেই, উনি আমার গুরু হয়ে উঠেছিলেন। তো সেই জায়গাটায়, কারণ হচ্ছে, ওনাকে যে বই দিতাম, একটা জায়গায় আমি সৎ থাকার চেষ্টা করতাম, আমি যা পড়িনি তা নিয়ে খামাখা কথা বলার চেষ্টা করতাম না। আগেই বলে নিতাম, আমি এটা পড়ি নাই। এই সম্পর্কে হয়তো কিছু লেখা পড়তে পারি। ধরা যাক, জেমস জয়েসের ‘ইউলিসিস’। এই সম্পর্কে প্রচুর লেখা পড়েছি। ‘ইউলিসিস’ একবার অনুবাদ করানোর জন্য, একবার পাঠের জন্য কয়েকজন ইংরেজি জানা বন্ধুকে হায়ারও করেছিলাম। কিন্তু আমরা কয়েক পৃষ্ঠা মাত্র আগাতে পেরেছিলাম, তারপরে আর পড়তে পারিনি। হয়তো জীবনে আর পড়া নাও হতে পারে। আফসোস তো থেকেই যাবে।
এবার ফেরা যাক, আমার ওই ছয়টা গল্পের নামকরন, উনি যখন ‘ঋতুসংহার’ দিলেন আমার আর পছন্দ হয়নি। নামটা আগেই বলেছি কালিদাস থেকে নেয়া। কিংবা আমি যদি দিতাম, ‘জীবনানন্দ ও মায়াকোভস্কি জোছনা দেখতে চেয়েছিলেন’, আমি জানি বিক্রির ক্ষেত্রেও এটা বাধার ব্যাপার ঘটতো। ওনাকে আমি অশ্রদ্ধা করি নাই, নিজেকেও অশ্রদ্ধা করি নাই। ফলে, ‘ঋতুসংহারে জীবনানন্দ’ দিয়ে দিলাম। তো, জীবনানন্দের জীবনটাও ঋতুবৈচিত্র্যময়, এবং তাঁর জীবনের মধ্যেও যেমন খরা প্রবলভাবে ছিল তেমনি আর্দ্রতাও; যখন বরিশালে, বেশিরভাগ সময়টাই তো তিনি বরিশালে থেকেছেন। সাতচল্লিশের পরে চলে যাওয়া মানে হচ্ছে, তিন চার কি পাঁচ বছর কলকাতায় অবস্থান করা, এই শেষ জীবনটা বাদে বরিশালের সময়টা তিনি আর্দ্র আর পলিময় থেকেছেন। ফলে নামটার সাথে, ছয়টা গল্পের সঙ্গে আমি ‘ঋতুসংহারে জীবনানন্দ’ দেয়ায় নিজেরও স্বকীয়তা ছিল, আর দেবেশদার প্রতি গুরুদক্ষিণাটাও দেয়া হয়েছিল।
খোরশেদ : যাই হোক , দেবেশ রায় প্রয়াত। তিনি বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিকদের একজন। তাঁর কাছে থেকে আপনি নামটার অংশ পেয়েছেন। এটা অবশ্যই সৌভাগ্যের ব্যাপার। আমার কাছে অন্তত অনেক বড় ব্যাপার। তাঁর স্মৃতিটা জড়িয়ে আছে আপনার সঙ্গে, বিশেষ করে এই বইটার ক্ষেত্রে। যে গল্পটার কথা বললেন, ‘জীবনানন্দ ও মায়াকোভস্কি জোছনা দেখতে চেয়েছিলেন’, এখানে জীবনানন্দ ও মায়াকোভস্কিকে আপনি এক করলেন কীভাবে? কেনইবা এক করতে গেলেন? আরেকটু বলি, এই গল্পটার মধ্যে আপনি নদীর ওপর দিয়ে যাচ্ছেন, নদীকে আবিষ্কার করছেন, নদীর যে পৌরাণিক ও লৌকিক ইতিহাস সেটা নিয়ে কথা বলছেন। …
শামীম : এই গল্পটি যখন লিখি তখন মায়াকোভস্কির কয়েকটি ঘটনার তারিখের সঙ্গে জীবনানন্দের কয়েকটি ঘটনার হুবহু মিল পাই। তখন সংখ্যাগুলো নিয়ে খেলতে চাইলাম উমবার্তো ইকোর মতো। তারপর আরেকটি ভাবনা এলো মনে মৃত্যুচিন্তাজনিত। জীবনানন্দ স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করেছেন কি-না; তা একমাত্র জীবনানন্দই বলতে পারবেন, আমরা জানি না অনুমান করতে পারি শুধু।
নদী নিয়ে আমার ভীষণ আগ্রহ। কারণ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নদীময় জেলায় আমার জন্ম। শরীরের শিরা-উপশিরায় যেমন প্রবহমান রক্তধারা বয়, বরিশালেও তা-ই। ফলে নদী সংক্রান্ত সমস্ত কিংবদন্তী আমার স্বকল্পনা—এই গল্পে, আমার, ভালোবাসার ফসল।
খোরশেদ : একটা ‘উদ্ভট স্বপ্নে’র কথা বলে আপনি গল্পটা শুরু করেছেন। ৪৭-এর সন্ধ্যায় বরিশালের বগুড়া রোড আর জীবনানন্দের জীবন নিয়ে মনে হয় কিছু বুনছিলেন…
শামীম : উদ্ভট এই স্বপ্ন বাস্তবই যখন আমাকে একজন বিশিষ্ট লেখক এই গল্প পাঠের পর জিজ্ঞেস করেছেন, এমন ঘটনা সত্যিই ঘটেছে কিনা জীবনানন্দকে নিয়ে? তখন মনে হয়েছে, লেখাটা সার্থক হয়েছে। তবে এই গল্প সকলের পাঠ-যোগ্য নয়, কারো কারো পাঠের। ‘৪৭’ এই সংখ্যাটি দেশবিভাগের আগের বছর—যে-বছর জীবনানন্দ বরিশাল তাঁর তীর্থস্থান ছেড়ে চলে যান—উপনিবেশের রাজধানী কলকাতায়।
খোরশেদ : “সেগুন কাঠের খুঁটিটি স্পর্শ করলে সংবেদনশীল মানুষের হাত মনে হয়।”—এই সেগুন কাঠের খুঁটির রহস্যটা একটু বলবেন?
শামীম : সত্যি বলছি দুটি খুঁটি জীবনানন্দের আদি বাড়ির, সেগুন কাঠের খুঁটি ছিল, যা আমরা কয়েকবছর আগেও দেখেছি—জীবনানন্দের বসতভিটায় যাঁরা আছেন তাদের কাছে সংরক্ষিত। এই খুঁটি স্পর্শ করে এমনই অনুভব হয়েছে আমার।
খোরশেদ : ১৪ দিবস রজনী কাজলাদি’র ধানসিঁড়ি নদীতে ভাসনের বিষয়টা খোলাসা করেন, শুনি…
শামীম : ১৪ দিবস, ১৪ অক্টোবর ১৪ এপ্রিল ১৪ বছর এই সংখ্যাগুলো দিয়ে পাঠকের কাছে বিশ্বস্ত হওয়া। তবে ১৪ অক্টোবর ১৪ এপ্রিল—জীবনানন্দ ও মায়াকোভস্কির দুঘ©টনার দিন।
খোরশেদ : নোরা, মায়াকোভস্কি, জীবনানন্দ, তলস্তয়—এ-গল্পে মিলেমিশে একাকার। এটা কি ইচ্ছাকৃত? নাকি কাহিনি-সূত্রে বিধৃত?
শামীম : পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সকল মহান শিল্পীকে নিয়ে তুমি কল্পচিত্র তৈরি করবে আর প্রস্তুতি থাকবেনা তা কি হয়? তাদেরকে চরিত্র বানিয়ে ফেলা একটা ‘নভেলা’য় লেখার আগে ভাবলে বেশি ভাবলে তোমার মত করে ভাবলে যেমন তুমি সব কিছু নিয়ে অংক করতে বসো তাহলে আর এই লেখাটা হতো না। জীবন মানে অংক বা শৃঙ্খলা যেমন, তেমনি অনিশ্চিত যাত্রাও। লেখা শুরুর পর আর পরিকল্পনায় থাকেনা চরিত্রের প্রয়োজনে ভিন্ন স্বপ্ন বাস্তবের গল্প হয়ে ওঠে।
খোরশেদ : ‘সন্ধ্যাপারের থৌল’ আমার কাছে একটি ঘোরলাগা গল্প। ‘চৈত্র সংক্রান্তির শেষদিনের শেষ আলোয় দেখা’-কে গল্পে কীভাবে ধরতে চাইলেন?
শামীম : আসলে আমার শৈশবে দেখা ‘ঘোড়দৌড়’ ‘নৌকা বাইচ’ সেই সকল স্মৃতিকে বাস্তবের জীবনে আলেখ্য দেখতে চেয়েছি। এই সকল গল্প বেশি লেখা সম্ভব না। তুমি দেখো ওয়ালীউল্লাহ কিংবা রুলস কেউই বেশি গল্প লিখতে পারেন নি।
খোরশেদ : ভাঙা গোরস্তান, হাড়গোড়—এসবের সঙ্গে বসবাস—এটি কী ধরনের বাস্তবতা? শুধু এ-গল্পে নয়, আরো বেশ কটি গল্পেই এই ধরনের অতিপ্রাকৃত আর আধিভৌতিক বিষয় রয়েছে। এগুলো আপনার বিশ্বসাহিত্য পঠনের ফল কি? সুররিয়ালিজম অনেক আগেই আমরা পেরিয়ে এসেছি। অথবা আমরা যে ম্যাজিক রিয়েলিজমের কথা এখন বলি তাই কি আনতে চেয়েছেন?
শামীম : ভাঙ্গা গোরস্থান, শ্মশানের গল্পটি শুনেছিলাম এক বন্ধুর কাছে— এটা বাস্তব থেকে নেয়া, ‘প্রাগৈতিহাসিক’-এর মতো লাগবে। তুমি যে ম্যাজিক রিয়ালিজম এর কথা বলছো সে তো আবার ‘ঠাকুরদাদার ঝুলি’তে ও ‘ঠাকুরমার ঝুলি’তেও আছে—আমরা নিজেদের গল্পে ব্যবহার করিনি। তবে হ্যাঁ লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকার গল্প পাঠের ফলতো বলতেই হবে।
খোরশেদ : ‘শঙ্খলাগা’ গল্পে হিস্টিরিয়া আক্রান্ত চৌধুরী বাড়ির বউকে নিয়ে কোনো ইতিহাস-ঐতিহ্যের ব্যাপার আছে? বরিশালের ‘পরনকথা’র সঙ্গেই বা এর কোনো সংযোগ আছে কীনা? চৌধুরী বাড়ির বউয়ের কথা বলার পরেই কিন্তু ‘পরনকথা’র প্রসঙ্গ এসেছে…
শামীম : ‘পরন কথা’র ফর্মটি সম্পর্কে জানি, আমাদের মোশলেম বয়াতি বরিশাল অঞ্চলে ‘গুনাইবিবি’ গাইতেন, রহিম রূপবানের মতো জনপ্রিয় ছিল—এর কোনো প্রভাব থাকতে পারে।
খোরশেদ : আপনার একটা সংলাপ আছে, “মাংসপিণ্ডটা যেন শিবলিঙ্গের নাহান দীর্ঘ। আস্তে আস্তে দীর্ঘ হচ্ছে। এর সঙ্গে রয়েছে ফ্রি ভিসা প্রসঙ্গ। মাংসপিণ্ড ফ্রি ভিসা আর আমাদের স্বদেশ একই বাস্তবতায় বাঁধা মনে হচ্ছে।
শামীম : একদম। দেখো কত আগে লেখা গল্প—আজকের বাস্তবতায় কতটা বাস্তব। আমার দেশের সর্বোচ্চ আইন প্রণেতাদের একজন কুয়েতের আদালতে দণ্ডিত হচ্ছেন—আশ্চর্য হবার কিছু নাই। শত শত আদম ব্যবসায়ী—ক্রীতদাস হিসেবে আমার মা বোনকে এক ধরনের নব্য ফর্মে বিক্রি করছে—কেউ ধরা পড়ছে, কেউ পড়ছে না। এই বাস্তবতারই চিত্রায়িত রূপ এই গল্পটি।
খোরশেদ : ‘আমাদের সংবাদপত্র’ গল্পটাতে একটা দারুণ উপমা ব্যবহার করেছেন, “বেশ্যার অর্থহীন শুষ্কহাসি”—যদি ব্যাখ্যা করে বলতেন…
শামীম : এত কঠিন প্রশ্ন। অনিচ্ছাসত্ত্বেও আমাদেরকেও হাসি হাসি মুখ করে থাকতে হয়। কিন্তু এখানে শরীর বিক্রি করে যে-পেশাজীবী তার খদ্দের ধরার জন্য যে অর্থহীন হাসি—তাকেই সম্ভবত ইঙ্গিত করা হয়েছে।
খোরশেদ : শিল্প-শিল্পী-শিল্পিতা নিয়ে ‘উপনিবেশী মন’ গল্পটাতে বিশেষ মোচড় আছে। এখানে মূল চরিত্রটির অন্তর্দ্বন্দ্ব বা ভেতরের জটিলতা দারুণভাবে উঠে এসেছে। চরিত্রটি বেশ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।
শামীম : আমি এমন বিখ্যাত লেখক দেখেছি যিনি লেখক হিসেবে নারীবাদী স্বীকৃতিতে সিক্ত অথচ নারীকে যৌনকর্মীর বাইরে কিছু ভাবেন না। এমন শিল্পীর সঙ্গে মিশেছি যিনি নিজের বাইরে কাউকেই গ্রহণ করেন না। কারোই কিছু হয় না—তারই শুধু হয়। তারা লেখায় বেঁচে নেই—আলোচনায় বেঁচে আছেন। তাদের প্রতীকী একটি চরিত্র এ-গল্পে আঁকা হয়েছে।
খোরশেদ : গল্পে ব্যক্তি-অভিজ্ঞতার ছায়াকে আপনি কীভাবে দেখেন?
শামীম : ব্যক্তি অভিজ্ঞতার সঙ্গে কল্পনার সংযোগ না ঘটলে তো মহৎ গল্প তৈরি হবে না। কিন্তু প্রখ্যাত গল্পকার হাসান আজিজুল হক কিন্তু অভিজ্ঞতার বাইরে গল্প লেখেননি বলে সর্বত্রই স্বীকার করেন। তাহলে ইতিহাসাশ্রয়ী গল্প কীভাবে লিখবেন। তলস্তয় তো ‘যুদ্ধ এবং শান্তি’ লিখেছেন? কল্পনা আর ইতিহাস-পাঠের পরই তো, আমি কল্পনাকে সৃষ্টির সর্বোচ্চ জায়গায় স্থান দেই। সেই শিল্পী বা লেখক বা কবি ততো বড়, যার কল্পনাশক্তির ব্যবহার সর্বোত্তম, তিনিই মহৎ প্রতিভাবান।
খোরশেদ : যেটা আগেও বলেছিলেন, একশ্রেণির গল্পকার যে গল্পটা জানে, সেটা আর কেউ জানে না। আমি মনে করি, আপনি সেই ঘরানার। ‘ঋতুসংহারে জীবনানন্দে’র ক্ষেত্রে এই প্রসঙ্গে নিরীক্ষার বিষয়টা বলবেন…
শামীম : আসলে প্রচলিত ঘরানার গল্প একজন প্রোটাগনিস্ট একজন নায়িকাকে কেন্দ্র করে সুখ-দুঃখের সামাজিক-হিউমারাস গল্পের লেখক তুমি অনেক পাবে—তাই ওই দিকে আগ্রহ শূন্য— সাময়িকীর পাতা ভরানোর লেখক দরকার সমাজে—‘তাদের মত নই কি’?
খোরশেদ : গল্পগুলো আগের, বর্তমানে হয়তো আরো লিখছেন, নিজের ভেতরে নিজের কৌশল সচেতন লেখক সবসময়ই পাল্টান। এই ধরনের পরিবর্তনের কৌশলটা টের পাচ্ছেন কি?
শামীম : নব্য বড়লোকদের জীবনাচার নিয়ে কাজ করছি, তাদের অন্দরমহলে ঢুকে দেখার চেষ্টা করছি। কয়েকটা স্কেচ করেছি গল্পের দুটো লিখেছি। আমি যে গল্প লিখি তা আসলে বেশি লেখা সম্ভব নয়। একটি গল্পের মধ্যে শত গল্পের ভ্রূণ থাকে। এক জীবনে আসলে ২৫-৩০ টি গল্পের বেশি লেখা সম্ভব নয়।
-------------------------------------------
খ. প্রসঙ্গ ‘ভারতবর্ষ’
খোরশেদ : পর্তুগীজ থেকে বখতিয়ারের ঘোড়া, কেবল তা-ই নয়, আমাদের আদি ঔপনিবেশিক ধারার গভীর এক ইতিহাস, ইতিহাসের বাস্তবতা নিয়ে ‘ভারতবর্ষ’ লিখছেন। কেন মনে হলো, ইতিহাস-অবলম্বনে উপন্যাস লেখা দরকার?
শামীম : কৌশল। নিজেকে পাল্টানো নব্য ধনীদের নিয়ে লেখা গল্পে ভাষাও পাল্টে গেছে। প্রকাশিতব্য গ্রন্থে দেখবে সে সব।
খোরশেদ : কবি সত্তার বাইরেও, একজন কথাকার হিসেবে যখন ইতিহাস-ভিত্তিক তথা ঐতিহাসিক আখ্যান লিখতে যাবেন তখন কী বিষয়ে আপনি গুরুত্ব দেবেন? অর্থাৎ ইতিহাসকে দেখার দৃষ্টি কেমন হওয়া উচিত বলে মনে করেন?
শামীম : এই যে ভারতে ভাস্কো-দা-গামার আগমন—তার নিষ্ঠুরতা, জেলেদের হত্যা, তার পরবর্তী সময়ে ধর্মপ্রচার এসব নিয়ে আগ্রহ আমার বরাবরের—আমি সম্রাট বাবর, আকবর এঁদের সময়কাল নিয়ে ছোটবেলা থেকে আগ্রহী। দেখবে শঙ্খ ঘোষ, বাবুরের প্রার্থনা লিখেছেন কবিতায়। আবার শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন ‘শাহজাদা দারাশুকো’ উপন্যাস—কারণ আমাদেরকে ইতিহাস থেকে আগামীকে গড়ার দীক্ষা নিতে ভীষণ সাহায্য করে; অতীতকে বিশ্লেষণ না করলে ভবিষ্যতকে অনুধাবন বা নির্মাণ সম্ভব নয়। ইতিহাস চেতনা তাই সময় চেতনার চেয়ে উত্তম।
খোরশেদ : আইরিশ ইয়াং পাদ্রী থেকে তপন রায় তারপর শামসুদ্দীন কালামের হাতে মূল্যবান ডায়েরির জেরক্স কপিটা কীভাবে পৌঁছালো? এঁদের বাস্তব পরিচয় রয়েছে কি?
শামীম : আমি ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি দেখি নতুন নতুন ফর্মে। যেমন ‘ভিসা সমাচার’ গল্পের বাস্তব রূপ নোয়াখালীর সাংসদের বিদেশে কারাদণ্ড। আর Ôভারতবর্ষÕ উপন্যাসে মানব পাচারকারী—একসময় সরাসরি বাজারে বিক্রি হতো মানুষ, এখন মধ্যযুগীয় কায়দায় ব্যবহৃত হয় গৃহপরিচারিকা রূপে দেশে কিংবা আরবে।
জেরক্স কপি পৌঁছানোর গল্পটি যদি বাস্তব হতো তাহলে তো আমার লেখা দরকার পরতো না। আত্মজীবনী হতো তাদের—তপন রায় চৌধুরী কিংবা শামসুদ্দিন আবুল কালাম এরা কেউ কোনোদিন কারো সঙ্গে কারো দেখা হয়েছিল কিনা জানা নেই আমার। দুইজনই ঝালকাঠি মহকুমার অন্তর্গত বিখ্যাত মানুষ বলে তাদেরকে স্রেফ ব্যবহার করেছি পাঠকের বিশ্বস্ততার জন্য।
খোরশেদ : পর্তুগীজ পাদ্রি মাস্ত্রো ফ্রে সেবেস্তিয়ান মানরিকের ডায়েরির বিষয়টা ইতিহাসের অনন্য সাক্ষ্য। হ্যাকলুইট সোসাইটি মিশনারীর কথাও এসেছে। তারা সুবিধামতো পর্তুগীজ থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছে। ইতিহাস এভাবেই একটা রূপান্তরের মধ্য দিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছায় কীনা?
শামীম : তবে পর্তুগিজ পাদ্রী মাস্ত্রো ফ্রে সেবাস্তিয়ানের লেখা এসব বই সত্যি সত্যি আছে, সেখানে আমার এই কল্পনা ডায়েরির স্থান শতকরা ০২ ভাগ।
খোরশেদ : মানুষের প্রতিবাদ আর নির্যাতনকে আখ্যানে ধরার বিষয়ে আপনার অনুভব কী?
শামীম : মানুষের প্রতিবাদ, নির্যাতনকে আখ্যানে ধরতে যে শিল্পীত বোধ দরকার তা দেখেছি দেবেশ রায়ের বাঘারু চরিত্রে, দেখেছি মার্কেজের বুয়েন্দিরা চরিত্রে, দেখেছি তায়েব সালেহীর মোস্তফা চরিত্রে—এরকম গত শতকের বেশকিছু উপন্যাসের চরিত্রের কথা বলতে পারব।
খোরশেদ : উপন্যাসে নারীর সাংঘাতিক যন্ত্রণার চিত্র উঠে এসেছে। শিল্পাদেবীর সাহসী ভূমিকা তুলে ধরেছেন। সেসঙ্গে জুলেখা-রাধা-দ্রৌপদীর সঙ্গে তুলনা এসেছে। এই তুলনা কতটা যৌক্তিক?
শামীম : শিল্পা দেবী চরিত্রটি এখনো অপরিপূর্ণ, নামটিও পরিবর্তন হবে শিল্পা নামটি, আর তুলনা ব্যাপারটি উপন্যাসটির পূর্ণতা পেলে চোখে পড়বে না, ত্রুটি আছে অনেক মহাকাব্যিক এই ক্যানভাসের।
খোরশেদ : উড়িষ্যার পিপলি বন্দর, শওকত আলীর প্রদোষে প্রাকৃতজনের মধ্যেও পিপ্পলি হাটের কথা উল্লেখ আছে। অবশ্য শওকত আলীরটা হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম এই তিন সংঘট্টের। আপনারটা সেই পর্তুগীজদের সময়কার। এ-উপন্যাসের মধ্য দিয়ে বাংলার ইতিহাসকে কীভাবে ধরতে চেয়েছেন? যেমন গৌড়ের দরবারের উল্লেখ রয়েছে। আবার সুলতানদের সঙ্গে পর্তুগীজদের সংঘর্ষের কথাও রয়েছে।
শামীম : আসলে নদীমাতৃক বাংলা এবং ভারতবর্ষের তৎকালীন প্রতিচ্ছবি ধরতে চেষ্টা করেছি। এর সঙ্গে বর্তমান মৌলবাদের বাস্তবতা সমান্তরালভাবে দেখাতে চাই।
খোরশেদ : সুলতানা নাজমা কে? যে আসলে কখনো সুলিমা নামে এসেছে। স্পেন থেকে মোগল রমণী, সেখান থেকে আরাকানের দিয়াঙ ইতিহাসের এই রেখাটা মনে হচ্ছে একসুতোয় বাঁধা…
শামীম : উপন্যাসের নতুন ইতিহাসের নতুন নায়িকা।
খোরশেদ : আপনি বলেছেন, “মাটি যাদের পায়ের নিচে, সমুদ্রের দাঁড়ের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত, বাতাস আটকে গেছে আমাদের পালে, আকাশ যেন ঈশ্বরের ছাতা।”—এই বাক্যবন্ধে আসলে কীসের ইঙ্গিত?
শামীম : ক্রুসেড পরবর্তী যিশুর সন্তানদের সমুদ্র বিজয়ের ইঙ্গিত।
খোরশেদ : ঐতিহাসিক উপন্যাস বিষয়টা তো বহুচর্চিত। পৃথিবীতে আখ্যানের এতো বিষয় থাকতে ইতিহাসকে লক্ষ করলেন কেন?
শামীম : এই ইতিহাস অলেখা, অজানা ইতিহাস, তাই একদম শূন্য থেকে তুলে এনে বাস্তবতা দান করেছি আর রোমাঞ্চ অনুভব করেছি; আর খ্রিস্টানদের ধর্মপ্রচার সংক্রান্ত তথ্য অন্যদিকে দাস ব্যবসার বিস্তার সংক্রান্ত চিত্র দেয়ার চেষ্টা করেছি মাত্র।
খোরশেদ : সবশেষে, কথাসাহিত্য নিয়ে আপনার নিকট ভবিষ্যতের পরিকল্পনা বলবেন পাঠকের উদ্দেশ্যে…
শামীম : ‘ভারতবর্ষে’র একটি ট্রিলজি লিখতে চাইছি; যা ঐতিহাসিক সত্যের চেয়ে চিরায়ত সত্যরূপে পাঠকের কাছে বারবার পাঠ্য হবে, জিজ্ঞাস্য হবে এই ছিলো আমার ‘ভারতবর্ষ’ এখন এইরূপ। ভারতবর্ষের প্রথম পর্বটি শেষ করে ফেলবো আশা করছি। এখানে— প্যারালাল টেক্সট যে মৌলবাদের বর্তমান অবস্থা সেটাকে পরিষ্কার করার চেষ্টা করবো।
আলাপে-আড্ডায় অংশগ্রহণ : খোরশেদ আলম, গল্পকার ও প্রাবন্ধিক
শিক্ষক, বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার, ঢাকা-১৩৪২
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন