‘কুহক বিভ্রমে’র শিল্প-শৈলে আঞ্চলিক মুখ


উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী রংপুর জেলা সংসদের
মৃত্তিকা পত্রিকায় লেখাটি প্রকাশিত 
শুধু কথাশিল্প নয় বরং যে-কোনো শিল্পেই তাঁর নির্মাতাকেই নতুন ধরনের কিছু খোঁজ করতে হয়। নিরন্তর এক অন্বেষণ-প্রক্রিয়াই শিল্পীকে প্রাতিস্বিক করে তোলে। সমকালের শিল্প কতটা অগ্রবর্তী তাও তাঁকে জানতে হয়। এমনকি জানতে হয় প্রতিবেশি রাষ্ট্রসহ বিশ্বসাহিত্যের কলরোল। ভাবনা-জটিল বিশ্বের তাবৎ খবরাখবর রেখেই শিল্পী তাঁর সতর্ক পা ফেলেন শিল্পজগতে। বর্তমানকাল তাই শিল্পীকে আরো কয়েকটি চ্যালেঞ্জের মধ্যে ছুড়ে দিয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ কথাশিল্পীর ক্ষেত্রে আরো বেশি প্রযোজ্য। কথার কারবারি যেহেতু তিনি, ফলে কথাকে দুমড়ে-মুচড়ে প্রকাশের অভিনবত্ব দেখাতে হয় তাঁকে। বাস্তবতাকে ভাষার নতুন শৃঙ্খলে বাধতে হয়। তবেই তিনি স্বীয় কালের গতিকে অব্যাহত রাখতে পারেন।

কথাশিল্পী হিসেবে প্রশান্ত মৃধার জন্ম এমনি একটি কালে যখন বড় বড় অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ শিল্পীকে নতুন নতুন আঙ্গিক অন্বেষণে আপনা আপনি বাধ্য করছে।
বাংলাভাষী অঞ্চলের সাহিত্য বিশ্বের তথা গোটা গোটা শিল্পভঙ্গিকে নিবিড়ভাবে পাঠ করেই অগ্রসর হতে হয়েছে কথা-নির্মাণ করতে। শুধু একজন পাঠক হিসেবে প্রশান্ত মৃধার গল্প পড়লে তাঁকে মানে হবে তিনি একজন দক্ষিণ-বঙ্গের কথাকার। কারণ সেখানকার জীবনকে আষ্টেপৃষ্ঠে দেখার সুনিপুন চোখ আছে তাঁর। বাগেরহাট ও এর পাশ্ববর্তী অঞ্চলসমূহ তাঁর শিল্পনির্মাণের ভিত্তিভূমি। সেখানকার মানুষ, সংখ্যালঘু শ্রেণি, সংস্কৃতি, জীবনবোধ, ক্ষমতার স্থানীয় রূপ ইত্যাদি ব্যাপকভাবেই গল্পে প্রকাশ পেয়েছে। ¯্রােতস্বিনী নদীর নুড়ি-পাথর শামুক-ঝিনুকের মত নয়; পলিমেশা মাটির মত নদীর পানি যা সংমিশ্রিত থাকে আলাদা করা যায় না কোনভাবেই, ঠিক তার মতই। লোকাল ডায়ালেক্টের মধ্য দিয়ে গল্পকার আসলে অবিমিশ্রভাবে জীবন-সন্ধানী। 

কুহক বিভ্রম, ১৩ ও অবশিষ্ট ছয়, আরও দূর জন্ম জন্মান্তর, শারদোৎসব, বইঠার টান, করুণার পরিজন, মিঠে আশার অন্ধকার, প্রতিদিন অচেনা মুখ, যুধিষ্ঠিরের সঙ্গী প্রভৃতি গল্পগ্রন্থসমূহে আঞ্চলিক জীবনকে ধরার অসীম প্রত্যয় নিহিত। আঞ্চলিক মানুষের জীবন-যন্ত্রণা, দৈন্য, রসিকতা, পরিহাস, খাদ্যাভ্যাস, খুনসুটি এমনকি যৌনতা কোনকিছু আড়াল নয় তাঁর সাহিত্যে। কিন্তু একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় আর তা হচ্ছে- গল্পকার মানুষের মনকে ধরার জন্য নিরাসক্ত, এটা তাঁর সচেতন অনুধ্যানেরও ফসল। মানবিক সত্তার উপস্থিতি এ-কারণে আরো ঘনীভূত হয়ে ওঠে। রাষ্ট্র-রাজনীতির কথা তাঁর গল্পে একেবারেই নেই যে তা নয়। আছে, কিন্তু এ-জীবনকে ধরার জন্য তিনি ঘনঘন রাষ্ট্রসংঘের দোহাই পাড়েন না। অন্যদিকে বৈশ্বিক ডামাডোলের খবরাখবর রেখেও সে-বিশ্বকে যথাসম্ভব শামুকের খোলসের ভেতরেই রেখেছেন তিনি। বর্তমান কালের শিল্পভঙ্গির আলোচনায় শিল্পীর মনোজগতকে আড়াল করার কথা বলা হয়। কিন্তু যে-জীবনবোধ শিল্পীকে ভেতর থেকে তাড়িত করে তাকে পশ্চাৎপটে রাখা যায় না বোধ হয় কোনোভাবেই। তাই তাঁর গল্পেও বর্ণানায়েন এক সংঘটনশীল বুনটবদ্ধতার মধ্য দিয়ে জীবনের বিস্তৃত প্রকাশ ঘটে।

বাংলাদেশের গল্প জগতে যে-কজন অভিনব শিল্পকৌশলে পাঠককে ব্যতিব্যস্ত করেছেন তাদের মধ্যে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, হাসান আজিজুল হক, শহীদুল জহীর প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। এদের মধ্যে প্রথম দুজন আঞ্চলিক জীবনকে অবলম্বন করেছেন। আখতারুজ্জমামান ইলিয়াস যদিও শহরের জীবনকে কোথাও কোথাও অবলম্বন করেছেন তবুও তাঁর শিল্পের জগত পদচারণায় মুখর মূলত নিরন্ন নিম্নজীবী মানুষই। যারা বৃহত্তর গ্রাম জীবনের অংশীদার। আর গ্রামীণ মানুষের সঙ্কট ও বেদনার জায়গা থেকেও তা আলাদা নয় কোনভাবেই। আঙ্গিকের দিক থেকেও তারা একে অপরের থেকে আলাদা। প্রত্যেক শিল্পীরই নিজস্বতা থাকে। সেই নিজস্বতাকে সঙ্গে করেই তিনি প্রাতিস্বিক হয়ে ওঠেন। কিন্তু পরবর্তী গল্পকার অনেকের মধ্যেই এই তিন কথাশিল্পীরই ছাপ পড়ে গেছে অনেকখানি। মানুষের অন্তর্গূঢ় চারিত্র-চিত্রকে স্থাপন করতে গিয়ে শিল্পীরা যে-সব ভঙ্গি ও ভাষা ব্যবহার করেছেন তাতে রচনা-কাঠামোয় অচেতনেই তাঁদের একটি ছাপ অঙ্কিত হয়েছে। কিন্তু তাদের উত্তরসূরি শিল্পী প্রশান্ত মৃধা সচেতনেই পরিহার করার ক্ষমতা অর্জন করেছেন তাঁদের শিল্প-ঘরানাকে। প্রশান্ত মৃধার নির্মোহ গল্প বলবার ভঙ্গিতেই সেটা প্রকাশিত। এই নির্মোহ থাকতেই তিনি ব্যবহার করেন না তেমন কোন সাসপেন্স, যা গল্পকে পাঠক ভিন্ন একটি বাস্তব হিসেবে পাঠ করতে পারে। তিনি বলেন কাহিনি। তিনি বলেন জীবন, বলেন ভাষা(ডায়ালেক্ট)। এই ভাষায় ও ভঙ্গিতে লেখক চরিত্রের বাইরের লোক হন না। পাঠক বাইরের লোক; কেননা তাকে পাশ ঘেষে চিনে নিতে হয়। কখনো কখনো অনায়াসে নয়, বহু আয়াসে সাধ্য করে তুলতে হয় লেখক কি বলতে চাচ্ছেন তা নয়, বরং কোন জীবন বলতে চাচ্ছেন তাকে বুঝতে। পাঠককে আপোস করে নিতে হয়ে তাদের বহুকাল চর্চিত কল্পনা-বাস্তবের কুহকে মেশানো গল্পকথনভঙ্গির তীব্র ও ব্যাপক ভাঙনের সঙ্গে। কেননা তাকে মেনে নিতে হয়- গল্প মানেই প্রথাচলিত ঐতিহ্যিক প্রকাশমাধ্যম নয়। সুসংহত কাহিনি-কাঠামো, নিবিড় নাটকীয়তা, গল্পের হঠাৎ শুরু কিংবা চকিত সমাপ্তি ইত্যাদিও তাকে প্রায় ভুলে যেতে হয়। এই অভ্যস্ত জগত হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে বলেই প্রশান্ত মৃধার গল্প সবসময় সুখপাঠ্য মনে হয় না। পরিশ্রমী পাঠককে ওত পেতে থাকতেই হয় কখন গল্পটি প্রকৃত অর্থেই ধরা পড়বে তার হাতে। এ-যেন এবড়ো-থেবড়ো প্রকৃতির কাদা, কণ্টক, ঝোপঝাড় অতিক্রম করে অগ্রসর হওয়া। তবে সাধনা শেষে সিদ্ধি লাভের মত পথের দেখা মিলবেই।    

বর্ণনার ডিটেলস্ তাঁর গল্পে থাকে। তবে দেবেশ রায়ের গল্পের ডিটেলস্ তিনি গ্রহণ করেন না। নির্মোহ বলবার ভঙ্গিতেও প্রশান্ত মৃধা বহু অজানা কাহিনি ও চরিত্রের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া আমাদের সামনে হাজির করেন। তার জন্য অপেক্ষা করতেও হয়। পড়তে ক্লান্ত হয়ে পাঠক হাল ছেড়ে দেবার জন্য উদ্গ্রীব হন। কিন্তু আরেকটু পরিশ্রম করলেই খনি খুঁড়ে স্বর্ণ খ- পেতে হৃদয় আনন্দিত হয়ে ওঠে। বিশেষ নাটকীয়তা ব্যতিরেকেই তিনি জীবনের গহনতম কোণ-কর্নারে গতায়ত করতে পারেন। এই পারঙ্গমতা শিল্পী হিসেবে তাঁর চরাচরের বা জগতের সৎ-অনুকৃতির পরিচয় দেয়। নিছক বানানো ব্যাপার-স্যাপার তাঁর গল্পে তাই প্রায়শই থাকে না। তাকে খুঁজেও পাওয়া যায় না। নানা ধরনের জীবনকে ধরতে তিনি হয়ত একই রকম কথ্যবচন ব্যবহার করেন। একটি সীমাবদ্ধ আঞ্চলিক মানব-জীবন তাতেই অকৃত্রিম ও সত্য হয়ে ওঠে। প্রশান্ত মৃধার গল্পগুলোর প্রায় প্রত্যেকটাতেই তাঁর আলাদা আলাদা আঙ্গিক ধরবার বাসনা মূর্ত হয়ে ওঠে। কুহক বিভ্রম প্রশান্ত মৃধার প্রথম গল্পগ্রন্থ। ফেব্রুয়ারি ২০০০ সালে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। এ-গ্রন্থেই শৈল্পিক নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে এক ব্যতিক্রমী শিল্পবোধের সাক্ষর তাঁর এ-গ্রন্থে পাওয়া গিয়েছিল।


কুহক বিভ্রম : বিভ্রম-বাস্তবের কুহকি শিল্প

সমগ্র বিশ্বের আঞ্চলিক জীবনই হয়ত রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বাংলাদেশের মত  উন্নয়নশীল বলা ভাল, তৃতীয়বিশ্বে সে-সম্ভাবনা আরো শঙ্কাজনক। মানুষের জীবনের মৌলিক প্রয়োজনই যেখানে মেটেনি সেখানে সভ্যতার অমরাবতী প্রস্তুত যে হবে না, এটাই সারস্বত সত্য। কোনো শিল্পীর অন্তর্গত রক্তক্ষরণের জায়গা থেকেই সে-সঙ্কটের বীজের ভেতরে সুপ্ত মহীরুহ কষ্টের জায়গাটি আবিষ্কার হবে; সেটাই সৎ শিল্পীর কাছে কাম্য। প্রশান্ত মৃধা তাঁর লেখায় শিল্পের সেই মহান সততার জায়গাটিকে স্থান করে দিয়েছেন। কুহক বিভ্রম-এ কথাকার প্রশান্ত মৃধার সে-ধরনেরই শিল্প। লেখক জীবনের প্রথম এই গল্পগ্রন্থেই তাঁর মনোজাগতিক ভাববিগ্রহের ছবি খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। শুধু বিষয় নয়, বিষয়ীর গুণেও যা অনন্যতা হাজির করতে সক্ষম।

কুহক বিভ্রম-এ আছে বাস্তবতার কুহক সৃষ্টি করে গল্প বলবার ভঙ্গি। বর্ণনার ব্যতিক্রমী এক কৌশলে প্রচলিত গল্প বলার ঢঙকে অতিক্রম করেন লেখক। ভাষাকে নিজের শাসনে আনতে প্রায়শই তিনি ব্যবহার করেন নতুন উপমা। দক্ষিণ বঙ্গের গ্রাম ও মফস্বলের জীবনকে নিবিড়ভাবে তুলতে জটিল-গ্রন্থিল জীবন-রহস্যকে উপস্থাপন করেন। চরিত্রের মানস-কাঠামোর ভেতরের অবয়বটাকে বহুমাত্রিকতায় ধরার চেষ্টা তাঁর অবিরত। মশারি গল্পের সাইফুল ইসলাম ওরফে সাইফ-এর জীবন-জটিলতা তথা জীবিকার ভয়াবহ সঙ্কট লেখকের গভীর উদ্দীপক বর্ণনার ভাষাতেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। পুঁজিবাদী সমাজ-কাঠামোর অন্তর্প্রদাহ একটি ফুটো মশারির মধ্য দিয়ে ব্যঞ্জনার ভাষা পায়। এটাই তো গ্রাম-মফস্বল ছেড়ে শহরে আসা হাজারো মানুষের জীবন-বাস্তবতা। সাইফের জীবিকা-অন্বেষণের অনিশ্চয়তা আর যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে শুধু দক্ষিণবঙ্গ নয়, গোটা বাংলাদেশের জীবিকা-সংগ্রামে লিপ্ত মানুষের চালচিত্র ভেসে আসে :
প্রত্যেকদিনই প্রায় রাত সাড়ে এগারটার দিকে দুপুরের খাওয়াই খেয়ে দৈনিক বেতন ২৫ টাকা হাতে নিয়ে এই ঠ্যাংড়া শরীরে গজানো ধুমচর-ভুঁড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে সে ঘরে ফেরে। দিনের খাই খোরাকিসহ ২৫ টাকা একেবারে কম না; হিসাবে সাড়ে সাতশো আসার কথা যদি তিরিশ দিনই শ্রম বেঁচা যায়। কিন্তু তাতো হয় না। (পৃ. ১০)
    
জগতে মালিক নামক দুষ্টচক্রের লোকগুলোর হাত থেকে তার প্রথম থেকেই রেহাই ছিল না। একসময়ের ব্রজলাল কলেজে ভর্তি হওয়া ছাত্র বর্তমানে হোটেল বয় সাইফের শুধুই শ্রম বেঁচাবিক্রি। প্রেমের ফাঁদে পা দিয়ে যে রুনুকে ঘরণী করে তুলেছিল অন্তঃসত্ত্বা সেই স্ত্রীর জন্য একটি ভাল মশারি কেনার পয়সাও তার নেই। অনাগত সন্তান ও স্ত্রীর পেছনে ব্যয় করতে গিয়ে সে টের পায় তাকে আরো বেশি বিক্রি হতে প্রস্তুত থাকতে হবে। কারণ :
আজ হোক কাল হোক, রুনু আর অনাগত সন্তানের জন্য তিনজনের রাত যাপনযোগ্য একটা মশারি দরকার- বুকের খাঁচায় এক অদৃশ্য ঘাই খেয়ে সাইফুলের পা লাফিয়ে চলে, দ্রুত!... (পৃ. ১৪)   

এসবের বাইরেও লেখক সাইফের সঙ্কটাপন্ন জীবনকে অনেকগুলো সূত্রে এক করে প্রকাশ করেন। বস্তুত এই সঙ্কটগুলোতে এদেশের মানুষ নিত্য ভুগলেও বর্ণনার ডিটেলসে গল্পকার যুবক সাইফের ব্যর্থতার গল্প শোনান। সে-ব্যর্থতার সঙ্গে জড়িয়ে আছে সমগ্র বাস্তবতা। যে-সমগ্র বাস্তব আবার আরো অনেকগুলো মানুষ ও চরিত্রের সঙ্গে ক্রিয়াশীল; সমাজ-রাষ্ট্রিক অসাফল্যের নিয়ত গাথা। খুলনার মোড়েল গঞ্জের আপাওধোয়া খ্যাদের দল, আন্তর্জাতিক মানের হোটেলের খচ্চর ম্যানেজার, পৌরসভার দায়িত্বহীনতা প্রভৃতি প্রসঙ্গগুলো জড়িয়ে যায়। ঘিনঘিনে পরিবেশের এক জান্তব রূপ অঙ্কিত হয় নিচের বর্ণনায় :
এখানে, গু-মুতের উন্মুক্ত মিক্সচারে নাসা-জ্বলা-গন্ধ আর মুহুর্মুহু ধুমটান মিলেমিশে একযোগে বড়ই অসুখকর পরিস্থিতি। -এইসঙ্গে বারবার থুথু ফেলা, আর ফাঁকা-পেটে বিড়ির ধোঁয়ায় গলা কাঠ, মগজ অসাড়। (পৃ. ১২)          

পারুল চরিতমানস লেখকের ভিন্নধর্মী একটি আখ্যান খোঁজার প্রয়াস। অবশ্য কুহক বিভ্রমের শেষদিক পর্যন্ত এগিয়ে গেলে প্রত্যেকটি গল্পেই নতুন আঙ্গিক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর নয়। অধ্যাপক আশফাক অ্যামেচারি মফস্বলী বৃত্তান্ত রচনা করতে গিয়ে নিজেই সেই জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে যান। আশফাকের চলন-বলন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তাকে একটি কুহকি বাস্তব চরিত্র করে তোলেন গল্পকার। অনেকগুলো বাস্তবতা একসঙ্গে মিলে যায় এ-গল্পেও। সেই টুকরো বাস্তব জোড়া লেগে প্রকাশিত হয় নানান ঘটনা মাফিক। টাউন ক্লাবের পিছনে ধর্ষণ-পরবর্তী যুবতীর মৃত লাশের সংবাদ পড়েন তিনি দক্ষিণ বাংলা পত্রিকায়। হত্যা-প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত হয় মহিলা পরিষদের ক্ষোভ, মানবাধিকার বিষয়ক সেমিনার ইত্যাদি। কিন্তু জাতিসংঘ সনদ আর মানবাধিকার সনদ যাই হোক কোনটাই কাজে আসে না। নাজমুলের কাছ থেকে আরো জানতে পাওয়া যায়, পারুলের হত্যাকা- নিয়ে পুলিশ-প্রশাসন মহলে টানাপড়েনের চিত্র। অন্যদিকে দেখা যায় পারুলের মৃতদেহ ময়নাতদন্তের পর পুলিশ তাকে রিলিজ করে। শ্মশান যাত্রার জন্য জড়ো হয় ১৫/২০ জন মানুষ। তারিক-নাজমুল আলোচনার মঞ্চে কটা চেয়ার দেয়া হবে তা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। চাঁচে মোড়া পারুলের লাশে বৃষ্টি পড়তে থাকে। আশফাকের ভাবনা জগতের রূপায়ণ করেন লেখক :
তাদের নিজস্ব নিরবতার ভিতরে বৃষ্টির মৃদুপতন, জটলা- এই সমস্ত দেখতে থাকে আর ভাবে, এই অক্লান্ত অবিরাম বৃষ্টি তাঁর মানবাধিকার ও সভ্যতা শীর্ষক সেমিনার আর চাঁচে-মোড়া পারুলের লাশ ধুয়ে নিয়ে যাচ্ছে; (পৃ. ২৯)

পারুলের হত্যাকারী কে এ-নিয়ে শেষ পর্যন্ত সংশয় রেখে যান লেখক। ট্রাফিক পুলিশকে ধর্ষণকারী বলে মনে করে তারিক। যাই হোক, গল্পের একটি বিভ্রম-বাস্তব সৃষ্টি করে গল্পকার দেখাতে সক্ষম হন একটি লাশের রাজনীতি, পুলিশ-প্রশাসনযন্ত্রের হঠকারী আচরণ। সে-সঙ্গে উঠে আসে সমকালীন স্বৈরাচারী সরকারি একটি সময়ের চালচিত্র।

কুহক বিভ্রম গল্পে গগন, শশধর, বিজয়া, ইন্দুবালা, সরযু, মহেন্দ্র, কমলা প্রভৃতি চরিত্রগুলোর পারম্পর্বিক বর্ণনার মধ্য দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে গ্রাম-জীবনের অভ্যন্তরের জটিল জীবনবিন্যাস। গ্রামজীবনে প্রোথিত সংশয়ী বাস্তবতা লেখকের পর্যবেক্ষণের দারুণ শক্তিতে রূপান্তরিত। চরিত্রগুলোর অন্তর্প্রবৃত্তি আবিষ্কারই যেন সে-শক্তির নিয়ামক।  সংখ্যালঘুদের যন্ত্রণা-গভীর দগদগে ক্ষতের চিহ্ন, কখনো স্বজাতি-শঠতা গল্পকারের পরিহাসের ভাষায় ইঙ্গিতমূলক। গগনকে দিয়ে গল্পকার জীবনের কঠিন সত্যকে প্রকাশ করেন :
ভবিষ্যৎ তো অজ্ঞাতই থাকে, ভবিষ্যৎ জানা থাকে না, ভবিষ্যৎকে জানা যায় না। আবার মানুষই তো ভবিষ্যৎ রচনা করে। ভবিষ্যৎ বর্তমান হয়, আবার বর্তমান ক্রমশ অতীত। অতীত-বর্তমানের কর্মফল মানুষকেই ভোগ করতে হয়-ভবিষ্যতে। প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়, শুধরে নিতে হয় অতীতের শিক্ষার ভিতর দিয়েই বর্তমানকে বয়ে নিয়ে হেঁটে যেতে যেতে ক্রমে ভবিষ্যতের উদ্দেশ্যে। (পৃ. ৪৩)

গ্রামীণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত নানা ক্রিয়া-কলাপের মধ্য দিয়ে গল্পকার দেশ-সমাজ-রাজনীতি-দেশবিভাগ প্রভৃতি প্রসঙ্গের অবতারণা করেন। আটপৌরে জীবন বয়ানের ভাষায় তিনি বিচিত্র বাস্তবকে দর্শন করান। বহু চরিত্রের উপস্থাপনায় ঘটে বহুস্তরীয় সত্যের প্রকাশ। লেখক চলমান সাতটি আখ্যানে মহাকাব্যিক ভঙ্গিতে জীবন ধরতে প্রয়াসী। দুপুর : বারান্দায় উঠানে : এক, আগের কথা, দুপুর : বারান্দায়-উঠানে : দুই, বিকাল : হাটে : যাওয়া-আসা, আগের কথা : দুই, বিমর্ষ রাত্রি : প্রথম প্রহর, বিমর্ষ রাত্রি : দ্বিতীয় প্রহর- এভাবে উপকাহিনি খণ্ডাংশগুলো নির্মিত হয়। কাহিনির এক জটিল জালে পাঠককে জড়িয়ে ঠাণ্ডা-শীতল স্বতঃপ্রবহমান জীবন-বিন্যাসে গল্পকথনে অগ্রসর হন লেখক। সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের মহাভারতের কাহিনি শোনার আগ্রহে চঞ্চল বুড়ি কাহিনির শেষপ্রান্তে ভিন্ন এক মোচড় তৈরি করে। এর মধ্যেই গগন নিজে ধৃতরাষ্ট্র, ধৃতরাষ্ট্রের স্থলে সে নিজে অভিষিক্ত হয়। তার বন্ধু শশধর লৌহময় ভীমে রূপান্তরিত হয়ে তারই বাহুপাশে প্রবেশ করে। পাপ ও প্রায়শ্চিত্তের এই মানবী উপস্থাপন পাঠকের অন্তর্জতে ঝড় তোলে। গ্রামীণ মানুষের মানস-চৈতন্যে প্রোথিত পুরাণের অন্তঃসার জীবনপ্রবাহের সঙ্গে মিশে থাকে অধঃক্ষেপরূপে। এও এক ধরনের কুহকি বাস্তব যা মানুষকে ভেতরে ভেতরে পরিচালিত করে। 

বুড়ো কবিতা লিখতেন গল্প একক চরিত্রের পথচলা, নির্নিমেষ অবলোকন আর ভাবনা-প্রক্রিয়ায় নির্মিত। শহরে আসা বুড়োর চোখে উদ্ভাসিত জগতকে বর্ণনার ডিটেলস্ দিয়ে প্রকাশ করেন তিনি। বর্তমান সংখ্যালঘুর যন্ত্রণাকে বুড়ো সচক্ষে দেখেন। জনৈক যুবককে দেখেন মুসলমান মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক করার অপরাধে তাকে নির্মমভাবে পিটাতে। অন্যদিকে বৃদ্ধের একসময়ের বন্ধু শাহাবের মুখচ্ছবির সঙ্গে সে-ছবিকে মুহূর্তে মিলিয়ে ফেলে বৃদ্ধ। নাগ ও দাশেরা যাকে একদিন গোবিন্দবাড়ির পুকুরে চুবিয়ে মেরেছিল। কেবল দিন বদলায়, ঘটনা একই থাকে। বুড়ো ভাবতে থাকে :
হায় শাহাব দোসতো আমার, এখানেই তো, সেই শোধ... বুড়ো গোনেন... হায় হায়... চুয়ান্ন... পঞ্চান্ন... ছাপ্পান্ন...বছর বাদে, হায় শাহাব, হবেই তো... হায় শালার জিন্না-নেহেরু কি কম দেখাল? (পৃ. ৬৬)

ভারতবর্ষের রাজনৈতিক বাস্তবতার অংশীদার বৃদ্ধ। তারই চোখ দিয়ে দেখা শহরের দৃশ্যাবলীগুলো একে একে অপসৃত হয়, সে ঢলে পড়ে মৃত্যুর কোলে। অচেনা বুড়োর বুক পকেটে পাওয়া একখানি ডায়েরির মধ্য দিয়ে আবিষ্কৃত হয় বুড়ো ছিলেন একজন কবি। তার কবিতার মধ্যে স্বপ্ন-সম্ভাবিত কল্পনা-প্রবণ গ্রামীণ মানুষের প্রবল ছায়া। বৃদ্ধের লেখা কবিতাটি উদ্ধৃত করা যেতে পারে :
     এই মাকুতে না হয় লুঙ্গি না-হয় ধুতি।
     সেই জন্যেই দাদার ঘরে বিয়ায় পুতি॥
     সোনার চামচে খেয়োনা খাবার।
     না-ই যদি থাকে জবাব দেবার॥
     -শ্রীবীরেন্দ্রনাথ পাল
     চিরুলিয়া, বিষ্ণুপুর (পৃ. ৬৭)

নানারকম বয়োবৃদ্ধ চরিত্র প্রশান্ত মৃধার গল্পে ঘুরে ফিরে আসে। শিল্পীর চৈতন্যে ব্যাপক বিস্তৃত জীবনকে ধরার অভিপ্রায়ই হয়ত থাকে সেখানে। কেননা বহুকালদর্শী মানুষের ভূমিকায় সমস্ত জগতকে অন্যরকম একটি শিল্প প্রধাবনার সঙ্গে যুক্ত করা যায়। এ-গ্রন্থে বুড়ির গাছ তেমনি একটি গল্প। কয়দিন আগে তোলা দাঁতের ফাঁকা মাড়িতে যে-যৌবন-লুপ্ত, সুখ নিহিত থাকে তার ভেতরে, থাকে অদৃশ্যমান মৃত্যুময় জগত। পশ্চাৎ ফিরে যে-ভাবনার অতীত খুঁড়লে তার প্রদীপ্ত যৌবনকেই খুঁজে ফেরা যায়। সে-দিন তাই খুব কাছে মনে হয় যেদিন বুড়ি এ-বাড়িতে প্রথম পা রেখেছিল। স্বামী ও জোড়া শালিখের প্রতীকের মধ্যে সেই সুখ-স্বপ্নে অতিবাহিত জীবনেরই আবছায়া-লেপন। টেনে টেনে চলা ক্রমাগত মৃত্যুর দুয়ারে ক্রমশ এগিয়ে চলার মধ্যেও নাতি-নাতনীদেরকে ঘিরে একটি ব্যস্ততার জগত থাকে তার। বাড়ির উত্তর দিকের ফাঁকা জায়গার মেঘনিশ গাছগুলো যেন স্মৃতির তর্পণ। দাঁতের মাড়ির ফাঁকা একটি জায়গাকে কেন্দ্র করে অনুভবের বিচিত্র জালে বয়সী জীবনকে ধরার এই প্রক্রিয়া সত্যিই অন্যরকম। যেমন : 
দাঁতের মাড়ির ফাঁকা জায়গায় একটুক্ষণ আগে-খাওয়া চিনির ভিজা লোদা-লোদা লেই দলা হয়ে আটকে আছে। মাড়িতে তর্জনী লাগিয়ে চিনির দলা তুলতুলে জায়গা থেকে সরিয়ে দেন। ফাঁকা জায়গায় জিহ্বা দিয়ে একটু নাড়ান, চুকচুক শব্দ করেন। (পৃ. ৭৪)

গল্পে প্রতিদিনের অভ্যস্ত জীবনের বর্ণণায় উঠে আসে গ্রামীণ নারী-পুরুষ তথা আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার কণ্ঠস্বর। প্রাকৃতিক জীবন-শৃঙ্খলে লেখক খুঁজে ফেরেন জীবনেরই এক অনর্থক অথচ ভিন্ন বাস্তব। বৃদ্ধার কাছে গাছ অতীত স্মৃতি-বিধুরতার প্রতীক। যেখানে একদিন জোড়া শালিক বসতো আজ সেখানে চড়ে কালো কাক। এই মেঘনিশ গাছ কাটার সঙ্গে জীবনাবসানের বিচিত্র জটিল অনুভবি সত্তা মিশ্রিত হয়। তাই তার মনে হয় :
গাছটা কাটলে শালিক জোড়া যাবে কোথায়... রঞ্জনের বাবার শালিক জোড়া... কতকাল এই জোড়ার খোঁজটোজ নেয়া হয় না... ভাবতে ভাবতে গাছের প্রতি ডালে চোখ নিয়ে যান: পাতা থেকে পাতায়, পারেন তো পাতার ফাঁকে-ফাঁকে পুরোলেন্সের চশমায় চোখে দেখে নিতে চান... কিন্তু শালিক জোড়া কই?... ঠ্যাঙ কাটা তো দূরে থাক ঠ্যাঙঅলা কোনও শালিকই নাই... বরং গাছে কাকের বাসা আছে... এত কাক এই গাছে... গাছ কাডলে যাবে কোথায়? (পৃ. ৯৪)

মৃত্যু-সন্নিকটবর্তী মানুষেরও মনে আশা জাগরূক থাকে। তাই গল্পটি হয়ে যায় গভীর রহস্য-সঙ্কুল এক মানব-জীবনের ইতিকথা। বুড়ির গাছ হয়ত সেই আশা-নিরাশার দ্বন্দ্ব-কোলাহলে বহমান মানব-অস্তিত্বের সপ্রমাণ। তাই :
তিনি দাঁড়িয়ে থাকেন; অপলক গাছের দিকে চেয়ে, যদি শালিক জোড়া দেখতে পাওয়া যায়। (পৃ. ৯৫)
উপরিউক্ত আলোচনায় প্রশান্ত মৃধার গল্প-আখ্যানের মানুষ, পরিবেশ, তাদের জীবনযাপন, আচরণ, সর্বোপরি তাদের বিচিত্র প্রকৃতির কথা ব্যক্ত হয়েছে। গল্পকারের প্রধানতম একটি বৈশিষ্ট্যের দিকে বারবারই নজর যায় আর তা হলোÑ নির্মোহ, নিরাসক্ত, নিরুত্তাপ কাহিনি বলার ভঙ্গি। তিনি তাঁর অভিজ্ঞতার পৃথিবীকেই পাঠকের সামনে আনেন। শিল্পী হিসেবে নিছক কল্পনাচারী তিনি নন। গল্প বলবার জন্যই তিনি গল্প করেন। পরিবেশ ও পরিস্থিতি অনুযায়ী তাঁর গল্পের প্রত্যেকটি চরিত্র যার যার মত করে জীবনযাপনের সূত্র তৈরি করে। তাই ঘনিষ্ঠভাবে এই বাস্তবতায় সন্তরণে রয়েছে শিল্পীর গভীর অভিনিবিষ্টতা। কার্যকারণ-সূত্রে বিচিত্র পুরুষ-নারীর অন্তর্দেশ আবিষ্কার করা তাই তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়েছে। অন্যদিকে অঞ্চলের পরিবেশ আবহ ও কণ্ঠস্বরকে ধারণ করতেও তাঁকে হাজির করতে হয়েছে পরিশ্রমসাধ্য অনুপুঙ্খতা। প্রশান্ত মৃধার অধিকাংশ গল্পের পরিণতি খুঁজতে পেয়াজের খোসার মত পরত খুলতে খুলতে অগ্রসর হতে হয়। এর মধ্যেই মানুষি-আত্মার প্রতিধ্বনিসমূহ পাঠককে আখ্যানের নিরব-নিভৃত সঙ্গী করে। আখ্যান-নির্মাণের বহুধাবিস্তৃত ঐতিহাসিক পরম্পরাকে তিনি স্বেচ্ছায় অতিক্রম করেন। চেনা- জগতকে অচেনা বানান না তিনি। সেখানে জীবন ধৃত হয় প্রাকৃতিক বিকশোন্মুখ পুষ্পবিন্যাসের সহজসাধ্যতায়। তাঁর গল্প তৈরির মাল-মশলাগুলো যেন গোপন রসদ-ভা-ারের মত। আখ্যানের শীতল-ঘটনাপ্রবাহে যা নিরাবেগ জলরাশিকে উপল-বন্ধুর পথ-অতিক্রম করায়।           

এ-সময়ের কথাশিল্পের একটি অন্যতম প্রবণতা আঞ্চলিকতা। শিল্পসিদ্ধির চূড়ায় অধুনা পৌঁছাতে হলে আঞ্চলিক সাহিত্য প্রকাশভঙ্গিকে আয়ত্ত করেই যেন মোক্ষধামে পৌঁছুতে হয়। বৈশ্বিক-ভাবনা সেখানে থাকবে অচেতন শব্দকাঠামোর ভেতরে ভেতরে। বিশ্বের আরো গভীরতর অসুখ ধরার জন্য আঞ্চলিক জীবন প্রকাশের অন্যথা নেই। তবে বিশ্বকে সাথে নিয়েই আঞ্চলিক সাহিত্যের বাতাবরণ তৈরি হয়। গোটা বিশ্ব শিল্পীর মস্তিষ্ক লোকে থাকলেও লেখনি বিশ্বের নির্মিত ভাষায় সে-পা-িত্যকে সহজে ধরা দেয়া হয়ত সমীচীন নয়। প্রশান্ত মৃধার কথন ও বয়ন-কৌশলে সে-নীতির সৌকর্য লক্ষ্যণীয়। তাঁর গল্পে আঞ্চলিক শব্দভা-ারের সুপ্রতুলতার কারণও তা। মধ্যবিত্ত সংস্কৃতির মনোগ্রাহী ভাষাকে সচেতনেই তিনি অতিক্রম করেন- একটি অনুজ্জ্বল শিথিল প্রবাহযুক্ত গ্রাম-মফস্বলী জীবনকেই ধরার অভিপ্রায়ে। এ-যেন কঠিন শিলাস্তর খুদে খুদে প্রাকৃতজনকে আবিষ্কার করা। কুহকি এক বিভ্রমাত্মক বাস্তব হয়ে যা অভিনব শিল্প-প্রক্রিয়া আশ্রয়ী।  


খোরশেদ আলম
গল্পকার, প্রাবন্ধিক 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন