রেজাউল করিম রনি
আধুনিক কথা সাহিত্যে হূমায়ুন আহমেদের গুরুত্ব এবং অবস্থান তৈরিতে অন্যকোন উদাহরণ খুব বেশি জরুরি নয়। তার অবদান এবং সম্ভাবনার জায়গাগুলোই তাকে মহিমান্বিত করেছে নিঃসন্দেহে। সাহিত্য সমালোচনার নানান ক্যাটাগরিক্যাল আলোচনায় হূমায়ূনকে নিয়ে বহু বিতর্ক হয়েছে গত এক বছরে।
কিন্তু হূমায়ূন আহমেদ তার গল্প, উপন্যাসের কাহিনী নির্মাণ ও তার ধরনের মধ্য দিয়ে যে সহজ বর্ণনাভঙ্গি অথচ গভীর প্রণোদনাময় ভাষা তৈরি করেছেন , সেখানে হূমায়ূনের তুল্যমূল্য বিচারে যথেষ্ট এবং বিস্তারিত নজর দেয়ার অপেক্ষা রয়েছে। শ্রেণীগত জায়গা থেকে সাহিত্যের অভিজাত আর তার বাইরের ভাষাভঙ্গিতে হূমায়ূনকে দেখবার ক্ষেত্রে যে তর্ক বিতর্ক হয়েছে তাতেও নতুন করে তাকে পাঠ করার অনেক অবকাশ আছে। হুমায়ূন আহমেদের স্মরণে তার পাঠ ও পর্যালোচনার তরিকা নিয়ে এ লেখাটি নিবেদন করা হল।
এই লেখাকে হূমায়ূন পাঠের ভূমিকা হিসেবে নেয়া যায়। ভূমিকা কথাটার একটা দ্ব্যর্থবোধকতা আছে। এক অর্থে শুরু আরেক অর্থে এর তাৎপর্য। আমরা এই দুই অর্থকে আপাতত আলাদা না করে হূমায়ূূন পাঠে ফিরতে চাই।
অনেকেই আমরা হুমায়ূন পড়ি। আমার মত অনেক তরুণ হূমায়ূন পড়ে পড়েই বড় হয়েছেন।কিন্তু সত্য হলেও একটু করুণ শুনাবে যে, এখনও পর্যন্ত আমরা হূমায়ূনের ‘পাঠ’ দাঁড় করাতে পারিনি। এখন তাহলে প্রশ্ন এসে যাচ্ছে কোন কিছু পড়া মানে, সাধারণ অর্থে রিড করা আর ‘পাঠ’ দাঁড় করানো কি এক কথা নয়? এ দুটা যে সম্পূর্ণ ভিন্ন তা আমরা প্রায়ই খেয়ালের মধ্যে রাখি না। আমাদের উদ্দেশ্য হূমায়ূনের ‘পাঠ’ দাঁড় করানো। কথাটা ভেঙ্গে বলা প্রয়োজন।
আমরা এতদিন হূমায়ূন নিয়ে যত আলোচনা, মতামত-মাতম ইত্যাদি দেখেছি , তাতে হূমায়ূন পাঠের দিকটা আড়ালে চলে গিয়েছে। ফলে সেইসব রেটরিক্যাল কথা-বার্তার বাইরে হূমায়ূনকে ‘পাঠ’ করা অতি সহজ কাজ নয় মোটেই। আরও গোড়া থেকে প্রশ্ন করা যায়, কিভাবে হূমায়ূন বা তার কোন টেক্সট কিভাবে পাঠ করতে হবে?
কোন রচনাকে আমরা শুধু তার অন্তর্গত বৈশিষ্ট্যের কারণেই পাঠ করে উঠতে পারি না। অন্তর্গত বৈশিষ্ট্য কথাটার মানে হল, লেখার ধরন, বিশেষ বাক্য প্রকরণ, চরিত্রের বুনন, হাস্যরস, জীবন দৃষ্টি ইত্যাদি নানা কিছু। এ সবের বাইরেও আরও মেলা কিছু আছে। তাই, কেবল টেক্সচুয়াল রিডিং এর মধ্যে এর পুরোটা ধরা পড়ে না। তাহলে ব্যাপারটা দাড়াচ্ছে কোন রচনাকে পাঠ করতে হলে রচনার অর্ন্তগত এবং কনটেকচয়াল এই দুই অর্থেই তাকে খতিয়ে দেখতে হয়।
তাতেও শেষপর্যন্ত আমরা কোন রচনা থেকে আমাদের কাজে লাগে এমন বিষয় সমূহ ঠিক ঠিক উদ্ধার করতে পারি না। এর জন্য প্রথমত একটা বিষয়ের দিকে আমাদের নজর ফেরাতে হয়। সেটা হল সাহিত্য পাঠ করবার যে ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা সমাজে গড়ে ওঠে তাকে আমলে আনা। এর মধ্যে সামাজিক-রাজনৈতিক শ্রেণী সম্পর্ক ও আদর্শের প্রশ্নও চলে আসে।
আমি হূমায়ূন সম্পর্কে যেটা বলছি তা হল, আমরা এখনও হুমায়ূনের কোন ‘পাঠ’ দাড় করাতে পারিনি। বা হুমায়ন ‘পাঠে’র কোন তরিকাও আমরা জানি না। ‘পাঠ’ কথাটা যদি কনটেকচুয়ালাইজেশন অর্থে বলি তাহলে দেখব, হূমায়ূন যে ইতিহাসের মধ্যে লেখক হিসেবে গড়ে উঠেছেন তার কোন বিচার আমরা করিনি।
দুই. সাংস্কৃতিক যে ঐতিহ্য হূমায়নের সময়ে জারি ছিল তার নিরিখে হূমায়ূন নিয়া কোন কথা আমরা দেখি না। এই দুটি দিক ছাড়াও আরও বিবেচনাযোগ্য দিক রয়েছে। আশা করি কনটেকচুয়ালাইজশন করা বলতে কি বুঝিয়েছি তা পরিষ্কার করতে পেরেছি। হূমায়ূন ‘পাঠ’ কথাটা এই কনটেকচুয়ালাইজ করা অর্থেই বলেছি। এটা আমাদের এখানে হয় নি। এর জন্য শুধু সাহিত্যের একাডেমিক বা অধ্যাপকীয় সমালোচনাই যথেষ্ট নয়। এর জন্য ঐতিহাসিক পর্যালোচনার রাজনৈতিক-সামাজিক বিবেচনা দরকার। সেই দিক থেকে হূমায়ূনের ভাগ্য খুব খারাপ বলতে হবে। তিনি ব্যাপক পাঠক পেয়েছেন কিন্তু তার বিশাল কাজের কোন কনকেটচুয়াল বা পাঠ-পর্যালোচনা দাড়ায় নাই। চেষ্টাও দেখা যায় নাই। আমরা হূমায়ূন নিয়ে ঘুরে ফিরে মুখস্ত কিছু কথা-বার্থা শুনি এই যা।
হূমায়ূনকে ‘পাঠ’ করতে হলে এইসব দিক একইসাথে বিবেচনায় নিতে হবে। মনে হতে পারে এ আর এমন কি? কথাটা এ জন্যই জোর দিয়ে বলা দরকার। এতদিন হূমায়ন নিয়ে আমরা যে আলোচনা দেখেছি তাতে আগের দুটি বিষয় কমবেশি এসেছে। অর্থাৎ তাঁর রচনার অন্তর্নিহিত বিষয় এবং কনটেন্ট ধরে সমালোচকরা আলোচনা করেছেন। কিন্তু সেই আলোচনা দিয়ে হূমায়ূনকে বুঝবার ক্ষেত্রে বহুমাত্রিক সমস্যা তৈরি হয়েছে। কারণ আমাদের এখানে সাহিত্য পাঠের যে ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা গড়ে ওঠেছে তার কোন হদিস আমরা করিনি। ফলে হূমায়ূন পাঠের জন্য ভূমিকা প্রস্তাবনার উছিলায় এই জরুরি দিক আলোচনা করতে হচ্ছে।
হূমায়ূন পাঠে বাংলা সাহিত্যে যে ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা গড়ে উঠেছে তাকে খতিয়ে দেখা হয়নি। এই প্রশ্ন না করলে হূমায়ূন পাঠ করার মূল সূত্রটিই আমরা ধরতে পারব না। ঐতিহাসিক ভাবেই হূমায়ূনের পথটি এত আলাদা যে তাবৎ সাহিত্য মূল্যায়নের ট্র্যাডিশন হূমায়ূনে এসে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। আমরা এতদিন সাহিত্য মূল্যায়নের যে চর্চা জারি রেখেছি তা মূলত বঙ্গীয় রেনেসাঁ প্রভাবিত। কিন্তু বাংলাদেশ তো সরাসরি এই রেনেসাঁ প্রকল্পের মধ্যে পড়ে না।
এর স্বাতন্ত্র্য এত স্পষ্ট হওয়া সত্ত্বেও আমরা ঔপনিবেশিক রুচির মধ্যেই বাংলাদেশের সাহিত্য বুঝবার চেষ্টা করেছি। সেই দিক থেকে হূমায়ূন ঔপনিবেশিক সাহিত্য রুচির জন্য বিরাট হুমকি হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। বিশেষ করে, আমাদের এখানে তথাকথিত ক্লাসিক সাহিত্যের যে ধারণা গড়ে উঠেছে তা পশ্চিমা এনলাইটনমেন্টের প্রভাবেই গড়ে উঠেছে। হূমায়ূন সচেতনভাবে এই প্রকল্পকে থোড়াই কেয়ার করেছেন। সেইকারণে, হূমায়ূনকে সস্তা-বাজারি লেখক বললে কাজ হচ্ছে না। কোথায় তাঁর লিটারেরি প্রকল্পটা আলাদা তার হসিদ না করলে আমরা হূমায়ূন বিচারে বড় ধরনের অবিচারই করে ফেলব। নোক্তা আকারে এতটুকুই বললাম আপাতত।
হূমায়ূন পাঠের ক্ষেত্রে আমরা যে ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা অবলম্বন করেছি তা আমাদের জন্য আত্মঘাতী হয়ে উঠেছে। আমি হূমায়ূন নিয়ে আমাদের এখানে যে সকল আলোচনা ইতিমধ্যেই হাজির হয়েছে তার দিকে নজর রাখার চেষ্টা করেছি। এবং এ সকল আলোচনার কোনটাই এখন পর্যন্ত হূমায়ূনের মূল শাঁসটা ধরতে পারেনি। এ জন্য তাদের দোষারোপ করার কোন কারণ নেই। কারণ হূমায়ূন পাঠের জন্য তারা যে টেক্সচুয়াল এবং কনটেক্সচুয়াল পথ অনুসরণ করেছেন তা দিয়ে তারা যথারীতি অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক মতামতের অবতারণা করে ফেলেছেন। কিন্তু হূমায়ূন যে তাদের এত দিনের অনুসরণীয় কনটেকচুয়াল এর বাইরের লেখক তা তারা ঠিক ঠিক ঠাউরে উঠতে পারেন নি।
ফলে সাহিত্যিক আলোচনার জন্য যে ঐতিহাসিক সিলসিলা বা ভাবাধারা দ্বারা তাড়িত হূমায়ূন সেই পথ থেকে তারা শত মাইলের দূরত্বে থাকেন। এতে করে তাকে গড় গড় করে পড়েও আমরা তার ‘পাঠ’ দাঁড় করাতে পারিনি। এইবার আমরা দেখব হূমায়ূনকে নিয়ে আমাদের সাহিত্য পাড়ায় কি কথা হয় এবং তার সাথে হূমায়ূনের ফারাক কত খানি?
ট্র্যাডিশনাল সাহিত্যের আলোচনায় হুমায়ূন সম্পর্কে অনিবার্যভাবে উচ্চারণ করা হয়, হূমায়ূন জনপ্রিয় লেখক। আরও বলা হয়, তিনি পাঠকপ্রিয় লেখক, তিনি প্রকাশনা ব্যবসায় বিপ্লব এনেছেন, তিনি পাঠক তৈরিতে ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছেন, তিনি বাংলাদেশের সাহিত্যের বাজার থেকে পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের একচেটিয়া প্রভাব প্রায় একাই হটিয়ে দিয়েছেন ইত্যাদি ইত্যাদি। পাঠক একটু যদি খেয়াল করেন দেখবেন একসকল কথাবার্তার কোনটিই হূমায়ূনকে বুঝবার ক্ষেত্রে আমাদের কোন কাজে আসে না।
যদি তাদের প্রশ্ন করি জনপ্রিয়তা কি? একটু ব্যাখ্যা করে বলেন তো? এই প্রশ্নের জবাবে তারা যা বলেন তা এককথায় আবোল তাবোল বকা ছাড়া আর কিছু নয়। হূমায়ূন আলোচনার জন্য তারা যেসকল প্রশ্ন বা প্রসঙ্গ সামনে আনেন তা হূমায়ূনের যে ঐতিহাসিক কনটেক্সট সেদিক থেকে খুবই গৌণ। কারণ তারা হূমায়ূনের ঐতিহাসিক পটভূমি কখনও তালাশ করবার চেষ্টা করেন নি। তাই হূমায়ূন আলোচনায় তাদের খেই হারানো ভাবটা লুকাতে তারা হূমায়ূনকে বাজারি লেখক আখ্যা দিয়ে পাশ কাটিয়ে যেতে চান। তাকে হালকা চালের লেখক বলে সাহিত্যেও একটা এলিটিজম খাড়া করে হূমায়ূনের ব্যাপারে পাহাড় প্রমাণ মূর্খতাকে পণ্ডিতি বলে চালিয়ে দেন। ফলে এত আবর্জনার ভেতর হূমায়ূন পাঠের একটা ধরন বের করা খুবই কষ্টকর কাজ সন্দেহ নেই।
এখন আমরা দেখব কেন হূমায়ূন ‘পাঠ’ এতদিনেও দানা বাঁধেনি।
হূমায়ূন পাঠের জন্য দুই বাংলাতেই অভিন্ন যে ডমিনেন্ট সাহিত্য রুচি দাড়ায় গেছে তা সবচেয়ে বড় বাধা। এই সাহিত্য রুচি মোটা দাগে উপনিবেশিক। ফলে আলাদা করে যেই আমরা হূমায়ূনের ‘পাঠ’ নির্মাণে দিকে আগাব সাথে সাথে ধসে পড়বে কলোনিয়াল আধুনিক সাহিত্য রুচি।
এই কলোনিয়াল সাহিত্য রুচির জন্য হূমায়ূন বিপদ আকারে হাজির হয়েছে। তাই হূমায়ূনের বিশাল পাঠক থাকা সত্ত্বেও ক্যাকেশিয়ান-এলিটি পারোকোয়াল সাহিত্যধারা হূমায়ূনকে প্রতিনিয়ত তাচ্ছিল্য করে চলেছে।
অন্যদিকে আরও কিছু বিপত্তি আছে তা যথা সময়ে আলোচনা করা হবে। আমাদের এখানে কোন লেখককে আমরা যেসব কোয়ালিটির জন্য নমস্য বিবেচনা করি হূমায়ূন সচেতনভাবে সেগুলোকে নিজের লেখা-লেখির এলাকা থেকে বিদায় করেছিলেন। যেমন, লেখায় ভীষণরকম একটা মতাদর্শ থাকতে হবে। চরিত্রগুলোকে হতে হবে খুবই আদর্শিক। ভাষা হবে ঠাস বুনটে, উপন্যাসের ক্ষেত্রে থাকতে হবে মহাকাব্যিক দ্যোতনা ইত্যাদি। এক কথায় আমাদের সাহিত্যিক রুচি ভীষণরকম ধর্মতাত্ত্বিক। (ঊনিস শতকের বাঙ্গালি রেনেসাঁই আমাদের রুচি তৈরি করেছে, এরা এসেছে সরাসরি ইউরোপের প্রোটেস্টান্ট রুচি থেকে। সেই অর্থে ধর্মতাত্ত্বিক) ফলে হূমায়ূন সবসময়ই এখানকার তথাকথিত প্রগতিশীলতার নামে মৌলবাদী সাহিত্যিক, আলোচকদের দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়েছেন। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যারা হূমায়ূনকে গালি দিতেন তারাও হূমায়ূনের নতুন বই পড়ার জন্য মুখিয়ে থাকতেন। হূমায়ূন পড়তেন গোপনে আর প্রকাশ্যে করতেন গালাগালি। তাদের সাহিত্যিক এলিটিজম হূমায়ূনকে হজম করতে পারত না। কিন্তু হূমায়ূনের আকর্ষণ এড়ানোও তাদের পক্ষে সম্ভব হত না। আমরা যদি এতদিন নিজের কাছে এই প্রশ্নটাও করতাম, আমি কেন হূমায়ূন পড়ি তাহলেও হূমায়নের ব্যাপারে যে কুসংস্কার তৈরি হয়েছে তা এত পর্বত সমান হত না।
আমরা যদি নিজেদের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী হতে পারি তাহলে এতসব আলোচনা সমালোচনার তোয়াক্কা না করে ঘোষণা দিতে পারতাম, আমি হূমায়ূন পড়ি এবং এই কারণেই হূমায়ূন জরুরি। এই আমি মানে পূর্ব বঙ্গের ‘আমি’। হূমায়ূন আহমেদের সাথে এখানকার তাবৎ লেখকদের সাথে যে জায়গাটায় সবচেয়ে বড় ফারাক তাকে এক কথায় এই ‘আমি’র ফারাকও বলা যায়। আধুনিক বা আধুনিক-উত্তর চিন্তায় আচ্ছন্ন লেখকের কাছে ‘আমি’ মানে একক। তাদের কাছে ‘আমি’ কেবল ইনডিভিজুয়ালের আইডেন্টি মাত্র। ফলে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি হূমায়ূনের সাথে এসে যেখানে মার খায় তা হল, লেখক মাত্রই ইনডিভিজয়াল চরিত্র সৃষ্টি করেন। কিন্তু হূমায়ূনের ‘আমি’ কোনভাবেই পশ্চিমা আধুনিকতার আঁছড় পুষ্ট ইন্ডিভিজুয়াল আমি না। তার আমি হল বাংলার চিন্তার ভেতর থেকেই উঠে আসা।
‘একে বহে অনন্ত ধারা
তুমি আমি নাম বেওয়ারা।’
-লালন ফকির
আর হূমায়ূন বলেন,
‘আমি আমার কিছু অপছন্দের শব্দের একটি। আমরা পৃথিবীতে যখন বাস করতে আসি তখন আমির সাথে যুক্ত হয় সন্তান, স্ত্রী,বন্ধু-বান্ধব,স্বজন। জন্মের আগে এবং মৃত্যুর পরে আমি বলে কিছু থাকলেও থাকতে পারে কিন্তু জীবিত অবস্থায় আমি বলে কিছু নেই।’
-আমি, হূমায়ূন আহমেদ, অন্য প্রকাশ-২০১১
এটা সমষ্টির ‘আমি’ এবং সে এখনও নিজের সম্পর্কে সচেতন হয়নি। তার এখনও চৈতন্য প্রাপ্তি ঘটেনি। বাংলার ভাবপরিমণ্ডলে যে দার্শনিক তর্কটা অতি জরুরি মানুষ একইসাথে বিশেষ এবং সামন্য। এই বিশেষ বা সামান্যকে ধরার জন্য আধুনিক ‘আমি’র নিরাকরণ ঘটাতে হয়। এই দিক থেকে হূমায়ূন বাংলার চিন্তামূলের সাথে সরাসরি যুক্ত।
আমরা আলোচনা করছিলাম আমাদের সাহিত্যিক রুচিটা ধর্মতাত্ত্বিক। এই ধর্মতত্ত্বের বয়ানও দাঁড়িয়েছে পরদেশি যাজকদের বয়ানের মারফতে। ফলে এর প্রতি আমরা এতদিন যে প্রশ্নহীন অবস্থান নিয়ে ছিলাম হূমায়ূন পাঠের সরাসরি ফজিলত হল এটাকে স্বমূলে উপড়ে ফেলার কাজটা সহজ হয়ে যাওয়া। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসকে আবার যদি শুধু সাহিত্যের ইতিহাস আকারে দেখি তাহলে সেই দেখাটাও আংশিক দেখা হবে, এর সাথে ইতিহাস নির্মাণের প্রশ্নটা সরাসরি জড়িত।
একটা বিষয় আমরা সাদা চোখেই দেখতে পারি, আমরা প্রায়ই বলতে শুনি, পশ্চিম বঙ্গের লেখকরা বড় বড় উপন্যাস লিখতে পারেন। তাদের উপন্যাসের আখ্যান হয় বহু বিস্তৃত। অন্যদিকে বাংলাদেশের লেখকরা উপন্যাস লিখতে পারেন না। পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস লিখতে না পারার অভিযোগ বাংলাদেশের বড় বড় লেখকদেরও ছেড়ে যায় নি। এ প্রসঙ্গে আমরা স্মরণ করতে পারি বঙ্কিম চন্দ্রের কথা ।‘বাঙ্গালীর ইতিহাস নাই’ বলে বঙ্কিম চন্দ্রের যে আপসোস তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তবে বাংলাদেশে যারা লেখালেখি করেন তাদের কেউ আমাদের ইতিহাস নিয়ে প্রকৃত প্রস্তাবে চিন্তা-ভাবনা করেছেন, কোন প্রশ্ন তুলেছেন এমনটা দেখা যায় নি। অর্থাৎ বঙ্কিমচন্দ্র যেই অর্থে ইতিহাসের প্রশ্ন উত্থাপনের মধ্য দিয়ে একটা রাজনৈতিক জনগোষ্ঠীর আবির্ভাবের প্রকল্প হাজির করেছেন, বাংলাদেশের লেখকদের বেলায় এমনটা নজরে পড়ে না। কিন্তু এর মধ্যে ইতিহাসের পরিহাস আকারে যে ঘটনা ঘটে গেছে তা হল ৭১ এর স্বাধীনতার সংগ্রাম। এর ফলে রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী আকারে নিজেদের নির্মাণের ঐতিহাসিক কাজ ব্যাতিরেকেই আমরা একটা রাষ্ট্র কায়েম করে ফেলার যোগ্যতা অর্জন করে ফেললাম। রাষ্ট্র তো করলাম কিন্তু এর ইতিহাসের বয়ানটা নিলাম ঊনিস শতকের যে সাম্প্রদায়িক ঐতিহাসিকতার নেরেশন দাঁড়িয়েছিল তার থেকে। যে কারণে ৭১ এর ঘটনা ঘটলেও বাংলাদেশের ঐতিহাসিক মুক্তির প্রশ্নটি এখনও কারেন্ট ইস্যু। এখনও এর মীমাংসা হয়নি।
এই ঘটনার সরাসরি প্রভাব পড়েছে হূমায়নের উপর। তার প্রথম দুইটা উপন্যাস লিখিত হয়েছে সেই উনিস শতকী সাহিত্যের ইতিহাসের প্যরাডাইমের মধ্যেই। যার ফলে এখানকার প্রগতিশীলরা দ্রুত হূমায়ূনে মুগ্ধ হয়ে পড়েন। কিন্তু হূমায়ূনের ধারাবাহিকতার দিক থেকে এ দুটি লেখা ভীষণভাবে অ-হূমায়ূনীয়। কিন্তু প্রগতিশীলদের হাস্যকর অভিযোগ হল হূমায়ন আর ‘নন্দিত নরকে’ এবং ‘সঙ্খনীল কারাগার’ এর মত লেখা আর লিখতে পারেন নি? এবং এর জন্য তারা যে পেটি লজিক হাজির করেন তা হল, এর পরে হুমায়ূন বাজারি হয়ে গেছেন? পাঠক আমি কসম খেয়ে বলতে পারি, হূমায়ূন যদি এই দুটি বইয়ের মত বাকি লেখাগুলোও একইভাবে লিখতেন তাহলে তাকে নিয়ে একটা অক্ষরও লিখতাম না।
ইতিহাসের যে ব্রেকথ্রুটা দরকার ছিল এরপরে হূমায়ূন সেটা করলেন। মনে রাখতে হবে ওই দুইটা বই ৭১ এর সময়েই লেখা। ৭১ এর পরে আমেরিকা থেকে ফিরে আসার পর আমরা যে হূমায়ূনকে পেলাম সে ছিল বাংলাদেশের হুমায়ূন। আগের হূমায়ূন মোটাদাগে বাঙ্গালীর হুমায়ূন। এই বিভাজন তো ঘটালেনই এবং প্রায় একা সেটা জারি রাখলেন। তার বঙ্কিমের মত ঘোষণার দরকার পড়ল না।
যেহেতু বঙ্কিম যে পরাধীনতার ভিতর থেকে একটা হিন্দু জাতীয় জাগরণের চেতনা জারি করাকে কর্তব্য মনে করেছেন সেদিক থেকে হুমায়ূন স্বাধীন একটা ভূখণ্ডের লেখক হওয়াতে তাকে বঙ্কিমের মত গোড়া পথ ধরতে হয়নি। তাকে পড়তে হয়নি পাল্টা মুসলিম জাতীয়তাবাদের খপ্পরেও। বলা যায়, ৭১ হুমায়ূনকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।
এখানে সাবধানতার ব্যাপার হল, বঙ্কিমের সাথে হূমায়ূনের কোন কম্পারেটিভ আলোচনা পদ্ধতিগতভাবে যায় না। কারণ হুমায়ূন সম্পূর্ণ উল্টা ধারার নায়ক। যে ধারাটা এখনও ইতিহাসের নিরিখে পাঠ করে উঠতে পারি নি। এই লেখা সে প্রচেষ্টার একটা ফসল বলা যেতে পারে।
প্রসঙ্গত, হূমায়ূন লেখার সময় কখনও খেয়াল করতেন না তার লেখাটা আধুনিক লেখা হল কি না? এটা ব্যাকরণ সম্মত হল কি না? পুরো ঠাস বুনট আছে কি না? উপন্যাসের মহাকাব্যিকতা নিয়েও হূমায়ূনের মাথা ব্যথা ছিল না। হূমায়ূন শুধু আমাদের গল্পটা বলতে চেয়েছেন। এবং সেটা তিনি পেরেছেন। এই পারার মধ্য দিয়া ক্যালকেশিয়ান আধুনিক সাহিত্য হুমকির মধ্যে পড়েছে। হূমাযূনের এই বিজয় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিজয়ের সাথে সরাসরি জড়িত।
এখন হূমায়ূনের পাঠ যদি দাঁড়িয়ে যায় তাহলে তথাকথিত আধুনিক সাহিত্য দেওলিয়া হয়ে যাবে। এর আর কোন ভূমিকা আমাদের সাহিত্য সমাজে থাকবে না। সেই দিক থেকে হুমায়ূন এই ধারার সরাসরি শত্রু। আধুনিক সাহিত্য বেশ বিপদেই আছে হূমায়ূনের বাংলায়। এবার আমরা দেখি পশ্চিম বাংলা আর বাংলাদেশের সাহিত্য বলে যে পৃথকীকরণ তার হূমায়ূনীয় প্রকরণটা কি। কলকাতা ভারত রাষ্ট্রের একটি রাজ্য। আর বাংলাদেশ একটি রাষ্ট্র যার রাজধানী ঢাকা। এই বিষয়টি একটু কড়া ভাবে খেয়াল রাখার নিবেদন রাখি। পশ্চিম বঙ্গের লেখক দেবেশ রায় কিছু দিন আগে এক সাক্ষাৎকারে বলছেন:
‘প্রশ্ন: বাংলাদেশের সাহিত্য বলে আলাদা একটা সাহিত্যসীমা চিহ্নিত করার পক্ষে আপনিও বলছেন। প্রশ্ন হচ্ছে দেশ-রাষ্ট্র-ইতিহাস বদলে গেলে সাহিত্যও বদলে যায় কি না। গেলে সেই বদলকে আমরা কোন কোন শর্ত দিয়ে চিনব?
উত্তর: এই প্রশ্ন নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে আমি আলোড়িত আছি। এ কারণে আলোড়িত আছি যে, বেশ কিছুদিন ধরে বাংলাদেশের সাহিত্য নিয়ে আমার আগ্রহ ও পড়াশোনা বেড়েছে এবং আমি কতগুলো সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি, যার সঙ্গে এই প্রশ্ন ভীষণভাবে জড়িত। আমি মনে করি, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের সাহিত্য দুটোই বাংলা ভাষায় লেখা হলেও এক সাহিত্য নয়। এপার বাংলা ওপার বাংলা বা এক বাংলা এসব সেন্টিমেন্টাল কথা দিয়ে সাহিত্যের ইতিহাস নির্ধারণ হয় না।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হওয়ার পর এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্মের পর, অর্থাৎ সুদীর্ঘ ষাট বছরে যে ইতিহাসের মধ্য দিয়ে দুটি দেশ অগ্রসর হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের শিল্পসাহিত্য পশ্চিমবঙ্গ থেকে আলাদা হয়ে গেছে। এটাকে ভাবাবেগ দিয়ে বোঝা যাবে না।
মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায় এটা স্বীকার করা যে দুটো দেশের সাহিত্য আলাদা সাহিত্য। আমি এই তুলনার মধ্যে যেতে চাইছি না যে একই ভাষায় পৃথিবীতে কত আলাদা আলাদা সাহিত্য তৈরি হয়েছে। যাচ্ছি না এ কারণে যে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই আলাদা আলাদা কারণ সক্রিয় থেকেছে। সুতরাং তুলনার কোনো প্রয়োজন নেই। মানুষের জীবনযাপন, সমাজের জীবনযাপন, রাজনীতি, পৃথিবীর সঙ্গে সম্পর্ক, দৈনন্দিন জীবনের রকমফের- এগুলোর বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে গল্প-উপন্যাসও বদলায়। কবিতার কথা বলছি না, তবে বাংলাদেশের গল্প-উপন্যাস আর পশ্চিমবঙ্গের গল্প-উপন্যাস সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র।’(৩০-১১-১২ প্রথম আলো)
আমি যে কথাটা উপরে বলার চেষ্টা করেছি দেবেশ রায় বেশ জোর দিয়ে বলে দিয়েছেন। এই যে আলাদা তাকে দেবেশ রায় যেভাবে শুধু জীবন যাপন বা সাংস্কৃতিক ভিন্নতা দিয়ে বুঝতে চাইছেন তা মনে হয় না কাজের হবে। এই আলাদা ঐতিহাসিকভাবে যেমন তেমনি ভাবাদর্শ অর্থেও। চিন্তাশীলতার বাংলাদেশীয় যে দার্শনিক অবস্থান তা পশ্চিম বঙ্গ থেকে আলাদা বলেই বাংলাদেশের সাহিত্য আলাদা। অন্যদিকে দেবেশ রায়ের কথাটা পাকাপাকি ভাবে মেনে নেবার জন্য টেক্সট ধরে ধরে দেখাতে হবে কিভাবে কোন কাল পর্বে বাংলাদেশের সাহিত্য আলাদা। এখানে সেই সুযোগ নাই। খেয়াল রাখতে হবে অন্য কারণগুলোও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমি এতেই সন্তুষ্ট না।
পশ্চিম বঙ্গের সাহিত্য থেকে বাংলাদেশের সাহিত্যের স্বাতন্ত্র্য দিয়ে আমার কোন কাজ নাই। আমি আরও এক কাঠি আগায় যাইতে চাই। আমি বলতে চাই পশ্চিম বঙ্গে যা কিছু হয়েছে, হচ্ছে তা আমাদেরই সম্পদ। আমরা সেটাকে আলাদা বলে দূরে রাখতে চাই না। মানে তারা ইংরেজি শিক্ষার প্রভাবের ফলে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের মানুষের সাহিত্যকে যেভাবে অবহেলা করেছেন, আজ তা হিন্দি আর ইংরেজির দাপটে আত্মারাম খাঁচা ছাড়া অবস্থায় আছে। আমরা তাদের অবহেলা করতে চাই না। পচা মুসলিম সেন্টিমেন্ট নিয়ে তাদের সাথে দূরত্ব বাড়াতে চাই না। আমাদের একটা রাষ্ট্র আছে। যেটা আমাদেরকে পশ্চিম বঙ্গ থেকে এক হাজার বছর এগিয়ে দিয়েছে। ফলে আমাদের এখন কিছুটা দায়িত্বও নিতে হবে। এই ঘোর বিপর্যয়ের দিনে পশ্চিম বঙ্গের সাথে আমরা যেন তাদের অতীত আচরণ থেকে বিরত থাকি এটা সতর্কতার সাখে খেয়াল রাখতে হবে
এই ঘটনা হূমায়ূনের মধ্যে কি প্রভাব ফেলেছে সেটা একটু দেখা দরকার। হূমায়ূন লিখছেন, ‘ঔপন্যাসিক বিমল মিত্র এসেছেন বাংলাদেশে। উঠেছেন সোনার গাঁ হোটেলে। কৈশরে বিমল মিত্রের বই ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম’ খাটের তলায় বসে শেষ করেছি। ক্ষণে ক্ষণে অশ্রু বিসর্জন করেছি।
‘এক সন্ধ্যায় বিমল মিত্রের কাছ থেকে টেলিফোন, হূমায়ূন, আসো, আমার সঙ্গে দেখা করে যাও। আমার আনন্দিত হয়ে ছুটে যাবার দরকার ছিল। তা না করে আমি বিনয়ের সাথে বললাম আমি কারো সাথে দেখা করি না। আমি আসছি না। আপনি কিছু মনে করবেন না। আমার কর্ম কাণ্ডের ব্যাখ্যা- লেখক কে চিনব তার লেখা দিয়ে। ব্যক্তিগতভাবে তাকে চিনার কিছু নেই। কিন্তু সেটাই সব কথা নয়, পশ্চিম বঙ্গের লেখকের প্রতি আমার বিরাগও ছিল তাঁরা পিঠ চাপড়ানো কথা বলতে ভালবাসেন। নিজেদের ব্রাহ্মন ভাবেন। বাংলাদেশের লেখকদের জল-চল জাতের উপরে কিছু ভাবেন না।’ (চতুরঙ্গ, সেপ্টেম্বর, ১৯৮৭ কলকাতা। তবে আমি এই উদ্ধৃতি নিয়েছি মাসিক উত্তরাধিকার শ্রাবণ ১৪১৯ সংখ্যা পৃষ্ঠা ৫০ থেকে।)
হুমায়ূন কিন্তু বর্জনবাদী ছিলেন না। আমরা জানি কলকাতার প্রায় সব তথাকথিত বড় বড় লেখকদের সাথে তার যোগাযোগ ছিল তিনি সেখানকার সেরা পত্রিকাতে উপন্যাসও লিখেছেন। কিন্তু একটি বারের জন্য তিনি দাদাগিরির কথা ভুলে যান নি। আমরা হুমায়ূনের এই দিকটি একটু বিশদভাবে হাজির করলাম এ জন্য যে, এই বিষয়টি আমাদের এখানে এখন সাহিত্যিক তকের্র একটি রেলিভেন্ট ইস্যু। যার মিমাংসা হুমায়ূন তার মত করে সেরেছেন। এই মিমাংসার জন্য যে গোড়ার জোর দরকার তার সাথে ইতিহাসের প্রশ্নটি সরাসরি জড়িত। ফলে আমাদের এখানে এখনও যারা বলেন, কলকাতার লেখকরা বড় মহান আর এখানকার লেখকরা নাদান। এখানকার লেখকরা অনেক অগ্রসর, পশ্চাদপদ তারা আসলে ইতিহাসের দুইটি ভিন্ন দিক সম্পর্কে সজাগ না থেকেই এই সব কর্ত করতে থাকেন। কাজে এখনও আমরা হুমায়ূনকে কিভাবে পাঠ করব তার তরিকাটাই ঠিক করতে উঠতে পারি নি। হুমায়ূন পাঠের সূত্রটা একবার ধরে ফেলতে পারলে আমাদের আধুনিকতার আপদ কেটে যাবে।
আমাদের লিখিত জাতীয় ইতিহাস নাই সত্য। কিন্তু হূমায়ূনের মধ্যে ইতিহাসের ইশারাটা আছে। ঐতিহাসিক সতীশচন্দ্র মিত্র বাংলাকে বলেছেন উপন্যাস প্লাবিত জনপদ। যার ইতিহাস রচনা করা সত্যিই খুব কঠিন। হুমায়ূন এই প্লাবনের মধ্যে এত বেগে ছুটে চলেছেন আমরা তাকে ধরতে পারছি না। কিন্তু তাকে ছাড়া আমাদের চলবে না। কলোনিয়াল আঁছড় কাটানোর জন্য হূমায়ূন খুব শক্তিশালী হাতিয়ার বাংলাদেশের। আগামী দিনে আমরা হূমায়ূনের দিকে আরও বেশি করে ফিরব। ফিরব নিজেদের অন্তর্গত ইতিহাসের টানেই। ফিরতে বাধ্য হব।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন